নেত্রকোনা জেলার সকল উপজেলার নদ-নদী, খাল, বিল ও ডোবা-জলাশয় থেকে দিন দিন বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে দেশীয় প্রজাতির অনেক ছোট বড় মাছ। কৃষি জমিতে অনিয়ন্ত্রিত কীটনাশক ও অবৈধ কারেন্ট জালের ব্যবহার, খাল-বিল-ডোবা ভরাট, উন্মুক্ত জলাশয়ে সেচে ও বাঁধ নির্মাণসহ মাছের বিচরণক্ষেত্রের প্রতিকূল পরিবর্তনের কারণে এ রকম বিপর্যয় ঘটছে বলে মনে করছেন সচেতন মহল।
জেলা মৎস্য অফিস সূত্রে জানা যায়, হাওর বেষ্টিত জেলার বেশিরভাগ এলাকাতেই বড় বড় নদী, খাল, ডোবাসহ বড় বড় জলাশয় রয়েছে। যা থেকে প্রচুর পরিমাণে মাছ আহরণ করা হয়। হাওর এলাকার মাছ জেলার চাহিদা মিটিয়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে সরবরাহ করা হয়। এতে খাদ্যের চাহিদাসহ অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হচ্ছে মাছ চাষীরা। এক যুগ আগেও এ অঞ্চলে বিভিন্ন প্রজাতির ছোট-বড় দেশীয় মাছ পাওয়া গেলেও বর্তমানে এসব মাছের অনেক প্রজাতিই বিলুপ্তির পথে।
বারহাট্টা উপজেলার সোহেল খান বলেন, একসময় হাওরসহ বিভিন্ন জলাভূমিতে দেশীয় মাছের প্রাচুর্য ছিল। কিন্তু এখন কৈ, শিং, মাগুর, টেংরা, পুঁটি, রাণী, শৌলসহ অনেক দেশীয় প্রজাতির মাছ এখন চোখেই পড়েনা। হাওরের জলাশয়সহ বিভিন্ন স্থানে সাধারণ জেলেরা মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করত। এই টাকা দিয়ে সন্তানদের লেখাপড়াসহ সংসার চালাত। কিন্তু বর্তমানে দেশীয় প্রজাতির মাছ না থাকা এবং অবাধে মাছ ধরতে না পারায় বিপাকে সাধারণ জেলেরা। অনেকেই পেশা পরিবর্তন করে অন্য পেশায় নিযুক্ত হতে বাধ্য হচ্ছে।
মদন উপজেলার হাওরপারের জেলে সচিন্দ্র বর্মন বলেন, বর্ষা মৌসুমে মা মাছগুলো ডিম ছাড়ে। ওই সময় এক শ্রেণির মৎস্য শিকারী এগুলো ধরে ফেলে। এতে দেশীয় প্রজাতির মাছের প্রজনন হয় না। তা ছাড়া কতিপয় মাছ চাষি হাওরের বিভিন্ন জলাশয় ইজারা নিয়ে বা ফসলি জমিতে মাছের ঘের তৈরি করে যার ফলে জেলেরা মাছ ধরতে পারেনা। মাছ ধরতে গিয়ে অনেকেই নির্যাতনের শিকার হয়। বর্তমানে জেলেরা মাছ আহরন না করে ধনীরা মাছ বিক্রির পেশায় বেশি নিয়োজিত হয়ে পড়েছে। তাই প্রকৃত জেলেরা জীবিকার তাগিদে অন্য পেশার যেতে বাধ্য হচ্ছে।
জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মোহাম্মদ শাহজাহান কবীর বলেন, এসব বিলুপ্ত প্রজাতি মাছগুলো সংরক্ষণ করতে বর্ষাকালে বিভিন্ন প্রজাতির মাছ হাওরে উন্মুক্ত করা হয়। বিভিন্ন স্থানে অভয়াশ্রম তৈরী করে দেশীয় প্রজাতির মাছ রক্ষার প্রক্রিয়া চলছে। এছাড়াও অবৈধ কারেন্ট জালের ব্যবহার বন্ধ করতে মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে অসাধু মাছ শিকারীদের আইনের আওতায় আনা হচ্ছে। জেলায় ৪৭ হাজার ১৩৫ জন নিবন্ধিত কার্ডধারী জেলে রয়েছে। প্রকৃত জেলেরা যাহাতে মাছ আহরন করতে পারে সেক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।