অদম্য ইচ্ছে শক্তি আর পরিবার ও শিক্ষকদের অনুপ্রেরণায় ৪৬ বছর বয়সে এসএসসি পরীক্ষা দিয়ে উত্তীর্ণ হয়ে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন কুড়িগ্রামের মোছা. রহিমা বেগম নামের এক নারী।
তিনি কুড়িগ্রাম সরকারি কলেজে চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী হিসেবে কর্মরত আছেন। রহিমা কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার খলিলগঞ্জ নাজিরাপাড়া গ্রামের মো. আব্দুল জলিল সরকার মজনুর স্ত্রী।
কুড়িগ্রাম কাঁঠালবাড়ি মহিউস সুন্নাহ মহিলা দাখিল মাদরাসা থেকে দাখিল পরীক্ষায় এবার মানবিক বিভাগ থেকে ৩.৬০ জিপিএ পেয়ে উত্তীর্ণ হয়েছেন তিনি।
জানা যায়, রহিমা বেগম চতুর্থ শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করে আর পড়তে পারেননি। সংসারে এক মেয়ে ও এক ছেলে আছে তার। ছেলেমেয়ে দুজনে কুড়িগ্রাম সরকারি কলেজ থেকে মাস্টার্স শেষ করেছেন। মেয়েকেও বিয়ে দিয়েছেন। মেয়ের ঘরে এক ছেলে আছে। দীর্ঘ সময় পর মেয়ের ছেলেকে নিয়ে স্কুল যাওয়া আসা করতে গিয়ে পড়াশোনায় আবার উজ্জীবিত হন তিনি।
এর ধারাবাহিকতায় কুড়িগ্রাম কাঁঠালবাড়ি মহিউস সুন্নাহ মহিলা মাদরাসা থেকে দাখিল পরীক্ষা দিয়ে ৩.৬৭ জিপিএ পেয়ে উত্তীর্ণ হন তিনি। এ বয়সে পাস করায় পরিবার আত্মীয় স্বজন ও সহকর্মীদের অভিনন্দন ও ভালোবাসায় মুগ্ধ হয়েছেন রহিমা বেগম।
রহিমা বেগম বলেন, আমি কুড়িগ্রাম সরকারি কলেজের একজন কর্মচারী। আমি এবার এসএসসি পরীক্ষা দিয়ে পাস করেছি। এবার আমার স্বপ্ন আমি ইন্টারমেডিয়েটও পড়বো। আমার এসএসসি পাস করার পেছনে আমাদের কলেজের প্রিন্সিপাল স্যারের অবদান রয়েছে। স্যার আমাকে সব সময় উৎসাহিত করতেন পড়াশোনা করার জন্য। এ কারণেই আমি এসএসসি পাস করতে পেড়েছি।
আমি দীর্ঘ ২৫ বছর ধরে এই কলেজে কাজ করছি। আমার কাজ সবসময় মনোযোগ দিয়ে করি। আমার এক ছেলে এক মেয়ে। ছেলেমেয়েরা দুজনেই এই কলেজ থেকেই মাস্টার্স পাস করেছে।
রহিমা বেগমের মেয়ে মজিদা আক্তার পপি বলেন, মা এই বয়সে এসে সংসার ও চাকরি করার পরও পরীক্ষায় পাস করবে জানতাম না। আমার মায়ের জন্য সবার কাছে দোয়া চাই।
কুড়িগ্রাম সরকারি কলেজ অধ্যক্ষ মির্জা নাসির উদ্দীন বলেন, রহিমা বেগম আমার কলেজের একজন কর্মচারী। তিনি দীর্ঘপথ পাড়ি দিয়ে মাদরাসায় দাখিল শ্রেণিতে ভর্তি হয়। এবছর এসএসসি পরীক্ষায় অংশ গ্রহণ করে জিপিএ ৩.৬০ অর্জন করেছে। বয়স বা কোনো বাধাই তাকে আটকাতে পারেনি। পড়াশোনায় মাঝপথে কিংবা শুরুতে থেমে যাওয়া অন্য সকল নারী-পুরুষদের জন্য রহিমা প্রেরণার উৎস। যে কোনো বয়সেই যে শিক্ষা অর্জন করা যায় রহিমা তার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত।
তিনি বলেন, কুড়িগ্রাম সরকারি কলেজ কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে রহিমাকে অভিনন্দন এবং সে উচ্চ মাধ্যমিক শ্রেণিতে ভর্তি হতে চাইলে তাকে সহযোগিতা করা হবে।