
বেতাগী (বরগুনা) প্রতিনিধি:
বরগুনার বেতাগীতে ভিজিএফের ১শ বস্তা চাল জব্দের ঘটনায় চলছে নানা চালবাজী। এতে ফেঁসে গেছেন চাল জমা রাখা ঘর মালিক কবির হাওলাদার। মিথ্যা মামলায় হয়রানি করার প্রতিবাদে গত ১৪ এপ্রিল তিনি বরগুনায় সংবাদ সম্মেলন করেন আর এনিয়ে থানায় লোক দেখানো মামলা হলেও এখনো ধরা ছোঁয়ার বাইরে পাচারচেষ্টাকারী মুল হোতারা।
উপজেলা মৎস্য অর্গানাইজার সঞ্জয় বাদি হয়ে ৪ মার্চ মোকামিয়া ইউনিয়নের দুই নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য ফারুক হোসেন খোকনের চাচাত ভাই বেতাগী সদর ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের কবির হাওলাদারের নামে ২৫/গ দ্বারায় মামলা করেন, যার নম্বর- ০২।
বেতাগী থানার অফিসার ইনচার্জ মো. আনোয়ার হোসেন এ তথ্য নিশ্চিত করে বলেন, মামলা হয়েছে। এখন আইনানুগ তার বিরুদ্ধে ব্যাবস্থা নেওয়া হবে।
আরও পড়ুন: মোটরসাইকেল চলাচলে প্রস্তুত পদ্মা সেতুর নির্দিষ্ট লেন
জানা গেছে, জাটকা নিষিদ্ধকালীন সময়ের মোকামিয়া ইউনিয়নের জেলেদের জন্য বরাদ্দকৃত ভিজিএফের চাল একটি ঘরে মজুদ রাখা হয়েছে। এমন গোপন সংবাদের ভিত্তিতে রোববার ২ মার্চ রাত সারে ১১ টায় মোকামিয়া ইউনিয়নের দুই নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য ফারুক হোসেন খোকনের চাচাত ভাই বেতাগী সদর ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের কবির হাওলাদারের বাড়িতে অভিযান পরিচালনা করে ১শ বস্তাচাল জব্দ করে বেতাগী মৎস্য কর্মকর্তা সমাপ্তি সাহা।
এ নিয়ে গঠিত তদন্ত কমিটির ৩ দিনের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের নিদের্শনা থাকলেও এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত কোন প্রতিবেদন পেশ করা হয়নি এমনটাই সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন। তাছাড়া তদন্ত কমিটি নিয়েও রয়েছে ধোঁয়াশে। যাকে তদন্ত কমিটির প্রধান করা হয়েছে। তিনিই তদন্ত কমিটির সংবাদ সম্মেলনে কবির হাওলাদার অভিযোগ করেন, আমার অনুপস্থিতিতে আমার স্ত্রী মলিনা বেগমের উপর প্রভাব খাটিয়ে ঘরের বারান্দায় মোকামিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান গাজী জালাল আহম্মেদের নেতৃত্বে সাময়িক চাল জমা রেখে যায়।
এ ঘটনায় ওই রাতেই একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে ছিলো উপজেলা প্রশাসন। সেই তদন্ত শেষ হওয়ার আগেই ইউপি চেয়ারম্যান ও ইউপি সদস্যকে বাঁচানোর জন্য উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে আমাকে ফাঁসাতে মামলা করা হয়েছে। তিনি আরও অভিযোগ করেন, যারা চাল রেখে গেলো, তারা প্রশাসনের সামনে স্বীকার করলো যে তারাই আমার বাড়িতে চাল রেখে গেছে। কিন্ত তারা আসামী হলোনা কেন? আমি অসুস্থ মানুষ, আমি জানতে চাই কোন অপরাধে আমার নামে মামলা হলো? আমি এই দেশের নাগরিক, আমার জানার অধিাকার রয়েছে, কিন্ত আমাকে তারা জানাচ্ছেনা আমি কি দোষ করেছি। আমি মামলা থেকে পরিত্রান চাই।
স্থানীয়রা অভিযোগ করেন, চালের সাথে প্রকৃত অপরাধী কারা তা এখন স্থানীযদের মুখে মুখে এবং পাচারচেষ্টাকারী সংশ্লিষ্টরা জনপ্রতিনিধিরাও একাধিক গণমাধ্যমে এক ইউনিয়নের চাল অন্য ইউনিয়নে মওজুদ করার ঘটনা স্বীকার করলেও (যার একাধিক অডিও- ভিডিও রয়েছে) স্বাভাবিকভাবেই তাদের বিরুদ্ধে মামলা হওয়ার কথা কিন্ত তা না করে ঘটনাটি ভিন্নখাতে প্রবাহিত করার জন্য প্রশাসন চাল জমা রাখা ঘর মালিককে আসামী করে তার বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে।
এমনকি মোকামিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও মোকামিয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি গাজী জালাল আহমেদও এ প্রতিবেদককে বলেন, ‘জনগণের কথা বিবেচনা করে অতিরিক্ত পরিবহন খরচ বাঁচাতে ওই চাল এখানে রাখা হয়েছে। সকলের সুযোগ সুবিধার কথা বিবেচনা করে আমি চেয়ারম্যান হিসেবে এই চাল এখানে রেখেছি। ’যদি বিতরণের উদ্দেশ্যেও জমা রাখা হয় তবুও এক ইউনিয়নের চাল অন্য ইউনিয়নে মওজুত রাখা কতটা যৌক্তিক? তার পরেও প্রশাসনের এহোনো পদক্ষেপে জনমনে নানা প্রশ্নও রহস্যের তৈরি করেছে। তাদের ধারনা ধামাচাপা দেওয়ার উদ্দেশ্যেই এমনটিই করা হয়েছে।
স্থানীয় একাধিক জেলেরা জানান, মোকামিয়া ইউনিয়নের সকল ওয়ার্ডের জেলেদের চাল বিতরণ ৩১ মার্চ সম্পন্ন হয়েছে অথচ আমাদের এই দুই নম্বর ওয়ার্ডের অনেক জেলেকে ৮০ কেজির পরিবর্তে মাত্র ৩০ কেজি চাল দেয়া হয়েছে। আমারা আমাদের প্রাপ্য চাল পেতে চাই এবং এই চাল নিয়ে চালবাজি কারীদের দৃষ্টান্তমূলক বিচারের দাবী করছি।
বেতাগী উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা সমাপ্তি সাহা বলেন, আমি উপস্থিত থেকে যেহেতু চাল জব্দ করেছি, সেখানে আমি কি করে আবার সেই তদন্ত কমিটিতে থাকি। তবে আমার দপ্তরের পক্ষ থেকে যথাযথভাবে দায়িত্ব পালনের চেষ্টা এবং ইউএনও স্যারের নির্দেশে চাল জমা রাখা ব্যক্তি কবির হাওলাদারের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে।
বেতাগী উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো: সুহৃদ সালেহীন জানান, এখনো তদন্ত প্রতিবেদন আমার হাতে পৌঁছেনি। প্রতিবেদন হাতে পেলে সব কিছু বলতে পারবো।