দেখতে সুন্দর, খেতেও সুস্বাদু আঙ্গুস মাছ। মাথা থেকে লেজ পর্যন্ত পেট বরাবর গাঢ় নীলের দাগ। সাধারণত নদীতে পাওয়া যায় এই মাছ। তবে এখন মেলে কদাচিৎ। বর্তমানে সবচেয়ে বিপন্ন দেশি প্রজাতির মাছের তালিকায় শীর্ষে আছে আঙ্গুসের নাম। সুখবর হলো, বিলুপ্তপ্রায় মাছটি আবার ফিরে আসছে আমাদের পাতে। এরই মধ্যে এর পরীক্ষামূলক চাষ শুরু হয়েছে। সব ঠিকঠাক থাকলে পুনর্জন্ম পাচ্ছে আঙ্গুস।
বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের নীলফামারী জেলার সৈয়দপুর উপকেন্দ্র থেকে এ সংশ্লিষ্ট কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। মাছটির চাষ করছেন কদর বানু নামের এক নারী মৎস্য চাষি। এ মাছের চাষ করতে পেরে তিনি খুব আনন্দিত।
মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউট জানায়, আঙ্গুস তিস্তা অববাহিকার মাছ। এটি বর্তমানে বিপন্ন প্রজাতিগুলোর তালিকাভুক্ত। ফলে এ মাছ সংরক্ষণের লক্ষ্যে ইনস্টিটিউটে গবেষণা চালানো হয়। তাদের কৃত্রিম প্রজনন ও অন-স্টেশন চাষ প্রযুক্তি রয়েছে। এ প্রযুক্তি ব্যবহার করেই আঙ্গুসকে ফিরিয়ে আনা হচ্ছে। বিলুপ্তির হাত থেকে রক্ষা করতে ২০১৮ সালে বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের সৈয়দপুর স্বাদুপানি উপকেন্দ্রের পক্ষ থেকে উদ্যোগ নেওয়া হয়। এর আওতায় উত্তরবঙ্গের তিস্তা, চিকলী ও আত্রাই থেকে আঙ্গুসের ১৫-২০ গ্রাম ওজনের পোনা সংগ্রহ করা হয়। জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি মাসে মূলত মাছটি ধরা পড়ে। পোনা সংগ্রহের পর সৈয়দপুর গবেষণা উপকেন্দ্রের পুকুরে প্রতিপালন করে ব্রুড মাছ তৈরি করা হয়। এর পর কৃত্রিম প্রজননের মাধ্যমে পোনা উৎপাদনে সফলতা আসে। গবেষক দলে ছিলেন উপকেন্দ্রের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. রশীদুল হাসান ও বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা শওকত আহমদ।
দীর্ঘ গবেষণার পর এখন মাঠ পর্যায়ে আঙ্গুসের পরীক্ষামূলক চাষাবাদ চলছে। নীলফামারীতে পরিচালিত একটি গবেষণা প্রকল্পের আওতায় বৈরালী মাছের সঙ্গে আঙ্গুসের মিশ্র চাষ করা হচ্ছে। চাষির পুকুরে মাছের দৈহিক বৃদ্ধির হার এবং পানির ভৌত-রাসায়নিক গুণাগুণ গবেষকরা নিয়মিত পর্যবেক্ষণ করছেন।
মাছের বৃদ্ধির হারে সন্তোষজনক বলে জানান চাষি কদর বানু। তিনি বলেন, এর আগে তিনি এ মাছ তেমন একটা দেখেননি। দেশে প্রথম তিনিই মাছটি চাষ করছেন। এ জন্য অনেক আনন্দিত। দ্রুত মাছটি বড় হয়। চাহিদা থাকায় এর চাষ লাভজনক হবে বলেই তাঁর বিশ্বাস।
বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক ড. ইয়াহিয়া মাহমুদ জানান, আঙ্গুস মূলত তিস্তা অববাহিকার মাছ। এটি প্রায় হারিয়ে যাচ্ছিল। এর কৃত্রিম প্রজনন প্রযুক্তি উদ্ভাবিত হওয়ায় পোনাপ্রাপ্তি সহজ হয়েছে। এ মাছও শিগগির চাষাবাদে চলে আসবে। বিলুপ্তপ্রায় সব দেশি মাছ খাবারের পাতে ফিরিয়ে আনার লক্ষ্যে ইনস্টিটিউট থেকে গবেষণা পরিচালনা করা হচ্ছে।
বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউট এরই মধ্যে বিলুপ্তপ্রায় ৬৪ প্রজাতি মাছের মধ্যে ৪০ প্রজাতিকে ফিরিয়ে আনতে সক্ষম হয়েছে। এর মধ্যে গত ১৩ বছরে ২৬টি বিপন্ন প্রজাতির দেশি মাছ পুনরুদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে। চাষের মাধ্যমে ছোট মাছের উৎপাদন বেড়েছে চার গুণ। ফলে সম্প্রতি বাজারে ছোট মাছের প্রাপ্যতা বেড়েছে। অন্যদিকে, দেশি মাছ সুরক্ষায় ইনস্টিটিউটের ময়মনসিংহ কেন্দ্রে দেশে প্রথমবারের মতো একটি লাইভ জিন ব্যাংক প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে।