সাধারণভাবে
দেখতে আর দশটা নেকড়ের মতোই। চোখ থেকে যেন ঠিকরে বের হচ্ছে আগুনের হলকা। গলা চিরে বেরিয়ে
আসছে নেকড়ের ডাক। কিন্তু সেটি আসল নেকড়ে নয়। এটি জাপানের একটি প্রতিষ্ঠানের তৈরি রোবট
নেকড়ে। যেটিকে কৃষকেরা তাদের খামারে ভালুকসহ অন্যান্য প্রাণী তাড়াতে ব্যবহার করছেন।
ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম
বিবিসি নিউজের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রাথমিকভাবে রোবট নেকড়ের নির্মাতা প্রতিষ্ঠান
উলফ কামুয়ি সেটিকে প্রাণী তাড়ানোর উপযোগী করে তৈরি করেছিল। কিন্তু পরে তাঁরা সেটিকে
ভালুক তাড়ানোর কাজেও ব্যবহার করা যায় কিনা পরীক্ষা করে দেখেছেন।
তিন বছরেরও
বেশি সময় আগে, ২০২০ সালের শরৎকালে জাপানের তাকিকাওয়া শহরে প্রথমবারের মতো রোবটটিকে
কাজে লাগানো হয়। সে বছরই সেটিকে ভালুক তাড়ানোর কাজে ব্যবহার করে ইতিবাচক ফল পাওয়া যায়।
তার পর থেকেই স্থানীয় কৃষকেরা রোবট উলফ কিনতে ভিড় জমানো শুরু করেছেন উলফ কামুয়ির বিক্রয়
কেন্দ্রে।
আরও পড়ুন>> প্রবীণদের মর্যাদা-অধিকার নিশ্চিত করতে হবে: জাতিসংঘ মহাসচিব
স্থানীয় কর্তৃপক্ষ
বলছে, জাপানে বুনো ভালুকের আক্রমণ, ফসল নষ্ট করা নতুন কোনো বিষয় নয়। কিন্তু সাম্প্রতিক
সময় বিষয়টি বেড়ে গিয়েছে। যার ফলে কৃষকদের বেশ ক্ষতির মুখোমুখি হতে হচ্ছে। এ অবস্থায়
কৃষকেরা ভালুকের হাত থেকে বাঁচতে আশ্রয় নিচ্ছেন রোবট নেকড়ের।
আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ
বিষয় তুলে ধরেছেন জাপানের টোকিও ইউনিভার্সিটি অব এগ্রিকালচার অ্যান্ড টেকনোলজির অধ্যাপক
শিনসুকে কোইকে। তিনি বলেন, ‘জাপানে শহুরে লোকজনের সংখ্যা বেড়ে যাচ্ছে, তরুণ প্রজন্ম এখন আর গ্রামে
থাকতে চায় না। তারা শহরে চলে আসায় গ্রামে রয়ে গেছে কেবল বয়স্ক লোকেরা।’
তাঁর মতে বয়স্ক
লোকদের পক্ষে কৃষিকাজ চালিয়ে নেওয়া কঠিন। পাশাপাশি কৃষি খামারের নিরাপত্তা নিশ্চিত
করা আরও কঠিন। এ ছাড়া, আগে কৃষিজ ভূমি এবং পার্বত্য বনভূমির মধ্যে একটি বাফার জোন ছিল।
কিন্তু এখন সেটি নষ্ট হয়ে যাওয়ার কারণে বন থেকে প্রায়ই ভালুকসহ বিভিন্ন প্রাণী নেমে
এসে কৃষি খামারের ক্ষতি করছে। বন্য প্রাণীদের নিরাপদ আশ্রয়ের অভাব এবং খাদ্য সংকটও
সেগুলোর লোকালয়ে চলে আসার অন্যতম কারণ বলে চিহ্নিত করেছেন তিনি।
কেবল যে কৃষি
খামারের ক্ষতিই হচ্ছে তা নয়, প্রাণ যাচ্ছে সাধারণ মানুষেরও। বিগত ৬০ বছরে কেবল হোক্কাইডো
প্রিফেকচারেই দেড় শতাধিক ভালুকের হামলা সংঘটিত হয়েছে। এসব হামলায় অনেকে প্রাণ হারিয়েছেন।
কেবল ২০২১ সালেই ৪ জন নিহত হয়েছে ভালুকের হামলায়। আগত হয়েছে আরও অন্তত ১০ জন। এ অবস্থায়
আপাত একটি সমাধান হিসেবে ধরা দিয়েছে এই রোবট নেকড়ে।