চট্টগ্রামের আনোয়ারা উপজেলার বন্যহাতির আক্রমণে মৃত্যুর ঘটনা থেমে নেই। দেয়াঙ পাহাড়সংলগ্ন লোকালয়ে প্রতি রাতেই তাণ্ডব চালাচ্ছে বুনো হাতির পাল। খাবারের সন্ধানে লোকালয়ে হানা দিচ্ছে হাতি। গুঁড়িয়ে দিচ্ছে বসতবাড়ি, নষ্ট করছে ফসলি জমি। আক্রমণ থেকে রক্ষা পেতে নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছে গ্রামবাসী। পুরো গ্রামে এখন আতঙ্ক বিরাজ করছে।
গত বুধবার (৫ জুলাই) উপজেলার বারখাইন ইউনিয়নের উত্তর হাজিগাঁও এলাকার বাসিন্দা মোহাম্মদ ছাবের আহমদ রেনু মাগরিবের নামাজ শেষে বাড়িতে ফিরছিলেন। এ সময় তিনি একটি বন্য হাতির সামনে পড়েন। হাতিটি তাঁকে শুঁড় দিয়ে ওপরে তুলে আছাড় দেয়। পরে স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। নিহত ছাবের আহমদ স্থানীয় কবিরের বাপের বাড়ির মৃত আতর আলীর পুত্র। তার তিন ছেলে তিন মেয়ে রয়েছে।
জানা গেছে, খাবারের সন্ধানে দেয়াং পাহাড় থেকে লোকালয়ে নেমে আসছে অন্তত তিনটি বুনো হাতি। হাতিগুলো রাতে এসে ভোরে সূর্য ওঠার আগ পর্যন্ত লোকালয়ে তাণ্ডব চালায়। হাতিগুলো এখান থেকে ওখানে ছুটতে থাকে। আর স্থানীয়রাও হাতিগুলোর পিছু নেয়। এ অবস্থায় হাতিগুলো নিয়ে উদ্বেগ-আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে স্থানীয়দের মাঝে।
এর আগে দেয়াঙ পাহাড় থেকে নেমে আসা হাতির তাণ্ডবে ভেঙ্গে গেছে বসতবাড়ির দেয়াল।গত সোমবার (৩ জুলাই) ভোররাতে উপজেলার বৈরাগ ইউনিয়নের ফকিরখীল এলাকার আবদুল মান্নান মাস্টারের বাড়িতে হাতির আক্রমণের ঘটনা ঘটে।হাতির তাণ্ডবে একই এলাকার মোহাম্মদ ইদ্রিছের ঘরের দেয়াল ও আবদুল মালেকের ঘরের দরজা ভাঙচুর করে। এতে করে কয়েক লক্ষাধিক টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে দাবি করেন ক্ষতিগ্রস্তরা।
স্থানীয়রা বলছেন, গত কয়েক বছর ধরে দেয়াঙ পাহাড়ে দলছুট বন্যহাতির পাল বিচরণ করছে। দিনের বেলায় হাতির পালটি পাহাড়ের জঙ্গলে থাকলেও রাত হলেই লোকালয়ে নেমে আসে। হাতির পাল প্রায় সময় পাহাড়সংলগ্ন গ্রামগুলোর কোনো না কোনো এলাকায় তান্ডব চালায়। তাই হাতি-আতঙ্কে নির্ঘুম রাত পার করছেন এসব এলাকার বাসিন্দারা। দেয়াং পাহাড়ের বন উজাড় করে মিল- কারখানা স্থাপনের ফলে এসব বন্য প্রাণী খাবার সংকটে পড়ে বাধ্য হয়ে লোকালয়ে ঢুকছে।
জানা যায়, রাতের আঁধারে লোকালয়ে নেমে এসে বিভিন্ন ক্ষেত-খামার ও বসতবাড়িতে দফায় দফায় হামলা চালানোর ফলে নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছে আনোয়ারার হাজারো মানুষ। বন্যহাতি খাদ্যের সন্ধানে এসে ঘরবাড়ি ও আঙ্গিনা গুড়িয়ে দেয়।বন্যহাতিগুলো কেপিজেড এর বিভিন্ন বাগানে আশ্রয় নিয়ে থাকে, রাতে লোকালয়ে নেমে এসে হামলা চালালে প্রাণহানির মতো ঘটনা ঘটছেই। শুধু সাহায্য দিয়ে নয়, খাদ্যের সন্ধানে লোকালয়ে নেমে আসা বন্যহাতির কবল থেকে পরিবার পরিজন নিয়ে বাঁচতে চান আনোয়ারাবাসী।
বৈরাগ ইউনিয়নের বাসিন্দা মো.ফখরুউদ্দীন বলেন, আজ থেকে ২০ বছর আগেও এসব হাতি ছিল দেয়াং পাহাড়ে, কোনদিন লোকালয়ে আসেনি। কারণ যখন বন, জঙ্গল পাহাড় ছিল এদের খাবার কিংবা বসবাসের কোন অসুবিধা হয়নি, তাই লোকালয়ে আসেনি। দেয়াং পাহাড়ে কেইপিজেডের ২২টি শিল্প কারখানা স্থাপনের পর থেকে এসব হাতি খাবারের সন্ধানে লোকালয়ে আসছে।
বাঁশখালীর জলদি বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ ও অভয়ারণ্য রেঞ্জের কর্মকর্তা আনিসুজ্জামান শেখ বলেন, দেয়াঙ পাহাড়ের হাতি বিষয়ে স্থায়ী সমাধানের জন্য আমরা উচ্চপর্যায়ে কথা বলেছি। তবে এ পর্যন্ত কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। আপাতত সেখানে ক্ষয়ক্ষতি কমানোর জন্য কয়েকটি টিম কাজ করছে। ক্ষতিগ্রস্তদের আর্থিক সহায়তা দেওয়া হচ্ছে।