দেশের প্রধান রফতানি বাজার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র
ও জামার্নিতে পোশাক রফতানি কমেছে। তবে যুক্তরাজ্য ও কানাডায় পোশাক রফতানি বেড়েছে। আর
অপ্রচলিত বাজারে দেশের পোশাক বেশ ভালো অবস্থান দেখিয়েছে। এই চিত্র সদ্য শেষ হওয়া ২০২২-২৩
অর্থবছরের।
গত বুধবার রফতানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি)
এবং বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রফতানিকারক সমিতি (বিজিএমইএ) সূত্রে এ তথ্য জানা
গেছে।
সূত্র জানায়, দেশের পোশাক রফতানির প্রধান
বাজার যুক্তরাষ্ট্র। দেশটিতে পোশাক রফতানি কমেছে ৫ দশমিক ৫১ শতাংশ। ২০২২-২৩ অর্থবছরে
দেশটিতে বাংলাদেশের পোশাক রফতানি ৮ দশমিক ৫১ বিলিয়ন ডলার। এর আগে ২০২১-২২ অর্থবছরে
দেশটিতে পোশাক রফতানি হয়েছিল ৯ দশমকি শূন্য ১ বিলিয়ন ডলার। দেশটিতে পোশাক রফতানি কমেছে
৪৯৬ মিলিয়ন ডলার। পোশাক রফতানি কমার তালিকায় রয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশ জার্মানিও।
দেশটিতে পোশাক রফতানি কমেছে ৬ দশমিক ৮১ শতাংশ। ২০২২-২৩ অর্থবছরে দেশটিতে পোশাক রফতানি
হয়েছে ৬ দশমিক ৬৮ বিলিয়ন ডলার, যেখানে আগের অর্থবছরে রফতানি হয়েছিল ৭ দশমিক ১৬ বিলিয়ন
ডলার। পোশাক রফতানি কমার তালিকায় রয়েছে বুলগেরিয়া, লিথুনিয়া, সোলভেনিয়া, রাশিয়া ও চিলি।
আরও পড়ুন<< সয়াবিন তেলের দাম লিটারে কমলো ১০ টাকা
এদিকে, বেশিরভাগ দেশে পোশাক রফতানি বেড়েছে।
একক দেশ হিসাবে যুক্তরাজ্যে পোশাক রফাতনি বেড়েছে ১১ দশমিক ৭৮ শতাংশ। ২০২১-২২ অর্থবছরে
দেশটিতে ৪ দশমিক ৪ বিলিয়ন ডলারের পোশাক রফতানি হলেও সর্বশেষ ২০২২-২৩ অর্থবছরে পোশাক
রফাতনি হয়েছে ৫ দশমিক শূন্য ২ বিলিয়ন ডলার। কানাডায় পোশাক রফতানি বেড়েছে ১৬ দশমিক ৬৬
শতাংশ। দেশটিতে ২০২১-২২ অর্থবছরে ১ দশমিক ৩২ বিলিয়ন ডলারের পোশাক রফতানি হলেও সর্বশেষ
২০২২-২৩ অর্থবছরে পোশাক রফতানি হয়েছে ১ দশমিক ৫৪ বিলিয়ন ডলার। ইউরোপীয় ইউনিয়নে (ইইউ)
পোশাক রফতানি বেড়েছে ৯ দশমিক ৯৩ শতাংশ। ২০২১-২২ অর্থবছরে ইইউতে পোশাক রফতানি হয়েছিল
২১ দশমিক ৪০ বিলিয়ন ডলার। ২০২২-২৩ অর্থবছরে ওই অঞ্চলে পোশাক রফতানি বেড়ে দাঁড়িয়েছে
২৩ দশমিক ৫২ বিলিয়ন ডলার।
এদিকে তৈরি পোশাক রফতানিতে চমক দেখিয়েছে
অপ্রচলিত বাজার। এ বাজারে দেশের পোশাক রফতানি বেড়েছে ৩১ দশমিক ৩৮ শতাংশ। ২০২২-২৩ অর্থবছরে
অপ্রচলিত বাজারে পোশাক রফতানি হয়েছে ৮ দশমিক ৩৭ বিলিয়ন ডলার, ২০২১-২২ অর্থবছরে যা ছিল
৬ দশমিক ৩৭ বিলিয়ন ডলার। সব মিলিয়ে আগের চেয়ে দেশের পোশাক রফতানি বেড়েছে ১০ দশমিক ২৭
শতাংশ।
রাজনৈতিক কারণে আমেরিকায় পোশাক রফতানি
কমেনি উল্লেখ করে বিজিএমইএ’র সভাপতি ফারুক হাসান বলেন, ‘আমেরিকার নিজেদেরই
আমদানি কমেছে ২২ শতাংশের মতো। দেশটিতে অন্যান্য দেশের পোশাক রফতানি আমাদের চেয়ে আরো
বেশি কমেছে। বরং যুক্তরাষ্ট্রে আমাদের রফতানি আরো কম কমেছে। দেশটিতে মুদ্রাস্ফীতি বেড়েছে।
তাদের ভোগ কমে গেছে। মানুষ খাদ্যসহ প্রয়োজনীয় পণ্য কেনার পর পোশাক কিনবে।’
আরও পড়ুন<< বিশ্ববাজারে ফের কমলো জ্বালানি তেলের দাম
অপ্রচলিত বাজারে দেশের পোশাক রফতানি বাড়ার
বিষয়ে পোশাক মালিকদের সংগঠনের এই সভাপতি বলেন, ‘গত কয়েক বছর ধরেই
আমরা অপ্রচলিত বাজারে বেশ মনযোগ দিচ্ছি। দেশগুলোতে পোশাক রফতানি বাড়াতে নানা উদ্যোগ
নেয়া হচ্ছে। সে কারণেই অপ্রচলিত বাজারে পোশাক রফতানি বাড়ছে।’
বিকেএমইএ’র নির্বাহী সভাপতি
মোহাম্মদ হাতেম বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র তাদের আমদানি ৩২ শতাংশ কমিয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের রফতানিতে যে নেগেটিভ প্রবৃদ্ধি দেখা যাচ্ছে, তা তুলনামূলকভাবে
কম। যুক্তরাষ্ট্রে অন্যান্য দেশের নেগেটিভ প্রবৃদ্ধি আরো বেশি। ইউরোপীয় ইউনিয়নে আমাদের
অবস্থান অন্য দেশের চেয়ে ভালো। আর অপ্রচলিত বাজারেও দেশের পোশাক বেশ ভালো করছে। আমরা
কয়েক বছর ধরেই অপ্রচলিত বাজার রফতানি বাড়াতে কাজ করে যাচ্ছি। এখন তারই প্রতিফলন দেখা
যাচ্ছে।’
আরও পড়ুন<< ডেঙ্গুতে আরও ৫ জনের মৃত্যু, হাসপাতালে ভর্তি ১২৩৯
এ বিষয়ে বিজিএমইএ পরিচালক ও ডেনিম এক্সপার্ট লিমিটেডের
অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক মহিউদ্দিন রুবেল বলেন, ‘ইউরোপের
বাজারে পোশাক রফতানি ২০২১-২২ অর্থবছরে তুলনায় ৯ দশমিক ৯৩ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়ে ২৩ দশমিকব
৫২ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত হয়েছে। তবে ইউরোপের কয়েকটি বড় বাজারে পোশাক রফতানি কমেছে। অন্যদিকে
ইতিবাচক দিক হলো অপ্রচলিত বাজার বিশেষ করে জাপান, অস্ট্রেলিয়া ও ভারতের বাজারে রফতানি
বেড়েছে।’