বৈষম্যবিরোধী
ছাত্র আন্দোলনের গণ আন্দোলনের মুখে শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পর বাঁশখালী পৌরসভার
মেয়র তোফাইল বিন হোছাইনসহ বাঁশখালীর অধিকাংশ ইউপি চেয়ারম্যান ও জনপ্রতিনিধি এখন লাপাত্তা।
আত্মগোপনে চলে গেছেন অনেকে। তাদের অফিস ফাঁকা পড়ে আছে। এই নেতৃত্বহীনতার কারণে সাধারণ
মানুষ, যারা পৌরসভা ও ইউনিয়ন পরিষদে প্রয়োজনীয় সেবা নিতে যান, তারা চরম ভোগান্তির
শিকার হচ্ছেন।
জানা গেছে,
গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পর থেকে বাঁশখালীর আওয়ামী লীগ নেতা এবং নৌকা
প্রতীকে নির্বাচিত পৌরসভার মেয়র ও ইউপি চেয়ারম্যানরা এলাকা ছেড়ে আত্মগোপনে চলে গেছেন।
তাদের মধ্যে
স্বতন্ত্রভাবে বিজয়ী পুইছড়ির তারেকুর রহমান, সাধনপুর ইউপি চেয়ারম্যান কে এম সালাহউদ্দিন
কামাল, পুকুরিয়া ইউপি চেয়ারম্যান আসহাব উদ্দিন, শেখেরখীল ইউপি চেয়ারম্যান মোরশেদুল
ইসলাম ফারুকী এবং বাহারছড়ার রেজাউল করিম ইউনুস নিয়মিত অফিস করছেন। তাছাড়া গন্ডামারা
ইউপি চেয়ারম্যান লেয়াকত আলী কারাগার থেকে মুক্ত হলেও তার ইউনিয়ন গন্ডামারায় এখনো ভারপ্রাপ্ত
চেয়ারম্যান রয়ে গেছে। লেয়াকত আলী গত বছর প্রথমবার গ্রেফতার হওয়ার পর থেকেই মেম্বার
ওসমান গণি ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের
বিদায়ের পর অন্যান্য রাজবন্দিদের মত চেয়ারম্যান লেয়াকত আলীও মুক্তি পান।
এছাড়া বাঁশখালীর অন্যান্য সকল ইউপি চেয়ারম্যান, পৌরসভার
মেয়র এমনকি সাবেক দুইবারের এমপি মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরীও লাপাত্তা। গত জুন মাসে সাংবাদিক
ও তার প্রতিপক্ষ কয়েকজনকে সাবেক এমপির গালাগালি ও হুমকি ভাইরাল হওয়ার পর বিষয়টি নিয়ে
আইসিটি আইনে একটি এবং হুমকির বিষয়ে পৃথক পৃথক মামলা হওয়ার পর থেকেই আত্মগোপনে ছিলেন
মোস্তাফিজ। সরকার পরিবর্তনের পর সাবেক এই এমপির চাচা চেয়ারম্যান রশিদ আহমদ এমনকি তার
মেয়ে যুব মহিলালীগ নেত্রী রওকত নুর প্রিয়তারও কোন হদিস নেই।
বাঁশখালীতে
বর্তমানে আত্মগোপনে থাকা জনপ্রতিনিধিরা হলেন, পৌরসভার মেয়র তোফাইল বিন হোছাইন, ছনুয়া
ইউপি চেয়ারম্যান হারুনুর রশীদ, চাম্বলের মুজিবুল হক চৌধুরী, শীলকূপের কায়েস সরওয়ার
সুমন, বৈলছড়ির কফিল উদ্দিন, সরলের রশীদ আহমদ চৌধুরী, খানখানাবাদের জসীম উদ্দিন হায়দার,
কালীপুরের শাহাদাত আলম এবং কাথরিয়ার ইবনে আমিন।
ছনুয়া ইউপি
চেয়ারম্যান হারুনুর রশীদ সম্পর্কে মোজাম্বিকে পালানোর গুঞ্জন থাকলেও তিনি বাড়িতেই
আছেন। যদিও ইউনিয়ন পরিষদে অনুপস্থিত। অন্যদিকে, গণ্ডামারা ইউনিয়ন পরিষদের বহিষ্কৃত
চেয়ারম্যান ও বিএনপি নেতা লেয়াকত আলী জামিনে মুক্ত হয়ে এলাকায় ফিরেছেন। তিনি ‘স্বৈরাচার হাসিনাকে হুমকি’ দেওয়ার অপবাদে বহিষ্কৃত হয়েছিলেন এবং একাধিক মামলায় জেলে ছিলেন বলে
দাবি করেন। এখন তিনি চেয়ারম্যান পদ ফিরে পেতে আইনি লড়াই করছেন এবং আবার জনগণের সেবায়
ফিরতে আশাবাদী।
গত ৫ আগস্ট
বাঁশখালী আওয়ামী লীগের প্রধান কার্যালয়ে অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। একই সময়ে চাম্বল
ইউপি চেয়ারম্যান মুজিবুল হক চৌধুরীর বাড়িতেও আগুন দেয়া হয়। মুজিবের বাড়িতে অগ্নিসংযোগের
ঘটনায় তার এবং তার ভাইয়ের বাড়িসহ পার্শবর্তি মাওলানা খালেদুর রহমানের বাড়িটিও সম্পুর্ণরূপে
পুড়ে যায়। তিনি চট্টগ্রাম শহরের পতেঙ্গায় একটি মসজিদের ইমাম এবং জলদী বড় মাদরাসার সাবেক
শিক্ষক। উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান মোহাম্মদ হোসাইনের পিতাকে মারধর এবং তার বাড়িও
জ্বালিয়ে দেয়া হয় বলে অভিযোগ করা হয়েছে।
মুজিবুল হক
চৌধুরী পিটার হাসকে হুমকি দেওয়ার জন্য আলোচনায় ছিলেন। এর আগে ৪ আগস্ট জামায়াত নিয়ন্ত্রিত
চাম্বল জেনারেল হাসপাতালে অগ্নিসংযোগ ও ছাত্রদের মারধরের অভিযোগ ওঠে মুজিবুলের বিরুদ্ধে।
গতকাল এই রিপোর্ট লেখা পযর্ন্ত বাঁশখালী উপজেলা চেয়ারম্যান খোরশেদ আলম, ভাইস চেয়ারম্যান
মোহাম্মদ হোছাইন ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান নুরীমন আক্তারও অফিসে অনুপস্থিত রয়েছেন।
এই বিষয়ে উপজেলা চেয়ারম্যান খোরশেদ আলম বলেছেন, তিনি এলাকাতেই আছেন। পরিবেশ পরিস্থিতি
আরেকটু উন্নতি হলে নিয়মিত অফিস করবেন তিনি।
চাম্বল ইউনিয়নের
মুন্সীখীল এলাকার বাসিন্দা আরাফাত সানি বলেন, চাকরির আবেদনের জন্য চেয়ারম্যান সনদ নিতে
গত তিনদিন ধরে পরিষদে ঘুরঘুর করছি। কিন্তু চেয়ারম্যানের অনুপস্থিতির কারণে সেটি তিনি
পাচ্ছি না। চেয়ারম্যান সনদ না পেলে আমার চাকরির আবেদন করা হবে না।
একই এলাকার
আবদুল মজিদ নামের এক শিক্ষার্থী জানান, স্থায়ী বাসিন্দা সনদ ছাড়া ছাত্রাবাসে সিট বরাদ্দ
পেতে আবেদন করতে পারছি না। এ কাজে কয়েকদিন ধরে পরিষদে ঘুরছি। প্রতিদিন যাতায়াতে অর্থ
ও শ্রম ব্যয় করতে হচ্ছে। এতে চরম ভোগান্তিতে পড়েছি।
অন্যদিকে, বাঁশখালী
উপজেলা বিএনপি, এর অঙ্গসংগঠন, ইসলামী আন্দোলন, হেফাজত ও আলেম ওলামারা এবং জামায়াত-শিবিরের
নেতাকর্মীরা বিভিন্ন টিম তৈরি করে উপজেলা পরিষদ কমপ্লেক্স, থানা, মন্দির এবং হিন্দু
সম্প্রদায়ের বাড়ি পাহারা দিচ্ছেন। গত শনিবার থেকে জামায়াত-শিবিরের নেতাকর্মী এবং
সেনাবাহিনীর কঠোর নিরাপত্তার মধ্যে থানার কার্যক্রম পুরোদমে শুরু হয়েছে।
বাঁশখালী থানার
ওসি তোফায়েল আহমদ জানান, ‘আমরা বিজ্ঞপ্তি দিয়ে জনসাধারণকে থানায় সেবা নিতে আসার জন্য বলেছি। আইনশৃঙ্খলা
পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।