রাঙ্গুনিয়া(চট্টগ্রাম)প্রতিনিধি:
ধবধবে সাদা একটু আধটু কালো ডোরাকাটা বর্ণের ষাঁড়টি। মালিক আদর করে নাম দিয়েছেন “রাজাবাবু”। ষাঁড়টির দৈর্ঘ্য সাড়ে ৯ ফুটের বেশি, উচ্চতা ৫ ফুট ২ ইঞ্চি, ওজন ৩০ মণ। অস্ট্রেলিয়ান জাতের ষাঁড়ের সিমেন ব্যবহার করে কৃত্রিম প্রজননের মাধ্যমে জন্ম নেওয়া “রাজাবাবু”র মালিক হলেন চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়া উপজেলার রাজানগর ইউনিয়নের মো. হাসান, মো. সালাউদ্দিন ও সেলিম তালুকদার শাহানু।
৬ বছর ধরে নিজের পরিবারের সদস্য মনে করে গরুটি লালন পালন করছেন তাঁরা। তিনজনে রক্তের সম্পর্কের কেউ না হলেও অন্য কাজের ফাঁকে খামারে ছুটে গিয়ে “রাজাবাবু”কে পরম মমতায় বড় করেছেন তাঁরা।
আসন্ন পবিত্র ঈদুল আজহা উপলক্ষে বিক্রির জন্য ষাঁড়টির দাম হেঁকেছেন ১২ লাখ টাকা। ষাঁড়টি খামার থেকে কেউ কিনলে এর সাথে বিনামূল্যে ছাগল দেয়া হবে। এছাড়া ষাঁড়টি ক্রেতার বাড়িতেও পৌঁছে দেয়া হবে একেবারে টাকা ছাড়া।
গরুটি দেখতে প্রতিদিন মানুষের ভিড় জমছে খামারে। এর মধ্যে বিক্রি না হলে ষাঁড়টি দুয়েকদিন পর চট্টগ্রাম নগরীর গরুর হাটে নিয়ে যাবেন বলে জানিয়েছেন গরুর মালিকরা।
স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মো. হাসান, মো. সালাহ্ উদ্দিন ও সেলিম তালুকদার ৬ বছর আগে সরকারিভাবে অস্ট্রেলিয়ান জাতের সিমেন ব্যবহার করে কৃত্রিম প্রজননের মাধ্যমে তাঁদের পালিত গাভি থেকে জন্ম নেয় “রাজাবাবু”। জন্মের পর ষাঁড়টির ওজন ছিল প্রায় দেড় মণ। এরপর দেশীয় প্রাকৃতিক পদ্ধতিতে গরুটি মোটাতাজা করার প্রক্রিয়া শুরু করেন।
প্রয়োজনমতো খাবার ও পরিচর্যায় গরুটির আকৃতি বাড়তে থাকে। ষাঁড়টিকে আদর করে নাম দেন “রাজাবাবু”। দিনে দিনে ওজন বেড়ে গরুটি ৩০ মণে এসে দাঁড়ায়। “রাজাবাবু”র খাদ্যতালিকায় রয়েছে খড়, কাঁচা ঘাস, পাহাড়ী লতা-পাতা, গমের ভুসি ও ধানের কুঁড়া, ভুট্টা, ডালের গুঁড়া, তৈলবীজের খৈল, ছোলা, আলু, কলা, কাঁঠাল। সব মিলিয়ে গরুটি প্রতিদিন গড়ে প্রায় এক মণ খাবার খায়। এতে খরচ হয়েছে ১ হাজার ১০০ টাকা। শুরুর দিকে খাবার কম খেলেও দিনে দিনে বাড়তে থাকে। বর্তমানে গরুটির ওজন প্রায় ৩০ মণ।
মো. হাসান বলেন, “তিনজনে মিলে ২০ বছর আগের পাহাড়ী এলাকায় খামারটি গড়ে তোলা হয়। খামারে ছোট-বড় গাভী ও ষাঁড় মিলে ৫২ টি গরু রয়েছে। এবার বিক্রির জন্য উপযোগী হয়েছে তিনটি গরু। এর মধ্যে সবচেয়ে বড় গরুটি হচ্ছে “রাজাবাবু”। এটি উত্তর চট্টগ্রামের সবচেয়ে বড় গরু দাবি করেন তিনি। এছাড়া এই খামারে ২১ মণ ওজনের “বাহুবলী’ ও ২০ মণ ওজনের “ কালো মানিক” রয়েছে। জন্মের বছর খানেক পর ষাঁড়গুলোর নাম দেয়া হয়।
মো. সালাহ্ উদ্দিন বলেন, ‘রাজাবাবু’র মতো গরু লালন-পালন খুবই ব্যয়বহুল ও কষ্টের। পরিবারের একজন সদস্যের মতো করে আমরা গরুটির পালন করেছি। খুব যত্ন নিয়ে বড় করেছি। অনেক শ্রম ও অর্থ ব্যয় করতে হয়েছে। গরুটিকে দেখভাল করার জন্য আলাদা করে মানুষ কাজে রাখতে হয়েছে। ১২ লাখ টাকায় গরুটি বিক্রি করতে চান তিনি। উপজেলার রাজানগর ইউনিয়নের কাউখালি রাস্তার মাথা পাহাড়ী পথ বেয়ে সরেজমিনে আল মদিনা ডেইরি ফার্মে গিয়ে দেখা গেছে, খামারের উঠানে মোটা দড়িতে বেঁধে রাখা হয়েছে ষাঁড়টি। তাঁর পাশে রয়েছে মোটাতাজা আরো দুটি ষাঁড়। সবচেয়ে বড় ষাঁড় “রাজাবাবু”কে দেখতে মানুষ ভিড় জমিয়েছে।
গরু দেখতে আসা পাশের গ্রামের মো. জালাল নামের এক ব্যক্তি বলেন, “পবিত্র কুরবানির জন্য গরুটি বিক্রি করবে শুনে দেখতে এসেছি। প্রতিদিন গরু দেখতে অনেক মানুষ ভিড় করছেন শুনেছি। সরকারিভাবে প্রতিটি এলাকায় অস্ট্রেলিয়ান সিমেন দেওয়া হলে উন্নত জাতের এ পশু পালনের মাধ্যমে বেকার সমস্যার সমাধান হবে। অনেকেই আত্মনির্ভরশীল হয়ে উঠবে। মাংসের জোগানের পাশাপাশি আর্থিকভাবে সচ্ছলতাও আসবে।
জানতে চাইলে উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা মুহাম্মদ মুস্তফা কামাল বলেন, রাঙ্গুনিয়ায় কোরবানিকে কেন্দ্র করে যেসব পশু মোটাতাজা করা হয়েছে, সেগুলোর মধ্যে “রাজাবাবু”ও রয়েছে। এসব গরুর মাংসও সুস্বাদু। তাই এর চাহিদা খুব বেশি হবে।