
বান্দরবানে টানা দুই দিনের ভারি বর্ষণের কারণে পাহাড় ধসের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে পাহাড়ের পাদদেশে ঝুঁকিপূর্ণভাবে বসবাসকারীদের নিরাপদ আশ্রয়ে সরে যেতে মাইকিং করছে বান্দরবান পৌরসভা।
বান্দরবান আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. এমদাদুল হক জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় বান্দরবানে ৯৬ মিলিমিটার বৃষ্টিপাতের রেকর্ড করা হয়েছে। এছাড়া আগামী ৪৮ ঘণ্টার পূর্ভাবাসে বলা হয়েছে, বঙ্গোপসাগরে নিম্নলঘুচাপের কারণে চট্টগ্রাম ও বরিশাল বিভাগের কোথাও কোথাও মাঝারি ও ভারি বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে। এ কারণে চট্টগ্রাম বিভাগের কোথাও কোথাও পাহাড় ধসের সম্ভাবনাও রয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বান্দরবানের সদর উপজেলার কালাঘাটা, কাসেমপাড়া, ইসলামপুর, বনরূপা পাড়া, হাফেজঘোনা, বাসস্টেশন এলাকা, স্টেডিয়াম এলাকা, নোয়াপাড়া, কসাইপাড়া; রুমা উপজেলার হোস্টেলপাড়া, রনিনপাড়া; লামা উপজেলার হরিনমারা, তেলুমিয়া পাড়া, ইসলামপুর, গজালিয়া, মুসলিম পাড়া, চেয়ারম্যানপাড়া, হরিণঝিড়ি, টিঅ্যান্ডটি এলাকা, সরই, রুপসীপাড়া; নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার উত্তরপাড়া, বাইশফাঁড়ি, আমতলী, রেজু, তুমব্রু, হেডম্যানপাড়া, মনজয় পাড়া, দৌছড়ি, বাইশারীসহ সাতটি উপজেলার বিভিন্ন স্থানে পাহাড়ের পাদদেশে ৩০ হাজারেরও বেশি পরিবারের অপরিকল্পিত বসবাস। টানা বৃষ্টিতে পাহাড়ধসের আশঙ্কায় পরিবারগুলো ঝুঁকিতে রয়েছে।
বান্দরবানের মৃত্তিকা ও পানি সংরক্ষণ কেন্দ্রের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মাহাবুবুল ইসলাম বলেন, ৩ আগস্ট সকাল ৯টা পর্যন্ত ৩৫ মিলিমিটার এবং ৪ আগস্ট সকাল ৯টা পর্যন্ত ৯৬ মিলিমিটার বৃষ্টিপাতের রেকর্ড করা হয়েছে। আরও দুয়েকদিন থেমে থেমে বৃষ্টিপাত হতে পারে। অতিরিক্ত পরিমাণে পাহাড় কাটার ফলে পাহাড়ে মাটির ওপরের রক্ষাস্তর সরে গিয়ে ভেতরের নরম অংশ বেরিয়ে আসে। এর ফলে ভূমিক্ষয়ের মাধ্যমে পাহাড়ে ফাটল তৈরি হয়। এ অবস্থায় বর্ষার ভারি বর্ষণে পাহাড়ের ফাটলে পানি ঢুকে পাহাড় ধস হয়।
বান্দরবান পৌরসভা বালাঘাটা এজাহার মিয়া ঘোনা এলাকায় পাহাড়ের পাদদেশে বসবাসকারী আব্দুর রশিদ বলেন, টাকার অভাবে কম দামে পাহাড় থেকে জায়গা কিনেছি। ঝুঁকি আছে জেনেও পাহাড়ের নিচে একটু জায়গা সমান করে পরিবার নিয়ে কোনোরকমে থাকি।
ইসলামপুর এলাকার পাহাড়ের পাদদেশে বসবাসকারী ফাহমিদ বলেন, এ ঘর ছাড়া আমাদের অন্য কোনো অবলম্বন নেই। তাই আমরা বাধ্য হয়েই এখানে বাস করছি।
এ বিষয়ে বান্দরবান জেলা প্রশাসনের নেজারত ডেপুটি কালেক্টর (এনডিসি) শেখ আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, দুর্যোগ মোকাবেলায় সার্বিক প্রস্তুতি গ্রহণ করা আছে। পাহাড় ধসের ঝুঁকিতে থাকা সব বসবাসকারীদের নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নিতে ইতোমধ্যে প্রতিটি উপজেলার নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও ইউএনওকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। সচেতনতা বাড়াতে মাইকিং করা হচ্ছে।