জ্বালানি তেলের
দাম বৃদ্ধির পর সরকারের নানা উদ্যোগ সত্ত্বেও বিভিন্ন নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্য
লাগামছাড়া হয়েছে। চাল, ডাল, আটা, চিনি, ভোজ্যতেল, ডিম ও পেঁয়াজের মতো পণ্যের পাশাপাশি
নিত্য ব্যবহার্য সাবান, সোডা এবং টুথপেস্টের মতো পণ্যসামগ্রীরও দাম বেড়েছে। গ্যাস ও
বিদ্যুতের দামও ইতোমধ্যে কয়েক দফা বেড়েছে। সব মিলিয়ে জীবনযাত্রার ব্যয় মেটাতে এখন দিশেহারা
সীমিত আয়ের মানুষ। এমন পরিস্থিতিতে বাজারে কারসাজি রুখতে চাল আটা ময়দা তেলের মতো সাতটি
খাদ্যপণ্যসহ মোট ৯ পণ্যের দাম নির্ধারণের ঘোষণা দিয়েছে সরকার।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়
সূত্র জানিয়েছে, নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য পেঁয়াজ, ভোজ্যতেল এবং মসুর ডালের মূল্য এরই মধ্যে
নির্ধারণ করা হয়েছে। এখন নতুন করে আরও ৬ পণ্য রড, সিমেন্ট, আটা, ময়দা, চাল ও ডিমের
দাম শিগগিরই নির্ধারণ করা হবে। এসব পণ্যের যৌক্তিক দাম কত হবে সে বিষয়ে আন্তর্জাতিক
মূল্য, শুল্ক, বাজারের চাহিদা-সরবরাহ বিবেচনায় নিচ্ছে মন্ত্রণালয়। যা নিয়ে এখন কাজ
করছে ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের
অতিরিক্ত সচিব (ট্রেড সাপোর্ট মেজারস উইং) মো. হাফিজুর রহমান বলেন, ট্যারিফ কমিশন ৬
পণ্যের মূল্য নির্ধারণে একটি বিশেষ প্রতিবেদন তৈরি করছে। কমিশনের প্রতিবেদন পাওয়ার
পর তা চূড়ান্ত করবে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
ট্যারিফ কমিশন
সূত্র জানিয়েছে, সম্প্রতি বৈশ্বিক অস্থিতিশীলতা ও অভ্যন্তরীণ বাজারে ডলারের মূল্যবৃদ্ধির
সুযোগ নিয়ে নিত্যপণ্যের মূল্য অতিমাত্রায় বৃদ্ধি করা হয়েছে। সে বিষয়গুলো তাদের নজরে
রয়েছে। এ ছাড়া আর্ন্তজাতিক বাজারের গতিবিধি, দেশের অভ্যন্তরীণ উৎপাদন, চাহিদা, সরবরাহ
পরিস্থিতি এবং শুল্কায়নের বিষয়টি মাথায় রেখেই ৬ পণ্যের যৌক্তিক মূল্য নির্ধারণ করা
হবে। এ বিষয়ে তাদের কাজ প্রায় শেষের দিকে। আগামী সপ্তাহে চূড়ান্ত প্রতিবেদন বাণিজ্য
মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে। অস্থির রডের বাজার স্থিতিশীল রাখতে প্রতি টনে এমআরপি বসানো
হতে পারে। একই সঙ্গে মোড়কজাত পণ্যের মতো সিমেন্টের বস্তায়ও বসতে পারে এমআরপি। এ বিষয়ে
কমিশনের সদস্য (বাণিজ্য নীতি) শাহ মো. আবু রায়হান আল বেরুনী বলেন, মূল্য নির্ধারণ সংক্রান্ত
প্রতিবেদন তৈরির কাজ চলছে। এটি করা হচ্ছে ব্যবসাবান্ধব ও ভোক্তাদের সুবিধার বিষয় মাথায়
রেখে। এ ছাড়া মুক্তবাণিজ্য অর্থনীতির ভিত্তিও নজরে নেওয়া হয়েছে। আশা করি শিগগির প্রতিবেদন
চূড়ান্ত করে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে।
এদিকে বিভিন্ন
নিত্যপণ্যের দাম নির্ধারণ করে দেওয়া নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া পাওয়া গেছে। বেসরকারি গবেষণা
প্রতিষ্ঠান পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর
বলেন, পণ্যের মূল্য নির্ধারণে বাজারে কোনো প্রভাব পড়বে না। বিষয়টি বাজারে প্রয়োগ করতে
গেলে উল্টো ফল হতে পারে। এতে বাজার থেকে পণ্য উধাও হয়ে যাওয়ার শঙ্কা রয়েছে। ভোজ্যতেল
ছাড়া এ ধরনের হস্তক্ষেপ করা ঠিক হবে না। দেশে ভোজ্যতেলের বাজার ৪-৫টি কোম্পানি নিয়ন্ত্রণ
করে। নিত্যপণ্যের বাজার স্থিতিশীল রাখতে বাজারে তথ্যের সরবরাহ করতে হবে। দিতে হবে বাজারে
চাহিদা কত, সরবরাহের চিত্র। চাহিদার চেয়ে সরবরাহে ঘাটতি থাকলে নিতে হবে আমদানির উদ্যোগ।
আর এটি হবে তথ্যের ভিত্তিতে।
তিনি আরও বলেন,
সরকার একটি বিষয় নজরদারি করতে পারে, অত্যাবশ্যকীয় এসব পণ্যের এক মাসের গড় মূল্য, আর্ন্তজাতিক
বাজার দর এবং শুল্ক-করের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে বাজারে পণ্য বিক্রি হচ্ছে কিনা। সেখানে
অসঙ্গতি পেলে ব্যবস্থা নিতে পারে। পাশাপাশি টিসিবির মাধ্যমে বাড়াতে পারে পণ্য সরবরাহ।