পাকিস্তানের ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান স্বীকার করেছেন, তার নেতৃত্বাধীন সরকার দুর্বল ছিল এবং সবসময়েই ব্ল্যাকমেইলের শিকার হয়েছে। পাশপাশি তার স্বীকারোক্তি—ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য সামরিক বাহিনীর সমর্থন পাননি তিনি।
পাকিস্তানের সংবাদমাধ্যম বোল নিউজকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ইমরান খান বলেন, ‘আমাদের হাত বাঁধা ছিল। সব জায়গা থেকে ব্ল্যাকমেইলের শিকার হচ্ছিলাম আমরা। জোট শরিকদের মধ্যে ছোটোখাটো নানা বিষয় নিয়ে দ্বন্দ্ব শুরু হয়েছিল। কিন্তু সবাই জানেন, পাকিস্তানের ক্ষমতার মূল কেন্দ্র কোথায়। আমরা সবসময় তাদের ওপর ভরসা করেছিলাম, কিন্তু তারা আমাদের সমর্থন করেনি। দেশের জন্য তারা অনেক ভালো কাজ করেছে, কিন্তু এমন বহু পদক্ষেপ তারা নেয়নি— যেগুলো নেওয়া উচিত ছিল। তারা ক্ষমতাবান, কারণ ন্যাশনাল অ্যাকাউন্টিবিলিটি ব্যুরোর (এনএবি) মত প্রতিষ্ঠানের নিয়ন্ত্রণ তাদের হাতে।’
সাক্ষাৎকারে ইমরান খান বলেন, একটি ব্যাবস্থা তখনই কার্যকর হয়, যখন দায়িত্ব ও কর্তৃত্ব উভয়ই এক জায়গায় থাকে। যদি কারো হাতে কেবল দায়িত্ব থাকে, আর কর্তৃত্ব থাকে অন্য জায়গায়— তাহলে কোনো ব্যবস্থাই সম্পূর্ণ কার্যকর হবে না। আমার ক্ষেত্রেও এমনই হয়েছিল।
সফল ক্রিকেটার থেকে রাজনীতিতে আসা ইমরান খান ২০১৮ সালে দুর্নীতিমুক্ত, সমৃদ্ধ ও বিশ্বের কাছে শ্রদ্ধা পাওয়ার মতো দেশ গড়ার স্বপ্ন দেখিয়ে ভোটে জিতে প্রধানমন্ত্রী হয়েছিলেন। তবে ১৯৪৭ সালে ব্রিটিশদের কাছ থেকে স্বাধীনতা লাভের পর থেকে অর্ধেকেরও বেশি সময় সেনা শাসনে থাকা পাকিস্তানে তার ক্ষমতা আরোহনের নেপথ্যে সেনাবাহিনীর আশীর্বাদ ছিল বলে মনে করা হয়। দেশটির রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, মূলত সেনাবাহিনীর পরোক্ষ মদতেই পাকিস্তানের বড় দুই দল পাকিস্তান পিপলস পার্টি (পিপিপি) ও মুসলিম লিগকে (নওয়াজ) হটিয়ে ক্ষমতায় বসার সুযোগ পান তিনি।
কিন্তু গতবছর সেপ্টেম্বরের দিকে সেনাপ্রধান জেনারেল কামার জাভেদ বাজওয়ার সঙ্গে সম্পর্কের অবনতি হয় ইমরান খানের। দেশটির শীর্ষ গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআইয়ের নতুন প্রধান নাভিদ আনজুমকে আনুষ্ঠানিক নিয়োগদানকে কেন্দ্র করেই শুরু হয় এই দ্বন্দ্ব। এর মধ্যে বিরোধী দলগুলো জোট বেঁধে সরকারের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব আনে। পরে যদিও নতি স্বীকার করে নাভিদ আনজুমের নিয়োগপত্রে স্বাক্ষর করেছিলেন ইমরান খান, কিন্তু ততদিনে পরিস্থিতি অনেকদূর গড়িয়ে গেছে, পার্লামেন্টে নিজেদের প্রস্তাবে অনড় বিরোধীরাও আগের চেয়ে শক্তিশালী অবস্থানে চলে গেছেন। আদালত ও পার্লামেন্টে বিস্তর নাটকীয় ঘটনার পর ১০ এপ্রিল বিরোধীদের অনাস্থাভোটে পরাজিত হয়ে ক্ষমতা হারান ইমরান খান, নতুন প্রধানমন্ত্রী হন শেহবাজ শরিফ।
তবে সাক্ষাৎকারে দেশের বর্তমান রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন ইমরান। যদি দেশে অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা সেক্ষেত্রে দেশটি পরমাণু অস্ত্রের মর্যাদা হারাতে পারে বলেও আশঙ্কা জানান তিনি। ইমরান খান বলেন, দেশ বর্তমানে দেউলিয়া হওয়ার পথে। সরকার যদি এ সময় কোনো ভুল সিদ্ধান্ত নেয়, সেক্ষেত্রে তারা নিজেরা ও সামরিক বাহিনী— উভয়ই ক্ষতিগ্রস্ত হবে। আর যদি সত্যিই পাকিস্তান দেউলিয়া হয়ে যায়, সেক্ষেত্রে প্রথমে আমরা যা হারাব— সেটি হলো পরমাণূ অস্ত্রের মর্যাদা।