ঈদের সামনে বগুড়া শহরে বেপরোয়া পকেটমার চক্র। ঈদ যতই এগিয়ে আসছে পকেটমারদের তৎপরতা ততই বাড়ছে। গবাদী পশুর হাট ও জনাকীর্ণ এলাকায় ঘুরে বেড়াচ্ছে এখন পকেটমার। এদের খপ্পড়ে পড়ে প্রায় প্রতিদিনই কারো না কারোর খোঁয়া যাচ্ছে টাকা, মানিব্যাগ বা মোবাইল ফোন।
সংঘবদ্ধ পকেটমার চক্রের সদস্যদের হাতে সর্বশান্ত হচ্ছে মানুষ গবাদি পশু বিক্রেতা ও ক্রেতা সাধারণ। বিশেষ করে শহড় থেকে গ্রামাঞ্চলে আসা কুরবানি পশু ক্রেতা সাধারণদের তারা টার্গেট করে বেশি।
তবে পকেটমার চক্রের বিরুদ্ধে থানার পুলিশ ও আইন শৃঙংখলা বাহিনীর সদস্যে অভিযান শুরু করা হয়েছে। পকেটমার ঠেকাতে গরুর হাট গুলোতে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা। বাড়ানো হয়েছে গোয়েন্দা নজরদারি।
এ দিকে, ইতিপূর্বে পুলিশের হাতে ধরা পড়া রুমন ও শফিকুলসহ কয়েকজন পকেটমারের সাথে কথা বলে তাদের কাছ থেকে পাওয়া গেছে চমকপ্রদ তথ্য। তারা তথ্য দিয়েছে যে, বগুড়া শহরের উত্তর চেলোপাড়ায় সান্দারপট্টিতে হলো তাদের পকেটমার রাজ্য। সেইরাজ্যে বাস করে একশ’র বেশি পকেটমার। এ ছাড়াও ফুলবাড়ি, বগুড়া পাড়া, তিনমাথা কাটনার পাড়াসহ বিভিন্ন স্থানে পকেটমার বসবাস করে।
পকেটমার দলে আছে নারী ও শিশু সদস্যও। তাদের একাধিক সর্দার রয়েছে। সর্দাররাই পকেটমারদের নিয়ন্ত্রণ করে। সর্দাররা পকেটমারতে তাদের বিচিত্র কায়দা শেখায়, বিচিত্র নাম দেয়। হরেক নামে ডাকে। এর মধ্যে কোন কোন পকেটমারের নাম যেমন মিরপুর, ছক্কা, ভোট, বড় বুদো প্রভৃতি। ইতিপূর্বে তারা ধরাও পড়েছে। সদর থানায় অপরাধ ফাইলের বোর্ডে তাদের ছবি টানানো রয়েছে।
অনুসন্ধানে জানা যায়, সান্দারপট্টিতে কিভাবে পকেট মারতে হয় তা শেখায় ওস্তাদরা। বছর জুড়েই তারা বগুড়া শহর ছাড়াও বিভিন্ন স্থানে পকেটমারি করে মানুষের টাকা ও মোবাইল ফোন হাতিয়ে নেয়। ঈদের সামনে তাদের তৎপরতা আরও বাড়ে। এক রকম সারা বছরের কামায় ঈদ মৌসুমেই করে থাকে। সকাল থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত হাটে বাজারে চলে মানুষের কাছ থেকে টাকা পয়সা হাতিয়ে নেয়ার জন্য চলে তাদের মধ্যে প্রতিযোগিতা।
এ ছাড়া কারো কাছে মোটা অংকের টাকা থাকতে পারে এমন ইঙ্গিত পেলে তারা পরস্পর চেয়ারম্যান ও মেম্বার আছে বলে মাথা চুলকানোরো ভান করে ইশারা দেয়। সেই ইশারা পেয়ে সহযোগী পকেটমাররা কাজ সাড়ে। পকেটমাররা পুলিশকে ‘বুবাই’ বলে। পুলিশকে তারা জমের মত ভয় করে।
পুলিশ দেখলেই ‘বুবাই’ এসেছে বলে দ্রুত পালিয়ে যায়। ওস্তাদরা পকেটমারদের ‘শিল্পী’ আর ভুক্তভোগীদের ‘ঠেকুয়া’ বলে ডাকে। অনুসন্ধানে আরও জানা যায়, পকেটমারদের প্রধান হাতিয়ার ব্লেড। তারা এই ব্লেড ব্যবহার করেই বেশি পকেট কাটে। তারা বিশেষ কায়দায় মুখের মধ্যে ব্লেড রাখে। আবার জনগণের হাতে ধরা পড়লে সেই ব্লেড দিয়ে নিজের জিহবা কেটে রক্তাক্ত করে।
তা দেখে অনেক সময় জনতা পকেটমারকে ছেড়েও দেয়। সাতমাথায় রাস্তা পার হতে গেলে পকেটমাররা একসাথে পার হতে যায়। যখন পথচারী যানবাহনের গতিবিধি রেখে রাস্তা পার হতে যান তখনই ‘ঝোপ বুঝে কোপ মারে’ পকেটমাররা। পথচারীর অসতর্কতার সুযোগ নিয়ে তারা পকেট ফাঁকা করে। এ ছাড়া তারা ডাকঘর, ব্যাংক, বীমা অফিস, হাট বাজার, বিভিন্ন হাসপাতাল, ক্লিনিকসহ আদালত পাড়াসহ কমপক্ষে বিভিন্ন স্থানে এ সব পকেটমার সদস্যরা সক্রিয় থাকে।
ফলে তাদের খপ্পড়ে পড়ে সর্বশান্ত হন সর্বসাধারণ। নিমিষে হাত থেকে হাওয়া হয়ে যাচ্ছে ব্যাগ,পকেট থেকে তুলে নেয়া হচ্ছে মানি ব্যাগ, মোবাইল সেট, কেনাকাটা করা ব্যাগ। তবে অধিকাংশ ক্ষেত্রে এ সব বিষয়ে ঝামেলা এড়াতে ভুক্তভোগীরা থানায় অভিযোগ না করে কান্নাকাটি কিংবা হায় হুতাশ করে বাড়িমুখো হতে বাধ্য হন । ফলে এ বিষয়টি আইন প্রয়োগকারী সংস্থার লোকজনের কাছে অজানা থেকে যায়।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার স্নিগ্ধ আকতার বলেন, পকেটমারদের ধরতে পুলিশের অভিযান অব্যাহত আছে। কুরবানি পশু ক্রেতা-বিক্রেতা যাতে নির্বিগ্নে কেনা-কাটা করতে পারে। তিনি বলেন চলাফেরার সময় মানুষকে সতর্ক হতে হবে।