হত্যার শিকার অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা, এএসপি আনিসুল, মাথায় টুপি পরা শহিদুন্নবী জুয়েল এবং যুবক রায়হান আহমেদ।
আর একটিও হত্যা নয়, রাষ্ট্রের কাছে প্রত্যেক নাগরিক পেতে চায় এমনই অভয়। ২০২০ সাল প্রায় শেষ। আর মাত্র কয়েকদিন পর শুরু হবে নতুন বছর ২০২১। কোনও অঘটনই মানুষের প্রত্যাশিত নয়। তবুও দেশের কোথাও না কোথাও ঘটে চলছে ভয়ঙ্কর সব ঘটনা। বর্তমান প্রেক্ষাপটে মানুষ হত্যা যেনো দুধ ভাতে পরিণত হয়েছে।
চলতি বছরে আলোচিত কয়েকটি হত্যাকাণ্ডকে কেন্দ্র করে বাংলাদেশ ও বিশ্বের বিভিন্ন গণমাধ্যমে আলোচনার ঝড় উঠে। নতুন বছর ২০২১ শুরুর আগে দেখে নেওয়া যাক ২০২০ সালে দেশের আলোচিত ৪টি হত্যাকাণ্ড ও এসবের সর্বশেষ অবস্থা।
মেজর সিনহা হত্যা মামলার সর্বশেষ তথ্য:
চলতি বছরের গত ৩১ জুলাই রাতে কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভ সড়কের শামলাপুর চেকপোস্টে অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহাকে বহনকারী গাড়ি দাঁড় করানো হয়। তিনি গাড়ি থেকে বের হলে তাকে গুলি করে হত্যা করে পুলিশ। পরে আদালতের নির্দেশে মামলাটির তদন্তের দায়িত্ব পায় র্যাব। জীবন নিরাপত্তার রক্ষক হয়ে উল্টো জীবন ভক্ষকের ভূমিকা পালন করায় অসংখ্য প্রশ্নের মুখে পড়ে গোটা পুলিশ বাহিনী।
এরপর ২১ ডিসেম্বর এই হত্যার মামলার চার্জশিট গ্রহণ করেন আদালত। একই সাথে এই মামলার পলাতক আসামি সাগরের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়। এছাড়া, সংশ্লিষ্ট ঘটনায় দায়ের করা ২ টি মামলা থেকে সিনহার সহযোগী সিফাতকে অব্যাহতি দেওয়া হয়।
পুলিশের সিনিয়র এএসপি আনিসুল হত্যা:
মানসিক সমস্যার চিকিৎসায় সিনিয়র এএসপি আনিসুলকে ৯ নভেম্বর জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইন্সটিটিউটে নিয়ে যান স্বজনরা। এরপর সেখান থেকে তাকে আদাবরের মাইন্ড এইড নিরাময় কেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে ভর্তির কিছুক্ষণের মধ্যে তিনি প্রতিষ্ঠানটির কর্মচারীদের মারধরের শিকার হন। জাতীয় হৃদরোগ ইন্সটিটিউটে নিয়ে গেলে চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, এ হত্যাকাণ্ডের তথ্যপ্রমাণ মিলেছে। ময়নাতদন্ত রিপোর্ট হাতে পেলেই জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে আদালতে চার্জশিট দাখিল করা হতে পারে। এ ঘটনায় চার্জশিটে মাইন্ড এইড হাসপাতালের কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ ১৬ জনকে অভিযুক্ত করা হচ্ছে বলে জানা গেছে।
এ ঘটনায় আনিসুলের বাবা বাদী হয়ে গত ১০ নভেম্বর মাইন্ড এইডের কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ ১৫ জনকে আসামি করে আদাবর থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন। এ মামলার আসামিদের মধ্যে ১২ জনকে পুলিশ গ্রেপ্তার করে।
পুলিশ ফাঁড়িতে নির্যাতনে রায়হান আহমদ হত্যা:
গত ১১ অক্টোবর ভোরে সিলেট মেট্রোপলিটনের আখালিয়া এলাকার বাসিন্দা রায়হান আহমদকে বন্দর বাজার পুলিশ ফাঁড়িতে নিয়ে ছিনতাইকারী ট্যাগ দিয়ে নির্যাতনের অভিযোগ ওঠে। পরে সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে তিনি মারা যান।
এ ঘটনায় নিহত রায়হানের স্ত্রী তাহমিনা আক্তার তান্নী বাদী হয়ে পরের দিন ১২ অক্টোবর কোতোয়ালি থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।
এর আগে রায়হান হত্যাকাণ্ডে বন্দরবাজার ফাঁড়ির ইনচার্জ এসআই আকবরসহ ৫ জনকে সাময়িক বরখাস্ত এবং ৩ জনকে প্রত্যাহার করা হয়। এরপরে সর্বশেষ গত ১৮ নভেম্বর রায়হান আহমদ হত্যা মামলায় দায়িত্বে অবহেলার অভিযোগে কোতোয়ালি থানার পরিদর্শক সৌমেন মিত্র এবং এসআই আব্দুল বাতেন ভুঁইয়াকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। পুলিশের সদর দপ্তরে তদন্ত দলের প্রতিবেদনের পর তাদের বিরুদ্ধে এই ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে।
‘কোরআন শরীফ’ অবমাননার গুজব রটিয়ে পুড়িয়ে হত্যা :
গত ২৯ অক্টোবর কোরআন শরীফ ‘অবমাননার’ গুজব ছড়িয়ে লালমনিরহাটের পাটগ্রামের বুড়িমারী ইউনিয়ন পরিষদের ভেতরে আবু ইউনুস মো. শহিদুন্নবী জুয়েল (৪৫) নামের এক মুসল্লিকে হত্যা করা হয়। এরপর মরদেহ লালমনিরহাট-বুড়িমারী মহাসড়কের ওপর পুড়িয়ে দেওয়া হয়। এ ঘটনায় ৩ টি মামলায় এজাহার নামীয় ১১৪ আসামি এবং অজ্ঞাত শত শত আসামির মধ্যে এখন পর্যন্ত ৩৬ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়।
পুলিশ কর্মকর্তারা বলেছেন, ঘটনার দিন ওই মসজিদে আছরের নামাজের পর জুয়েল নামের ব্যক্তি ধর্মের অবমাননা করেছেন, এমন গুজব ছড়িয়ে পড়লে শত শত মানুষ জড়ো হয়ে তাকে পিটিয়ে হত্যা করে। জুয়েলকে পিটিয়ে হত্যা এবং তার রক্তাক্ত মরদেহ আগুন দিয়ে পোড়ানোর ভিডিও সামাজিক মাধ্যম ফেসবুকে ভাইরাল হলে দেশ-বিদেশে প্রতিবাদের ঝড় ওঠে।।