আজঃ শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪
শিরোনাম

৮ দফা দাবিতে শাহবাগে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের অবরোধ

প্রকাশিত:শনিবার ২৩ অক্টোবর ২০২১ | হালনাগাদ:শনিবার ২৩ অক্টোবর ২০২১ | অনলাইন সংস্করণ
দর্পণ নিউজ ডেস্ক

Image

পীরগঞ্জ ও কুমিল্লাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাসের বিচার বিভাগীয় তদন্তসহ আট দফা দাবি নিয়ে শাহবাগে গণঅনশন ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের বিভিন্ন সংগঠন। আজ (২৩ অক্টোবর) শনিবার ভোর ৬টা থেকে শাহবাগ জাতীয় জাদুঘরের সামনে বাংলাদেশ হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের আহ্বানে এই কর্মসূচি শুরু হয়। দুপুর ১২টা পর্যন্ত সেখানে অবস্থান-অনশন করার পর প্রায় ১ ঘণ্টা শাহবাগ মোড় আটকে রেখে বিক্ষোভ মিছিলের মাধ্যমে তাদের কর্মসূচি শেষ করা হয়। বিক্ষোভ মিছিলটি জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে গিয়ে শেষ করা হয়।

এর আগে সাড়ে ১২টার দিকে মানবাধিকারকর্মী খুশি কবির এসে অনশনকারীদের পানি পান করিয়ে অনশন ভাঙান। সনাতন ধর্মাবলম্বীদের বিভিন্ন সংগঠনের প্রায় ১ ঘণ্টা বিক্ষোভে শাহবাগ মোড়ের চারপাশে সড়কে তীব্র যানজট সৃষ্টি হয়।

কর্মসূচি থেকে বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ ঘোষিত আট দফা দাবি বাস্তবায়ন না হলে আগামী বছর ফেব্রুয়ারিতে চট্টগ্রামসহ সারাদেশে প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে 'চল চল ঢাকায় চল' স্লোগানে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় অভিমুখে পদযাত্রা কর্মসূচি পালন করা হবে বলে জানানো হয় কর্মসূচিতে।

এ ছাড়া আগামী ৪ নভেম্বর হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের শ্যামাপূজায় দীপাবলি উৎসব বর্জন করে সন্ধ্যা ৬টা থেকে ৬টা ১৫ মিনিট পর্যন্ত কালো কাপড়ে মুখ ঢেকে স্ব স্ব মন্দিরে নীরবতা পালন এবং মন্দির-মণ্ডপ ফটকে কালো কাপড়ে সাম্প্রদায়িক সহিংসতাবিরোধী স্লোগান সম্বলিত ব্যানার টানানোর প্রতিবাদী কর্মসূচির সঙ্গে সংহতি জানানো হয়।

যে আট দফা দাবি-

১. শারদীয় দুর্গোৎসব চলাকালে এবং পরবর্তী সময়ে বিভিন্ন জেলায় সংঘটিত সাম্প্রদায়িক সহিংসতার তদন্তে সুপ্রিম কোর্টের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতির নেতৃত্বে বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিশন গঠন করতে হবে।

২. সাম্প্রদায়িক হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত সব মন্দির, বাড়িঘর পুনঃনির্মাণ, গৃহহীনদের পুনর্বাসন, ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের যথাযথ ক্ষতিপূরণ প্রদান ছাড়াও আহতদের চিকিৎসার ব্যবস্থা ও নিহতদের প্রতিটি পরিবারকে কমপক্ষে ২০ লাখ টাকা প্রদান বিকল্পে প্রতিটি পরিবারের সদস্যদের একজনকে যোগ্যতা অনুযায়ী চাকরিতে নিয়োগের ব্যবস্থা করত হবে।

৩. নিরপেক্ষ তদন্তের মাধ্যমে সাম্প্রদায়িক হামলাকারী ও তাদের পেছনে থাকা চক্রান্তকারীদের অনতিবিলম্বে গ্রেপ্তার করে বিশেষ ক্ষমতা আইন, সন্ত্রাস দমন আইনের আওতায় এনে বিশেষ ট্রাইব্যুনাল গঠন করে দ্রুত তাদের শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।

৪. সাম্প্রদায়িক হামলাকারীদের রোধে প্রধানমন্ত্রীর সুস্পষ্ট নির্দেশনা সত্ত্বেও প্রশাসন ও আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী কর্তৃপক্ষের মধ্যে যারা দায়িত্ব পালনে গাফলতি ও অবহেলা করেছেন, তাদের চিহ্নিত করে অনতিবিলম্বে তাদের বিরুদ্ধেও দ্রুত শাস্তিমূলক পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।

৫. সামাজিকমাধ্যম ও ধর্মীয় অনুষ্ঠানাদিতে ধর্মীয় বিদ্বেষ ছাড়াও সাম্প্রদায়িক উসকানি দিচ্ছে যারা, তাদের চিহ্নিত করে বিশেষ ক্ষমতা আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে।

৬. প্রধানমন্ত্রীর সুস্পষ্ট নির্দেশনা সত্ত্বেও সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাসীদের মোকাবিলায় যেসব জনপ্রতিনিধি এগিয়ে আসেননি, তাদেরও চিহ্নিত করে শাস্তিমূলক রাজনৈতিক পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।

৭. ২০০১-০৬ সাল পর্যন্ত সংগঠিত সাম্প্রদায়িক ঘটনাবলি তদন্তে সুপ্রীম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের নির্দেশনায় গঠিত সাহাবুদ্দিন কমিশনের সুপারিশ সম্বলিত রিপোর্ট অনতিবিলম্বে প্রকাশ ও এর সুপারিশ অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।

৮. ১৯৭২ সালের সংবিধান পুনঃপ্রতিষ্ঠা এবং একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রাক্কালে সরকারি দলের নির্বাচনী ইশতেহারে প্রতিশ্রুত সংখ্যালঘু সুরক্ষা আইন প্রণয়ন, জাতীয় সংখ্যালঘু কমিশন গঠন, বৈষম্য বিলোপ আইন প্রণয়ন, অর্পিত সম্পত্তি প্রত্যার্পন আইনের দ্রুত বাস্তবায়নসহ ধর্মীয় জাতিগত সংখ্যালঘু ও আদিবাসী জনগোষ্ঠীর কাছে প্রদত্ত অঙ্গিকার দ্রুত বাস্তবায়ন করতে হবে।

কর্মসূচিতে সংহতি জানিয়ে জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনু বলেন, এই হামলা শুধু হিন্দুদের ওপর হামলা নয়, গোটা বাঙালির ওপর হামলা। প্রশাসনের গাফলতির কারণে সংখ্যালঘুদের ওপর হামলা হয়েছে। তাদের একটা অংশ এর জন্য দায়ী। প্রশাসনের ভেতরে ঘাপটি মেরে থাকা সাম্প্রদায়িক কর্মচারীদের নিষ্ক্রিয়তা চিহ্নিত করে, তদন্ত করে বিচার করতে হবে।

গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ট্রাস্টি জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, হামলার পর আমি রংপুরসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় গিয়েছি, সেখানে তারা বলেছে, আমাদের মা আসবে কবে? মাননীয় প্রধানমন্ত্রী তারা আপনার দিকে তাকিয়ে আছে। আপনি তাদের কাছে গিয়ে মাথায় হাত বুলিয়ে সংহতি জানান।

আর মুসলমানদের মধ্যে যারা হামলা করেছে, তাদের উচিত ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর কাছে গিয়ে ক্ষমা চাওয়া। প্রত্যেক মসজিদের ইমামকে বলতে হবে এগুলো অনৈসলামিক কাজ হয়েছে।

গণফোরাম নেতা সুব্রত চৌধুরী বলেন, এ সরকার মুক্তিযুদ্ধের চেতনার কথা বলে ব্যবসা করে। সাংবিধানিকভাবে রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম রাখা হয়েছে, আবার রাষ্ট্রকে বলা হয় ধর্মনিরপেক্ষ, এটি চরম ভাঁওতাবাজি। ভাঁওতাবাজি করে রাষ্ট্র চলতে পারে না।

কর্মসূচিতে বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি মিলন কান্তি দত্ত বলেন, বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছে অসাম্পদায়িক চেতনা নিয়ে। আজকে দেশ কি অসাম্প্রদায়িক? অসাম্প্রদায়িক চেতনা যদি থাকত, তাহলে ১৯৭১ সালের ঊনিশ পার্সেন্ট হিন্দু জনসংখ্যা কি ২০১৩ সালে সাড়ে আট পার্সেন্টে নেমে আসত?

আমরা বার বার আঘাতপ্রাপ্ত হচ্ছি, আন্দোলন করছি, কিন্তু বিচার পাচ্ছি না। সাম্প্রদায়িক হামলার কোনো ঘটনারই সুষ্ঠু বিচার হয়নি। তাই আজকে প্রতিনিয়ত এর পুনরাবৃত্তি ঘটছে।

হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সভাপতি অধ্যাপক নিমচন্দ্র ভৌমিক বলেন, আমরা এই সাম্প্রদায়িক হামলার দৃষ্টান্তমূলক বিচার চাই। আগে যেসব হামলা হয়েছিল, সেগুলোরও বিচার করতে হবে। প্রয়োজনে বিশেষ ট্র্যাইবুনাল গঠন করে এই হামলার বিচার করতে হবে। আমাদের আট দফা দাবি দ্রুত মেনে নিতে হবে।

কর্মসূচিতে মানবাধিকারকর্মী সুলতানা কামাল, জাসদ সাধারণ সম্পাদক শিরিন আক্তার, বাংলাদেশ জাতীয় হিন্দু মহাজোটের মহাসচিব পলাশ কান্তি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক নিজামুল হক ভূঁইয়া, ঢাবি অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক রঞ্জন কর্মকার, মহিলা ঐক্য পরিষদের সভাপতি সুপ্রিয়া ভট্টাচার্য, শিক্ষক ঐক্য পরিষদের আহ্বায়ক অরুণ কুমার বক্তব্য দেন।

কর্মসূচিতে আন্তর্জাতিক কৃষ্ণভাবনামৃত সংঘ (ইসকন), বাংলাদেশ পূজা উদ্‌যাপন পরিষদ, বাংলাদেশ জাতীয় হিন্দু মহাসংঘ, বাংলাদেশ সনাতন কল্যাণ জোট, বাংলাদেশ বুড্ডিস্ট ফেডারেশন, অ্যাসোসিয়েশন ফর ল্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (এএলআরডি), বাংলাদেশ জাতীয় হিন্দু সমাজসংস্কার সমিতি, জন্মাষ্টমী উদ্‌যাপন পরিষদ, বাংলাদেশ বৌদ্ধ সমিতি, বাংলাদেশ মাইনরিটি সংগ্রাম পরিষদ, বাংলাদেশ হিন্দু লীগ, মাইনরিটি রাইটস ফোরামের বাংলাদেশ জাতীয় হিন্দু ফোরাম ও হিন্দু ছাত্র ফোরাম, বাংলাদেশ জাতীয় হিন্দু সমাজ সংরক্ষণ সমিতি, ইন্টারন্যাশনাল শ্রী শ্রী হরি গুরুচাঁদ মতুয়া মিশন, বাংলাদেশ হরিজন ঐক্য পরিষদ, জাতীয় আদিবাসী পরিষদ অংশ নেয়।

ঢাকার পাশাপাশি সারাদেশে শনিবার এই কর্মসূচি পালিত হয়।


আরও খবর
জিআই সনদ পেল দেশের ১৪ পণ্য

বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪




অর্থ আত্মসাতের মামলায় কারাগারে মেজর মান্নান

প্রকাশিত:বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪ | হালনাগাদ:বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪ | অনলাইন সংস্করণ
আদালত প্রতিবেদক

Image

অর্থ আত্মসাতের অভিযোগের মামলায় সাবেক সংসদ সদস্য ও বিকল্প ধারা বাংলাদেশের সাবেক মহাসচিব মেজর (অব.) আব্দুল মান্নানকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দিয়েছেন আদালত।

দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) মামলায় বৃহস্পতিবার (২৮ মার্চ) ঢাকা মহানগর সিনিয়র স্পেশাল জজ আস সামছ জগলুল হোসেনের আদালতে আইনজীবীর মাধ্যমে আত্মসমর্পণ করে জামিন আবেদন করেন তিনি।

এ সময় তার পক্ষে জামিন শুনানি করেন অ্যাডভোকেট শাহিনুর ইসলাম। অপরদিকে, দুদকের পক্ষে অ্যাডভোকেট মোশাররফ হোসেন কাজল জামিনের বিরোধিতা করেন। উভয়পক্ষের শুনানি শেষে আদালত জামিন নামঞ্জুর করে তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।

প্রসঙ্গত, গত ৭ মার্চ এ মামলায় মেজর মান্নানের স্ত্রী বিআইএফসির চেয়ারম্যান উম্মে কুলসুম মান্নান ও মেয়ে পরিচালনা পরিষদের পরিচালক তাজরিনা মান্নান আত্মসমর্পণ করে জামিন নেন। তবে ওইদিন বাংলাদেশ ইন্ডাস্ট্রিয়াল ফাইন্যান্সিয়াল কোম্পানি লিমিটেডের (বিআইএফসি) পরিচালনা পরিষদের পরিচালক ও ম্যাক্সনেট অনলাইনের প্রোপাইটর উম্মে কুলসুম, মান্নানের ভাই রইস উদ্দিন আহমেদ, বিআইএফসি পরিচালনা পরিষদের পরিচালক এ.এন এম জাহাঙ্গীর আলম, বিআইএফসি পরিচালনা পরিষদের সাবেক পরিচালক আরশাদ উল্লাহ, বিআইএফসির সাবেক উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক ইনসুর রহমান ও বিআইএফসির সাবেক সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট ও হেড অব বিজনেস, সৈয়দ ফকরে ফয়সালের জামিন আবেদন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানো হয়।

চলতি বছর ২৬ জানুয়ারি দুদকের উপপরিচালক (মানি লন্ডারিং) মো. আব্দুল মাজেদ ঢাকা-১ প্রধান কার্যালয়ে দুদকের সমন্বিত জেলা কার্যালয়ে এ মামলা করেন।

এ মামলায় উপরোক্ত আসামিরা ছাড়াও বিআইএফসি পরিচালনা পরিষদের পরিচালক আব্বাস উদ্দিন আহমেদ, সাবেক পরিচালক মেজর মান্নানের মেয়ে তানজিলা মান্নান, বিআইএফসির সাবেক এভিপি অ্যান্ড ইউনিট হেড আহমেদ করিম চৌধুরী, সাবেক সিনিয়র অফিসার (বিজনেস) মোহাম্মদ নিজাম উদ্দিন, সাবেক সিনিয়র অফিসার ও রিলেশনশিপ ম্যানেজার এস, এম মোস্তাফিজুর রহমানও আসামি।

মামলার অভিযোগে বলা হয়, আসামিরা পরস্পর যোগসাজশে একে অন্যের সহায়তায়, প্রতারণামূলকভাবে লাভবান হওয়ার মানসে মো. রইস উদ্দিনের নামে তার মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান ম্যাক্সনেট অনলাইনের নামে ৪টি পৃথক ঋণ চুক্তি করেন। পরে এর মাধ্যমে ২৭ কোটি টাকার ঋণ মঞ্জুর করে ২৬ কোটি ৯৮ লাখ টাকা বিতরণ করে। এই ঋণের কিস্তি পরিশোধ না করে প্রদত্ত ঋণের আসল ২৮ কোটি ৪৭ লাখ ৭২ হাজার ৩৮২ টাকা আত্মসাৎ করেন। ঋণের বর্তমান সুদ হিসেবে পাওনা ৮ কোটি এক লাখ ৫৮ হাজার ৬৬৫ টাকা এবং সুদাসলে পাওনা ৩৬ কোটি ৪৯ লাখ ৩১ হাজার ৪৭ টাকা।


আরও খবর



লাল নাকি সাদা, কোন ডিমে পুষ্টিগুণ বেশি?

প্রকাশিত:বুধবার ০৩ এপ্রিল ২০২৪ | হালনাগাদ:বুধবার ০৩ এপ্রিল ২০২৪ | অনলাইন সংস্করণ
জীবন ধারা ডেস্ক

Image

লাল নাকি সাদা, কোন ডিম খাওয়া বেশি উপকারী- এ নিয়ে দ্বন্দ্ব, তর্ক বা মতের শেষ নেই। সন্তানকে ডিম দেয়ার সময় তাই অভিভাবকরা চিন্তায় থাকেন, কোন ডিম কিনবেন। অনেকেরই ভাবনা লাল ডিমে পুষ্টিগুণ বেশি, কেউ বা ভাবেন সাদা ডিমে।

মুরগির জাত ও জিনের ওপর নির্ভর করে ডিমের রং। বিজ্ঞানীদের মতে, সাদা ডিম পাড়ে সাদা পালকের মুরগিরা। লাল ডিম পাড়ে গাঢ় রঙের পালকের মুরগি। তবে কিছু কিছু জাতের মুরগি সাদা হলেও লাল ডিম পাড়ে। ডিমের খোসার রঙ বাদামি হয় মূলত মুরগির জরায়ুর মধ্যে থাকা শেল গ্ল্যান্ডের কারণে।

মিশিগান স্টেট ইউনিভার্সিটির এক গবেষণায় জানানো হয়েছে, সাধারণত একটি মুরগির ভেতরে ডিম তৈরি হতে প্রায় ২৬ ঘণ্টা সময় লাগে। প্রথমে মুরগির গর্ভে ডিমের কুসুম তৈরি হয়। তারপর তিন ঘণ্টা ধরে তৈরি হয় কুসুমের চারদিকে সাদা অংশ বা অ্যালবুমিন। এরপর এক ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে তৈরি হয় খোসার নিচের ঝিল্লি। এরপর ডিমটি লেজের কাছাকাছি শেল গ্ল্যান্ডে চলে যায়। এখানেই তৈরি হয় উপরের শক্ত খোসা।

শুরুতে সব ডিমের খোলস সাদাই থাকে। ডিম তৈরির একেবারে শেষ মুহূর্তে যোগ হয় রং। মুরগির দেহে থাকা এক রঞ্জক পদার্থ থেকে এই রং তৈরি হয়। তবে যেসব ডিম সাদা হয় সেগুলোয় রং যোগ হয় না।

লাল নাকি সাদা, কোন ডিমে পুষ্টিগুণ বেশি? এ বিষয়ে পুষ্টিবিদ সৈয়দ তাসনিম হাসিন চৌধুরী এবং পোল্ট্রি বিশেষজ্ঞ শাকিলা ফারুক বলেন, ডিমের রঙের সঙ্গে পুষ্টিগুণের কোনো তারতম্য হয় না।

আবার নিউ ইয়র্কের এক দল গবেষকের মতে লাল ডিমে ওমেগা-থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড সামান্য বেশি রয়েছে। কিন্তু সেই পার্থক্য এতটাই সামান্য যে তাতে খুব একটা ফারাক হয় না।

যুক্তরাষ্ট্রের কৃষি বিভাগের তথ্যমতে, একটি ৫০ গ্রাম ওজনের ডিমে ৭২ ক্যালোরি ও ৪.৭৫ গ্রাম ফ্যাট রয়েছে। সাদা ও লাল ডিমে এই পুষ্টিগুণের পরিমাণ প্রায় সমান। ডিমের রং নয় বরং মুরগির ফিডের ওপরে পুষ্টিগুণ নির্ভর করে। যেসব মুরগিকে বেশি বেশি ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিডযুক্ত কিংবা ভিটামিন এ বা ই-যুক্ত ফিড খাওয়ানো হয় সেসব মুরগির ডিমে এসব পুষ্টি উপাদান বেশি থাকে। এই বিশেষ ফিডের জন্য দামটাও বেশি পড়ে।

পুষ্টিবিদ তাসনিম হাসিন চৌধুরীর মতে, যেসব মুরগি প্রাকৃতিক উপায়ে পুষ্টিকর খাবার খুঁজে খুঁজে খায়। সেসব মুরগির ডিমে ভিটামিন ই, ভিটামিন এ, ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড, খনিজ উপাদান এবং ফ্যাট বেশি থাকে।

পোল্ট্রি বিশেষজ্ঞ শাকিলা ফারুক বলছেন, গৃহপালিত মুরগি রোদে বেশি থাকায় এগুলোর ডিমে ভিটামিন-এ ও ডি বেশি থাকে। আবার খামারে ভালো ফিড খাওয়ানো মুরগির ডিমের পুষ্টি অনেক সময় এসব গৃহপালিত মুরগির ডিমের চাইতেও বেশি হয়। কারণ তাদের নিয়মিত ভালো মানের ফিড দেয়া হয়।

ডিমের পুষ্টির সঙ্গে ডিমের খোলসের রঙের কোনো যোগ না থাকলেও ডিমের কুসুমের রঙের একটা প্রভাব আছে। পুষ্টিবিদদের মতে, যে ডিমের কুসুমের রং যতো গাঢ় সেই ডিমে ভিটামিন এ, ক্যারোটিন ও খনিজ উপাদানের মাত্রা ততো বেশি। ওই ডিমের স্বাদও বেশি।

মুরগি কী খাচ্ছে তার ওপর নির্ভর করে ডিমের কুসুমের রংও। ক্যারোটিনয়েড নামের এক রকম রাসায়নিকের প্রভাবে ডিমের কুসুমের রং গাঢ় হয়। অনেক খামারে কুসুমের রং গাঢ় করতে মুরগিকে ক্যারোটিনয়েড জাতীয় ইঞ্জেকশন দেয়া হয়। কোথাও আবার লাল ক্যাপসিকাম খাওয়ানো হয়।

মুরগির খাদ্যের ওপর ডিমের স্বাদ ও পুষ্টিগুণ নির্ভর করে। তাই যেসব মুরগি সাদা ডিম দেয় এবং যেগুলো লাল ডিম পাড়ে সবগুলোকে একই ধরনের খাবার দিলে স্বাদে ও পুষ্টিতে তেমন কোনো পার্থক্য হবে না।


আরও খবর



জনপ্রিয় অভিনেতা অলিউল হক রুমি আর নেই

প্রকাশিত:সোমবার ২২ এপ্রিল ২০২৪ | হালনাগাদ:সোমবার ২২ এপ্রিল ২০২৪ | অনলাইন সংস্করণ
বিনোদন ডেস্ক

Image

ছোট পর্দার জনপ্রিয় অভিনেতা অলিউল হক রুমি আর নেই। ক্যানসার আক্রান্ত এ শিল্পী সোমবার (২২ এপ্রিল) ভোর ৩টা ৫৮ মিনিটে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন অভিনেতার ভাগিনা ফয়সাল আহমেদ। সব শেষ তিনি ইবনেসিনা হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছিলেন।

রুমির পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, দীর্ঘদিন ধরে অভিনেতা অগ্ন্যাশয় ক্যানসারে আক্রান্ত ছিলেন। ভারতের চেন্নাইয়ে তার প্রাথমিক চিকিৎসাও হয়। পরে দেশে চিকিৎসা নিচ্ছিলেন।

অভিনয় জীবনের তিন দশকেরও বেশি সময় পার করেছেন রুমি। দীর্ঘ এ পথচলায় অভিনয় করেছেন অসংখ্য নাটক ও সিনেমায়। অভিনয় নৈপুণ্য দিয়ে দর্শকদের মুগ্ধ করেছেন।

গত কয়েক বছর এই অভিনেতা বরিশালের আঞ্চলিক ভাষাতে বেশি অভিনয় করে আসছিলেন। রুমির জন্ম বরগুনায়। তার বাবা বীর মুক্তিযোদ্ধা আজিজুল হক ও মা হামিদা হক। পরিবারে তিন ভাই ও তিন বোনের মধ্যে সবার ছোট রুমি।

তার অভিনয়ের শুরু থিয়েটার বেইলি রোডের এখনও ক্রীতদাস’ নাটকের মধ্য দিয়ে। সেটা ১৯৮৮ সালে। একই বছর কোন কাননের ফুল’ নাটকের মাধ্যমে ছোট পর্দায় অভিষেক হয় তার। টেলিভিশনের পাশাপাশি অভিনয় করেছেন সিনেমায়ও। ২০০৯ সালে দরিয়াপাড়ের দৌলতি’ চলচ্চিত্রে প্রথম অভিনয় করেন।

এরপর থেকে অসংখ্য নাটকে অভিনয় করেছেন রুমি। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি নাটক হলো- সাজেশন সেলিম, বোকাসোকা তিনজন, মেকাপ ম্যান, ঢাকা টু বরিশাল, ঢাকা মেট্রো লাভ, বাপ বেটা দৌড়ের উপর, আমেরিকান সাহেব, জার্নি বাই বাস, বাকির নাম ফাঁকি, রতনে রতন চিনে, আকাশ চুরি, চৈতা পাগল, জীবনের অলিগলি, মেঘে ঢাকা শহর ইত্যাদি।

এছাড়া তিনি জমজ’ নাটকে অভিনয় করে বেশ দর্শক প্রশংসা লাভ করেন।

তার মৃত্যুতে শোবিজ পাড়ায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে। বিশেষ করে নাটক পাড়ায় তার জনপ্রিয়তা রয়েছে বেশ।

অভিনেতা জিয়াউল হক অপূর্ব নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে অলিউল হক রুমির মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করে শোক প্রকাশ করেছেন।

পরিবার সূত্রে জানা গেছে, অভিনেতার প্রথম জানাজা সকাল ৯টায় শহীদবাগ জামে মসজিদে অনুষ্ঠিত হবে। এছাড়া বাদ আছর দ্বিতীয় জানাজা হবে তার গ্রামের বাড়ি বরগুনায়।


আরও খবর
নতুন খবর দিলেন বিদ্যা সিনহা মিম

বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪

নিজেকে দেখে নিজেই মুগ্ধ পরীমণি

বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪




হরিরামপুর উপজেলা পরিষদ নির্বাচন

তরুণদের আস্থা আর বয়োজ্যেষ্ঠদের নির্ভরতার প্রতীক সাদ্দাম হোসেন

প্রকাশিত:রবিবার ২১ এপ্রিল ২০২৪ | হালনাগাদ:রবিবার ২১ এপ্রিল ২০২৪ | অনলাইন সংস্করণ
নিজস্ব প্রতিবেদক

Image

আসন্ন ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদের প্রথম ধাপের অনুষ্ঠিত মানিকগঞ্জের হরিরামপুর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে উপজেলার বিভিন্ন এলাকার পাড়া-মহল্লা থেকে শুরু করে হাটবাজারে চলছে নানা আলোচনা-সমালোচনা। তবে তরুণ প্রার্থী হিসেবে এগিয়ে আছে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় নির্বাহী সংসদের সহ-সভাপতি মো. সাদ্দাম হোসেন। 

হরিরামপুর উপজেলা ঘুরে দেখা গেছে তরুণ থেকে বয়োজ্যেষ্ঠ সবারই আলোচনার বিষয়ে এখন মো. সাদ্দাম হোসেন। তাদের সাথে কথা বলে জানা গেছে বিপদে-আপদে যখন কোন প্রয়োজন হয়েছে ঘরের ছেলের মতে এগিয়ে এসেছে সাদ্দাম হোসেন। 

বয়োজ্যেষ্ঠ বাদল মন্ডল জানান, যখনই কোন প্রয়োজনে সাদ্দাম হোসেনের কাছে গিয়েছি সে তার সাধ্যমত উপকার করার চেষ্টা করছে। আমাদের মত বয়স্ক মানুষ যারাই সাদ্দামের কাছে গেছে তারাই ভালো ব্যবহার পেয়েছে। এই নির্বাচনে জয়-টা তার প্রাপ্য, আমি চাই আসন্ন উপজেলা নির্বাচনে জয়ী হয়ে সাদ্দাম যেন এই এলাকার সেবা করতে পারে।

চায়ের দোকানে বসে কথা হয় আসিকুজ্জামান নামে একজনের সাথে। আলাপকালে তিনি বলেন, আমরা খেলাধুলা করতে পছন্দ করি, একারণে একবার সাদ্দাম ভাইয়ের কাছে ক্রীড়া সামগ্রী চেয়েছিলাম, তিনি আমাদের যা দিয়েছিলেন তা ছিল চাহিদারও বেশি। আমার মত তরুণরা চায় সাদ্দাম ভাই উপজেলা পরিষদে আমাদের প্রতিনিধিত্ব করুক। তরুণ সমাজ জোট বেঁধেছে তারা সাদ্দাম ভাইকেই ভোট দিবে।

কলেজ পড়ুয়া সাথী আক্তার জানান, সাদ্দাম ভাই বঙ্গবন্ধুর সৈনিক, প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার সৈনিক, দীর্ঘদিন ধরে বিপধগামী জামায়াত-বিএনপির বিরুদ্ধে রাজপথে আন্দোলন সংগ্রাম করেছে। এবার প্রথমবারের মত উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে ভোট দিব, আর সেটা হবে সাদ্দাম ভাইয়ের জন্য।


নির্বাচনে অংশগ্রহণ প্রসঙ্গে মো. সাদ্দাম হোসেন জানান, আমি খুব ছোটবেলা থেকেই ছাত্র রাজনীতির সাথে জড়িত। স্কুল কলেজের মাঠ চুকিয়ে আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে যখন ভর্তি হই, তখন থেকেই সকল গণতান্ত্রিক আন্দোলন সংগ্রামের সাথে যুক্ত হয়ে কাজ শুরু করি। পরবর্তীতে জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর কন্যা দেশরত্ন জননেত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশ ছাত্রলীগের যে পূর্ণাঙ্গ কমিটি দেন, সেখানে আমি কর্মসূচি ও পরিকল্পনা বিষয়ক সম্পাদকের দায়িত্ব পাই। পরবর্তীতে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সংসদের নির্বাহী কমিটির সহ-সভাপতির দায়িত্ব পাই।

তিনি বলেন, আসলে রাজনীতি মানেই হলো মানুষের জন্য কাজ করতে হবে। জনগণকে সাথে নিয়ে পথ চলতে হবে। আমি নিজে ভাল থাকব আর আমার পাশের মানুষেরা কষ্টে থাকবে, আমি আসলে সেই ধারায় বিশ্বাসী না। মানুষের সেবা করার সবচেয়ে বড় প্লাটফর্ম হলো রাজনীতি। আর রাজনীতির পরিপূর্ণতাই হলো জনপ্রতিনিধি হয়ে মানুষের পাশে থেকে মানুষের সেবা করা। সেই লক্ষেই আমার এই উপজেলা নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে অংশগ্রহণ করা। আমি আশা করি, আপামর সাধারণ জনগণ ও তরুণ সমাজ আমার পাশে থাকবে এবং আমাকে জনগণ তাদের সেবা করার সুযোগ দিবেন।


প্রসঙ্গত, এ উপজেলার ৯ জন প্রার্থী মনোনয়ন জমা দিলেও ১৭ এপ্রিল যাচাই বাছাইয়ে বৈধতা পান ৮ জন প্রার্থী। এর মধ্যে এবারের নির্বাচনে হেভিওয়েট প্রার্থীদের তালিকার মধ্যে নির্বাচনী মাঠে প্রথম বারের মতো চেয়ারম্যান প্রার্থী হিসেবে ভোট যুদ্ধে অংশ গ্রহণ করছেন বাংলাদেশ ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় নির্বাহী সংসদের সহ-সভাপতি মো. সাদ্দাম হোসেন। মনোনয়ন যাচাই বাছাইয়ে প্রার্থীতা বৈধতা পেয়েই পুরোদমে ভোটের মাঠে নেমে পড়েছেন সাদ্দাম হোসেন। তার কর্মী সমর্থকদের নিয়ে নির্বাচনী এলাকার বিভিন্ন অঞ্চলে গণসংযোগ শুরু করেছেন।

এছাড়াও বৈধতা পাওয়া অন্যান্য প্রার্থীরা হলেন বর্তমান চেয়ারম্যান দেওয়ান সাইদুর রহমান, উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক রাজিবুল হাসান রাজিব, আয়ারল্যান্ডের ডাবলিন শহর আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা সামছুল ইসলাম, উপজেলা পরিষদের বর্তমান ভাইস-চেয়ারম্যান মো. আজিম খাঁন, জেলা যুবলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মো. তামজিদ উল্লা প্রধান লিল্টু, বিএনপি পন্থি একমাত্র প্রার্থী উপজেলা যুবদলের যুগ্ন আহ্বায়ক ও বয়ড়া ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মো. জাহিদুর রহমান তুষার ও নির্দলীয় প্রার্থী রাকিব হাসান। মনোনয়ন বাতিল হওয়া একমাত্র প্রার্থী উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি সেলিম মোল্লা আপিল করেছেন বলেও জানা যায়।


আরও খবর



ডিজির অনুপস্থিতিতে এডিজি সাত দিনে হাতিয়ে নিলেন সাড়ে ৭ কোটি টাকা

প্রকাশিত:শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪ | হালনাগাদ:শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪ | অনলাইন সংস্করণ
নিজস্ব প্রতিবেদক

Image

অসুস্থতার কারণে গত বছরের ২২ থেকে ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত ছুটিতে ছিলেন ইমিগ্রেশন ও পাসপোর্ট অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (ডিজি)। সেই ৯ দিন অধিদপ্তরের শীর্ষপদের ভারপ্রাপ্ত দায়িত্বে ছিলেন অতিরিক্ত মহাপরিচালক সেলিনা বানু। এর মধ্যে অবশ্য দুদিন ছিল সাপ্তাহিক ছুটি। ফলে সেলিনা বানু ভারপ্রাপ্ত ডিজির দায়িত্ব পালন করেন সাত দিন। আর এটুকু সময়েই আঙুল ফুলে কলাগাছ’ বনে গেছেন তিনি। ভারপ্রাপ্ত দায়িত্বকালে এক দিনেই ছাড় করেন মাল্টিপল পাসপোর্টের ৫০০ ফাইল। নানা কারণে দীর্ঘদিন ধরে আটকে থাকা প্রতিটি ফাইল অনুমোদনের জন্য নিয়েছেন দেড় লাখ টাকা করে। সব মিলিয়ে এই কর্মকর্তা হাতিয়ে নিয়েছেন কমপক্ষে সাড়ে ৭ কোটি টাকা। এ বিষয়ে দুর্নীতি দমন কমিশনের এনফোর্সমেন্ট টিম সেলিনা বানুকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে বলে জানা গেছে।

সংশ্লিষ্টরা জানান, ইমিগ্রেশন ও পাসপোর্ট অধিদপ্তরের (ডিআইপি) সরাসরি কর্মকর্তা সেলিনা বানু পাসপোর্ট, ভিসা ও ইমিগ্রেশন বিভাগের অতিরিক্ত মহাপরিচালক বা এডিজির দায়িত্বে রয়েছেন। প্রশাসন বিভাগের এডিজির পদটি শূন্য থাকায় অতিরিক্ত দায়িত্ব হিসেবে ওই বিভাগের এডিজির দায়িত্বও পালন করছেন। পুরো অধিদপ্তরে তার ওপরে শুধু প্রেষণে আসা মহাপরিচালক রয়েছেন। অধিদপ্তরে সবচেয়ে জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা হওয়ায় তার কথাতেই চলে সবকিছু। অনিয়ম-দুর্নীতিতে এই সুযোগটাই কাজে লাগাচ্ছেন তিনি। অভিযোগ রয়েছে, অনেক সময় তিনি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষাসেবা বিভাগের নির্দেশনাও অমান্য করে নিজের মতো ডিআইপির কার্যক্রম চালাচ্ছেন।

পাসপোর্ট অধিদপ্তর সূত্র জানায়, সেলিনা বানু ভারপ্রাপ্ত ডিজির দায়িত্ব পেয়েই দীর্ঘদিন আটকে থাকা মাল্টিপল পাসপোর্টের ফাইলগুলো ছাড় করাতে তোড়জোড় শুরু করেন। অধিদপ্তরে তার সিন্ডিকেটে থাকা কর্মকর্তাদের মাধ্যমে ফাইলগুলো অনুমোদন দিয়ে পাসপোর্ট প্রিন্ট করতে পাঠানো হয়। প্রতি পাসপোর্ট থেকে দেড় লাখ টাকা করে নিয়ে তা সিন্ডিকেটে ভাগবাটোয়ারা হয়। কথিত আছে, ওই সময়ে পাসপোর্ট ভবনের তলায় তলায় কোরবানি ঈদ’ চলেছে। ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা অবগত হলেও বিষয়টি রহস্যজনক কারণে নিশ্চুপ রয়েছেন।

এক ব্যক্তির নামে একাধিক পাসপোর্টকে মাল্টিপল পাসপোর্ট হিসেবে অভিহিত করা হয়। অনেকেই বিদ্যমান পাসপোর্টের তথ্য গোপন রেখে নতুন করে পাসপোর্টের আবেদন করেন। তবে আঙুলের ছাপ নেওয়ার পর স্বয়ংক্রিয় মেশিনে মেলানোর সময় তা আটকে যায়। আবার অনেকে প্রকাশ্যেই তথ্য পরিবর্তন করার জন্য আবেদন করেন। তখন কাগজপত্র যাচাই ও তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হয়।

অধিদপ্তরের এক কর্মকর্তা বলেন, এ ধরনের অন্তত ১২ হাজার আবেদন তদন্তের জন্য জমা পড়ে আছে। এসব আবেদন যাচাই করে পুলিশের বিশেষ শাখার তদন্ত প্রতিবেদন ইতিবাচক হলে আবেদনকারীর বিপরীতে পাসপোর্ট ইস্যু করা হয়। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষাসেবা বিভাগ থেকে সে ধরনের নির্দেশনাও রয়েছে; কিন্তু সেই নির্দেশনা অমান্য করে প্রশাসন বিভাগের দায়িত্বে থাকা এডিজি সেলিনা বানু অধিদপ্তর থেকে মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনার সঙ্গে সাংঘর্ষিক পরিপত্র জারি করে আটকে থাকা মাল্টিপল পাসপোর্টের আবেদনের বিষয়ে জটিল পরিস্থিতি সৃষ্টি করেন। এরপর নিজের ক্ষমতাবলে টাকার বিনিময়ে পছন্দমতো ফাইল ছাড় করেন।

ওই কর্মকর্তা বলেন, বছরের পর বছর ধরে আটকে থাকা মাল্টিপল পাসপোর্টের হাজার হাজার ফাইলের মধ্যে ৫০০ ফাইল অনুমোদন দেওয়া নিয়ে খোদ অধিদপ্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যেই সন্দেহের সৃষ্টি হয়েছে। তবে সেলিনা বানু প্রভাবশালী কর্মকর্তা হওয়ায় তার বিষয়ে কেউ প্রকাশ্যে মুখ খোলেন না। অধিদপ্তরের সমন্বয় সভায় এসব বিষয়ে প্রশ্ন তুললেই তার রোষানলে পড়তে হয়। পরে টার্গেট করে কর্মকর্তাদের বদলি বা ন্যূনতম কারণেও বিভাগীয় মামলা ও বদলির মতো হয়রানিতে পড়তে হয়।

অধিদপ্তরের দায়িত্বশীল সূত্র বলছে, সেলিনা বানু পাসপোর্ট বিভাগের কর্মকর্তাদের মধ্যে সর্বোচ্চ পদে রয়েছেন। বদলিজনিত চাকরি হলেও তিনি ঢাকার বাইরে খুব বেশি দায়িত্ব পালন করেননি। এ সুযোগে তিনি একটি শক্তিশালী দালাল সিন্ডিকেট গড়ে তুলেছেন। তাছাড়া দেশের প্রায় প্রতিটি পাসপোর্ট অফিসে তার নিজস্ব বলয়ের কর্মকর্তা বা কর্মচারী রয়েছেন। বিদেশি মিশনগুলোর কয়েকটিতে পাসপোর্ট অধিদপ্তরেও কর্মী রয়েছে। সেলিনা বানু অধিদপ্তরের প্রশাসনিক প্রধান হওয়ায় সবাই তাকে অতি সমীহ’ করে চলেন। বিভিন্ন পাসপোর্ট অফিস থেকে তার অনুগতরা মাল্টিপল আবেদনগুলো বাছাই করে দিয়েছেন। সেগুলোই মূলত তিনি প্রশাসনিক ক্ষমতাবলে ছাড় করিয়ে টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন।

ওই সূত্রটি জানায়, প্রতিটি মাল্টিপল পাসপোর্টের ক্ষেত্রে সেলিনা বানু ও অধিদপ্তরে সিন্ডিকেট নিয়েছে দেড় লাখ টাকা করে। তবে দালাল চক্র ও অন্যান্য জেলা অফিসে তার অনুগত কর্মীরা আবেদনকারীদের কাছ থেকে দুই থেকে আড়াই লাখ টাকা করে নেন। বছরজুড়েই সেলিনা বানু টাকার বিনিময়ে এ ধরনের পাসপোর্ট ইস্যু করে থাকেন। তবে ডিজির অনুপস্থিতিতে একসঙ্গে ৫০০ আবেদন অনুমোদন করায় বিষয়টি জানাজানি হয়।

পাসপোর্ট অধিদপ্তরের দায়িত্বশীল একজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, মাল্টিপল আবেদনের সবকিছু ঠিক থাকলেও একজন আবেদনকারী টাকা না দেওয়ায় পাসপোর্ট পাননি। এরপর ওই আবেদনকারী দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) সেলিনা বানুর বিরুদ্ধে অভিযোগ করেন। পরে গত ২৫ জানুয়ারি দুদকের এনফোর্সমেন্ট টিম সেলিনা বানুকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে।

সূত্র জানায়, শুধু মাল্টিপল পাসপোর্টই নয়, সেলিনা বানু সিন্ডিকেটের মাধ্যমে বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত বিদেশি পাসপোর্টধারীদের নো ভিসা রিকোয়ার্ড (এনভিআর) সিল দেওয়ার জন্যও টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন। এ কাজের জন্য অধিদপ্তরের উপপরিচালক নাদিরা আক্তারকে ভিসা শাখার দায়িত্বে রেখেছেন। এই কর্মকর্তা সেলিনা বানুর অনুগত হওয়ায় তাকে পার্সোনালাইজেশন সেন্টার থেকে ভিসা শাখার মতো গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় সংযুক্ত করে রেখেছেন। প্রতিটি পাসপোর্টের এনভিআর দেওয়ার জন্য ৫০ হাজার টাকা থেকে ১ লাখ টাকা করে নিচ্ছে এই সিন্ডিকেট। বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত কোনো বিদেশি পাসপোর্টধারী দেশে এসে নো ভিসা রিকোয়ার্ডের আবেদন করলে তার আর বাংলাদেশে আসতে কোনো ভিসার প্রয়োজন হয় না।

ওই সূত্রটি জানায়, এই সিন্ডিকেট অবৈধভাবে দেশে বসবাসকারী বিদেশিদেরও নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে টাকার বিনিময়ে ভিসা এক্সটেনশন বা মেয়াদ বাড়িয়ে দিচ্ছে। বিশেষ করে আফ্রিকার নাগরিকরা টাকার বিনিময়ে ভিসার মেয়াদ বাড়িয়ে দেশে মাদক কারবারসহ না অনিয়ম করছে।

মাল্টিপল পাসপোর্ট ইস্যু করে সাড়ে ৭ কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার বিষয়ে জানতে এডিজি সেলিনা বানুর দপ্তরে দেখা করার অনুমতি চাওয়া হয়; কিন্তু তিনি সময় দেননি। পরে তাকে খুদে বার্তা পাঠিয়ে অভিযোগের বিষয়ে টেলিফোনে তার বক্তব্য চাওয়া হয়। তবে তিনি গণমাধ্যমে কোনো কথা বলতে অপারগতা প্রকাশ করেন। এরপর তার বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ সম্পর্কে জানানো হলে তিনি বলেন, আমার বিষয়ে অভিযোগ থাকলেও আমি তো বক্তব্য দিতে পারব না, আমি তো পত্রিকায় বক্তব্য দিতে পারি না।’

বেনামি চিঠিতে গুরুতর তথ্য সেলিনা বানুর বিরুদ্ধে:

এদিকে পাসপোর্ট অধিদপ্তরের একাধিক কর্মকর্তা-কর্মচারী অভিযোগ তুলেছেন, সেলিনা বানুর অপকর্ম নিয়ে কথা বললেই তাদের ওপর খড়্গ নেমে আসে। এ জন্য মুখ না খুলে আতঙ্কিত কর্মকর্তা-কর্মচারীরা সম্প্রতি মন্ত্রণালয়, অধিদপ্তর ও দেশের প্রায় সব পাসপোর্ট অফিসে বেনামি চিঠি দিয়ে এই কর্মকর্তার দৌরাত্ম্য থেকে নিস্তার চেয়েছেন। এসব চিঠিতে সেলিনা বানুর বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ আনা হয়েছে।

চিঠিতে বলা হয়েছে, সেলিনা বানু পাসপোর্ট অধিদপ্তরে ৩০ বছর ধরে চাকরি করলেও তিনি ৬৪ জেলার কোথাও বদলি হননি। একবার অনিয়মের কারণে তাকে ঢাকার বাইরে বদলি করা হলেও বেশি দিন থাকতে হয়নি। তার স্বামী ঢাকার একটি গুরুত্বপূর্ণ কলেজের হিসাববিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক এ কে এম মাসুদুল হক রিজভী জামায়াতের পদধারী। যুদ্ধাপরাধ ও মানবতাবিরোধী অপরাধে ফাঁসির দণ্ড কার্যকর হওয়া কামারুজ্জামান তাদের স্বজন। শুধু তাই নয়, জামায়াত নেতা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর মৃত্যুর পর হাসপাতালেও ছুটে গিয়েছিলেন এই দম্পতি।

চিঠিতে বলা হয়, এডিজি সেলিনা বানুর বাড়ি জামালপুরে। গত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জামালপুরে রেলে নাশকতার ঘটনায় তার স্বজনরাও জড়িত।

ওই চিঠির সূত্র ধরে সেলিনা বানুর গ্রামের বাড়িতে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, তার পরিবারের কেউ সরকার সমর্থক নয়। তার স্বামী চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নের সময়ে শিবিরের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। তার পরিচিত কয়েক শিক্ষক এবং সরকার সমর্থিত শিক্ষকদের একাধিক সংগঠনের নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে জানা গেছে, হিসাববিজ্ঞানের শিক্ষক মাসুদুর রহমান কখনো স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের বলয়ে ছিলেন না। তবে প্রকাশ্যে তাকে রাজনীতিতে সক্রিয় দেখা যায় না।

সেলিনা বানু আতঙ্কে পুরো পাসপোর্ট অধিদপ্তর:

অধিদপ্তর সূত্র জানায়, গত দুই বছরে এডিজি সেলিনা বানু আইফোন ও ল্যাপটপ নিয়ে কর্মকর্তাদের কয়েকটি প্রাইজ পোস্টিং দেন। তার আর্থিক চাহিদা পূরণ করতে না পারলে দেশের প্রত্যন্ত জেলাগুলোতে বদলি হতে হয় কর্মকর্তা-কর্মচারীদের। দেওয়া হয় কম গুরুত্বপূর্ণ পদ। কয়েক বছর আগে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজে তার ভাইয়ের চিকিৎসার খরচ চালাতে হয়েছে ময়মনসিংহসহ ওই এলাকার বিভিন্ন পাসপোর্ট অফিসের কর্মকর্তাদের। বিভিন্ন সময়েই কর্মকর্তাদের উপঢৌকন দিতে হয়। তিনি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের তার অনুগত করতে সামান্য ভুলেও বিভাগীয় মামলা, নানা সংস্থা দিয়ে তদন্ত করার ভয় দেখানোসহ নানাভাবে হুমকি দেন। উড়ো চিঠিতে কর্মকর্তা-কর্মচারীরা এসব অনিয়ম থেকে রক্ষা পেতে আবেদন জানিয়েছেন।

পাসপোর্ট অধিদপ্তরে সেলিনা বানুর নানা অনিয়ম কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মুখে মুখে। তবে কেউ গণমাধ্যমে প্রকাশ্যে মুখ খোলেন না। সবাই নাম প্রকাশ না করে তার অপকর্ম তুলে ধরেন।

সরকার সমর্থক না হয়েও সেলিনা বানু এত প্রভাবশালী কীভাবে? সে বিষয়ে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, অধিদপ্তরের এই কর্মকর্তা সব সময়েই কৌশলে চলেন। যখন যে মহাপরিচালক দায়িত্বে আসেন, তিনি কৌশলে তার লোক হয়ে যান। নিজেকে সৎ কর্মকর্তা হিসেবে প্রচার চালায় তার অধিনস্তরা। তা ছাড়া মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষাসেবা বিভাগেও কিছু কর্মকর্তাকে নানাভাবে ম্যানেজ করে তিনি পুরো অধিদপ্তরই নিজের নিয়ন্ত্রণে রেখে নানা অনিয়ম করে চলেছেন।


আরও খবর