হিন্দু ধর্ম বিশ্বাসে- সরস্বতী বিদ্যা,
বাণী আর সুরের অধিষ্ঠাত্রী দেবী। মাঘ মাসের শুক্লপক্ষের পঞ্চমী তিথিতে শুভ্র রাজহংসে
চেপে দেবী সরস্বতী আসেন জগতে। গতকাল মধ্যরাতে প্রতিমা স্থাপন করে পূজার আনুষ্ঠানিকতা
সূচিত হয়েছে। চলবে রাত অবধি। সনাতন ধর্মীয় রীতিতে প্রত্যুষে দেবীকে দুধ, মধু, দই, ঘি,
কর্পূর, চন্দন দিয়ে স্নান করানো হবে। এরপর চরণামৃত নেবেন ভক্তরা। সকাল নয়টার দিকে হবে
বাণী অর্চনা। পুরোহিতরা ‘সরস্বতী মহাভাগে বিদ্যে কমল লোচনে/বিশ্বরূপে
বিশালাক্ষী বিদ্যংদেহী নমোহস্তুতে’ এ মন্ত্রে বিদ্যার দেবী সরস্বতীর আরাধনা
করবেন, পূজার আচার পালন করবেন। এরপর ভক্তরা পুষ্পাঞ্জলি দেবেন।
হিন্দুদের বিশ্বাস, সরস্বতী খুশি হলে বিদ্যা
ও বুদ্ধি অর্জিত হবে। প্রাচীন কালে তান্ত্রিক সাধকেরা সরস্বতী-সদৃশ দেবী বাগেশ্বরীর
পূজা করতেন। ঊনবিংশ শতাব্দীতে পাঠশালায় প্রতি মাসের শুক্লা পঞ্চমী তিথিতে ধোয়া চৌকির
উপর তালপাতার তাড়ি ও দোয়াতকলম রেখে পূজা করার প্রথা ছিল। শ্রীপঞ্চমী তিথিতে ছাত্ররা
বাড়িতে বাংলা বা সংস্কৃত গ্রন্থ, শ্লেট, দোয়াত ও কলমে সরস্বতী পূজা করত। সরস্বতী পূজা
উপলক্ষে হিন্দু সমপ্রদায় বিশেষ করে শিক্ষার্থীরা আজ বাণী অর্চনাসহ নানা ধর্মীয় অনুষ্ঠানের
আয়োজন করেছে। রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশের মন্দির ও গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে
পূজা ছাড়াও অন্য অনুষ্ঠানমালায় আছে পুষ্পাঞ্জলি প্রদান, প্রসাদ বিতরণ, ধর্মীয় আলোচনা
সভা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, সন্ধ্যা আরতি, আলোকসজ্জা প্রভৃতি।
সরস্বতী পূজা উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল
হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আলাদাভাবে বাণী দিয়েছেন। বাণীতে তারা হিন্দু সম্প্রদায়ের
সবাইকে আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানিয়ে বলেছেন, ‘বাংলাদেশ সাম্প্রদায়িক
সম্প্রীতির দেশ। হাজার বছর ধরে এ ভূখণ্ডে জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সকল ধর্মের মানুষ
মিলেমিশে একত্রে বসবাস করে আসছেন।’
সনাতন ধর্মের সংশ্লিষ্ট বিধান অনুসারে,
মাঘ মাসের শুক্লা পঞ্চমী তিথিতে সরস্বতী পূজার আয়োজন করা হয়। এ তিথি বসন্ত পঞ্চমী
নামেও পরিচিত। দেশে বর্ণাঢ্য আয়োজনের মধ্য দিয়ে সরস্বতী পূজা হয়ে থাকে। তবে করোনা
পরিস্থিতির কারণে এবার সীমিত আকারে ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে এই পূজার আয়োজন করা হয়েছে।
বিদ্যার দেবী সরস্বতী পূজা উপলক্ষে শনিবার
(৫ ফেব্রুয়ারি) সকাল ৭টা ৭ মিনিটে শুরু হবে পঞ্চমী তিথি। পরদিন রোববার সকাল ৭টা ৯ মিনিটে
পূজার তিথি সমাপ্ত হবে। শনিবার সকালে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, শিক্ষার্থীদের বাসা
ও পূজামণ্ডপে সরস্বতী পূজা হবে। পূজা শেষে ভক্তরা অঞ্জলি গ্রহণ করবেন। এদিন শিশুদের
হাতেখড়িরও আয়োজন করা হয়।
শ্বেতশুভ্র বসনা সরস্বতী দেবীর এক হাতে
বেদ, অন্য হাতে (পাণি) বীণা থাকে। এজন্য তাকে বীণাপাণিও বলা হয়। তাকে ঐশ্বর্যদায়িনী,
বুদ্ধিদায়িনী, জ্ঞানদায়িনী, সিদ্ধিদায়িনী, মোক্ষদায়িনী এবং শক্তির আধার হিসাবে সনাতন
ধর্মাবলম্বীরা আরাধনা করেন।
ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দির মেলাঙ্গনে মহানগর
সার্বজনীন পূজা কমিটি সনাতন ধর্মাবলম্বীদের অন্যতম ধর্মীয় উৎসব সরস্বতী পূজার আয়োজন
করেছে। সকাল ৯টায় পূজা অনুষ্ঠিত হবে বলে জানিয়েছেন মহানগর সার্বজনীন পূজা কমিটির সভাপতি
শ্রী শৈলেন্দ্রনাথ মজুমদার ও সাধারণ সম্পাদক অ্যাড. কিশোর রঞ্জন মণ্ডল। এছাড়াও রাজধানীসহ
দেশের বিভিন্ন পূজামণ্ডপে বিদ্যাদেবীর পূজার আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করা হবে।