কক্সবাজারবাসীর
বহুল প্রতীক্ষিত রেললাইনের উদ্বোধন করতে আজ কক্সবাজার আসছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
আর এই রেললাইনের সবচেয়ে আকর্ষণীয় স্থাপনা পর্যটন শহরে নির্মিত দেশের প্রথম দৃষ্টিনন্দন
আইকনিক রেলস্টেশন। অনেকটা ঝিনুকের আদলেই গড়ে তোলা হয়েছে স্টেশনটি। এটি রেলস্টেশন হলেও
বাস্তবে যেন তারকামানের হোটেল। যেখানে থাকছে শপিংমল, কনভেনশন সেন্টার, রেস্টুরেন্ট,
শিশু যত্নকেন্দ্র, লাগেজ রাখার লকারসহ অত্যাধুনিক সুযোগ-সুবিধা। যা ইতোমধ্যে বিদেশিদের
প্রশংসা কুড়িয়েছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
আক্ষরিক অর্থে
ঝিনুক না হলেও সমুদ্র দর্শনে এসে প্রথম দর্শনেই সামুদ্রিক আবহ পাওয়া যাবে গোটা রেলস্টেশনে।
কেবল গন্তব্যে আসা-যাওয়ার জন্যই নির্মিত হয়নি এই স্টেশন, এটিকে দেওয়া হয়েছে বহুমাত্রিক
রূপ। নান্দনিক ডিজাইন আর নির্মাণশৈলীর পাশাপাশি দৃষ্টিনন্দনে বহুমাত্রিকতা যুক্ত হওয়ায়
এই স্টেশন পরিণত হয়েছে দর্শনার্থীদের বিনোদনের নতুন গন্তব্যে।
সরেজমিনে দেখা
যায়, চোখ ধাঁধানো আইকনিক স্টেশন, সৌন্দর্য ফুটিয়ে তুলতে চারপাশে ব্যবহার হয়েছে কাচ।
ছাদের ওপর অত্যাধুনিক স্টিল ক্যানোফি। ফলে দিনের বেলা বাড়তি আলো ব্যবহার করতে হবে না।
পরিবেশসম্মত আধুনিক নির্মাণশৈলীর কারণেই একে বলা হচ্ছে গ্রিন স্টেশন। একই সঙ্গে সুবিশাল
চলন্ত সিঁড়ি দিয়ে উঠে দোতলা থেকে নামতে হবে ট্রেনের প্ল্যাটফর্মে। আর আগমনী যাত্রীরা
বের হবেন নিচ থেকে। যার জন্য প্রস্তুত চারটি চলন্ত সিঁড়ি। স্টেশনের ভেতরেই রয়েছে সাতটি
টিকিট কাউন্টার। আর চাইলেই নির্দিষ্ট লকারে ব্যাগ রেখে পর্যটকরা ঘুরে আসতে পারবেন পুরো
শহর।
এই আইকনিক স্টেশনের
স্থপতি মো. ফয়েজ উল্লাহ বলেন, ‘কক্সবাজার রেলস্টেশন ডিজাইন করার সময় একটা অনুপ্রেরণা নিই। ঝিনুক ও শামুকের
গঠনটা বাইরে, শরীরের অংশটুকু ভেতরে আবৃত থাকে। আমরা সেখান থেকে অনুপ্রেরণা নিয়ে পুরো
রেলস্টেশনটাকে এক ছাউনির নিচে ঢেকে দিয়েছি।’ তিনি বলেন, ‘এখন রেলস্টেশন শুধু যাত্রী যাওয়া-আসার জন্য নয়। এখানে পর্যটকদের জন্য
বিভিন্ন ধরনের সুবিধা, রেস্টুরেন্ট, ফুডকোর্ট, মাল্টিপারপাস হল, হোটেল ব্যবস্থা রয়েছে।
সুতরাং এটি শুধু রেলস্টেশন নয়; এটি একটি ডেস্টিনেশন। এটি একটি আকর্ষণীয় আর্থসামাজিক
মডেল।’
তিনি বলেন,
‘চারদিকে
গ্লাস লাগানো হয়েছে। এখানে কোনো কৃত্রিম আলোর প্রয়োজন নেই। এ ছাড়া ছাউনিটা পুরো কাঠামোটাকে
ঢেকে রেখেছে। ফলে সব সময় ভবনটি সহনীয় তাপমাত্রায় থাকবে। এতে কুলিং লোড কম হবে। ফলে
শীতাতপ নিয়ন্ত্রণের লোডও কম হবে। এতে প্রচুর পরিমাণে বিদ্যুৎ সাশ্রয় হবে।’
মো. ফয়েজ উল্লাহ
আরও বলেন, ‘আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে, প্রকল্পটি পরিবেশগতভাবে টেকসই হিসেবে
ডিজাইন করা। এখানে বৃষ্টির পানি থেকে শুরু করে পানি পুনর্ব্যবহার করা, বিদ্যুৎ সাশ্রয়,
পর্যাপ্ত আলোর ব্যবস্থা রেখেছি। এ ছাড়া পুনর্ব্যবহৃত টেকসই উপাদান ব্যবহার, পানির জন্য
কম অপচয় ওয়াটার ফিক্সচার ব্যবহার করছি। নানারকম সুযোগ-সুবিধা রেখেছি। বলা যায়, এটি
পরিপূর্ণ গ্রিন বিল্ডিং।’
স্টেশনটি নির্মাণে
ব্যবহার হয়েছে বিশ্বমানের সরঞ্জাম। নানা জটিলতা পেরিয়ে পরিপূর্ণতা পেয়েছে ভবনটি। আর
রেলস্টেশনটি বিদেশিদের প্রশংসা কুড়িয়েছে বলে জানিয়েছে নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠান ম্যাক্স
গ্রুপের চেয়ারম্যান ইঞ্জিনিয়ার গোলাম মোহাম্মদ আলমগীর। তিনি বলেন, দোহাজারী-কক্সবাজার
রেললাইন প্রকল্পে সবচেয়ে আকর্ষণীয় হচ্ছে আইকনিক রেলস্টেশনটি। আইকনিক ভবনটি নির্মাণ
অত্যন্ত জটিল ছিল। যেমন যে স্টিলগুলো দেখা যাচ্ছে, এই স্টিলগুলোর না যত দাম, এটা তৈরি
করতে তার চেয়ে চার গুণ বেশি টাকা ব্যয় হয়েছে। সব মিলিয়ে আমরা টাকার দিকে তাকাইনি, রেলওয়ে
কর্তৃপক্ষও সহযোগিতা করেছে।’
ইঞ্জিনিয়ার
গোলাম মোহাম্মদ আলমগীর আরও বলেন, কক্সবাজারে নির্মিত আইকনিক রেলস্টেশনটি দেখে মুগ্ধ
এডিবির শীর্ষ কর্মকর্তারা। তাদের এক শীর্ষ কর্মকর্তা বলেছেন, এরকম সুন্দর ও নান্দনিক
আইকনিক রেলস্টেশন বিশ্বে আর কোথাও নেই।
এদিকে রাজধানী
থেকে রাতের ট্রেন ধরে সকালে কক্সবাজারে পৌঁছে পর্যটকরা লাগেজ বা মালামাল স্টেশনের লকারে
রাখতে পারবেন। সারা দিন সমুদ্রসৈকত বা পর্যটন স্পট ঘুরে রাতের ট্রেনে আবার ফিরতে পারবেন
নিজ গন্তব্যে।
আইকনিক রেলস্টেশন
প্রকল্পের কনস্ট্রাকশন ম্যানেজার আবদুল জাবের মিলন বলেন, সমুদ্রসৈকত থেকে তিন কিলোমিটার
দূরে ঝিলংজা এলাকায় ২৯ একর জমিতে ২১৫ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত হচ্ছে দৃষ্টিনন্দন স্টেশন।
আইকনিক এ স্টেশনটি নির্মাণে চীন, বেলজিয়াম, ইংল্যান্ড ও ইতালিসহ বিশ্বের বিভিন্ন আধুনিক
স্টেশনের সুযোগ-সুবিধা বিবেচনায় নেওয়া হয়েছে। পুরো প্রকল্পটিতে ছয় শতাধিক লোক কাজ করছে।
৪ বছরের বেশি ধরে শ্রমিকদের কর্মযজ্ঞের ফল আইকনিক রেলস্টেশন ভবনটি দৃশ্যমান।