২০১৬ সালের ১
জুলাই গুলশানের হলি আর্টিসানের জঙ্গি হামলার ঘটনার প্রেক্ষাপট নিয়ে নির্মিত ভারতীয়
সিনেমা ‘ফারাজ’ বাংলাদেশের সিনেমা হল ও অনলাইন প্ল্যাটফর্মে
মুক্তি না দেওয়ার নির্দেশনা চেয়ে হাইকোর্টে রিট দায়ের করা হয়েছে।
হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট
শাখায় এ রিট আবেদন করা হয়। গত ২ ফেব্রুয়ারি এ রিট দায়ের করেন হলি আর্টিসানের ঘটনায়
নিহত অবিন্তা কবিরের মা রুবা আহমেদ। রোববার (১৯ ফেব্রুয়ারি) হাইকোর্টের বিচারপতি মো.
খসরুজ্জমান ও বিচারপতি মো. বিচারপতি মো. ইকবাল কবীরের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চে রিট আবেদনটির
শুনানি অনুষ্ঠিত হবে।
২০১৬ সালের ১
জুলাই হলি আর্টিসানে জঙ্গি হামলার ঘটনা ঘটে। হামলায় নিহত হন ২০ বছর বয়সী বাংলাদেশি
তরুণ ফারাজ আহমেদ। ফারাজ যুক্তরাষ্ট্রের জর্জিয়ায় এমরি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী
ছিলেন। ছুটি কাটাতে দেশে এসেছিলেন।
তাকে নিয়ে একটি
সিনেমা নির্মাণের ঘোষণা এসেছে বলিউড থেকে। ফারাজের নামেই হবে সিনেমাটি। এখানে ফারাজের
চরিত্রে অভিনয় করবেন কারিনা কাপুরের চাচাতো ভাই জাহান কাপুর৷ এ সিনেমা দিয়েই তার অভিষেক
হবার কথা বলিউডে।
তবে সে স্বপ্নে
ধাক্কা লেগেছে তার৷ ‘ফারাজ’ নামে বলিউডে
সিনেমা নির্মাণ বন্ধের জন্য বাংলাদেশের ‘অবিন্তা কবির
ফাউন্ডেশন’ এর পক্ষে আইনি নোটিশ পাঠিয়েছে
ল ফার্ম ‘লিগ্যাল কাউন্সেল’।
এর আগে ২০২১ সালের
৯ আগস্ট সিনেমাটির প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান টি-সিরিজ, পরিচালক হানসাল মেহেতা এবং অনুভব
সিনহাকে নোটিশটি পাঠানো হয়েছে। আইনজীবী মিতি সানজানা স্বাক্ষরিত এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে
এ আইনি নোটিশ প্রেরণের বিষয়টি জানানো হয়।
প্রেস বিজ্ঞপ্তিটিতে
বলা হয়, হলি আর্টিসানের হামলায় মিসেস রুবা আহমেদ তার একমাত্র সন্তান অবিন্তা কবিরকে
হারিয়েছেন। ওই ঘটনা সবার কাছে নির্মম হত্যাকাণ্ড হলেও রুবা আহমেদের কাছে এটি একটি নির্মম
সত্য। তিনি চান না এ ঘটনা থেকে কোনো কন্টেন্ট নির্মাণ হোক। কারণ, এটি তাকে তার মেয়ের
কষ্টদায়ক স্মৃতিকে বারবার জাগিয়ে তুলবে।
এছাড়াও বলা হয়,
এটি বহির্বিশ্বে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি নষ্ট করবে। তাছাড়া সিনেমা নির্মাণের আগে ভুক্তভোগী
পরিবারের কাছ থেকেও কোনো ধরনের অনুমতি নেওয়া হয়নি। এ নোটিশের প্রেক্ষিতে কোনো জবাব
আসেনি এখনো বলিউড থেকে।
ফারাজ সিনেমার
একটি ট্রেলার মুক্তি পেয়েছে। সিনেমাটি বন্ধে নির্মাতাদের কাছে আইনি নোটিশও পাঠিয়েছিলেন
রুবা। তিনি বলেন, ২০১৯ সালে আমি সিনেমাটি সম্পর্কে জানতে পারি। ২০২১ সালের ৫ আগস্ট
সিনেমার পোস্টার আমার হাতে আসে। নির্মাতাদের কাছে আমি আইনি নোটিশও পাঠিয়েছিলাম। কোর্টের
আদেশ থাকার পরও তারা আমাকে এখন পর্যন্ত মুভির কোনো স্ক্রিপ্ট বা সিনেমাটি দেখায়নি।
২০২২ সালের ৩০
অক্টোবর লন্ডনের ফিল্ম ফেস্টিভালে ফারাজ সিনেমাটির স্ক্রিনিং করানো হয়। সেখানে রুবা
আহমেদের এক প্রতিনিধি পুরো সিনেমার ডিটিইলিং দেখেছেন। তিনি দেশে ফিরে রুবার আইনজীবীকে
বলেছেন, সিনেমায় অবিন্তার চরিত্রের নাম আয়শা।
রুবা বলেন, সিনেমার
নাম ফারজ হওয়ায় একজনকে হিরো সাজানো হয়েছে। আর বাকিদের বোঝানো হয়েছে তারা ‘ভিলেন’। তাদের বাঁচাতে গিয়ে ফারাজ নিহত হয়েছে।
আমার মেয়ে কারও জন্য জীবন দেয়নি। সেখানে কি ঘটেছিল আমরা কেউ জানি না। আর একজন ভারতীয়
হয়ে বাঙালিদের তারা কেন যাচাই করবে? তারা এ সিনেমা বানানোর সময় কোনো পরিবারের সঙ্গে
কথা বলেনি।
আমি মা হয়ে কীভাবে
চাইবো, আমার মেয়ের মৃত্যুকে বড় পর্দায় দেখে অন্য কেউ বিনোদন নেবে? মেয়ের জীবন কীভাবে
চলে গেছে, একজন মা হয়ে কী কারও পক্ষে তা দেখা সম্ভব? এতে আমার মেয়ের ভাবমূর্তি যেমন
নষ্ট হচ্ছে, সঙ্গে দেশের ভাবমূর্তিও নষ্ট হচ্ছে।
রুবা আহমেদ আরও
বলেন, আমার মেয়ে সাধারণ জনতা। আমার মেয়ে কোনো পণ্য নয়। ও অবিন্তা কবির, আমার মেয়ে।
আপনারা কেউ ওকে জানতেন না। আপনারা কী আসলেই অবিন্তা কবিরকে চিনতেন? যদি ও ২০১৬ সালে
মারা না যেত? চিনতেন না। আপনার ওর (অবিন্তা) নামটা জেনেছেন কারণ, শি পাসড ওয়ে দ্যাট
নাইট।
সংবাদ সম্মেলনে
সিনেমা সম্পর্কে তিনি কোনো কিছু বলতে রাজি ছিলেন না। তবে রুবা জানান, তিনি গণমাধ্যমের
মাধ্যমে সিনেমাটি সম্পর্কে জেনেছেন।
ফারাজ সিনেমাটি
নিয়ে অবিন্তা কবিরের পরিবারের আপত্তি আছে বলে জানানো হয় ফাউন্ডেশন থেকে। সিনেমায় অবিন্তা
কবির ও তার পরিবারের সদস্যদের চরিত্র উপস্থাপন করা হবে। এ নিয়ে পরিবারের সদস্যরা বিব্রত।
হলি আর্টিসানের হামলার ঘটনার পর তারা আড়ালে থাকতেন অবিন্তার পরিবার। এ প্রথম তারা গণমাধ্যমের
সামনে এলেন।
যুক্তরাষ্ট্রের ইমোরি ইউনিভার্সিটির অক্সফোর্ড কলেজের শিক্ষার্থী ছিলেন অবিন্তা কবির। ২০১৬ সালের জুন মাসে দেশে ফিরেছিলেন তিনি। গুলশানে হলি আর্টিজান বেকারিতে খেতে গিয়েছিলেন তিনি। সেদিন জঙ্গি হামলায় ফারাজের সঙ্গে তিনিও নিহত হন। তার স্মৃতি ধরে রাখতে ২০১৭ সালের ৪ মার্চ প্রতিষ্ঠা করা হয় ‘অবিন্তা কবির ফাউন্ডেশন’।