শ্রীপুর (গাজীপুর) প্রতিনিধি:
এক সময় গ্রাম বাংলায় নিচু জমি খাল-বিলে পানি সেচে মাছ ধরা হতো। মাছ ধরার চিরায়ত সে দৃশ্য সচরাচর এখন আর চোখে পড়ে না। দিন দিন হারিয়ে যাচ্ছে এসব উৎসব। বিলুপ্তির পথে এক সময়কার চিরচেনা গ্রামবাংলার অপরূপ সৌন্দর্যময় মাছ ধরা যন্ত্র "পলো"। তলাবিহীন কলসির আদলে বাঁশ ও বেতের সংমিশ্রণে ছোট ছোট ছিদ্র রেখে শৈল্পিক সুনিপুণভাবে মাছ ধরার যে যন্ত্রটি তৈরি করা হয়, আঞ্চলিক ভাষায় তার নাম "পলো" বলা হয়।
সোমবার (২৮ মার্চ) উপজেলার বরমী ইউনিয়নের গাড়ারন গ্রামের মোড়ল বাড়ি পুকুরে সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত পলো দিয়ে মাছ ধরার দৃশ্য চোখে পড়ে। নদী, বিল বা পুকুরের পানি শুকানো শুরু করলে এলাকার মানুষ মাছ ধরার প্রস্তুতি নিতে থাকে। বাঁশ দিয়ে ছোট বড় অসংখ্য পলো তৈরি করা হয়। কোন দিন কোন পুকুর বা বিলে মাছ ধরা হবে আগে ভাগে জানানো হয়। এরপর শৌখিন ও পেশাদার শিকারিরা মাছ ধরতে নেমে পড়েন। এ গ্রামবাংলার ঐতিহ্য। বংশপরম্পরায় চলে আসছে এভাবে মাছ ধরা। পুকুরের দুই তীরে উৎসব উৎসব ভাব বিরাজ করে।
গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার বিভিন্ন খাল-বিল ও নদী-নালার পানি কমতে শুরু করেছে। পানি কমে যাওয়ায় অল্প পানিতে মাছ শিকারে মেতেছেন শ্রীপুর উপজেলার কৃষকরা।
সোমবার দুপুরে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায় উপজেলার বরমী ইউনিয়নের গাড়ারন গ্রামের মোড়ল বাড়ি পুকুরে সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত পলো দিয়ে মাছ শিকার করেছেন দুই শতাধিক মানুষ। তবে সনাতন পদ্ধতিতে পলো দিয়ে মাছ শিকারের দৃশ্যগুলো অনেকটা বিলুপ্তির পথে। মাথা ও কোমরে বাঁধা গামছা। আর হাতে পলো। দুই শতাধিক মাছ শিকারিকে মোড়ল বাড়ি পুকুরে অনেকটা আনন্দ নিয়েই মাছ ধরতে দেখা যায়। দলবদ্ধভাবে মাছ শিকারের এ দৃশ্য দেখতে পুকুরের দুই তীরে ভিড় জমায় উৎসুক মানুষ। উৎসবে অংশ নেয়াদের হাততালি ও চিৎকার করে উৎসাহ দেন তীরে অবস্থানরতরা। সারিবদ্ধ হয়ে পলো দিয়ে ধরেছেন শৈল, রুই ও টাকি মাছ। পুকুরের অল্প পানিতে একটি দল একদিকে পলো নিয়ে সারিবদ্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে থাকেন। অপরপ্রান্ত থেকেও সারি বদ্ধ দল পলো চাপিয়ে মাছ ধরতে ধরতে সামনে এগিয়ে আসেন।
স্থানীয় সমাজসেবী কবির হোসেন বলেন, এক সময় নদী-নালা, খাল-বিলে উৎসব করে পলো দিয়ে মাছ শিকার করতো মানুষ। সেই সংস্কৃতি এখন হারিয়ে যাচ্ছে। আগামী প্রজন্মকে জানান দিতে এসব সংস্কৃতি টিকিয়ে রাখা প্রয়োজন।
মাওনা গ্রাম থেকে মাছ ধরতে এসে বলেন, এর আগেও এখানে এসেছিলাম মাছ ধরতে, এবারও এসেছি, এটা আমার নেশা। আমার সঙ্গে এলাকার আরও ৬জন এসেছে। মাছ ধরে খুব আনন্দ পাই।
এলাকাবাসী জানান, ওই পুকুরে প্রতিবছর এসময় মাছ ধরার উৎসব হয়। বিভিন্ন ধরনের মাছ পাওয়া যায়। একসঙ্গে অনেক মানুষ মাছ ধরতে এলে পানি ঘোলা হয়ে যায়, এতে মাছ অনেক সময় ভেসে ওঠে। রুই, কাতলা, বোয়াল, সোলমাছ, শিংসহ ছোট ছোট বিভিন্ন প্রজাতির মাছ পাওয়া যায়। এসময় দূরদূরান্ত থেকে অনেকেই পছন্দের মাছ কিনতে ভিড় করেন বিলের ধারে। বরমী
শ্রীপুর উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা আশরাফউল্লা বলেন, মাছ ধরার উৎসবটি একটি ব্যতিক্রমী আনন্দ উৎসব। মাছগুলো সংরক্ষণের জন্য অভয়াশ্রম তৈরি ছাড়া বিকল্প নেই।