দলীয় কর্মসূচিতে যোগ না দেওয়ায় রাজশাহী কলেজ ছাত্রাবাসের ২৫ ছাত্রকে পিটিয়েছেন ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। নির্যাতনের ঘটনা প্রকাশ না করতে হুমকিও দেন তারা। গতকাল বুধবার সন্ধ্যায় মুসলিম ছাত্রাবাসের ‘ই’ ও ‘বি’ ব্লকে এ ঘটনা ঘটে।
ওই ঘটনায় আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে রাজশাহী কলেজ কর্তৃপক্ষ ও সাংবাদিক সংগঠনের সঙ্গে বৈঠকে ক্ষমা চেয়েছেন ছাত্রলীগ নেতারা। ভবিষ্যতে এ ধরনের কর্মকাণ্ড থেকে বিরত থাকারও প্রতিশ্রুতি দেন তারা।
জানা গেছে, গতকাল বুধবার বিকেলে নগরভবন চত্বরে একটি কর্মসূচিতে যোগ দিতে রাজশাহী কলেজ মুসলিম ছাত্রাবাসে থাকা সাধারণ ছাত্রদের রুমে রুমে গিয়ে বের হওয়ার নির্দেশ দেন ছাত্রলীগ নেতারা। কিন্তু অধিকাংশ ছাত্র কর্মসূচিতে যেতে রাজি না হওয়ায় তাদের জোর করে নিয়ে যান তারা।
অনুষ্ঠান শেষে গতকাল সন্ধ্যার পর ছাত্রলীগ নেতা শাহরুখ, রিফাত, ইমন, তরিকুল, রাজু, হাসান ও আহসানের নেতৃত্বে ছাত্রাবাসে যান নেতাকর্মীরা। কর্মসূচিতে যোগ না দেওয়া শিক্ষার্থীদের রুমে রুমে গিয়ে মারধর করেন তারা। এ সময় তারা ত্রাস সৃষ্টি করলে গোটা ছাত্রাবাসেই আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। আতঙ্কে রুম থেকে কেউ কেউ পালিয়ে বাঁচার চেষ্টা করলেও তাদেরকে মারধর করা হয়।
ছাত্রলীগের হামলার শিকার ছাত্র নাজমুস সাকিব বলেন, ‘ছাত্রলীগের কর্মীরা বিভিন্ন সময় তাদের দলীয় কর্মসূচিতে সাধারণ ছাত্রদের যোগ দিতে বাধ্য করে। গতকাল বিকেলে ছাত্রলীগের একটি কর্মসূচিতে যেতে চাপ দেয় ছাত্রলীগ নেতারা। তখন ছাত্রলীগ নেতা রাফিকে মেডিকেলে যাওয়ার কথা বললে তিনি ছাত্রাবাস ছেড়ে দিতে বলে। সন্ধ্যা ৬টায় মেডিকেল থেকে ছাত্রাবাসে ফিরলে ছাত্রলীগের শাহরুখ, রাজু, ফিরাত ও হাসানসহ ৮ থেকে ১০ জন মিলে আমার রুমে ঢুকে আচমকা আমাকে মারধর করেন।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমার মোবাইল ফোনসহ বেশ কিছু দামি জিনিসপত্র কেড়ে নেন তারা। একপর্যায়ে সব ছাত্রদের আটকে রেখে অশ্লীল ভাষায় গালাগালি করতে থাকেন নেতারা। অনেককে মারধরও করেন।’
আরেক নির্যাতিত ছাত্র শরিফুল ইসলাম বলেন, গতকাল সকাল সাড়ে ৯টায় বের হয়ে ব্যক্তিগত কাজে সারাদিন ব্যস্ত ছিলাম। সন্ধ্যায় রুমে ফিরেছি। এমন সময় হঠাৎ রাশিক দত্তের কর্মী শাহরুখ রুমে ঢুকে। কিছু না জিজ্ঞেস করেই আমাকে মারধর করে। তার সঙ্গে আরও কয়েকজন এসে আমাকে মেরে রুম থেকে বের করে দেয়। পরে আমাকে অন্য ব্লকে নিয়ে যায়। সেখানে আগে থেকে ৪০ জন ছাত্রকে আটকে রেখেছিলেন তারা।’
সাধারণ ছাত্রদের পেটানোর খবর পেয়ে রাতে ছাত্রাবাসে ছুটে আছেন কলেজের অধ্যক্ষ আব্দুল খালেক, হোস্টেল সুপার অধ্যাপক আনিসুজ্জামান মানিকসহ কয়েকজ শিক্ষক। এ সময় ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা তাদের ওপর চড়াও হন। তবে পরিস্থিতি শান্ত করে ছাত্রাবাস ত্যাগ করেন অধ্যক্ষ।
আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে রাজশাহী কলেজ অধ্যক্ষের কার্যালয়ে ত্রিপক্ষীয় বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। এতে কলেজের অধ্যক্ষ আব্দুল খালেক, হোস্টেল সুপার আনিসুজ্জামান মানিক, রাজশাহী সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি রফিকুল ইসলাম, সাধারণ সম্পাদক তানজিমুল হক, রাজশাহী টেলিভিশন জার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মেহেদী হাসান শ্যামল ও রাজশাহী কলেজ রিপোর্টার্স ইউনিটির সভাপতি মেহেদী হাসান। রাজশাহী কলেজ শাখা ছাত্রলীগের পক্ষে ছিলেন সভাপতি রাশিক দত্ত। ওই বৈঠকে ছাত্রলীগ সভাপতি রাশিক ঘটনার জন্য দুঃখ প্রকাশ ও ক্ষমা চান।
বৈঠক শেষে রাজশাহী কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি রাশিক দত্ত জানান, ছাত্রাবাস থেকে সাধারণ ছাত্রদের ডাকতে সাংগঠনিকভাবে কাউকে দায়িত্ব দেওয়া হয়নি। তবে নিজেরা উৎসাহ হয়ে মহানগর ছাত্রলীগের সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক সম্পাদক শাহরুখসহ কয়েকজন মিলে এ ঘটনাটি ঘটিয়েছে। ভবিষতে এ ধরনের কোনো ঘটনা ঘটবে না।
রাজশাহী কলেজের অধ্যক্ষ আব্দুল খালেক বলেন, ‘সম্প্রতি রাজশাহী কলেজে বেশ কয়েকটি এমন ঘটনা ঘটেছে। এতে কলেজেরও সুনাম নষ্ট হয়েছে। এ কারণে আমরা বিব্রত। ছাত্রলীগকে বলা হয়েছে, ভবিষ্যতে এ ধরনের কোনো ঘটনা ঘটলে ক্ষমা করা হবে না। তাদের বিরুদ্ধে একাডেমিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’