চলতি জুলাই
মাসে ঢাকাসহ প্রায় সারাদেশে ভয়ংকর রূপ নিয়েছে ডেঙ্গু। পরিস্থিতি সামাল দিতে চেষ্টা
করছে সরকার। কিন্তু প্রতিদিনই ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর সংখ্যা বাড়ছে। পাশাপাশি
বাড়ছে আক্রান্তের সংখ্যা। আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসা দিতে হিমশিম খাচ্ছে রাজধানীর অধিকাংশ
হাসপাতাল। পাশাপাশি প্রাদুর্ভাব মোকাবিলায় চরম বেকায়দায় রয়েছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।
স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দেশে এরই মধ্যে মহামারি পর্যায়ে চলে গেছে ডেঙ্গুর বিস্তার। অবশ্য সরকার এখনও সেই ঘোষণা দেয়নি। সোমবার (২৪ জুলাই) রাত পর্যন্ত দেশজুড়ে অন্তত ১৮৫ জন ডেঙ্গুতে মারা গেছেন। এদের মধ্যে ৩১ জনের বয়স ১৪ বছরের কম। ডেঙ্গুতে প্রাণহানির ক্ষেত্রে গত বুধবার ছিল সবচেয়ে ভয়ংকর দিন। ওই একদিনে ১৯ জন মানুষ মশাবাহিত এই রোগে মারা যান। এ বছর প্রায় ৩৩ হাজার মানুষ ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালগুলোতে ভর্তি হয়েছেন—এমন তথ্য দিয়েছে স্বাস্থ্যসেবা অধিদপ্তরের (ডিজিএইচএস)।
আরও পড়ুন: লবণের দাম বাড়ানোর আবদার ৫ প্রতিষ্ঠানের
এদিকে বাংলাদেশের
ডেঙ্গু পরিস্থিতি নিয়ে সোমবার (২৪ জুলাই) একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে কাতারভিত্তিক
সংবাদমাধ্যম আল-জাজিরা।
আল-জাজিরার
প্রতিবেদনে বলা হয়, দেশে এ বছর ডেঙ্গুতে মৃত্যুর হার পাঁচ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ ০.৫৩
শতাংশে দাঁড়িয়েছে। গত বছরও এর হার ছিল ০.৪৫ শতাংশ, যে সময় ডেঙ্গুতে রেকর্ড ২৮১ জনের
মৃত্যু হয়েছিল।
ডিজিএইচএস তথ্য
বলছে, এ বছরের ১৮৫ মৃত্যুর মধ্যে ১১৫টিই ঘটেছে জুলাইয়ের প্রথম ২৩ দিনে। গত বছর একই
সময়ে মারা গিয়েছিল মাত্র ২৯ জন।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সামনে পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে পারে। কারণ, বাংলাদেশে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি ও মৃত্যু সাধারণত আগস্ট-সেপ্টেম্বর মাসে সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছায়।
আরও পড়ুন: এফএওর সদর দপ্তরে ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব কক্ষ’ উদ্বোধন
২০১৯ সালে দেশে
ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে ১০ লাখেরও বেশি মানুষ হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন। যা ছিল দেশের
ইতিহাসে সর্বোচ্চ। সে বছর মারা যান ১৭৯ জন। অনেকেই এখনও ২০১৯ সালকে ‘ডেঙ্গুর বছর’ বলে থাকেন।
চিকিৎসক এবং
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ এএনএম নুরুজ্জামান আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম আল-জাজিরাকে বলেন, এ
বছর ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব ২০১৯ সালের চেয়ে বেশি না হলেও, অন্তত একই পরিমাণ প্রভাব ফেলেছে।
তিনি আরও বলেন,
সরকারের উচিত এ বছর ডেঙ্গুকে মহামারি হিসেবে ঘোষণা করা। ডেঙ্গুর বিস্তার রোধে যথাযথ
ব্যবস্থা নেওয়া। অন্যথায়, পরিস্থিতি আরও খারাপ হবে।
অপরদিকে গত ১৬ জুলাই ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাবকে ‘জরুরি জনস্বাস্থ্য পরিস্থিতি’ ঘোষণা করতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে দেশের চিকিত্সকদের সর্বোচ্চ সংগঠন বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন। তবে ডিজিএইচএস মহাপরিচালক ডা. আবুল বাসার মোহাম্মদ খুরশীদ আলম মনে করেন, এ বছর ডেঙ্গুকে মহামারি ঘোষণা করার সময় এখনো আসেনি।
তিনি আন্তর্জাতিক
গণমাধ্যম আল-জাজিরাকে বলেন, ডেঙ্গুকে মহামারি ঘোষণার জন্য আরও কিছু মানদণ্ডকে ন্যায্যতা
দিতে হবে। আমি মনে করি না, আমরা এখনও সেই পর্যায়ে পৌঁছেছি। তাছাড়া, এটিকে মহামারি
ঘোষণা করে মানুষের মধ্যে ভীতি সৃষ্টি করার কোনো মানে নেই।
এদিকে গত ২৪
ঘণ্টায় ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে আরও ৯ জনের মৃত্যু হয়েছে। মারা যাওয়া সবাই ঢাকার বাসিন্দা।
এ সময়ে ঢাকাসহ সারাদেশের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ২ হাজার ২৯৩ জন ডেঙ্গু রোগী।
সোমবার (২৪ জুলাই) স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
এতে বলা হয়, ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে ঢাকাসহ সারাদেশের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ২ হাজার ২৯৩ জন। তাদের মধ্যে ঢাকায় ভর্তি হয়েছেন ১ হাজার ২৩৮ জন, আর ঢাকার বাইরের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ১ হাজার ৫৫ জন।
আরও পড়ুন: আলজেরিয়ায় ভয়াবহ দাবানল, নিহত ৩৪
বর্তমানে দেশের
বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালে মোট ৭ হাজার ৪৬৩ জন ডেঙ্গু রোগী চিকিৎসাধীন। ঢাকায়
৪ হাজার ৩৯৫ জন এবং অন্যান্য বিভাগের বিভিন্ন হাসপাতালে ৩ হাজার ৬৮ জন ডেঙ্গু রোগী
ভর্তি রয়েছেন।
চলতি বছর ডেঙ্গু
আক্রান্ত হয়ে সারাদেশে এখন পর্যন্ত ৩৫ হাজার ২৭০ জন রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা
নিয়েছেন। এর মধ্যে ঢাকায় ২১ হাজার ১৮৭ জন এবং ঢাকার বাইরে চিকিৎসা নিয়েছেন ১৪ হাজার
৮৩ জন। চলতি বছর ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে এখন পর্যন্ত ১৮৫ জনের মৃত্যু হয়েছে।