বগুড়ার শাজাহানপুরে
ইউপি নির্বাচনী বিরোধ ও পারিবারিক শত্রুতার জেরে পাঁচ বছরের শিশু রোমানকে হত্যা ও লাশ
গুমের দায়ে দুইজনের মৃত্যুদণ্ড এবং একজনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।
মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্তদের
৫০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্তকে ২০ হাজার টাকা জরিমানা ও
অনাদায়ে তাকে আরও এক মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ডাদেশ দেওয়া হয়েছে।
দীর্ঘ এক যুগ
পর সোমবার দুপুরে বগুড়ার তৃতীয় অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ বেগম রুবাইয়া ইয়াসমিন জনাকীর্ণ
আদালতে এ রায় ঘোষণা করেন।
মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত
দুইজন পলাতক রয়েছেন; গ্রেফতারের পর উচ্চ আদালতের অনুমোদন সাপেক্ষে তাদের রায় কার্যকর
করা হবে।
মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্তরা
হলেন- বগুড়ার শাজাহানপুরের ক্ষুদ্র কুষ্টিয়া গ্রামের আবদুল খালেক ও একই উপজেলার চোপীনগর
দক্ষিণপাড়ার আবদুল মাজেদ। যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত হলেন- ক্ষুদ্র কুষ্টিয়া গ্রামের আবদুর
রাজ্জাক।
আদালত ও এজাহার
সূত্র জানায়, স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বগুড়ার শাজাহানপুর উপজেলার
ক্ষুদ্র কুষ্টিয়া গ্রামের শিশু রোমানের দাদার সঙ্গে আসামি আবদুল খালেক ও আবদুল মাজেদের
দ্বন্দ্ব শুরু হয়। এছাড়া উভয় পরিবারের মধ্যে জমি নিয়ে বিরোধ ছিল। তারা এসবের প্রতিশোধ
নিতে শিশু রোমানকে হত্যার পরিকল্পনা করেন।
তারা গত ২০১১
সালে ২৩ আগস্ট আবদুর রাজ্জাকের মাধ্যমে চকলেটের প্রলোভনে শিশু রোমানকে ডেকে আনে। বিনিময়ে
তাকে আট হাজার টাকা বকশিশ দেওয়া হয়। সন্ধ্যার দিকে খালেক ও মাজেদ শ্বাসরোধে শিশুটিকে
হত্যার পর লাশ গুম করেন। এ ব্যাপারে শিশুর বাবা মাহবুবুর রহমান শাজাহানপুর থানায় হত্যা
ও লাশ গুমের মামলা করেন।
এদিকে রোমান নিখোঁজের
পর খালেকের আচরণ সন্দেহজনক হওয়ায় পুলিশ তাকে গ্রেফতার করে। জিজ্ঞাসাবাদে তিনি ঘটনা
ফাঁস করে দেন। এছাড়া তিনি অপর আসামি মাজেদ ও রাজ্জাকের জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেন।
তাদের দেওয়া তথ্য অনুসারে পুলিশ পাঁচ দিন পর ২৮ আগস্ট প্রতিবেশী খলিলের বাড়ির সেপটিক
ট্যাংক থেকে রোমানের পচন ধরা মরদেহ উদ্ধার করে। পরবর্তীতে আসামিরা জামিনে ছাড়া পান।
বাদীপক্ষের সাবেক
কৌঁসুলি অ্যাডভোকেট আবদুল লতিফ পশারী ববি জানান, তদন্তকারী কর্মকর্তা যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত
আবদুর রাজ্জাকের বিরুদ্ধে ফাইনাল রিপোর্ট (দায় থেকে মুক্তি) দিয়েছিলেন। পরে তথ্য উপাত্ত
দিয়ে মামলা পরিচালনা করায় তার বিরুদ্ধে চার্জশিট দেওয়া হয়। তিনি এ রায়ে সন্তুষ্ট।
আদালতের অতিরিক্ত
পিপি জহুরুল ইসলাম জানান, আসামি আবদুল খালেক ও আবদুল মাজেদ আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক
জবানবন্দি দেন। জামিনের পর থেকে থেকে তারা পলাতক ছিলেন। ধার্য তারিখ সোমবার দুপুরে
শুধু আসামি আবদুর রাজ্জাক উপস্থিত হন। বিচারক বেগম রুবাইয়া ইয়াসমিন দীর্ঘ এক যুগ পর
রায় ঘোষণা করেন।