বাংলাদেশ ব্যাংক
ট্রেনিং একাডেমির উদ্যোগে গত ১৪ সেপ্টেম্বর ‘Central Bank and Its Role: Present and Future Challenges’ বিষয়ে একটি সেমিনার বিবিটিএ’র এ, কে, এন, আহমেদ অডিটোরিয়ামে
অনুষ্ঠিত হয়। বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিন উক্ত সেমিনারে
মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন। আলোচক হিসেবে সেমিনারে উপস্থিত ছিলেন ড. মো. এজাজুল ইসলাম,
নির্বাহী পরিচালক (গবেষণা), বাংলাদেশ ব্যাংক এবং মো. জুলকার নায়েন, নির্বাহী পরিচালক,
বিবিটিএ। সেমিনারে বিবিটিএ'র পরিচালক মো. মেজবাহ উদ্দিন মডারেটর হিসেবে দায়িত্ব পালন
করেন। আলোচ্য সেমিনারে বাংলাদেশ ব্যাংকের উপ-পরিচালক হতে পরিচালক পর্যায়ের সর্বমোট
১১৪ জন কর্মকর্তা অংশগ্রহণ করেন।
স্বাগত বক্তব্যে
বিবিটিএ’র নির্বাহী পরিচালক মো. জুলকার নায়েন সেমিনারের মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনকারী
প্রাক্তন গভর্নর ড. মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিনের সংক্ষিপ্ত পরিচিতি উপস্থাপন করেন। তিনি সেমিনারে
উপস্থিত সকলকে স্বাগত জানিয়ে অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন।
সেমিনারের মূল
প্রবন্ধ উপস্থাপনকারী প্রাক্তন গভর্নর ড. মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিন বাংলাদেশের স্বাধীনতা
উত্তর সময় হতে বর্তমান সময় পর্যন্ত বাংলাদেশের অর্থনীতির একটি সার্বিক চিত্র তুলে ধরেন।
তিনি তার বক্তব্যে অর্থনীতিতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ভূমিকা সম্পর্কে আলোকপাত করেন। কেন্দ্রীয়
ব্যাংকের প্রধান কাজ মুদ্রানীতি প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন। সেক্ষেত্রে মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে
সুদের হার ও বৈদেশিক মুদ্রার বিনিময় হারকে স্থিতিশীল রাখার বিষয়ে তিনি গুরুত্বারোপ
করেন। স্থিতিশীল প্রবৃদ্ধি অর্জনের লক্ষ্যে সুষ্ঠু ব্যাংকিং সুপারভিশন নীতিমালা প্রণয়নে
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ভূমিকার উপর তিনি আলোচনা করেন। এছাড়া আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে কেন্দ্রীয়
ব্যাংকের সহায়ক ভূমিকার উপরও তিনি আলোকপাত করেন। বৈদেশিক মুদ্রার বাজারে স্থিতিশীলতা
রক্ষায় একাধিক বিনিময় হারের পরিবর্তে একটি বিনিময় হার প্রবর্তনের বিষয়টির উপর তিনি
সর্বাপেক্ষা গুরুত্ব প্রদান করেন। এছাড়াও তিনি মানি লন্ডারিং প্রতিরোধে বিশেষ নজরদারিকেও
গুরুত্ব দেন। দেশের সামগ্রিক বৈদেশিক মুদ্রার স্থিতি উন্নয়নে তিনি Foreign Direct
Investment সহায়ক নীতিমালাকে কীভাবে যুগোপযোগী করা যায় তার পরামর্শ প্রদান করেন।
সেমিনারে উপস্থাপিত
বিষয়ের উপর প্রদত্ত পর্যালোচনায় বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক (গবেষণা) ড. মো.
এজাজুল ইসলাম বলেন, বর্তমান অর্থবছরে বাংলাদেশ ব্যাংক মুদ্রানীতি প্রণয়নে মানেটারি
টার্গেটিং-এর বদলে ইন্টেরেস্ট রেট টার্গেটিং করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে। তিনি দেশের
বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কর্মকান্ডে বাংলাদেশ ব্যাংকের ভূমিকার কথা আলোচনা করেন। আলোচনার
শেষে তিনি বাংলাদেশ ব্যাংকের ভবিষ্যৎ চ্যালেঞ্জ কী কী হতে পারে তাও উল্লেখ করেন।
সেমিনারে সর্বশেষ
আলোচক বিবিটিএ’র নির্বাহী পরিচালক মো. জুলকার নায়েন তাঁর বক্তব্যে বলেন, কেন্দ্রীয়
ব্যাংকের চ্যালেঞ্জসমূহের মধ্যে রয়েছে মুদ্রানীতির লক্ষ্যসমূহের মধ্যে অস্পষ্টতা, কেন্দ্রীয়
ব্যাংকের স্বাধীনতার ক্ষেত্রে হস্তক্ষেপ। তিনি আর্থিক খাতে স্থিতিশীলতা রক্ষায় কেন্দ্রীয়
ব্যাংকের ভূমিকা নিয়েও আলোকপাত করেন। এছাড়া, দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে সামাজিক ও রাজনৈতিক
দায়বদ্ধতার বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ মর্মে তিনি উলেস্নখ করেন।
আলোচনা সমাপনান্তে
প্রশ্নোত্তর পর্বে উপস্থিত অংশগ্রহণকারীগণ বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অবস্থার উপর একাধিক
প্রশ্ন করেন। যার মধ্যে বাংলাদেশের অর্থনীতির সাথে শ্রীলঙ্কার অর্থনীতির বিবেচনায় বাংলাদেশের
অর্থনীতির তুলনামূলক সাদৃশ্যতা জানতে চাওয়া হলে ড. মাহাম্মদ ফরাসউদ্দিন এই মর্মে আশ্বস্ত
করেন যে, বাংলাদেশের অর্থনীতির বুনিয়াদ শ্রীলঙ্কার অর্থনীতি থেকে অনেক শক্ত। তাই শ্রীলঙ্কার
অর্থনীতির বিবেচনায় বাংলাদেশের অর্থনীতিকে ভাববার কোনো সুযোগ নেই। পরিশেষে একাডেমির
পরিচালক মো. মেজবাহ উদ্দিন প্রবন্ধ উপস্থাপনকারী, আলোচকবৃন্দ, উপস্থিত সবাইকে এবং সেমিনার
আয়োজনের সাথে সংশ্লিষ্ট সকলকে ধন্যবাদ জানিয়ে সেমিনারের সমাপ্তি ঘোষণা করেন।