জাতীয় নির্বাচনের বাকি এক বছরের কিছু বেশি সময়। গত তিনটি নির্বাচনে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সঙ্গে জোটে থেকে কিংবা জোটের বাইরে পারস্পরিক সহযোগিতার মাধ্যমে ভোট করেছে জাতীয় পার্টি। আগামী নির্বাচনে জাতীয় পার্টির অবস্থান কী হবে সেটা নিয়ে মুখ খুলেছেন দলটির চেয়ারম্যান জিএম কাদের। আওয়ামী লীগের সঙ্গে থাকা না থাকা দুই সম্ভাবনার কথাই জানিয়েছেন তিনি।
শুক্রবার (১৬ সেপ্টেম্বর) দুপুরে রাজধানীর মহানগর নাট্যমঞ্চে হিন্দু মহাজোটের প্রতিনিধি সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন জিএম কাদের।
এ সময় আওয়ামী লীগের সঙ্গে জোট প্রসঙ্গে জিএম কাদের বলেন, আমরা দেশ ও মানুষের পক্ষে কথা বলতে চাই। আমরা সবসময় সত্য কথা বলতে চাই। ভালো কাজ করলে আমরা আওয়ামী লীগের সাথে থাকতে পারি। কিন্তু আওয়ামী লীগ যদি গণমানুষের আস্থা হারিয়ে ফেলে তাহলে আগামীতে আমরা তাদের সাথে নাও থাকতে পারি।
জিএম কাদের বলেন, জাতীয় পার্টি কোনো জোটে নেই। গেল নির্বাচনেও আওয়ামী লীগের সাথে জাতীয় পার্টির কোনো জোট ছিল না। গেল নির্বাচনে কিছু আসনে নির্বাচনী সমঝোতা হয়েছিল। তখন আসনভিত্তিক আমাদের নেতাকর্মীরা আওয়ামী লীগের পক্ষে কাজ করেছেন, আবার আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা জাতীয় পার্টির পক্ষে কাজ করেছেন। এ কারণেই আওয়ামী লীগের সাথে আমাদের একটা বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক আছে।
জাপা চেয়ারম্যান বলেন, দেশের মানুষ নির্বাচনে ইভিএম চায় না। আমরা শুরু থেকেই ইভিএমের বিপক্ষে। কারণ ইভিএম হচ্ছে শান্তিপূর্ণ কারচুপির মেশিন। ইভিএমে নির্বাচন হলে যাকে খুশি বিজয়ী করতে পারবে।
সাবেক এই মন্ত্রী বলেন, আমরা নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দিইনি, নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা অত্যন্ত কঠিন। আমরা বাস্তব অবস্থা পর্যবেক্ষণ করে সিদ্ধান্ত নেব। আমরা দেশ ও সাধারণ মানুষের স্বার্থের কথা বিবেচনায় রেখে, দলীয় ফোরামে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেব।
প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি বলেন, দেশ ও মানুষের সেবার দায়িত্ব নিতেই আমরা রাজনীতি করছি। আগে যুদ্ধ-বিগ্রহের মাধ্যমে ক্ষমতা দখল করা হতো। যুদ্ধে কেউ শৃঙ্খলা ভঙ্গ করলে তাকে কঠিন শাস্তি দেওয়া হতো, কখনও কখনও মৃত্যুদণ্ডও দেওয়া হতো। এখন শান্তিপূর্ণ রাজনীতি ও নির্বাচনের মাধ্যমে রাষ্ট্রক্ষমতা গ্রহণ করতে হয়। শান্তিপূর্ণ আন্দোলনেও শৃঙ্খলা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। যদি কেউ দলীয় শৃঙ্খলা বিনষ্ট করতে চায় সে যত বড় নেতাই হোক, যত প্রভাবশালী হোক অথবা যত অর্থবিত্তের মালিকই হোক, কাউকে ছেড়ে দেব না। সব ষড়যন্ত্র উড়িয়ে দিয়ে আমরা দেশ ও মানুষের স্বার্থ রক্ষায় কাজ করবো।
সরকারের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ এনে তিনি বলেন, দেশে মেগা প্রকল্প চলছে মেগা দুর্নীতির জন্য। প্রতিটি প্রকল্পের সম্ভাব্যতা যাচাই করা হয়, কিন্তু নির্ধারিত সময়ে এবং নির্দিষ্ট বরাদ্দে কোনো কাজ শেষ হয় না। প্রতিটি প্রকল্পে অতিরিক্ত সময় ও অর্থ ব্যয় হচ্ছে। এতে প্রমাণ হয় সম্ভাব্যতা যাচাই সঠিক ছিল না। আবার অতিরিক্ত ব্যয়ের কারণে এই প্রকল্পগুলো কখনোই লাভজনক হবে না। একই সময়ে গেল বছরে শুধু সুইস ব্যাংকেই চার লাখ কোটি টাকা পাচার হয়েছে। আর একারণেই গভীর ঝুঁকির দিকে এগোচ্ছে আমাদের অর্থনীতি। জাতীয় বাজেট হচ্ছে শতভাগ দেশি-বিদেশি ঋণনির্ভর। দেশের পরিচালন ব্যয় নির্বাহ করতে হবে ট্যাক্স আদায়ের মাধ্যমে। মানুষের যদি আয় না থাকে অথবা কষ্টের মধ্যে জীবনযাপন করে তাহলে ট্যাক্স দেবে কীভাবে?
সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন জাতীয় পার্টির কো-চেয়ারম্যান সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা, প্রেসিডিয়াম সদস্য আলমগীর সিকদার লোটন, ভাইস চেয়ারম্যান এইচ এম শাহরিয়ার আসিফ, সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য জহিরুল ইসলাম মিন্টু, আহাদ ইউ চৌধুরী শাহিন, যুগ্ম সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য হেলাল উদ্দিন, এম এ সোবহান, আক্তার হোসেন দেওয়ান প্রমুখ।