আসন্ন ঈদুল আজহা ঘিরে বগুড়ার শেরপুর উপজেলায় প্রায় ৭০ হাজার পশু প্রস্তুত করেছেন স্থানীয় খামারিরা। উপজেলার ১০ ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভায় প্রায় ৬ হাজার ছোট বড় খামারে এসব গরু প্রস্তুত করা হয়েছে।উপজেলার চাহিদা মিটিয়ে বাইরের উপজেলাগুলোতেও পাঠানো হবে পশু।
উপজেলা প্রাণিসম্পদ দপ্তর সূত্র জানায়, এবার উপজেলায় কোরবানির পশুর লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয় ৫৭ হাজার ৯২২। তবে খামারি ও প্রান্তিক কৃষক মিলে এবার ৭০ হাজার ১৬২টি পশু প্রস্তুত করেছেন। এর মধ্যে ১৮ হাজার ৮৩৫টি ষাঁড় ও বলদ ৬ হাজার ৮৩৬টি, গাভী ৪ হাজার৫৭২টি, মহিষ ১১৪টি, ছাগল ৩৬ হাজার ৬৭৩টি, ভেড়া ৩ হাজার ১৩২টি রয়েছে। এই সব পশু প্রায় ৩৬৫ কোটি টাকা বিক্রিয় হবে। কেনাবেচার জন্য উপজেলার ১০ ইউনিয়নের ১ পৌরসভায় ১১টি স্থায়ী অস্থায়ী হাট বাজার রয়েছে।
জানা গেছে, প্রতি বছর কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে উপজেলার খামারি ও কৃষকরা গরু, ছাগল, ভেড়া ও মহিষ মোটাতাজাকরণে ব্যস্ত থাকেন। দেশে গত তিন বছর ভারত থেকে কোরবানির হাটে পশু কম আমদানি করায় দেশি গরুর চাহিদা ছিল বেশি। খামারিরা ভালো লাভও করেছিলেন। তাই এ বছরও কোরবানিকে সামনে রেখে দেশি গরু ও ছাগল মোটাতাজা করতে ব্যস্ত সময় পার করছেন উপজেলার খামারি ও কৃষকরা। এ বছরও ভারতীয় গরু না এলে বেশ লাভবান হবেন বলে আশা করছেন তারা।
জানা যায়, উপজেলায় স্থায়ী ও অস্থায়ী মোট ১১টি হাটে গবাদি পশু বেচাকেনা হয়। ১১টি হাটের মধ্যে উপজেলার শেরপুর বারদুয়ারি হাট, ছোনকা হাট, জামাইল হাট, কয়েরখালী হাট, খামারকান্দি হাট, ঘোলঘোড়িয়া হাট গরুর বাজারগুলো বড়। এসব বাজারে বিভিন্ন স্থান থেকে বেপারিরা এসে গরু কিনে দেশের বিভিন্ন জেলায় নিয়ে বিক্রি করেন। এছাড়া স্থানীয় বেপারিরা এলাকায় কৃষকের বাড়ি বাড়ি গিয়ে গরু কিনে তা বিভিন্ন বাজারে বিক্রি করেন।
বর্তমানে উপজেলার প্রায় ৬ হাজার মানুষ (খামারি, কৃষক ও বেপারিরা) এ পেশায় রয়েছেন। খামারি ছাড়াও উপজেলার সাধারণ কৃষকরা বাড়তি ইনকামের জন্য বাড়িতে একটি দুইটি করে গরু মোটাতাজা করেন। ঈদের সময় আকার ভেদে গত বছর প্রতিটি গরু ৭০ হাজার থেকে ১৫ লাখ টাকায় বিক্রি করেন এখানকার গবাদিপশুর খামারি ও কৃষকরা।
শেরপুর উপজেলার বিশালপুর মান্দাইন এলাকার সমতা ডেইরী এন্ড এগ্রো ফার্মের স্বত্বাধিকার মিলটন বলেন, আমরা সম্পন্ন সেবা মানসিকতা নিয়ে অর্গনিক পদ্ধুতিতে বিশেষ যত্নের সাথে কোরবানির জন্য গরু মোটাতাজা করে থাকি। কোরবানিতে আমাদের গরুর চাহিদা অনেক বেশি। সর্বোপরি মানুষের স্বাস্থ্যঝুঁকির বিষয়টি সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে থাকি। তিনি বলেন, পশুখাদ্যের দাম অস্বাভাবিক বেড়ে গেছে। যার প্রভাব পড়বে কোরবানির বাজারে।
শেরপুর উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো: রায়হান পিএএ বলেন, শেরপুর উপজেলায় ৭০ হাজার ১৬২টি পশু প্রস্তুত রয়েছে। এসব কোরবানির পশু উপজেলার চাহিদা মিটিয়ে পার্শ্ববর্তী উপজেলার বিভিন্ন হাটসহ রাজধানী ঢাকার বিভিন্ন হাটে বিক্রি হবে। কুরবানী ঘিরে শেরপুর বগুড়ায় লেনদেন হবে প্রায় ৪১৮ কোটি টাকা(কুরবানী যোগ্য পশু থেকে ৩৬৫ কোটি মসল, দাবটি, যানবাহন অন্যান্য থেকে ৫৩ কোটি টাকা।
উপজেলায় সকল স্থায়ি অস্থায়ী ১১ টি পশুর হাটে নিরাপদ পশু নিশ্চিত লক্ষ ভেটেরিনারি মেডিকেল টিম এবং মোবাইল ভেটেরিনারি ক্লিনিক সেবা প্রদান অব্যাহত রাখছে! প্রাকৃতিক ভাবে পশু প্রস্তুত, কুরবানী এবং কুরবানি পরবর্তী বর্জ্য ব্যাবস্থাপনায় সচেতনতা কার্যক্রমসহ খামার ভিত্তিক, অফলাইন অনলাইন কুরবানির পশু বিক্রি এবং ক্যাশলেস লেনদেনের ক্ষেত্রে ও ব্যাংক কর্তৃপক্ষের সাথে যৌথ কার্যক্রম অব্যাহত রাখছে উপজেলা প্রাণিসম্পদ দপ্তর ও ভেটেরিনারি হাসপাতাল শেরপুর বগুড়া।
জানা গেছে, এবার কোরবানির জন্য সবচেয়ে বেশি গরু প্রস্তুত করেছে উপজেলার বিশালপুর ইউনিয়নের মান্দাইন এলাকায় অবস্থিত সমতা ডেইরী এন্ড এগ্রো ফার্ম।
সমতা ডেইরী এন্ড এগ্রো ফার্মের স্বত্বাধিকারি মিল্টন বলেন, কোরববারি জন্য আমার খামারে ছোট-বড় ১শ ২০গরু টি প্রস্তুত করা হয়েছে। ইতোমধ্যে বিক্রিও শুরু হয়েছে। অনেকে গরু পছন্দ করে বুকিং দিচ্ছে। আমরা খামার থেকে সরাসরি ও অনলাইনে মাধ্যমে গরু বিক্রি করে থাকি।
তিনি আরো বলেন, আমার খামারে স্ব-পরিবারে এসে গরু পছন্দ করে গরু কেনার সুযোগ রয়েছে। এখন গরু ক্রয় করলেও ক্রেতা ঈদের আগের দিন ও ঈদের দিন গরু নিয়ে যেতে পারবে।