আজ সেই ভয়াল
২৯ এপ্রিল। বাংলাদেশের উপকূলবাসীর স্বজন হারানোর দিন। ১৯৯১ সালের এই দিনে এক মহা প্রলয়ঙ্করী
ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাসে লণ্ডভণ্ড হয়ে যায় বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকা। ভয়াল ২৯ এপ্রিল
উপকূলবাসীর বেদনার দিবস হিসেবে সবার কাছে পরিচিত।
দিনটি পালন উপলক্ষে চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারে স্থানীয় প্রশাসন, বিভিন্ন সামাজিক সাংস্কৃতিক সংগঠন আজ দিনব্যাপী নানা অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে। তবে এখনো অরক্ষিত বাংলাদেশের উপকূল।
আরও পড়ুন: উপকূলের এলাকাগুলোতে ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাব শুরু
জানা গেছে,
১৯৯১ সালের ২৯ এপ্রিল দিনগত মধ্যরাতে কক্সবাজার, চট্টগ্রাম, নোয়াখালী, বরিশাল, পটুয়াখালী,
বরগুনাসহ দেশের উপকূলীয় এলাকার ওপর দিয়ে ১২ থেকে ২০ ফুট উচ্চতায় জলোচ্ছ্বাস আঘাত হানে।
এতে ২ লাখ মানুষের প্রাণহানি ঘটার পাশাপাশি নিখোঁজ হয় আরও ১ লাখ মানুষ। ৭০ হাজার গবাদিপশু
মারা যায়। ঐ রাতের তাণ্ডবে প্রায় ১৫ হাজার কোটি টাকা সমমূল্যের ক্ষতি হয় বলে সরকারি
হিসেবে রয়েছে। তবে বেসরকারি হিসেবে এ ক্ষতির পরিমাণ আরও বেশি হবে বলে জানালেন, কোস্টাল
জার্নালিস্ট ফোরাম অব বাংলাদেশের প্রেসিডেন্ট আতা উল্লাহ খান।
আরও পড়ুন: নেত্রকোনায় আকস্মিক ঘূর্ণিঝড়, শতাধিক ঘর বিধ্বস্ত
ঝড়-জলোচ্ছ্বাসের
ছোবলে ছেলে হারায় মাকে, মা হারা তার প্রিয় সন্তানদের, স্বামী হারায় স্ত্রীকে, স্ত্রী
হারায় তার প্রাণের প্রিয় স্বামীকে।
সে ভয়াল রাতের
স্মৃতি মনে পড়লে উপকূলবাসী এখনো আঁতকে ওঠে। সে প্রলয়ঙ্করী ঘূর্ণিঝড়ের ৩২ বছর অতিবাহিত
হলেও কক্সবাজারসহ বৃহত্তর চট্টগ্রামের উপকূলবাসী এখনো অরক্ষিত। তার সঙ্গে যোগ হয়েছে
জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব। এখনো বিভিন্ন স্থানে খোলা রয়েছে উপকূলীয় বেড়িবাঁধ। ফলে বিভিন্ন
উপকূলীয় এলাকায় উচ্চ জোয়ারের সময় লোকালয়ে সাগরের লোনাজল এখনো প্রবেশ করছে।
কক্সবাজার পানি
উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী ড. তানজির সাইফ আহমেদ জানান, কক্সবাজারের ৫৯৫ কিলোমিটার
বেড়িবাঁধের মধ্যে ৩২ কিলোমিটার ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। তবে পুরো উপকূল জুড়ে সুপার
ডাইক নির্মাণের জন্য কাজ চলছে বলেও জানান তিনি।
কুতুবদিয়ার
সাংবাদিক নেতা হাসান কুতুবী জানান, তাদের পশ্চিম পাশের বেড়িবাঁধ’ ৯১ সালের পর আর কোনো মেরমত হয়নি।
ফলে ঝুঁকি রয়েছে বর্ষার জন্য। এসবের সঙ্গে যোগ হয়েছে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব। ফলে
উপকূলবাসী এখন চরম ঝুঁকিতে রয়েছে।
এদিকে ভয়াল
২৯ এপ্রিল উপকূলবাসীর বেদনার দিবস হিসেবে সবার কাছে পরিচিত। দিনটি পালন উপলক্ষে চট্টগ্রাম
ও কক্সবাজারে স্থানীয় প্রশাসন, বিভিন্ন সামাজিক সাংস্কৃতিক সংগঠন আজ নানা অনুষ্ঠানের
আয়োজন করেছে। তার মধ্যে রয়েছে ফাতেহা, কোরআনখানি, মিলাদ ও দোয়া মাহফিল, আলোচনাসভা,
কাঙালিভোজ, চিত্র প্রদর্শনীসহ নানা অনুষ্ঠান। কোস্টাল জার্নালিস্ট ফোরাম অব বাংলাদেশ,
২৯ এপ্রিল স্মৃতি পরিষদ ঢাকা, চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারে পৃথক আলোচনাসভার আয়োজন করেছে।
আজ কক্সবাজারের উপকূলীয় এলাকা মহেশখালী, কুতুবদিয়া, চট্টগ্রামের সন্দ্বীপ, বাঁশখালী,
হাতিয়া, আনোয়ারার প্রতিটি মসজিদে বিশেষ মোনাজাত ও ঘরে ঘরে চলবে ফাতেহা পাঠ। ১৯৯১ সালের
এ দিনে সবচেয়ে বেশি প্রাণহানি ঘটে কক্সবাজারের মহেশখালীর ধলঘাটা উপ-দ্বীপে।
এ ইউনিয়নের
সাবেক মহিলা ইউপি সদস্য কামরুনাহার রুবি জানান, এখানে এমন কোনো বাড়ি বা ঘর নেই যে বাড়ি
বা ঘর থেকে ৫/৬ জন লোক মারা যায়নি। তাই এ দিনটি আসলে এখনো প্রতিটি বাড়িতে কান্নার রোল
পড়ে যায়।
ধলঘাটা তরুণ
ছাত্র সংঘের সভাপতি জয়নাল আবেদীন জানান, ১৯৯১ সালের পর থেকে ধলঘাটার মানুষ বেড়িবাঁধ
নিয়ে কষ্টে আছে।
মহেশখালীর মাতারবাড়ী
ইউপি চেয়ারম্যান মো. আবু হায়দার বলেন, এ সব কিছুর পরও সরকার উপকূলবাসীর জন্য সুপার
ডাইকের ব্যবস্থা করবে এবং যে কোনোভাবে তা উপকূলীয় এলাকাকে নিরাপদ করবে এ আশা আমাদের।
কুতুবদিয়া দ্বীপের
বাসিন্দা আবদুল্লাহ নয়ন বলেন, সে ভয়াল রাতের কথা মনে পড়লে চোখ এখনো ঝাপসা হয়ে আসে।
সে রাতের কথা কোনোভাবেই ভুলে যাওয়ার নয়। তবে উপকূল এখনো অরক্ষিত।
কক্সবাজারের
জেলা প্রশাসক শাহীন ইমরান বলেন, সরকার কক্সবাজার উপকূল রক্ষায় বিশেষ উদ্যোগ গ্রহণ করেছে।
উপকূলবাসীর একটাই দাবি, তা হলো টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণ করে যেন দেশের উপকূলকে সাগরের
করাল গ্রাস থেকে রক্ষা করা হয়।