বেতাগীতে বিনা চিকিৎসায় ও ডক্টরস ক্লিনিক
কর্তৃপক্ষের অবহেলায় এক নবজাতকের মৃত্যু হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। উপজেলার বেতাগী ডক্টরস
ক্লিনিক অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারে এ ঘটনা ঘটে। এতে স্থানীয়দের মাঝে ক্ষোভের সৃষ্টি
হইয়। পরে উপজেলা প্রশাসন ও স্বাস্থ্য বিভাগ ক্লিনিকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ায় পরিস্থিতি
শান্ত হয়।
এ ঘটনায় সোমবার (১৪ আগস্ট) সকাল থেকে দুপুর
দুইটা পর্যন্ত উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ফারুক আহমেদের
নেতৃত্বে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে। এসময় মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ, অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ,
লাইসেন্সসহ প্রয়োজনীয় কাগজপত্র না পাওয়াসহ নানা অব্যবস্থাপনার কারণে ডক্টরস ক্লিনিক
ও ডক্টরস ডায়াগনস্টিক সেন্টারের মোট ৭০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। এসময় ডক্টরস ক্লিনিক
সিলগালা করা হয়। ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনাকালে সহকারী কমিশনার (ভূমি) বিপুল সিকদার
ও উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা
ডা: হামিদা লস্কর উপস্থিত ছিলেন।
জানা গেছে, উপজেলার সদর ইউনিয়নের কিসমত
করুনা গ্রামের সাইদুর রহমান রনির স্ত্রী বিথী আক্তার (২৪) পেটে ব্যথা শুরু হলে গত শুক্রবার
বেতাগী পৌর শহরের বেতাগী সরকারি কলেজ রোডস্থ ডক্টরস ক্লিনিকে ভর্তি হন। ঐদিন রাত ১২টায়
ক্লিনিকের চিকিৎসক মাহাববুর রহমান রোগীর অপারেশন করেন। এতে বিথী আক্তার জীবিত সন্তান
প্রসব করেন। কিন্ত রোববার বিকেলে শিশুটির শ্বাসকষ্ট বেড়ে যায়। ক্লিনিকে চিকিৎসক না
থাকায় বেতাগী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যাওয়ার পর সেখানের কর্তব্যরত চিকিৎসক
বরিশালে শের-ই- বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করে। ঐ দিন বরিশালে নেওয়ার পথে
সন্ধ্যায় সুবীদখালী এলাকায় নবজাতক মারা যান। ঘটনাটি জানাজানি হলে স্থানীয়দের মাঝে ক্ষোভের
সৃষ্টি হয় এবং নবজাতকের বাবা সাইদুর রহমান বিনা চিকিৎসায় তার নবজাতক মারা যাওয়ার অভিযোগ
করেন।
রাত সাড়ে ৮টায় বেতাগী থানা পুলিশ অভিযুক্ত
বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ডক্টরস ক্লিনিক পরিদর্শন করেন। নবজাতকের বাবা সাইদুর রহমান রনি
অভিযোগ করেন, বিনা চিকিৎসায় তার নবজাতক মারা যান। এ ব্যাপারে আইনের আশ্রয় নেওয়া হবে।
এ বিষয় ক্লিনিকের চিকিৎসক মাহাবুবুর রহমানের
সাথে গতকাল থেকে মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হয়। তবুও তার সাথে কথা বলা
সম্ভব হয়নি। মুঠোফোনটি সার্বক্ষণিক ব্যস্ত পাওয়া যায়।
তবে ডক্টরস ক্লিনিক ও ডক্টরস ডায়াগনস্টিক
সেন্টারের পরিচালক মো: জাকির হোসেন বলেন, ঐ সময় আমি উপস্থিত ছিলাম না। তবুও শিশুটি
অসুস্থ হলে ক্লিনিকে শিশু বিশেষজ্ঞ না থাকায় ক্লিনিকের পক্ষ থেকে বেতাগী উপজেলা স্বাস্থ্য
কমপ্লেক্সে এবং সেখান থেকে এ্যাম্বুলেন্সে করে বরিশালে শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে
পাঠানোর ব্যবস্থা করা হয়। সেখানে যাওয়ার পথে সুবীদখালী এলাকায় নবজাতক মারা যায়। তবে
চিকিৎসায় কোনো ঘাটতি ছিল না বলে দাবি করেন তিনি।
বেতাগী থানার অফিসার ইনচার্জ মো: আনোয়ার
হোসেন জানান, ঘটনা শোনার পরপরই তিনি ঘটনাস্থল পরিদর্শনে গিয়েছিলেন। চিকিৎসকের রিপোর্ট
ছাড়া এবিষয়ে কোন মন্তব্য করা ঠিক নয়। নবজাতকের বাবা এখনো লিখিত কোন অভিযোগ নিয়ে আসেননি।
তবে তিনি মৌখিকভাবে অভিযোগ করেছেন।
বেতাগী উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা
কর্মকর্তা ডা: হামিদা লস্কর জানান, প্রসূতি মা ও নবজাতক উভয়েরই চিকিৎসা দেওয়া জরুরি
ছিলো। কিন্ত সেখানে নবজাতকের চিকিৎসার কোন ব্যবস্থা ছিলোনা। এ নিয়ে দুপুর পর্যন্ত অভিযুক্ত
প্রতিষ্ঠানে অভিযান চালিয়ে অনেক ধরনের অসংগতি ও অব্যবস্থাপনা পাওয়া গেছে। তার প্রতিবেদন
উর্ধতন কর্তৃপক্ষের কাছে পেশ করা হবে।
বেতাগী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও)
ফারুক আহমেদ বলেন, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারে অব্যবস্থাপনা পাওয়ায় তাদের জরিমানা
এবং ক্লিনিক সিলগালা করা হয়েছে।