আর্জেন্টিনার মাটিতে প্রীতি ম্যাচ চললেও, দর্শকদের কাছে এ যেন আরেকটি বিশ্বকাপ জয়োৎসবে মাতার দারুণ উপলক্ষ্য। তবে সেই উচ্ছ্বাস লিওনেল মেসিদের করে তুলছে আরও উজ্জীবিত।
ফুটবলে কুরাসাও খুব দুর্বল দেশ নয়। ফিফা র্যাঙ্কিংয়ে ৮৬তম। ডাচ ক্যারিবিয়ান অঞ্চলের এই দ্বীপ দেশ জিতেছে ক্যারিবিয়ান কাপও। তবু আন্তর্জাতিক ফুটবলে কুরাসাওকে মোটেও পরিচিত নাম বলা যায় না। তবে দেশটি ফুটবলের ইতিহাসে এখন থেকে নতুনভাবে পরিচিত হতে পারে। আর্জেন্টিনার হয়ে লিওনেল মেসি তাঁর শততম গোলটি পেয়েছেন এই দলের বিপক্ষে, আর আর্জেন্টিনাও জিতেছে ৭-০ গোলে। প্রথমার্ধেই সম্পন্ন হয়েছে মেসির মাইলফলক ছোঁয়া হ্যাটট্রিক। আর আর্জেন্টিনার ৫ গোল।
মাঠে নামলেই নতুন নতুন সব রেকর্ড আর কীর্তি গড়াটাকে একপ্রকার ডালভাত বানিয়ে ফেলেছেন লিওনেল মেসি। বিশ্বকাপের পর প্রথম প্রীতি ম্যাচে পানামার বিপক্ষে ছুঁয়েছিলেন ক্লাব ও আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ার মিলিয়ে ৮০০ গোলের মাইলফলক। সেটিও আবার দুর্দান্ত এক ফ্রি-কিকে। দ্বিতীয় ম্যাচে মেসি আরও দুর্দান্ত। অখ্যাত হলেও দারুণ পারফর্ম করতে থাকা কুরাসাওয়ের বিপক্ষে ম্যাচে মাত্র ২০ মিনিটেই মেসি করেছেন আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারের ১০০তম গোল।
গত ১৮ ডিসেম্বর কাতারে বিশ্বকাপ জয়ের ঠিক ১০০ দিন পরই আর্জেন্টিনার হয়ে মেসির ১০০তম গোল, কুরাসাওকে আলাদা করে মনে রাখতেই হবে। আর্জেন্টিনার সমর্থকদের অন্তত তাতে আপত্তির কোনো কারণ নেই।
মার্তিনেজের মিসটা দেখে কারও কি মনে হয়েছিল এটা গোলবন্যার বাঁধ ভাঙার ইঙ্গিত! কারণ ২০ থেকে ৩৫, এই ১৬ মিনিটের মধ্যে ৫ গোল করেছে আর্জেন্টিনা। তার মধ্যে ৩৩ থেকে ৩৭, এই ৫ মিনিটের মধ্যে করেছে ৩ গোল!। এস্তাদিও মাদ্রে সিউদাদ স্টেডিয়ামে স্বাগতিক সমর্থকদের তা ভালোই উপভোগ করার কথা।
ম্যাচের ১০ মিনিটের মধ্যে দুটি সুযোগ পাওয়া মেসির গোল মনে হয়েছে সময়ের ব্যাপার। ২০ মিনিটে জিওভান্নি লো সেলসোর বুদ্ধিদীপ্ত পাস থেকে ডান পায়ের শটে পেয়েছেন শততম গোল। ইরানের আলী দাঈয়ি ও পর্তুগালের ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোর পর আন্তর্জাতিক ফুটবলে শততম গোল করা তৃতীয় ফুটবলার মেসি। আর নিজের মহাদেশ দক্ষিণ আমেরিকায় প্রথম।
মেসির গোলের দুই মিনিট পরই কুরাসাওয়ের পোস্ট কাঁপান নিকো গঞ্জালেস। পরের মিনিটে হেডে প্রাপ্য গোলটাও পেয়ে যান। কাতার বিশ্বকাপ ফাইনালের একাদশে থাকা পাঁচজনকে রেখে এই ম্যাচের দল সাজানো আর্জেন্টিনার কোচ লিওনেল স্কালোনি গঞ্জালেসকে বাঁ প্রান্তে খেলালেও প্রান্ত বদল করেছেন মেসির সঙ্গে। সামনে থাকা মার্তিনেজ নিচেও নেমেছেন। আর পেছন থেকে কলকাঠি নেড়েছেন চোট থেকে সেরে ওঠা লো সেলসো।
স্কালোনির দল স্বাধীনভাবে খেলতে পেরেছে কুরাসাওয়ের মাঝ মাঠ ও রক্ষণ ফাঁকা জায়গা দেওয়ায়। ৩৩ মিনিটে তৃতীয় গোলটি এসছে সেভাবেই। গঞ্জালেস ও এনজো ফার্নান্দেজের বোঝাপড়ায় ফাঁকা জায়গা থেকে ক্যারিয়ারে অন্যতম সহজ গোল করেন মেসি। দুই মিনিট পর তাঁর পাস থেকে দুরপাল্লার শটে গোল করেন ফাঁর্নান্দেজ। মেসিও দেরি করেননি। লো সেলসোর দুরপাল্লার পাস থেকে করা গোলে তুলে নেন ৩৭ মিনিটে তুলে নেন আর্জেন্টিনার হয়ে নিজের ৯ম হ্যাটট্রিক, সব মিলিয়ে ৫০তম!