গ্রামের নাম সররাবাদ। বেলাব উপজেলার সল্লাবাদ ইউনিয়নের সররাবাদ ও পাশের ইব্রাহীমপুর এই দুই গ্রামের তিন ওয়ার্ডে রয়েছে ১১ ইটভাটা। এসব ভাটার বিষাক্ত কালো ধোঁয়ায় বাড়ছে শ্বাসকষ্টসহ নানা রোখ। অন্যদিকে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে ফসলী জমি ও হাছগাছালীর। সররাবাদ গ্রামের পুরাতস ব্রহ্মপুত্র নদের তীরে পাশাপাশি স্থাপন করা এসব ভাটার অনুমোদ পেল কিভাবে সেটা নিয়ে রয়েছে জনমনে নানা প্রশ্ন। তাছাড়াও বেলাব উপজেলার পাটুলী ইউনিয়ন, আমলাব ইউনিয়ন ও বাজনাব ইউনিয়ন, বেলাব ইউনিয়নেও রয়েছে একাধিক ইটভাটা। এসব ভাটার বেশিরভাগই কাগজপত্রে গড়মিল।
তবে জেলা পরিবেশ অধিদপ্তর কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, সম্প্রতি তারা পরিবেশ দূষণ ও পরিবেশগত ছাড়পত্র না থাকায় সল্লাবাদ ইউনিয়নের সররাবাদ গ্রামে নির্মিত পিএসবি ব্রিকস ও ন্যাশনাল ব্রিকস নামে দুটি ভাটাকে তিন লক্ষ টাকা করে ছয় লক্ষ টাকা জরিমানা করেছেন। তবে সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে জরিমানা করা ওইসব ভাটায় নিয়মিত ইট পুড়ানো হয়।
জানা গেছে সররাবাদ এলাকার পুরাতন ব্রহ্মপুত্র নদের তীরের ফসলী জমির উপর পাশাপাশি রয়েছে বেশকিছু ইটভাটা। এর মধ্যে সচল রয়েছে ১১টি ভাটা। সচল থাকা এসব ইটভাটার মধ্যে বেশিরভাগ ইটভাটারই নেই কোন বৈধ কাগজপত্র। এসব ইটভাটার কারনে এ এলাকায় ফসলী জমিতে এখন আর ফসল ফলেনা। কৃষকরা জানান, যে জমিতে তারা চাষাবাদ করে জীবিকা নির্বাহ করতো সে জমি এখন ভাটা মালিকদের দখলে।
সররাবাদ এলাকার আবু ছালেহ রনি নামে এক যুবক জানান, এক মাঠে এতগুলো ইটভাটার অনুমোদন কিভাবে দিল। সেটা আমার বুঝে আসেনা। এসব ভাটার বিষাক্ত কারো ধোয়ার কারণে বয়স্ক মানুষ ও বাচ্চাদের শ্বাসকষ্ট রোগ দেখা দিয়েছে।
সরেজমিনে সল্লাবাদ ইউনিয়নের সররাবাদ ও ইব্রাহিমপুরের গ্রামে গিয়ে দেখা যায়,শুধু এই দুই গ্রামের তিনটি ওয়ার্ডেই গড়ে উঠেছে বেশকিছু ইটভাটা। এসব ইটভাটার মধ্যে সিক্সলাইন ব্রিকস, ভরসা ব্রিকস, জেএমবি ব্রিকস, ডিএমপি ব্রিকস, কেএমবি ব্রিকস, ন্যাশনাল ব্রিকস, পিএসবি ব্রিকস, এসআরবি ব্রিকস, আরএসবি ব্রিকস, এশিয়া ব্রিকস, বিবিবি ব্রিক ফিল্ডসহ মোট ১১টি ইট ভাটায় ইট পুড়ানো হচ্ছে নিয়মিত। ভাটাগুলো ব্রহ্মপুত্র নদের তীরে কয়েকশ একর ফসলী জমির উপর নির্মিত। একেকটা ইটভাটার গা ঘেষে আরেকটি ইটভাটা। এভাবেই ১১টি ভাটার অবস্থান। এসব ইটভাটার মধ্যে বেশিরভাগই পরিবেশ আইন লঙ্গন করে গড়ে উঠা। নদের তীরে ইটভাটা এলাকায় রয়েছে ইব্রাহিমপুর বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও ইব্রাহীমপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় নামে দুটি বিদ্যালয়সহ কয়েকশ বসতি। ভাটার আগুনে এসব ফসল গাছাগাছালীর ক্ষতিরসহ ভাটার বিষাক্ত ধোঁয়ায় শ্বাসকষ্টসহ নানা ব্যাধীতে আক্রান্ত হচ্ছে বয়স্ক মানুষ ও শিশুরা।
স্থানীয়দের অভিযোগ, জনবসতি ও ফসলি জমিতে ইটভাটা স্থাপনে নিষেধাজ্ঞা থাকলেও সব মহলকে ম্যানেজ করেই গড়ে তোলা হচ্ছে একের পর এক ইটভাটা। অথচ সংশ্লিষ্ট দপ্তরের এ ব্যাপারে নেই কোন মাথাব্যাথা।
আব্দুল ওহাব মিয়া নামে এক কৃষক জানান, ইটভাটাতে আসা ইছারমাতা নামক অবৈধ যানের কারনে গ্রামের চারপাশে ধুলাবালির আস্তরণ পড়ে। এই অবৈধ যান ইছারমাতা দিয়ে ভাটার মালিকরা ইট বিভিন্ন এলাকার গ্রাহকদের কাছে পৌছে দেয়। এসব যানের বিকট শব্দ ও আনাড়ি ড্রাইভার কারণে প্রায়ই ঘটে ছোটবড় দূঘর্টনা।
সররাবাদ এলাকার মেসার্স বিবিবি ব্রিক ফিল্ড এর স্বত্তাধিকারী মোঃ শাহ আলম বলেন, আমার ইটভাটার কাগজপত্র সঠিক আছে। আমার ভাটায় গাছ বা কাঠ পুড়িনা। ইছারমাতা ছাড়াতো আর ইট আনা নেওয়া করা যায়না। তাই ইছারমাতা ব্যবহার করি। পরিবেশ দূষনের ব্যাপারে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন ভাটার কারনে পরিবেশের তেমন ক্ষতি হচ্ছেনা।
নরসিংদী জেলা পরিবেশ অধিদপ্তরের ডিডি শেখ মোহাম্মদ নাজমুল হুদা বলেন, আমরা ইতিমধ্যে বেলাব উপজেলার সররাবাদ এলাকায় অভিযান চালিয়ে পরিবেশ দূষণ ও পরিবেশগত ছাড়পত্র না থাকাসহ বিভিন্ন কারণে দুটি ইটভাটাকে তিনলক্ষ টাকা করে ছয় লক্ষ টাকা জরিমানা করেছি। বাকিগুলোতেও আমরা পর্যায়ক্রমে পরিদর্শন করে যেগুলোর সমস্যা রয়েছে সেগুলোর ব্যাপারে ব্যবস্থা নিব।