বিশ্বের বিভিন্ন
অঞ্চলে খাদ্য সংকটের পাশাপাশি বাংলাদেশেও খাদ্যপণ্যের বাড়তি দাম নিয়ে ইতোমধ্যে সতর্ক
করে দিয়েছে জাতিসংঘ। পরিস্থিতি আমলে নিয়ে খাদ্যের উৎপাদন ও মজুদ বাড়ানোর উদ্যোগ নেওয়া
হয়েছে। খাদ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী দেশে ১১ জুলাই পর্যন্ত খাদ্য মজুদের পরিমাণ
দাঁড়িয়েছে ১৮ লাখ ৯৬ হাজার টনে। তার পরও দেশের উচ্চ মূল্যস্ফীতি নিয়ে শঙ্কা কাটছে না।
জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবের পাশাপাশি করোনা মহামারী এবং ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের কারণে বিশ্বব্যাপী উৎপাদন কমে যাওয়ায় বেড়েছে খাদ্য উপকরণের দাম। ফলে খাদ্য আমদানিনির্ভর দেশগুলোর বিপদ বেড়েছে। বিশ্বের অন্যতম খাদ্য রপ্তানিকারক দেশ ইউক্রেনের কৃষি বিভাগ সতর্ক করে জানিয়েছে, চলতি মৌসুমে দেশটিতে গম উৎপাদন ৫০ শতাংশ কমে যেতে পারে। ফলে দেশটি থেকে গম আমদানিকারক দেশগুলোর বিপদ বাড়বে।
আরও পড়ুন: আর্জেন্টিনায় ৯ পুলিশ কর্মকর্তার কারাদণ্ড
বাংলাদেশে অবশ্য
এর প্রভাব আগে থেকেই পড়তে শুরু করেছে। গত জুনে দেশে মূল্যস্ফীতি দাঁড়ায় ৯ দশমিক ৭৪
শতাংশ। তার আগে মে মাসে দাঁড়ায় ৯ দশমিক ৯৪ শতাংশ। চলতি জুলাই মাসে নিত্যপণ্যের দাম
ঊর্ধ্বমুখী। ফলে মূল্যস্ফীতি উপরের দিকেই থাকবে। এতে মানুষের দুর্ভোগ বাড়ছে। অন্যদিকে
ইউক্রেনের বন্দর থেকে বিনাবাধায় শস্য রপ্তানির বিষয়ে রাশিয়ার সঙ্গে যে চুক্তি হয়েছিল,
তার মেয়াদ ১৭ জুলাই শেষ হচ্ছে। এবারও রাশিয়া এই চুক্তি থেকে বেরিয়ে যেতে চাইছে। এখন
নতুন করে চুক্তি না হলে বাংলাদেশে খাদ্যশস্য, বিশেষ করে গমের সরবরাহ ব্যাহত হবে বলে
আশঙ্কা করছেন ব্যবসায়ীরা।
বাংলাদেশে সাধারণ আমিষযুক্ত গমের অন্যতম উৎস রাশিয়া ও ইউক্রেন। দেশ দুটি থেকে বাংলাদেশ বছরে গড়ে ৬০ শতাংশ গম আমদানি করে আসছিল। গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর কৃষ্ণসাগরের বন্দরগুলো অবরুদ্ধ হয়ে পড়লে উভয় দেশ থেকে গম আমদানি প্রায় শূন্যের কোঠায় নেমে আসে।
আরও পড়ুন: কোপা আমেরিকা খেলে বিদায় জানাবেন মেসি
এদিকে যুক্তরাষ্ট্রের
কৃষি বিভাগের ফরেন অ্যাগ্রিকালচারাল সার্ভিস সম্প্রতি এ সংক্রান্ত একটি প্রতিবেদন প্রকাশ
করেছে। এতে বলা হয়েছে, যুদ্ধের মধ্যে চলতি বছর ইউক্রেনে গম উৎপাদন কমে ১২ বছরের সর্বনিম্ন
পর্যায়ে নামতে পারে। শস্যটির রপ্তানি কমে নামতে পারে ১১ বছরের সর্বনিম্নে। ২০২৩-২৪
বিপণন মৌসুমে উৎপাদন ১ কোটি ৭৫ লাখ টনে নামতে পারে। ২০২১-২২ মৌসুমে উৎপাদন হয়েছিল রেকর্ড
৩ কোটি ৩০ লাখ টন। সে হিসাবে উৎপাদন ৫০ শতাংশ কমবে। এদিকে রপ্তানি ১ কোটি ৫ লাখ টনে
নামার পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে। ২০২২-২৩ মৌসুমে প্রাক্কলিত রপ্তানির পরিমাণ ছিল ১ কোটি
৬০ লাখ টন, ২০২১-২২ মৌসুমে যা ছিল ১ কোটি ৮৮ লাখ টন।
প্রাক্কলন অনুযায়ী,
২০২৩ সালের এপ্রিল পর্যন্ত রাশিয়ার সঙ্গে যুদ্ধের কারণে ইউক্রেনের কৃষি খাতে ৯০০ কোটি
ডলার লোকসান হয়েছে, যা দেশটির ২৬ শতাংশেরও বেশি স্থাবর সম্পত্তির সমান। দুই দেশের মধ্যে
সংঘাত শুরুর আগে ২০২১ সালে ইউক্রেন প্রায় ৩ কোটি ৩০ লাখ হেক্টর জমিতে খাদ্যশস্য ও তেলবীজ
আবাদ করে। গত বছর আবাদি জমির পরিমাণ কমে ২ কোটি ৫০ লাখ হেক্টরে নামে। শিগগিরই যুদ্ধ
শেষ না হলে আবাদি জমির পরিমাণ আরও কমার আশঙ্কা রয়েছে। এতে খাদ্যের ঘাটতি ও খাদ্যপণ্যের
দাম আরও বাড়তে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
এদিকে বিশ্বব্যাংক ও আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল বলেছে, বৈশ্বিকভাবে যে হারে আমদানিপণ্য ও খাদ্যপণ্যের দাম বাড়ছে, তাতে মূল্যস্ফীতির ঘোড়াকে সামলে রাখা কঠিন হবে। এ ছাড়া চীন, ভারত, আর্জেন্টিনা, অস্ট্রেলিয়া, ইতালি, কানাডাসহ বিশ্বের খাদ্য উৎপাদনে নেতৃত্বদানকারী দেশগুলোতে অতিরিক্ত বন্যা, খরা কিংবা দাবানলে বিপুল পরিমাণ ফসলের ক্ষতি হয়েছে। চলতি মৌসুমেও উৎপাদন কম হবে ব্যাপক হারে।
আরও পড়ুন: আজ প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন উজরা জেয়া
এ জন্য খাদ্য
নিরাপত্তা ইস্যুতে বিশ্বনেতাদের সতর্ক করেছেন জাতিসংঘের মহাসচিব। এ অবস্থায় নিজেদের
খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতে মজুদ বাড়াচ্ছে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ। বাংলাদেশও এই উদ্যোগ
নিয়েছে। এ জন্য কৃষি খাতের ভর্তুকি কমানোর আইএমএফের প্রস্তাব নাকচ করে দিয়ে নতুন বাজেটে
কৃষি খাতে ভর্তুকি বাড়ানো হয়েছে।