বরগুনার বেতাগীতে বাড়ছে ডেঙ্গু প্রকোপে
কেড়ে নিয়েছে ৪ জনের প্রাণ। চলছে শিরায় দেওয়া স্যালাইনের হাহাকার।
এ বছরের মত এত বেশি ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী
ও মৃত্যু আগে কখনো দেখা যায়নি। রোগী সামলাতে হিমশিম খাচ্ছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। ডেঙ্গুর
প্রকোপবৃদ্ধিতে রোগীদের চাহিদামতো স্যালাইন দিতে পারছেন না চিকিৎসকেরা। এমন পরিস্থিতিতে
বাজারেও শিরায় দেওয়া স্যালাইন কিনতে পাওয়া যাচ্ছে না। অনেক ক্ষেত্রে মিললেও বেশি দাম দিয়ে স্যালাইন কিনতে হচ্ছে এমনই
অভিযোগ একাধিক ক্রেতাদের।
ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে ইতোমধ্যে উপজেলার
মোকমিয়া ইউনিয়নের জোয়ার করুনা গ্রামের উত্তম মল্লিকের গৃহীনী স্ত্রী শিল্পী রানী (৩৮),
বেতাগী সদর ইউনিয়নের ঝোপখালী গ্রামের আব্দুল জালিল (৫০), বেতাগী পৌরসভার ৮ নং ওয়ার্ডের
দেলোয়ার হোসেন (৬৫) ও ১নং ওয়ার্ডের মো: শাহ আলম (৩২)‘র মৃত’ হয়। গত কয়েক
সপ্তাহ আগে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে এরা উপজেলা হাসপাতালে ভর্তি হন। অবস্থার অবনতি হওয়ায়
তাঁদের অনেককে বরিশাল শেরই-বাংলা মেডিকেল হাসপাতালে পাঠনো হয়। বিভিন্ন হাসপাতাল ঘুরে
এক দিনের ব্যবধানে শনিবার দুইজন মারা যান।
সোমবার সরেজমিনে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে,
গত কয়েক মাসেই ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। তবে জুলাই মাস থেকে এর প্রকোপ আরও বৃদ্ধি
পেয়ে দিন দিন পরিস্থিতির অবনতি হয়। বেতাগী হাসপাতালের পরিসংখ্যান বিভাগ জানায়, এ রিপোর্ট
লেখা পর্যন্ত উপজেলা হাসপাতালে ১৮৬ জন রোগী ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে ভর্তি হয়েছেন।
বেতাগী হাসপাতালে দেখা যায়, বর্তমানে ডেঙ্গু
ওয়ার্ডে ৮ জন রোগী ভর্তি রয়েছে। উপজেলার কদমতলা থেকে আসা সীমা বেগম (২৭) গত ২১ সেপ্টেম্বর
এখানে ভর্তি হন। সেদিন থেকে তাঁকে বাইরে থেকে স্যালাইন কিনে আনতে হয়েছে। আজও তাঁর জন্য
হাসপাতালের বাইরে থেকে চড়া দামে ২০০ টাকায় স্যালাইন কেনা হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট হাসপাতাল সূত্র জানায়, উপজেলার
সবচেয়ে বড় এই হাসপাতালেও সাধারণ স্যালাইন (এনএস) ও গ্লুকোজ-সোডিয়াম ক্লোরাইড (ডিএনএস)
উভয় স্যালাইনের মজুতে ঘাটতি দেখা দিয়েছে। ওষুধের দোকানগুলোতেও এই সংকট রয়েছে। বেতাগী
পৌর শহরের একাধিক ফার্মেসির মালিক ও ওষুধ কোম্পানির বিক্রয় প্রতিনিধিরা বলেন, কোম্পানিগুলো
চাহিদা অনুযায়ী স্যালাইন সরবরাহ করতে পারছে না। সিফাত মেডিকেল হলের মালিক হাফেজ মো:
আলাউদ্দীন জানান, গত এক মাসেরও বেশি সময় ধরে স্যালাইনের জন্য প্রতিদিন মানুষ ভীড় জমাচ্ছে।
কিন্ত সংকটের কারণে তাদের মাঝে সরবরাহ করতে পারছি না।
বেতাগী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের পরিবার
ও পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা: ফাহমিদা লস্কর বলেন, ‘ডেঙ্গ রোগী বেড়ে
যাওয়ার কারণে স্যালাইনের চাহিদা অনেক বেড়ে যাওয়ায় স্যালাইনের কিছুটা ঘাটতি হতে পারে।
স্যালাইন চেয়ে ইতোমধ্যে চাহিদাপত্র পাঠিয়ে দিয়েছি। এটা পেলে সংকট কেটে যাবে।’
বাজারে কেন স্যালাইন সংকট চলছে এমন প্রশ্নের
উত্তরে বেতাগী উপজেলা নির্বাহী অফিসার ফারুক আহমেদ বলেন, আমদানি করা স্যালাইন উপজেলা
পর্যায় পৌঁছালে আশা করি সমস্যা আর থাকবে না। তবে যাতে বাজারে কোন সংকট না থাকে সে বিষয়
আমরা স্থানীয় ওষুধ বিক্রেতা ও কোম্পানির বিক্রয় প্রতিনিধিদের সাথে কথা বলে দ্রুত সমাধানের
চেষ্টা চালাবো।