চুয়াডাঙ্গায় এবার প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে আমের উৎপাদন ফলন নিয়ে শঙ্কায় পড়েছে আম চাষিরা। এতে আর্থিক ভাবে লোকশানে শঙ্কায় আছে এই মৌসুমের আম চাষিরা। তাদের আমের লক্ষমাত্রা পূরণ হবে কি না তা নিয়ে এখন দুশ্চিন্তা কৃষকদের। প্রথমে আমের গুটি ঠেকানোর জন্য বিভিন্ন প্রতিষোধক স্প্রে করেও কোনো কাজে আসেনি। আর তাই এবার আম চাষিরা পড়েছে বিপাকে। এদিকে কৃষি বিভাগ বলছে, আমের উৎপাদন ও ফলন যাতে পাই । সেই জন্য আম চাষিদের পরামর্শ চলছে। আর এবার আমের দাম ভালো পাবে বলে আসাবাদি কৃষি বিভাগ।
জানা গেছে, চুয়াডাঙ্গা শহরের অদুরে ৭০ বিঘা জমির ওপর শত শত আম গাছ। আর প্রতিটা আম গাছে যেন কৃষকদের স্বপ্ন বোনা। কিন্তু এই স্বপ্ন যেন কৃষকদের কাছে অনেকটাই দুশ্চিন্তা এবার। গেল কয়েকদিন আগে কালবৈশাখী ঝড়ের প্রভাবে আম গাছ থেকে ঝড়ে পড়েছে। আর গত এপ্রিল মাসের ২২ দিন ধরে চুয়াডাঙ্গা দেখা নেই বৃষ্টি। অতিরিক্ত ভ্যাপসা গরম আর তীব্র তাপপ্রবাহ। প্রচন্ড রোদের খরতাপের প্রভাবে শত শত আম গাছের ডাল থেকে আমের গুটি ঝড়ে পড়ে গেছে। আবার প্রাকৃতিক বিভিন্ন দুর্যোগের কারণে আম চাষিরা পড়েছে দুশ্চিন্তাই। ভালো ফলন ও উৎপাদনের শঙ্কায় আছে কৃষকরা। এমন দৃশ্য শুধু এই আম বাগানে নয় আরো আছে জেলার প্রায় প্রতিটা আম বাগানে এমন প্রেক্ষাপট বিরাজ করেছে। প্রথমে আমের গুটি ঠেকানোর জন্য কৃষকরা ইতিমধ্যে উদ্দ্যোগ গ্রহণ করেছে। তারা তাদের আমগাছ গুলোতে বিভিন্ন প্রতিষোধক বিষ স্প্রে করে আমের গুটি ঠেকানো চেষ্টা করেছে। তাতেও কোনো আসানরুপ কাজে আসেনি। এবার আম চাষিদের আমের লক্ষমাত্রা পূরণ নিয়ে শঙ্কায় আছে। যে পরিমাণ এই মৌসুমে আম উৎপাদনে খরচ তা পরিপূর্ন উঠবে কি না তা নিয়ে কৃষকদের দুশ্চিন্তার শেষ নেই। এবার আমের সাইজ ও আকারে ছোট অনেক। সব মিলিয়ে এবার আম চাষে ক্ষতি। আর কিছুদিন পর গাছ থেকে আম সংগ্রহ শুরু হবে। এবার যদি আমের দাম ভালো পায় । তাহলে কৃষকরা তাদের আমের লোকশান কাটিয়ে উঠতে পারবে।
আরও পড়ুন: রেলওয়ের জলাশয় অবৈধভাবে ভরাটের প্রতিবাদে এলাকাবাসীর মানববন্ধন
কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা যায়, এবার এ জেলায় আমের উৎপাদন লক্ষমাত্রা পূরণ হবে। আর আম বাগান আছে ২ হাজার ৪৬৫ হেক্টর জমিতে। আমের গুটি ঠেকানোর জন্য কৃষি বিভাগের মাঠ কর্মিরা কৃষকদের নিয়মিত পরামর্শ দিয়েছে। এবার আমের বাজার যেন ভালো হয়। সেজন্য কৃষি বিভাগ কাজ করছে কৃষকদের ভালো দাম পাওয়ার জন্য।
কথা হয় চুয়াডাঙ্গা আম চাষি ইদ্রিস আলির সাথে তিনি বলেন, এবার আমের গুটি সব ঝড়ে গেছে। আমরা এতে আর্থিক ভাবে এবার লোকসানে পড়বো মনে হচ্ছে। বিভিন্ন বিষ স্প্রে করে কোনো কাজে আসেনি। এবার বিভিন্ন দুর্যোগের কারণে আমে অনেক ক্ষতি হয়েছে। আবার আম আকারে অনেক ছোট। মোটা হয়নি। এতে আমের ওজন কমে গেছে। তাই এবার যেন চরম ক্ষতি হতে পারে।
অপর কৃষক সবুর আলি বলেন, বেশ কিছু দিন আগে কোনো বৃষ্টি হয়েছিল না। আবার অতিরিক্ত গরম আর প্রচন্ড রোদের তাপমাত্রা আর তাই গাছের গুটি সব ঝড়ে পড়ে গেছে। এবার আম উৎপাদনের লক্ষমাত্রা পূরণ হবে কি তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছি। আম নিয়ে এবার অনেক স্বপ্ন আছে । কিন্তু তা আর পূরণ হবে না মনে হয়। বাজার যদি ভালো হয় তাহলে দামে পুষিয়ে যাবে বলে মনে করি।
আর এদিকে চুয়াডাঙ্গা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের প্রশিক্ষণ কর্মকর্তা মোহাম্মদ আলি জিন্নাহ বলেন, অতিরিক্ত খড়তাপের কারণে আমের গুটি পড়ে গেছে। এমন অবস্থায় আমরা কৃষকদের পরামর্শ দিয়েছি। কীটনাশক ও ছত্রাকনাশক বিষ স্প্রে করার পরামর্শ দিয়েছি। আর এসময় গাছের গোড়াই বেশি করে পানি দিতে হবে। তাহলে আমের গুটি পড়া ঠোকনোর যাবে। আর এই পরিস্থিতিতে মাঠ পর্যায়ের কৃষি কর্মকর্তা পরামর্শ অব্যাহত রেখেছে। আর তাছাড়া এবার কালবৈশাখী ঝড়ের কারণে আম পড়ে গেছে কিছুটা। তবুও এবার আমে ভালো দাম পাবে কৃষকরা। আর আমের উৎপাদন ও ফলন ভালো হবে বলে মনে করি।