বেতাগী (বরগুনা) প্রতিনিধি:
বরগুনার বেতাগীতে পৌর শহরের মূল রক্ষা বাঁধের প্রধান সড়টি বিষখালী নদীর ভাঙনে প্রকট আকারে ফাটল দেখা দিয়েছে। এতে আতঙ্কে কাটছে শহরের হাজার হাজার ব্যবসায়ী ও সাধারণ বাসিন্দাদের সময়।
বিশেষ করে ঘূর্ণিঝড় মোখা’র বার্তা রীতিমতো দেশের উপকূলীয় এ উপজেলাবাসীকে দুশ্চিন্তায় ফেলে দিয়েছে। আবহাওয়া অধিদপ্তরের এ আভাসে ভারি বর্ষণ আর জোয়ারে পানি বৃদ্ধি পেলে এই শহর রক্ষা বাঁধের এ সড়কটি কতটা টিকে থাকবে তা নিয়ে সবাইকে ভাবিয়ে তুলছে।
এ উপজেলার প্রাণকেন্দ্র ও সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এলাকা বেতাগী পৌর শহর। প্রতি বছর ঝড়-জলোচ্ছাস থেকে পৌরবাসীকে মায়ের মত আগলে রাখেন ও রক্ষা করেন এ বাঁধটি। কিন্ত ভাঙনরোধ প্রকল্পের ধীর গতির কারণে বর্ষার আগে কাজ শুরু না হওয়ায় নতুনভাবে লঞ্চঘাটের পশ্চিম দিকে শহর রক্ষা বাঁধের উপর নির্মিত পাকা সড়কের একাধিক স্থানে ভযাবহ আকারে ফাটল দেখা দেওয়ায় যে কোন সময় সড়কের দেবে যাওয়া অংশ সহ সড়কের দুই পাশের স-মিল, আসবাবপত্রও কাঠের দোকান, বাজার ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়াকশর্প ও ছোট-বড় মিলিয়ে চায়ের দোকান এবং লঞ্চঘাট সংলগ্ন এলাকা রক্ষা করা এখন শঙ্কা দেখা দিয়েছে।
আরও পড়ুন >> শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড়‘ মোকা’ নিয়ে আশঙ্কায় সাতক্ষীরার উপকূলবাসী
সরজমিনে স্থানীয়রা জানান, ফলে নদীর তীরবর্তী বসবাসরত বাসিন্দাদের কাটছে নির্ঘুম রাত। ভাঙন যে ভাবে ধেয়ে আসছে তাতে দ্রুত বিকল্প ব্যবস্থা করা না হলে যানবাহন ও মানুষ চলাচলে চরম সংকটে পড়তে হবে এবং ভাঙন আরও প্রবল আকার ধারণ করতে পারে। এভাবেই দীর্ঘদিন ধরে ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে পৌর এলাকাসহ আশ-পাশের কয়েক এলাকার মানুষ। এতে তাদের পোহাতে হচ্ছে চরম দুর্ভোগ আর ভোগান্তি। জোয়ার ভাটার সময় এখানকার বেশিভাগ মানুষকে সতর্ক থাকতে হয়।
সরজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, ইতোপূর্বে বিষখালী নদীর ভাঙনে বিলীন হয়ে গেছে লঞ্চঘাট, বন্দর, ছোট ছোট কলকারখানা, শত শত দোকান পাট, ঘরবাড়ি, ব্যবসা ও সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান। তলিয়ে গেছে ভেড়িবাঁধ, ধানের খেত, মসজিদ ও মাদ্রাসা। আর এখন ভাঙন ঝুঁকিতে রয়েছে নব নির্মিত মডেল মসজিদ, উপজেলা পরিষদ কমপ্লেক্স, লঞ্চ ঘাটের যাত্রী ছাউনি, শত বছরের পুরানো ঐতিহ্যবাহী কালি মন্দির, ভেড়িবাঁধ ও শহরের বাকী এলাকা।
জানা গেছে, ২০১৭ সালে স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রনালয়ের সচিব আব্দুল মালেক একটি প্রকল্পের ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করেন। এ প্রকল্পের দৃশ্যমান যে টুকু রয়েছে তা শুধূ ভিত্তি প্রস্তর ফলক। যা এখন ভাঙনের মুখে পড়ে নদীগর্ভ বিলীন হতে আর সময়ের ব্যাপার মাত্র।
সর্বশেষ গত বছরের ২২ ফ্রেরুয়ারি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে ২০২১-২২ অর্থ বছরের জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) ১১তম সভায় বরগুনা জেলাধীন পোল্ডার নং ৪১/৭ এ বেতাগী শহর রক্ষা সহ বিষখালী নদীর অন্যান্য ঝুকিপূর্ণ অংশের প্রতিরক্ষা কল্পে ৪০৪ কোটি টাকার প্রকল্পের অনুমোদন ও বরাদ্ধ দেওয়া হয়। কিন্ত দিন দিন নদীর ভাঙন তীব্রতর হলেও অদ্যাবধি ভাঙন প্রতিরোধে পানি উন্নয়ন বোর্ড কোনো কাজ শুরু করেনি। কবে নাগাদ কাজ শুরু হবে তাও কেউ সঠিকভাবে বলতে পারছেন না। বর্ষা মৌসুমের আগে কাজ শুরু না হওয়ায় স্থানীয় বাসিন্দাদের মাঝে ক্ষোভ ও হতাশা বিরাজ করছে। তবে বরগুনা জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ড দাবি করেন, বিষখালী নদীর ভাঙন রোধে শহর রক্ষাবাঁধ প্রকল্পটির টেন্ডার প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে। এখনো চূড়ান্ত হয়নি।
শহর রক্ষাবাঁধ সংলগ্ন বাসিন্দা মো: শাহআলম রুবেল বলেন, ‘ভাঙনের কবলে আমরা নিঃস্ব হয়ে যাচ্ছি, বাপ-দাদার বসতভিটাও চলে যাচ্ছে। এখনো ভাঙনরোধে প্রকল্পের কাজ শুরু না করে এভাবে চলতে থাকলে আমরা কোথায় গিয়ে দাঁড়াব?’
সড়কের পাশে ঝালকাঠী ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়াকশর্পের মালিক মো: সোহেল হাওলাদার বলেন, গত কয়েক মাস ধরে তাঁর দোকান এলাকায় ভাঙন বেড়েছে। বর্তমানে পাকা সড়কে ফাটলে তার প্রতিষ্ঠানের খুব কাছে আসায় নদী গর্ভে বিলীন হতে তা আর সময়ের ব্যাপার মাত্র।
বেতাগী পৌরসভার মেয়র এবিএম গোলাম কবির জানান,‘ নানা জটিলতায় বেতাগী শহর রক্ষা বাঁধ প্রকল্পটি আটকে ছিলো। তবে আশা করি দ্রুত এর সমাধান হবে।’
এ বিষয়ে বরগুনা জেলা কার্যালয়ের পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো: রাকিব বলেন, সেখানে অনেক জায়গায় ফাটল দেখা গেছে। গত বৃহস্পতিবার ঐ এলাকায় সরজমিনে গিয়ে রক্ষা বাঁধের সড়কের ভাঙনের অবস্থা পর্যক্ষেন ও পরিদর্শন করে এসেছি। ইতোমধ্যে বিষয়টি উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে এবং জরুরি মেরামতের জন্য দ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
তাছাড়া বিষখালী নদীর ভাঙন রোধে শহর রক্ষাবাঁধ প্রকল্পটির টেন্ডার প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে। রেড কোর্ট বেশি হওয়ায় ঠিকাদার অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন। তবুও খুব শীঘ্রই পুন:রায় টেন্ডার প্রক্রিয়া শুরু করা হবে।