অন্যদের দেওয়া জমির উপর একটি জরাজীর্ণ
বাড়ি। ঘর দুটি করা হয়েছে কাশবন আর বাঁশের বাতার বেড়া দিয়ে। ঘরের ছাউনি হিসেবে রয়েছে
ছাপড়া টিন। আর এ ঘরেই জন্ম সাফ অনূর্ধ্ব-১৯ নারী ফুটবলার মোসাম্মাৎ সাগরিকার। একমাত্র
ভাই সাগরকে নিয়ে এমনই জীর্ণ কুটিরে বসবাস করে আসছেন সাগরিকার বাবা-মা।
ঠাকুরগাঁওয়ের রানীশংকৈল উপজেলার নন্দুয়ার
ইউনিয়নের রাঙ্গাটুঙ্গি গ্রামের হতদরিদ্র চা বিক্রেতা লিটন-আঞ্জুমান দম্পতির ঘরে জন্ম
নেয়া সাগরিকাকে পাকা ঘর করে দেয়ার কথা জানিয়েছেন উপজেলা প্রশাসন।
বৃহস্পতিবার (১৪ মার্চ) রাত ১০টায় মুঠোফোনে
আজকের দর্পণকে রানীশংকৈল উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রকিবুল হাসান এ তথ্য নিশ্চিত
করেন। এমন খবরে উল্লসিত তার পরিবার, আত্মীয়স্বজনসহ শুভাকাঙ্খীরা।
তিনি বলেন, উপজেলার নন্দুয়ার ইউনিয়নের
রাঙ্গাটুঙ্গি গ্রামে অবস্থিত সাগরিকার পরিবারের জরাজীর্ণ বাড়ি নতুন করে নির্মাণ করার
জন্য জেলা প্রশাসনের নির্দেশে উপজেলা প্রশাসন নীতিগত সিদ্বান্ত নিয়েছে।
তিনি আরও বলেন, উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যানে
সঙ্গে কথা বলা হয়েছে। উপজেলা প্রশাসনের ব্যবস্থাপনায় সাগরিকার পরিবারকে একটি বাড়ি নির্মাণ
করে দেওয়া হবে। ইতিমধ্যে রাজমিস্ত্রির সঙ্গে কথা বলা হয়েছে বাড়ি ব্যয় নির্ধারণ করে
আগামী সাপ্তাহে বাড়ির নির্মাণের কাজ শুরু হবে।
এ দিকে বাড়ি নির্মাণের কথা শুনে উল্লসিত
সাগরিকার বাবা বলেন, চা বিক্রি করে ছেলে-মেয়েকে বড় করেছি। অন্যের জমির উপর একটি টিনের
ঘরে কোনমতে মাথা গুঁজে থাকি। কখনো ভাবি নাই বাড়ি পাবো। মেয়ের জন্যই এতোকিছু সম্ভব হলো।
সাগরিকার ভাই সাগর আলী বলেন, এখনো খুব
কষ্ট করছি। অর্থের অভাবে লেখাপড়া করতে পারেনি। নিজের বাড়িতে থাকার ঘরে জায়গা না হওয়ায়
মাঝে মধ্যে বাবা চায়ের দোকানে থাকি। বোনের জন্য আজ ঘর পাচ্ছি। তাঁর জন্য গর্ব হয়। শুধু
আমার নয় পুরো গ্রামবাসীর গর্ব আমার বোন।
এর আগে গত ৩ মার্চ ফুটবল কন্যা সাগরিকার
নেই মাথা গোঁজার ঠাই শিরোনামে আজকের দর্পণ মাল্টিমিডিয়ায় সংবাদ প্রকাশ হয়।
জানা গেছে, সাগরিকার জন্ম ও বেড়ে ওঠা রাঙ্গাটুঙ্গি
গ্রামে। বাবা লিটন আলী আর মা আনজু বেগম। চা বিক্রি করে সংসার চালানো লিটন আলীর পরিবারে
অভাব-অনটন যেন নিত্যসঙ্গী। এর মধ্যে মেয়ে খেলতে চায় ফুটবল। সমাজের কটু কথার ভয়ে মেয়েকে
ফুটবল খেলতে বারণ করতেন বাবা। কিন্তু মেয়ের আগ্রহ আর জেদের কাছে হেরে যান লিটন আলী।
রাঙ্গাটুঙ্গি একাডেমিতে ফুটবলের প্রথম
পাঠ নেন সাগরিকা। একাডেমির প্রতিষ্ঠাতা তাজুল ইসলাম সপ্তম শ্রেণিতে পড়ার সময় রাঙ্গাটুঙ্গি
একাডেমি থেকে কয়েকজন মেয়েকে ভর্তি নিতে চেয়েছিল বিকেএসপি। কিন্তু সাগরিকা সেখানে গিয়ে
স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেননি। এরপর রাঙ্গাটুঙ্গি থেকেই সাগরিকাকে অনূর্ধ্ব নারী ফুটবলারদের
সঙ্গে দলে ভেড়ায় মেয়েদের ফুটবল লিগের দল এফসি ব্রাহ্মণবাড়িয়া। গ্রাম ছাড়ার পর গ্রামবাসী
রটিয়ে দেয়, প্রেমিকের হাত ধরে পালিয়েছে সাগরিকা! এতে একটু নড়েচড়ে বসে পরিবার। তবে এই
কটু কথা থেকে সাহস খুঁজে নেয় সাগরিকা। এক সময় যারা করতেন কটূক্তি আজ তারাই দিচ্ছে বাহবা।
এখন সেই সাগরিকাই গোটা গ্রামবাসীর গর্ব। ফুটবল খেলার জেদের কারণে দীর্ঘ ১ মাস মেয়ের
সাথে কথা না বলা সেই বাবার মুখ সবার কাছে উজ্জল করে তুলেছেন মেয়ে সাগরিকা।
রাঙ্গাটুঙ্গি মহিলা ফুটবল একাডেমির প্রতিষ্ঠাতা
পরিচালক তাজুল ইসলাম বলেন, সাগরিকার বাবা-মা চায়ের দোকান করে থাকেন। নিজের কোনো বসতভিটা
নেই। সরকারি জায়গায় তারা থাকেন। প্রশাসন তাঁর পরিবারকে পাকা ঘর করে দেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন।