ভারতের বিখ্যাত
সংগীতশিল্পী কৃষ্ণকুমার কুন্নাথ। সবাই তাকে কেকে নামেই বেশি চেনেন ও জানেন। দিল্লির
এক মধ্যবিত্ত পরিবার থেকে ওঠে আসা ‘কেকে’ ছোটবেলা থেকেই
প্রতিভাবান গায়ক ছিলেন। কখনোই ভাবেননি পেশাদার গায়ক হবেন, বলিউডের ব্লকবাস্টার প্লেব্যাক
শিল্পী হবেন। কারণ, গান না শিখেও গানকে পেশা হিসেবে নিতে পেরেছিলেন তিনি। তাই কেকে
নিজেকে অত্যন্ত ভাগ্যবান মনে করতেন। কেকে’কে প্রথম সুযোগ দেন বিশাল ভরদ্বাজ। তিনি কেকের প্রতিভাকে কাজে লাগাতে
চাইলেন। কেকেকে দিয়ে গুলজারের হিট গান ‘ছোড় আয়ে হাম ওহ গালিয়ান’ দিয়ে ‘মাচিসে’ হিন্দি
সিনেমায় গান করান।
তারপর ১৯৯৯
সালে কেকে সনি মিউজিকের অধীনে একক অ্যালবাম ‘পাল’র জন্য সেরা
গায়ক হিসেবে স্ক্রিন অ্যাওয়ার্ড পান। তিনি ‘পাল’র জন্য তার
মেন্টর লেসলি লুইসের সঙ্গে জুটি বাঁধেন। যা তার ট্রেডমার্ক অ্যালবামে পরিণত হয়। এ
অ্যালবামের অন্যতম শ্রোতাপ্রিয় গান ‘পেয়ার কা পল’। পাশাপাশি
একই সময় তিনি সিনেমার গানেও কণ্ঠ দিতে থাকেন। সালমান খান-ঐশ্বরিয়া রাই বচ্চন অভিনীত
সিনেমা ‘হাম দিল দে চুকে সনম’ দিয়ে তার বলিউড যাত্রা হয়। ১৯৯৯ সালে মুক্তি পায় ছবিটি। রোমান্টিক-ড্রামা
ঘরানার এ সিনেমার জনপ্রিয় গান ‘তাড়াপ তাড়াপ’ গেয়ে
তুমুল জনপ্রিয়তা পান কেকে।
তারপর আর পেছন
ফিরে দেখতে হয়নি তাকে। একের পর এক গান গেয়েছেন, হিট হয়েছেন। তার গানের সঙ্গে ঠোঁট মিলিয়ে
সুপারহিট গানের নায়ক হয়েছেন সালমান, শাহরুখ, অজয়সহ আরও অনেকেই। মোদ্দা কথা, নব্বই দশকটাতে
হিন্দি গানের রাজ্যে তিনি ছিলেন এক মুগ্ধ রাজকুমার। ২০০৩ সালে মুক্তি পায় সুজয় ঘোষ
পরিচালিত ‘ঝংকার বিটস’ সিনেমা।
এ সিনেমার জনপ্রিয় গান ‘তু আশিকি হ্যায়’ দারুণ
হিট করে কেকের কণ্ঠে।
মোহিত সুরি
পরিচালিত রোমান্টিক সিনেমা ‘ও লামহে’ ২০০৬
সালে মুক্তি পায়। এ সিনেমার জনপ্রিয় গান ‘কেয়া মুঝে প্যায়ার হ্যায়’ গেয়েও শ্রোতাদের মনে আরও একবার দোলা দেন কেকে। কঙ্গনা রাণৌত অভিনীত
সিনেমা ‘লাইফ ইন অ্যা মেট্টো’। অনুরাগ বসু পরিচালিত এ সিনেমা মুক্তি পায় ২০০৭ সালে। সিনেমাটির শ্রোতাপ্রিয়
গান ‘আলবিদা’-এর কণ্ঠশিল্পী কেকে।
ইমরান হাশমি
ও সোনাল চৌহান অভিনীত সিনেমা ‘জান্নাত’। ২০০৮
সালে মুক্তিপ্রাপ্ত সিনেমাটি পরিচালনা করেন কোনাল দেশমুখ। এ সিনেমার ‘জারা সা দিল মে দে জাগা’ শিরোনামের গানটি দারুণ শ্রোতাপ্রিয় হয়। ইমরান হাশমি-সোহা আলী খান অভিনীত
সিনেমা ‘তুম মিলে’। কোনাল
দেশমুখ পরিচালিত এ সিনেমা মুক্তি পায় ২০০৯ সালে। সিনেমাটির জনপ্রিয় গান ‘দিল ইবাদত’-এ কণ্ঠ দেন তিনি। হৃতিক রোশান অভিনীত সিনেমা ‘কাইটস’। ২০১০ সালে মুক্তি পাওয়া এ সিনেমা পরিচালনা করেন অনুরাগ বসু। এ সিনেমার
জনপ্রিয় গান ‘জিন্দেগি দো পল কি’। এ
গানের কণ্ঠশিল্পীও কেকে।
কেকে অল্প সময়ের
মধ্যে হিন্দিতে প্রায় ৫০০ গান এবং তেলেগু, তামিল ও কন্নড় ভাষায় শতাধিক গানে কণ্ঠ
দেন। তিনি বিভিন্ন কর্পোরেট , শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং ভারত ও বিদেশে ১২০টির বেশি পাবলিক
কনসার্টে পারফর্ম করেন। এটি অবশ্যই একজন গায়কের জন্য উল্লেখযোগ্য অর্জন। তবে এই গায়ক
চিরকাল অমর হয়ে থাকবেন প্রেম পিয়াসী সকল যুবকের অন্তরে ‘আঁখো মে তেরি’ গানটি দিয়ে। শাহরুখ খান-দীপিকা পাড়ুকোন জুটির ‘ওম শান্তি ওম’ ছবির গান এটি। ২০০৭ সালে এই ছবি দিয়ে বলিউডে পা রাখেন আজকের সুপারস্টার
দীপিকা। তার সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয়ে শাহরুখের ঠোঁটে ‘আঁখো মে তেরি’ গানটি
দারুণ হিট করে যায়। যা আজও সবার মুখে মুখে বেজে উঠে কোথাও সুন্দর চোখের কাউকে দেখলেই।
মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ার আগে কলকাতার নজরুল মঞ্চের কনসার্টে কেকের গাওয়া শেষ গানটিও ছিলো
এটি। সুন্দর কোনো চোখের কথা বলতে বলতেই হৃদরোগে আক্রান্ত হন কেকে, কিছুক্ষণ পর হাসপাতালে
যাওয়ার পথেই চিরতরে বন্ধ করে দিলেন তার চোখ।