মেয়েদের বিদেশে লোভনীয় ভালো বেতনে চাকরির
অফার দিতো। ভালো চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে দীর্ঘদিন ধরে সুন্দরী তরুণীদের মধ্যপ্রাচ্যে
পাচার করেছে ওরা। ফাঁদে পা দিলে নারীদের আনা হতো ঢাকায়। রাখা হতো দামি হোটেলে। এরপর
তৈরি করা হতো পাসপোর্ট, বিএমইটি কার্ড ও বিদেশ যাওয়ার করোনা পরীক্ষার সার্টিফিকেট।
মধ্যপ্রাচ্যের দেশ দুবাইয়ের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে প্রতি মাসে এক লাখ ২০ হাজার টাকা বেতনের
প্রলোভনে কমবয়সী নারীদের টার্গেট করে মানবপাচার করছিল একটি সিন্ডিকেটের চক্র।
ভুক্তভোগী ওইসব তরুণীরা জীবন-পরিবার নিয়ে
সুখ স্বপ্ন দেখলেও বিদেশে যাওয়ার পরও দেখেছেন অন্য পৃথিবী। দুবাই, কাতার, ওমানের বিভিন্ন
ড্যান্স ক্লাব এবং মিনি পতিতালয়ে বিক্রি করে দেয়া হতো ওদের। এক পর্যায়ে জীবন এবং জীবিকার
প্রয়োজনে ওইসব কাজে বাধ্য হতেন তারা। দেহের জৌলুস ফুরিয়ে গেলেই কেবল মুক্তি মিলে তাদের।
এমন ৮০ জন সুন্দরী তরুণীকে পাচারের পর সবশেষ তিনজনকে পাচারের সময়ই মুখোশ উন্মোচন হয়
তাদের।
গতকাল রবিবার রাতে বিমানবন্দর এলাকা থেকে
এই সিন্ডিকেটের তিন সক্রিয় সদস্যকে গ্রেফতার করে র্যাব-১ এর একটি দল। উদ্ধার করা হয়
ভুক্তভোগী তিন নারীকে।
সোমবার রাজধানীর উত্তরায় র্যাব-১ সদর
দফতরে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য দেন র্যাব-১ এর অধিনায়ক লে. কর্নেল আবদুল্লাহ
আল-মোমেন।
তিনি বলেন, রবিবার রাত ৮টায় বিমানবন্দর
এলাকার মনোলোভা রেস্টুরন্টের উল্টো পাশে অভিযান চালিয়ে আন্তর্জাতিক মানব পাচারকারী
চক্রের সদস্য আজিজুল হক, মোছলেম উদ্দিন ওরপে রফিক ও কাউছারকে আটক করা হয়। এসময় তাদের
কাছ থেকে ৩টি পাসপোর্ট, ৩টি মোবাইলফোন এবং নগদ ২৭ হাজার টাকা জব্দ করা হয়েছে। এছাড়া
পাচারের শিকার হতে যাওয়া ৩ নারীকে উদ্ধার করা হয়।
র্যাব-১ অধিনায়ক বলেন, দুবাইয়ে অবস্থান
করা মহিউদ্দিন ও শিল্পী দুবাইয়ে নারী পাচারের হোতা। এছাড়াও দেশে আরও দু'জন হোতা রয়েছেন,
তারা হলেন-নূর নবী ওরফে রানা এবং মনজুর হোসেন। এরা পলাতক। আর আটক আজিজুল হক মানব পাচার
চক্রের অন্যতম সমন্বয়ক। পলাতক থাকা তাহমিনা বেগম এবং আটক রফিক ও কাউছার কমবয়সী সুন্দরী
মেয়েদের টার্গেট করতেন। অতঃপর বিভিন্ন কোম্পানি ও গার্মেন্টস ফ্যাক্টরিতে চাকরি দেওয়ার
প্রলোভন দেখিয়ে বিদেশে নিয়ে যেতেন। তারা এ পর্যন্ত প্রায় ৮০ জন নারীকে এভাবে বিদেশ
পাচার করেছে।
পরে কথা হয় ভুক্তভোগী এক নারী রুমানা’র (২২) সঙ্গে
(ছদ্মনাম)। তিনি এ প্রতিবেদককে বলেন, তিনি আগে রাজধানীর একটি বেসকারি কোম্পানিতে কাজ
করতেন। দালাল চক্রের কাউসারের সঙ্গে তার পরিচয় হয় তাদেরই অফিসে। সেখানেই সে তাকে ওমানের
একটি হাসপাতালে ৮০ হাজার টাকা আকর্ষনীয় বেতনে চাকরির অফার দেয়। বছরে একবার এক মাসের
ছুটির কথা বলে। যাওয়ার আগে এক মাসের বেতনের কথাও তাকে দেয়ার কথা বলে কাউসার। তবে কোভিড-১৯
পরীক্ষার জন্য গেলে এক নারী তাকে বলেন-বিদেশে গিয়ে অনেকেই প্রতারিত হয়েছে। তার মনে
সন্দেহের উদ্রেক হয়। পরে তার এক আত্মীয়কে এ বিষয়টি অবহিত করেন। হয়তো আত্মীয়ই কোনোভাবে
আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সদস্যদের তার বিষয়ে অবহিত করেছেন। প্লেনে উঠে গেলেই হয়তো তার
জীবন অন্য রকম হয়ে যেতে পারতো।
পরে র্যাব কর্মকর্তা মোমেন বলেন, আমাদের কাছে আরো কয়েকটি অভিযোগ এসেছিল এই চক্রের বিষয়ে। পরে আমরা মাঠে নামি। বেড়িয়ে আসে তাদের সব অপকর্মের কাহিনি।