বাংলাদেশের ৬৪টি জেলার মধ্যে ৫৪টিতেই বায়ুর মান আদর্শ মাত্রার চেয়ে খারাপ অবস্থায় আছে। সব চেয়ে বেশি দূষিত বায়ু হচ্ছে শিল্পঅধ্যুষিত জেলা গাজীপুর, ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জে।আর ঢাকা শহরের মধ্যে দূষণের শীর্ষে রয়েছে শাহবাগ। বায়ুমন্ডলীয় দূষণ অধ্যায়ন কেন্দ্র (ক্যাপস) জানিয়েছে, এমন দূষণের জন্য প্রধানত চলমান উন্নয়ন কাজ ও যানবাহনের আধিক্য দায়ী।
শনিবার (৫ আগস্ট) দুপুরে রাজধানীর ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি মিলনায়তনে এক সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি করেন ক্যাপসের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান অধ্যাপক আহমদ কামরুজ্জামান মজুমদার।
বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) যুগ্ম সম্পাদক মিহির বিশ্বাসের সভাপতিত্বে এতে বক্তব্য দেন ইনস্টিটিউট ফর প্লানিং অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের নির্বাহী পরিচালক অধ্যাপক আদিল মোহাম্মদ খান, ওয়ার্ল্ড ভিশন বাংলাদেশের আরবান প্রোগ্রাম টেকনিক্যাল কো-অর্ডিনেটর ডমিনিক সেন্টু গমেজ, সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী রাশেদুজ্জামান মজুমদার, সেন্টার ফর ল অ্যান্ড পলিসি অ্যাফেয়ার্সের সেক্রেটারি অ্যাডভোকেট সৈয়দ মাহবুবুল আলম তাহিন প্রমুখ।
ড. আহমদ কামরুজ্জামান বলেন, ক্যাপস বায়ুমান নিয়ে পর্যবেক্ষণ ও গবেষণা করছে। এসব পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে, ২০২১ সালে দেশের ৬৪ জেলার প্রতি ঘনমিটার বায়ুতে গড়ে অতিক্ষুদ্র বস্তুকণা ছিল ১০৫.৫৮ মাইক্রোগ্রাম, যা দৈনিক আদর্শ মানের (প্রতি ঘনমটিারে ৬৫ মাইক্রোগ্রাম) থেকে ১.৬২ গুণ বেশি। আর বার্ষিক আদর্শ মানের (প্রতি ঘনমিটারে ১৫ মাইক্রোগ্রাম) চেয়ে ৭ গুণ বেশি।
এতে দেখা গেছে অতিক্ষুদ্র বস্তুকণার উপস্থিতি ক্রমে শিল্প অধ্যুষিত ৩টি জেলা গাজীপুর, ঢাকা এবং নারায়ণগঞ্জ দূষণের শীর্ষে অবস্থান করছে। গবেষণার আরও দেখা যায়, ৬৪ জেলার মধ্যে ৫৪টি জেলার বায়ুমানই জাতীয় নির্ধারিত দৈনিক মানমাত্রায় ৬৫ মাইক্রোগ্রামের চেয়ে খারাপ।
তিনি বলেন, ঢাকা শহরের ১০টি স্থানের মধ্যে শাহবাগে বার্ষিক গড় বস্তুকণা প্রতি ঘনমিটারে ৯১.৪ মাইক্রোগ্রাম (আদর্শ মান ১৫ মাইক্রোগ্রাম), যা আদর্শ মানের চেয়ে ৬ গুণ বেশি, জাতীয় সংসদ ভবন এলাকায় ৫৯.৪, যা ৪ গুণ বেশি, মতিঝিলে ৭৯.৪ মাইক্রোমগ্রাম, আগারগাঁওয়ে ৭৪.৪ মাইক্রোগ্রাম, আব্দুল্লাহপুরে ৭৪ মাইক্রোগ্রাম।
এ অবস্থায় বায়ুদূষণ কমাতে জীবাশ্ম জ্বালানির ওপর নির্ভরতা কমিয়ে নবায়নযোগ্য শক্তি বৃদ্ধির আহ্বান জানিয়ে ৫ দফা প্রস্তাব তুলে ধরেন ক্যাপসের চেয়ারম্যান। প্রস্তাবগুলো হলো- ১. ভবিষ্যতে বায়ুদূষণের মারাত্মক প্রভাব হ্রাস করতে নতুন প্রণীত বায়ুদূষণ (নিয়ন্ত্রণ) বিধিমালা ২০২২ এ কমপক্ষে পূর্ববর্তী মান প্রতি ঘনমিটারে ১৫ মাইক্রোগ্রাম বজায় রাখতে হবে, ২. তাপবিদ্যুৎ উৎপাদনে সহযোগিতা প্রদানকারী দেশগুলো নিজ দেশে যেভাবে ইমিশনের মানমাত্রা মেনে চলে, একইভাবে বাংলাদেশেও তা বজায় রাখতে হবে, ৩. পরিবেশ অধিদপ্তর এরই মধ্যে ২০২৩ সালের মধ্যে ডিজেলে সালফারের উপস্থিতির সর্বোচ্চ সীমা ৫০ পিপিএম নির্ধারণের জন্য রোডম্যাপ তৈরি করেছে, সেটি বজায় রাখতে হবে, ৪. পরিবেশ সংরক্ষণ বিধিমালা-২০২৩ এ সব কয়লা, তেল ও গ্যাসভিত্তিক তাপবিদ্যুৎ প্লান্টকে পূর্বের মতো (পরিবেশ সংরক্ষণ বিধিমালা-১৯৯৭) লাল তালিকাভুক্ত করতে হবে এবং ৫. প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কপ২৬ এর ঘোষণা অনুযায়ী ২০৪১ সালের মধ্যে মোট বিদ্যুৎ উৎপাদনের ৪০ শতাংশ নবায়নযোগ্য শক্তি ব্যবহার করে উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে হবে।
অধ্যাপক ড. আদিল মোহাম্মদ খান বলেন, বায়ুদূষণ আমাদের অস্তিত্বকে বিনাশ করছে। এই বায়ুদূষণে দেশে প্রায় ২০ শতাংশ মানুষ অকাল মৃত্যুর মুখে পড়ছে। অথচ টেকসই উন্নয়নের কথা বললেও সরকার বায়ুমান উন্নয়নে নির্বিকার।
ডমিনিক সেন্টু গমেজ বলেন, পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা ও অর্থনীতির চাকা সচল রাখতে নবায়নযোগ্য জ্বালানির বিকল্প নেই। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এসব ব্যবহার করে বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হচ্ছে। আমাদেরও সে পথে যাওয়া দরকার।