বাচাপুকুর গ্রামে পা ফেললেই বাতাসে ভেসে আসে এক ধরনের মিষ্টি ঘ্রাণ। গ্রামের সব বয়সের নারী-পুরুষ এতটাই ব্যস্ত যে তাদের অন্যদিকে তাকানোর সময় নেই। লোভনীয় খাবার খেজুরের গুড় তৈরি করাকে কেন্দ্র করে কর্মচঞ্চল হয়ে উঠেছে পুরো গ্রামে। শীতের সকালে খেজুর রস বাঙালির এক চিরায়ত ঐতিহ্য। কুয়াশা ভেজা মাঠে রসের হাঁড়ি শীতের সকালকে করে তোলে মোহময়। কুয়াশার চাদর ভেদ করে আকাশে সূর্য উঁকি দেওয়ার আগেই গাছ থেকে রস সংগ্রহে বেরিয়ে পড়েন গাছিরা।
রসভর্তি মাটির হাঁড়ি নামিয়ে টিনের পাত্রে জ্বাল দিয়ে তৈরি করছেন গুড়। খেজুর রসের গুড় তৈরির এমন মনমুগ্ধকর দৃশ্য এখন ঠাকুরগাঁও সদরের নারগুন ইউনিয়নের বাচাপুকুর গ্রামে। সেখানের সুগারমিলের একটি বাগানে ছোট-বড় ৫০০টি গাছ থেকে রস নিয়ে শুরু হয়েছে খেজুরের গুড় তৈরির ধুম। আর চাষিদের খেজুর গাছ হতে হাঁড়ি নামানো ও গুড় তৈরি দেখনে প্রতিদিন ভিড় জমাচ্ছেন দর্শনার্থীরা।
বাগানটি ১ লাখ ৭২ হাজার টাকায় বাৎসরিক চুক্তিতে লিজ নিয়েছেন ব্যবসায়ী মনিরুজ্জামান মনির। তার এই বাগানে কাজ করছেন কয়েকজন গাছি। তারা প্রতিদিন গাছগুলোতে হাঁড়ি তোলেন ও নামান। সেই রস দিয়ে তারা প্রতিদিন গুড় তৈরি করেন। ১০ একর জমিতে গড়ে ওঠা খেজুর বাগানটি ভোরবেলায় শীতের কুয়াশায় রহস্যময় হয়ে উঠে। কুয়াশা কেটে গেলে হয়ে মনমুগ্ধকর ও নয়ানিভরাম পরিবেশের সৃষ্টি হয়। আর সেই পরিবেশ দেখতে বাগানে ভিড় জমাচ্ছেন বিভিন্ন জেলার মানুষ।
বর্তমানে প্রতিদিন ১০০ কেজি গুড় উৎপাদন করছেন তারা। পাশাপাশি ১৫ থেকে ২০ হাঁড়ি রস বিক্রি করছেন গাছিরা। আর এই খেজুরের প্রতি কেজি গুড় বিক্রি হয় ৩০০ টাকায়।
এ বিষয়ে বাগান লিজ নেয়া মনিরুজ্জামান মনির জানান, রসে কোনও রকম চিনি বা অন্য কোন উপাদান ব্যবহার করা হচ্ছে না। খাঁটি গুড় তাই চাহিদা অনেক। আমরা সাধারণ মানুষকে একদম খাঁটি খেজুরের গুড় সরবরাহ করি। প্রতিদিন প্রায় ১০০ কেজি গুড় উৎপাদন হয় এখানে। প্রতি কেজি গুড় বিক্রি হয় ৩০০ টাকা দরে।
দর্শণার্থী রুবেল বলেন, খেজুরের রস দিয়ে গুড় তৈরির দৃশ্য দেখতে ভোর পাঁচটায় আমরা এখানে এসেছি। সরাসরি গাছ থেকে রস পেয়ে গুড় তৈরির প্রক্রিয়াটি দেখলাম।
ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা বেলায়েত হোসেন জানান, খেজুর রসের এ গুড় তৈরিতে এলাকায় কিছু কর্মসংস্থান হয়েছে। তাছাড়া সুস্বাদু খাঁটি গুড়ের কারণে এ এলাকার সুনাম ছড়িয়ে পড়ছে সারা দেশে।