এখন আমলাদের রাজত্ব চলছে এমন অভিযোগ রাজনীতিবিদরা
প্রায়ই করে থাকেন। আমলারা কেন ক্ষমতাবান হয়ে উঠেছেন এই নিয়েও নানারকম বিতর্ক আছে।
অনেকে মনে করেন যে মন্ত্রীদের অযোগ্যতা, ব্যর্থতা এবং অভিজ্ঞতার অভাবের কারণে আমলাদের
দৌরাত্ম্য বেড়েছে। অনেকে মনে করেন যে, মন্ত্রীসভায় রাজনৈতিক ব্যক্তিদের অনুপস্থিতির
কারণে আমলারা ছড়ি ঘোরাচ্ছেন। এরকম অভিযোগ যে কিছু কিছু ক্ষেত্রে একেবারে উড়িয়ে দেওয়া
যায় না তা প্রমাণ পাওয়া যায় মন্ত্রিসভার সদস্যদের কার্যক্রম দেখে। যে সমস্ত মন্ত্রীরা
রাজনৈতিক এবং তাদের মন্ত্রণালয়ের কার্যক্রমে মনোযোগী তারা কিন্তু ঠিকই মন্ত্রণালয়ের
নেতৃত্বে দিতে পেরেছেন। এরকম কয়েকজন মন্ত্রীকে নিয়েই আমাদের এই প্রতিবেদন।
১. ওবায়দুল কাদের: ওবায়দুল কাদের আওয়ামী
লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক ও সেতুমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। তার নেতৃত্বেই
পদ্মা সেতু, কর্ণফুলী টানেল, মেট্রোরেলসহ সব মেগা প্রকল্পগুলো বাস্তবায়িত হচ্ছে। ওবায়দুল
কাদের একজন পোড়খাওয়া রাজনীতিবিদ। সে কারণে তিনি মন্ত্রণালয়ের কর্তৃত্ব তার হাতে। করোনাকালীন
তিনি অধিকাংশ সময় ঘরবন্দি থাকছেন কিন্তু ঘরবন্দি থাকার পরও তিনি অনলাইনের মাধ্যমে
বিভিন্ন কার্যক্রম তদারকি করছেন এবং পদ্মা সেতুসহ বিভিন্ন ইস্যুতে তিনি সরকারি মুখপাত্র
হিসেবে বক্তব্য রাখছেন। এখানে সচিবরা কখনোই মুখ্য ভূমিকায় আসেনি।
২. ড. আব্দুর রাজ্জাক: ড. আব্দুর রাজ্জাক
আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য, একজন কৃষিবিদ এবং রাজনীতিতে দীর্ঘ অভিজ্ঞতা সম্পন্ন।
আর কৃষিবিদ হওয়ার কারণে মতিয়া চৌধুরীর পর কৃষি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব গ্রহণ করে
তিনি কৃষি মন্ত্রণালয়কে সচল রেখেছেন এবং আমলাতন্ত্রের দৌরাত্ম্যের মধ্যেও কৃষি মন্ত্রণালয়ের
নেতৃত্ব ড. আব্দুর রাজ্জাকই ধরে রেখেছেন। তিনি কেবল মন্ত্রণালয়ের রুটিন কাজ নয় বরং
করোনাকালে কৃষক এবং কৃষিকে এগিয়ে নেওয়ার রূপ-পরিকল্পনার ব্যাপারেও নির্দেশনা এবং
পরামর্শ দিচ্ছেন।
৩. ডা. দীপু মনি: ডা. দীপু মনি শিক্ষামন্ত্রী।
যদিও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ নিয়ে তিনি সমালোচিত। তারপরও এই মন্ত্রণালয়ের চাবি তার
হাতেই। মন্ত্রণালয়ে তার একাধিক সচিব রয়েছে কিন্তু সচিবদের ছাপিয়ে নীতিনির্ধারণী
বক্তব্য এবং সিদ্ধান্ত ডা. দীপু মনিই নিচ্ছেন। আর এ কারণেই তিনি আলোচিত-সমালোচিত। ডা.
দীপু মনি আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক। রাজনৈতিক ধারা থেকে আসার কারণে মন্ত্রণালয়ের
মূল ব্যক্তি হতে তার সমস্যা হয়নি।
৪. শ ম রেজাউল করিম: মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ
মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম প্রথমে গৃহায়ণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে ছিলেন সেখান থেকে
মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় এসেছেন এবং এই মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব নিয়ে তিনি
যেন মন্ত্রণালয়ের প্রাণ এনেছেন। বিশেষ করে করোনাকালীন সময় শ ম রেজাউল করিমের নেতৃত্বেই
মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় একটা নতুন জাগরণ সৃষ্টি হয়েছে এবং মৎস্য ও প্রাণী
খাতকে এগিয়ে নেওয়ার ক্ষেত্রে তিনি নেতৃত্ব দিচ্ছেন। বিভিন্ন সংকটে তিনি মন্ত্রণালয়ের
অভিভাবক হিসেবে সামনে আসছেন। এই মন্ত্রণালয়ের সচিবও একজন রাজনীতি থেকে উঠে আসা। কিন্তু
তারপরও শ ম রেজাউল করিমের রাজনৈতিক অভিজ্ঞতা এবং প্রজ্ঞার কারণেই মন্ত্রণালয় নেতৃত্ব
তার হাতে।
৫. জুনাইদ আহ্মেদ পলক, প্রতিমন্ত্রী তথ্য
প্রযুক্তি বিভাগ: জুনাইদ আহ্মেদ পলক দ্বিতীয়বারের মতো মন্ত্রিত্ব করছেন। তৃণমূল থেকে
উঠে আসা এই তরুণ প্রতিমন্ত্রী কিন্তু মন্ত্রণালয়ের চাবি নিজের কাছে রেখেছেন। রাজনীতিবিদ
হিসেবে থাকার কারণেই তিনি এটা পেরেছেন বলে অনেকে মনে করেন। এই মন্ত্রণালয়ের সচিব একজন
অন্যতম সিনিয়র আমলা। কিন্তু তারপরও মন্ত্রণালয়ের মূল চালিকাশক্তি জুনাইদ আহ্মেদ
পলক। মন্ত্রণালয়ের নানারকম উদ্ভাবন এবং মন্ত্রণালয় পরিকল্পনা গ্রহণের ক্ষেত্রে পলকই
নেতৃত্ব দিচ্ছেন।
লক্ষ্য করার বিষয় হল, যারা রাজনীতি থেকে
উঠে এসে মন্ত্রী হয়েছেন তাদেরকে নিয়ে কোন সমস্যা নেই। তারা মন্ত্রণালয়ের নেতৃত্ব
সহজেই নিতে পারছেন তাদের যোগ্যতায়। আর যারা ব্যবসা বা অন্য ক্ষেত্র থেকে এসে মন্ত্রী
হয়েছেন তারা আমলাদের কাছে নিজেদেরকে আত্মসমর্পণ করছেন। সূত্র: বাংলা ইনসাইডার