২০০১ থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত মেডিকেল কলেজে
ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁস করে আসছে চিকিৎসকের একটি চক্র। ১৭ বছরের মধ্যে ১০ বার প্রশ্ন
ফাঁস করেছে চক্রটি। হাতিয়ে নিয়েছেন কোটি কোটি টাকা। গত ৩০ জুলাই থেকে ১০ দিন ঢাকাসহ
দেশের বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে প্রশ্ন ফাঁসের সাথে জড়িত ৭ চিকিৎসকসহ ১২ জনকে
আটক করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)।
এসময় তাদের কাছ থেকে ৯টি মোবাইল ফোন,
৪টি ল্যাপটপ, নগদ ২ লাখ ১১ হাজার টাকা, ১৫ হাজার একশ বিদেশি মুদ্রা থাই বাথ, বিভিন্ন
ব্যাংকের ১৫টি চেক বই, ডেবিট ও ক্রেডিট কার্ড ও ভর্তির এডমিট কার্ড উদ্ধার করা হয়েছে।
রোববার (১৩ আগস্ট) দুপুর সাড়ে ১২টায়
রাজধানীর মালিবাগে সিআইডির মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান সংস্থাটির
প্রধান অতিরিক্ত আইজিপি মোহাম্মদ আলী মিয়া।
তিনি বলেন, ‘পাবলিক পরীক্ষা
সামনে আসলেই একশ্রেণির চক্র বেশ সক্রিয় হয়ে উঠে প্রশ্ন ফাঁস করার জন্য। এই চক্রটি
নানা কায়দায় প্রশ্ন ফাঁস যেমন করে, তেমনি গুজব ছড়িয়ে পরিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের
বিভ্রান্তও করে। শিক্ষাখাতের ক্যানসার হিসেবে বিবেচিত এসব প্রশ্নপত্র ফাঁস চক্রকে নির্মূল
করতে কাজ করছে পুলিশ।’
আরও পড়ুন>> প্রশ্নফাঁসের অভিযোগে বিমানের আরও ৯ কর্মীকে প্রত্যাহার
সিআইডির প্রধান বলেন, ‘দেশের মেডিকেল
কলেজের ভর্তি পরীক্ষাগুলোতে নিয়মিত প্রশ্ন ফাঁসকারী বিশাল এক সিন্ডিকেটের খোঁজ পায়
সিআইডির সাইবার পুলিশ। ২০২০ সালে মিরপুর মডেল থানায় করা এক মামলায় সম্প্রতি চক্রের
অন্তত ৮০ জন সক্রিয় সদস্য বিগত প্রায় ১৬ বছরে হাজার হাজার শিক্ষার্থীকে অবৈধ উপায়ে
মেডিকেল কলেজগুলোতে ভর্তি করিয়ে শত কোটি টাকা আয় করেছে। প্রশ্ন ফাঁস করে মেডিকেলে
ভর্তি হয়েছেন এমন শতাধিক শিক্ষার্থীর নাম পেয়েছে সিআইডি। এর মধ্যে অনেকে পাশ করে
ডাক্তারও হয়েছেন।’
আটকের বিষয়ে অতিরিক্ত আইজিপি মোহাম্মদ
আলী মিয়া বলেন, ‘গত ৩০ জুলাই থেকে ১০ দিন ঢাকাসহ টাঙ্গাইল,
কিশোরগঞ্জ, বরিশাল জেলায় অভিযান পরিচালনা করে এ চক্রটির ১২ সদস্যকে আটক করা হয়। এর
মধ্যে ৭ জনই ডাক্তার। তাদের সবাই বিভিন্ন মেডিকেল ভর্তি কোচিং সেন্টার, নয়তো প্রাইভেট
পড়ানোর আড়ালে প্রশ্নফাঁস করতেন।’
২০০১ সাল থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত ১৬ বছরে
অন্তত ১০ বার মেডিকেলের প্রশ্ন ফাঁস করেছে চক্র। আটকদের কাছ থেকে শিক্ষার্থীদের অভিভাবকদের
দেওয়া বিপুল সংখ্যক ব্যাংকের চেক এবং এডমিট কার্ড উদ্ধার করা হয়েছে। এদের ব্যাংক
অ্যাকাউন্টে কোটি কোটি টাকার লেনদেনের তথ্য পাওয়ার কথাও জানান তিনি।
প্রশ্ন ফাঁস চক্রের মাস্টারমাইন্ড জসীম
উদ্দিন ভূইয়ার কাছ থেকে একটি গোপন ডায়েরি উদ্ধার করা হয়েছে। যেখানে সারাদেশে ছড়িয়ে
থাকা তার চক্রের অন্যান্য সদস্যদের নাম রয়েছে। সেসব তথ্য যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে বলেও
জানান সিআইডি প্রধান।