‘প্রত্যন্ত অঞ্চলে
যেখানে ফাইবার অপটিক্স সংযোগ নেই, সেখানে এই পরিষেবা দেওয়া যেতে পারে। বাংলাদেশে স্টারলিংক
স্যাটেলাইট ইন্টারনেট সেবা চালুর ইচ্ছা প্রকাশ করেছে বিশ্বের শীর্ষ ধনী ইলন মাস্কের
স্পেসএক্স।
বুধবার যুক্তরাষ্ট্র ভিত্তিক এই প্রতিষ্ঠানের
কর্মকর্তারা দুই সরকারি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে বৈঠক করে এই আগ্রহের কথা জানান। স্পেসএক্সের
গ্লোবাল গভর্নমেন্ট অ্যাফেয়ার্স ম্যানেজার জোয়েল মেরেডিথ ও গ্লোবাল লাইসেন্সিং অ্যান্ড
অ্যাক্টিভেশন ম্যানেজার পার্নিল উর্ধওয়ারেশে, বাংলাদেশ স্যাটেলাইট কোম্পানি লিমিটেড
(বিএসসিএল) ও আইসিটি বিভাগের শীর্ষ কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেন।
বিএসসিএল চেয়ারম্যান শাহজাহান মাহমুদ
বলেন, সফররত কর্মকর্তারা বাংলাদেশে কাজ করার ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন। সে কারণেই তারা এখানে
এসেছেন। তবে তারা অনুমোদন পাবে কি না, তা সরকারের সিদ্ধান্ত। এটি কঠিন সিদ্ধান্ত হবে।
কেননা, স্থানীয় মোবাইল অপারেটর ও ইন্টারনেট পরিষেবা সরবরাহকারীরা (আইএসপি) ইতোমধ্যে
ডেটা পরিষেবা দিয়ে যাচ্ছে।
আরও পড়ুন<< ‘নীল পাখি’ সরিয়ে ‘এক্স’ আনলেন ইলন মাস্ক
শাহজাহান মাহমুদ জানান, স্পেসএক্সের কর্মকর্তারা
স্টারলিংকের ইন্টারনেট ও ডাউনলোড স্পিডের নমুনা দেখিয়েছেন। এটি সকালে প্রায় ৫০০ এমবিপিএসে
পৌঁছেছিল। তিনি যোগ করেন, প্রত্যন্ত অঞ্চলে যেখানে ফাইবার অপটিক্স সংযোগ নেই, সেখানে
এই পরিষেবা দেওয়া যেতে পারে। প্রযুক্তি বিশ্লেষণের জন্য তারা পাঁচটি স্টারলিংক টার্মিনাল
(স্টারলিংক কিটস) সংগ্রহ করেছেন বলেও জানান বিএসসিএল চেয়ারম্যান।
বৈঠকে অংশ নেওয়া এক সরকারি কর্মকর্তা
জানান, স্পেসএক্সের কর্মকর্তাদের জিজ্ঞেস করা হয়েছিল যে, ডিজিটাল ক্ষেত্রে অবৈধ কার্যকলাপ
বন্ধে বৈধ হস্তক্ষেপের প্রয়োজন হলে তারা তা পূরণ করতে পারে কি না। পরে, সন্ধ্যায়
স্পেসএক্সের কর্মকর্তারা আইসিটি বিভাগের কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেন।
তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী
জুনাইদ আহমেদ পলক বলেন, আমরা দুইটি স্টারলিংক ডিভাইস পেয়েছি। একটি প্রত্যন্ত এলাকায়
শেখ রাসেল ডিজিটাল ল্যাবে ব্যবহার করা হবে। সেখানে উচ্চগতির ইন্টারনেট পাওয়া যায়
না। অন্যটি নারীদের বাসে ব্যবহার করা হবে।
প্রতিমন্ত্রী জানান, তারা আইসিটি বিভাগের
ছাদে অ্যান্টেনা বসিয়ে ডিভাইস পরীক্ষা করেছেন। প্রায় দেড় ঘণ্টা ধরে ডিভাইসটি পরীক্ষার
সময় ইন্টারনেটের গতি ও সংযোগ ১৫০ এমবিপিএসে স্থিতিশীল ছিল।
আরও পড়ুন<< সোশ্যাল মিডিয়ায় সক্রিয় ৫০০ কোটি মানুষ
জুনাইদ আহমেদ পলক আরও বলেন, স্টারলিংকের
সংযোগ কীভাবে দ্বীপ ও দুর্গম চরের মানুষের পাশাপাশি প্রত্যন্ত অঞ্চলে বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের
জন্য উপকারী হতে পারে তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। আমরা তিন মাস ধরে ডিভাইসগুলো পরীক্ষা করব।
বৃষ্টি, কুয়াশা ও খারাপ আবহাওয়ার সময় এগুলো কীভাবে কাজ করে তা বিশ্লেষণ করব। তিন
মাস পরীক্ষার পর শিক্ষা, গবেষণা ও স্বাস্থ্যখাতে কীভাবে ইন্টারনেট ব্যবহার করা যায়
সে বিষয়ে স্টারলিংকের সঙ্গে আইসিটি বিভাগের চুক্তি হতে পারে।
তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগ আগামী
সেপ্টেম্বরে নিউইয়র্কে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে বৈঠকের জন্য ইলন মাস্ককে আমন্ত্রণ
জানিয়েছে।
বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের
(বিটিআরসি) চেয়ারম্যান শ্যাম সুন্দর সিকদার জানান, তারা এখনো স্পেসএক্সের কর্মকর্তাদের
সঙ্গে দেখা করেননি। বিআরটিসি দেশের টেলিযোগাযোগ ও ইন্টারনেট সেবা নিয়ন্ত্রণ ও তদারকি
করে।
টেলিযোগাযোগমন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার বলেন,
স্যাটেলাইটের ডাউনলিংকের আগে স্পেসএক্সকে অবশ্যই সরকারের অনুমতি নিতে হবে। এ ছাড়া,
দেশে ইন্টারনেট সেবা দিতে স্টারলিংককে অবশ্যই আইএসপি লাইসেন্স নিতে হবে।
আরও পড়ুন<< বাংলাদেশের ৪২ লাখ ভিডিও ডিলিট করেছে টিকটক
বিএসসিএল চেয়ারম্যান শাহজাহান মাহমুদ
বলেন, স্টারলিংক ইন্টারনেট পরীক্ষামূলকভাবে চালানোর জন্য বিটিআরসির অনুমোদন নেওয়া
হয়েছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, স্যাটেলাইট ইন্টারনেট চালু হলে তা দেশের জন্য লাভজনক
হবে। এলআইআরএনই এশিয়ার সিনিয়র পলিসি ফেলো আবু সাঈদ খান বলেন, দেশে স্যাটেলাইট ব্যবহারের
অনেক সুযোগ আছে। কেননা, এখন নতুন নতুন প্রযুক্তি আসছে।
রবি আজিয়াটার সাবেক সিইও মাহতাব উদ্দিন
আহমেদ বলেন, স্যাটেলাইট ইন্টারনেট সেবা তখনই ফলপ্রসূ হবে, যখন প্রত্যন্ত অঞ্চলে এর
ব্যবহার হবে। কেননা, সেখানে মোবাইল ইন্টারনেট সেবা ঠিক মতো পাওয়া যায় না। যেখানে
ইতোমধ্যে মোবাইল ইন্টারনেট সংযোগ আছে সেখানে এটি চালু হলে প্রতিযোগিতা বাড়বে জানিয়ে
তিনি আরও বলেন, তাই যেসব এলাকায় ইন্টারনেট পরিষেবা নেই, সেখানে কম দামে স্যাটেলাইট
ইন্টারনেট দেওয়া গেলে ভালো হয়।