জুনে ৩৫ বছরে পা দিচ্ছেন লিওনেল মেসি। কাতারে নভেম্বর-ডিসেম্বরে বসতে যাওয়া বিশ্বকাপই যে তার শেষ বিশ্বকাপ হবে- ধারণা সবার, তা আর্জেন্টিনা শিরোপা-জিতুক আর না জিতুক। ভেনেজুয়েলার সঙ্গে বুয়েন্স আয়ার্সে শুক্রবারের বিশ্বকাপ বাছাই ম্যাচের আগে কোচ লিওনেল স্কালোনির কথাতেও তেমনই ইঙ্গিত ছিল, ‘দেশের মাটিতে সম্ভবত শেষ ম্যাচ খেলতে যাচ্ছে সে। আর্জেন্টিনাকে যেন ভালোভাবে বিদায় জানাতে পারে।’ ৩-০ গোলে ভেনেজুয়েলাকে হারানোর পর সরাসরি না বললেও মেসির কথাতেও বিদায়েরই ইঙ্গিত- ‘বিশ্বকাপের পর কী করব, সত্যি জানি না। কাতারের পর অনেক কিছু নিয়েই আমাকে ভালোমতো ভাবতে হবে। (জাতীয় দলের হয়ে) খেলা চালিয়ে যাব কি-না, জানি না। তবে আশা করি, সবকিছু ভালোমতো এগিয়ে যাবে। তবে এটা নিশ্চিত, বিশ্বকাপের পর অনেক কিছু বদলে যাবে।’
বিশ্বকাপের আগে শেষ হোম ম্যাচ বলেই কি-না, লা বম্বোনেরা-তে যেন চাঁদের হাট বসেছিল শুক্রবার। কানায় কানায় ভরা গ্যালারি শুরু থেকেই নেচে গেয়ে মাতিয়ে রেখেছে আর্জেন্টিনা দলকে। মেসির নাম ধরে গান, মেসির নামেই স্লোগান। ৫০ হাজার দর্শকে ঠাসা বোকা জুনিয়র্সের এই স্টেডিয়ামে একটিই রব, ‘মেসি, মেসি...।’ গর্জনে প্রকম্পিত চারপাশ। আর্জেন্টিনার জয় ছাপিয়ে একটা পর্যায়ে উপলক্ষ হয়ে ওঠে যেন মেসি-ময়। দারুণ জয়ের পর দল নিয়ে মাঠে ‘ল্যাপ অব অনার’ দিয়ে দর্শকের অভিনন্দনের জবাবও দেন মেসি। সেখানেও ঘরের মাঠ থেকে বিদায়ের ইঙ্গিত। দর্শকের এমন আবেগ-ভালোবাসা স্পর্শ করে স্বয়ং মেসিকেও। ম্যাচ শেষে তিনি তাই সমর্থকদের প্রতি জানান কৃতজ্ঞতা। পরে সাংবাদিকদের বলেন, ‘সত্যি বলতে আমরা এমনটাই আশা করছিলাম, এর চেয়ে কম কিছু আশা করিনি আমরা। শেষ কিছু দিনে আমরা যেমন পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়েছি, তাতে আর্জেন্টাইন মানুষজন ও এই জাতীয় দলের মধ্যে একটা বন্ধন তৈরি হয়ে গেছে। আজকের দিনটা উপভোগের জন্য দারুণ ছিল। আর আমরা এটা করে দেখিয়েছি।’
কোপা আমেরিকার পর থেকে মেসি বেশি আনন্দ পাচ্ছেন আর্জেন্টিনা দলে থেকে। কথাটা নিয়ে চর্চা কম হয় না। তবে মেসি জানালেন, তারও আগে থেকে দলের হয়ে খেলতে ভালো লাগে তার। বললেন, ‘এখানে (জাতীয় দলে) আমি অনেক দিন ধরেই খুশি। শুধু কোপা জয়ের পর থেকেই নয়। এই দলটা অসাধারণ, তারা আমাকে অনেক বেশি ভালোবাসে, দিন দিন সেটা বেড়েই চলেছে, প্রতি বার আর্জেন্টিনায় এলে আমার এমনটা মনে হয়। সবকিছু খুব সহজে হয়ে যায়, দলের ভেতরও সবকিছু সহজেই হয়, এর ফলে সবকিছু আরও সুন্দর মনে হয়।’
বিশ্বকাপ বাছাইয়ে আজেন্টিনার পরের ম্যাচটি ইকুয়েডরের মাটিতে ২৯ মার্চ। এরপর ১ জুন ইতালির সঙ্গে ‘গ্র্যান্ড ফাইনাল’ ইংল্যান্ডের ওয়েম্বলিতে। বিশ্বকাপ বাছাইয়ে ব্রাজিলের সঙ্গে স্থগিত ম্যাচটি কাতারের লুসাইল স্টেডিয়ামে হওয়ার সম্ভাবনা। বিশ্বকাপের প্রস্তুতি ম্যাচগুলোও কাতারেই হবে। সেই হিসেবে দেশের হয়ে দেশের মাটিতে শেষ ম্যাচটি স্মরণীয় করে রাখলেন মেসি গোলে। ৩৫ মিনিটে নিকোলাস গঞ্জালেজ ও ৭৯ মিনিটে ডি মারিয়ার গোলে এগিয়ে গিয়েছিল স্বাগতিকরা। দুটি গোলেই অ্যাসিস্ট ডি পলের। ৮২ মিনিট ডি মারিয়ার বাড়ানো বল ধরেই বা পায়ের শটে আর্জেন্টিনার হয়ে (১৫৯ ম্যাচে) ৮১তম গোল করেন মেসি।
মেসি এর আগেও একবার অবসর নিয়েছিলেন ২০১৬ সালে। সেবার কোপা আমেরিকার ফাইনালে চিলির বিপক্ষে টাইব্রেকারে বল জালে পাঠতে ব্যর্থ হয়েছিলেন মেসি। দলও জিততে পারেনি শিরোপা। তার দুই বছর আগে ব্রাজিল বিশ্বকাপে জার্মানির কাছে হেরে রানার্সআপ হয়ে সন্তুষ্ট থাকতে হয়েছিল মেসিকে। সব কষ্ট মিলিয়ে মেসি নিয়েছিলেন অবসর। তবে কিছুদিন পর সেই অবসর ভেঙে আবারও দেশের জন্য মাঠে নামেন। ২০১৮ বিশ্বকাপ বাছাইয়ে পরিস্থিতি এমন দাঁড়িয়েছিল শেষ ম্যাচটা জিততে না পারলে দল উঠতে পারবে না মূলপর্বে। ইকুয়েডরের বিপক্ষে সেই ম্যাচে হ্যাটট্রিক করেছিলেন মেসি। দলকে নিয়ে গিয়েছিলেন মূলপর্বে। রাশিয়া বিশ্বকাপে শেষ ষোলো থেকে বিদায়ের পর, স্কালোনির অধীনে দারুণ করছে আলবিসেলেস্তেরা। নেতৃত্বে মেসিই। কোপা জিতে আক্ষেপ ঘুচিয়েছেন শিরোপার। তবে মেসির বিশ্বকাপ জয়ের স্বপ্নটা এখনো আছে। সেই স্বপ্ন পূরণের আরও একটি সুযোগ মেসির সামনে।