সাংবাদিকদের আপত্তির মুখে ‘সাইবার নিরাপত্তা
বিল-২০২৩’ এর ৩২ ধারায়
অফিসিয়াল সিক্রেটস অ্যাক্টের বিধান বাতিলসহ কয়েকটি ধারায় সংশোধন ও কিছু ক্ষেত্রে ভাষাগত
পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (৭ সেপ্টেম্বর) সংসদ ভবনে
ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে
বিলটি চূড়ান্ত করে সংসদে রিপোর্ট উপস্থাপনের সিদ্ধান্ত হয়।
দুই-এক দিনের মধ্যে সংশোধিত খসড়া মন্ত্রণালয়ের
ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হবে। তবে সংশোধনীগুলোর বিষয়ে পুরোপুরি সন্তুষ্ট নন বৈঠকে অংশগ্রহণকারী
গণমাধ্যম প্রতিনিধিরা। বিশেষ করে তারা বিলের ৪২ ধারায় প্রস্তাবিত বিনা পরোয়ানায় গ্রেফতার
ও তল্লাশির ঘোর বিরোধিতা করেন।
সংসদীয় কমিটির সভাপতির অনুপস্থিতিতে কমিটির
সদস্য রেজওয়ান আহাম্মদ তৌফিক বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন। এতে কমিটির সদস্য তথ্য ও প্রযুক্তি
প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক, সংসদ সদস্য ফাহমী গোলন্দাজ বাবেল, আহমেদ ফিরোজ কবির,
মো. নুরুল আমিন, মনিরা সুলতানা ও জাকিয়া পারভীন খানম অংশ নেন।
বিশেষ আমন্ত্রণে বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন-
আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার, বাংলাদেশ ফেডারেল
সাংবাদিক ইউনিয়নের (বিএফইউজে) সাবেক সভাপতি মনজুরুল আহসান বুলবুল, বিএফইউজে একাংশের
মহাসচিব দীপ আজাদ, বিএফইউজে আরেকাংশের সভাপতি এম আবদুল্লাহ ও মহাসচিব নুরুল আমিন রোকন,
জাতীয় প্রেস ক্লাব সভাপতি ফরিদা ইয়াসমিন ও সাধারণ সম্পাদক শ্যামল দত্ত, ডিইউজের সভাপতি
সোহেল হায়দার চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক আকতার হোসেন প্রমুখ।
বৈঠক শেষে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক সাংবাদিকদের
বলেন, আমরা বিলে অনেক পরিবর্তন করেছি। বিলের ২১ ধারার বিষয়ে বিএফইউজে থেকে পরামর্শ
দেওয়া হয়েছে, আমরা তা গ্রহণ করেছি। ৩২ ধারার অফিসিয়াল সিক্রেটস অ্যাক্ট বাতিল করে দিয়েছি,
এ আইনে সেটা থাকবে না। মিথ্যা মামলার বিষয়ে যে পরামর্শ এসেছে সেটা আমরা গ্রহণ করেছি।
দ্রুত সংসদে বিলের প্রতিবেদন সংসদে জমা দেওয়া হবে।
এর আগে বিএফইউজের সাবেক সভাপতি মনজুরুল
আহসান বুলবুল বলেন, সাংবাদিক ইউনিয়নের পক্ষ থেকে আগেই সংশোধনী প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল।
প্রস্তাবগুলো থেকে অফিসিয়াল সিক্রেটস অ্যাক্ট ২১, ৩২ ধারাসহ কয়েকটি ধারা সংশোধন করার
বিষয়ে কমিটি সম্মত হয়েছে। বিলের ৪২ ধারায় সংজ্ঞাগত কিছু পরিবর্তন এনেছে। সাব-ইন্সপেক্টর
পর্যায়ের কর্মকর্তার স্থলে ইন্সপেক্টর পর্যায়ের কর্মকতা করা হয়েছে। তবে আমরা এক্ষেত্রে
সন্তুষ্ট নই। আমরা প্রেস কাউন্সিলের কথাই বলেছি।
প্রস্তাবিত আইনের ৪২ ধারায় বিনা পরোয়ানায়
তল্লাশি ও গ্রেফতারের ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। সাংবাদিকদের কয়েকটি সংগঠন এটি বাতিলের দাবি
জানিয়েছিল। তবে তা পুরোপুরি গ্রহণ করা হয়নি। এখানে পুলিশ পরিদর্শক পর্যায়ের কর্মকর্তারা
এ ক্ষমতা প্রয়োগ করতে পারবেন, এমন সংশোধনী আনা হচ্ছে।
বৈঠকে ১৪ দফা দাবি জানিয়েছিল বিএফইউজে
(একাংশ)। বৈঠক শেষে এ অংশের সভাপতি এম আবদুল্লাহ বলেন, তারা কয়েকটি দাবি মেনে নিয়েছে।
দু-একটি জায়গায় ভাষাগত পরিবর্তন এনেছে। তবে আমরা এতে সন্তুষ্ট নই। আমরা আলোচনাকালে
আমাদের ১৪ দফা দাবির বিষয়ে অনড় ছিলাম। বিশেষ করে ৪২ ধারায় বিনা পরোয়ানায় গ্রেফতার,
তল্লাশির বিষয়ে আপত্তি জানিয়েছি। আমরা বলেছি, স্বাধীন সাংবাদিকতা বাধাগ্রস্ত হয় এমন
ধারাগুলো বাতিল করে সংশোধনী আনলেই কেবল আমরা মেনে নেব।
বৈঠক শেষে সংসদ সচিবালয়ের এক বিজ্ঞপ্তিতে
বলা হয়, বৈঠকে ‘সাইবার নিরাপত্তা বিল, ২০২৩’ বিলের ওপর বিস্তারিত
আলোচনা শেষে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে সংশোধিত, সংযোজিত ও পরিমার্জিত আকারে রিপোর্ট সংসদে
উত্থাপনের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।