আজঃ বৃহস্পতিবার ০৯ মে ২০২৪
শিরোনাম

তিনি ফিরে এলেন অন্ধকারে আলোর দিশারি হয়ে

প্রকাশিত:বুধবার ১৭ মে ২০২৩ | হালনাগাদ:বুধবার ১৭ মে ২০২৩ | অনলাইন সংস্করণ
শ ম রেজাউল করিম

Image

তিনি ফিরে এসেছেন দিকভ্রান্ত এক জাতির ক্যাপ্টেন হয়ে। ফিরে এসেছেন ঝঞ্ঝা-বিক্ষুব্ধ বৈরি সময়ে একমাত্র কান্ডারি হয়ে। এসেছেন অন্ধকারে আলোর দিশারি হয়ে। পিতা-মাতা, ভাই ও আত্মীয়-পরিজন হারিয়ে শোকে বিহ্বল থাকার সময়টুকুও তিনি পাননি। স্বদেশের মাটি ও মানুষের অমোঘ ডাক সেদিন উপেক্ষার উপায় জানা ছিল না তাঁর। দিনটি ছিল ১৭ মে ১৯৮১। রোববার। আর দশটি দিনের মতো রৌদ্রোজ্জ্বল ছিল না সে দিনটি। একদিকে ঝড়-বৃষ্টিতে বৈরী প্রকৃতি আর অপরদিকে স্বৈরশাসকের রক্তচক্ষু ও ঘৃণ্য ষড়যন্ত্র।

এসব কিছুই উপেক্ষা করে তিনি ফিরলেন বীরকন্যা হয়ে বাংলার মাটিতে। তিনি ইতিহাসের কালজয়ী মহামানবের কন্যা, তিনি বাঙালির মুক্তির মহানায়কের যোগ্য উত্তরসূরি। দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফোটানোর সংকল্পে তিনি অবিচল। প্রগাঢ় দেশপ্রেম আর নির্ভিক চিত্ত তাঁকে পরিণত করেছে দুর্গতদের কণ্ঠস্বরে। নির্যাতিত মানুষের অধিকারের প্রশ্নে তিনি আপসহীন। দৃঢ়তা, আত্মবিশ্বাস ও সাহসিকতায় তিনি অনন্য। তিনি শেখ হাসিনা।

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জ্যেষ্ঠ কন্যা সেদিন বাংলার মাটিতে ফিরে এসেছেন কোটি বাঙালির আশার প্রদীপ হয়ে। তিনি এসেছেন পিতার পথে পথ মিলিয়ে বাঙালি জাতিকে আলোর ঠিকানায় পৌঁছে দিতে। ১৭ মে ঢাকার কুর্মিটোলা বিমানবন্দর পরিণত হয়েছিল জনসমুদ্রে। কী ব্যাকুল প্রতীক্ষা মানুষের! ঠিক যেন বঙ্গবন্ধু ফিরছেন স্বদেশের মাটিতে। বঙ্গবন্ধু তনয়া শেখ হাসিনাকে শুধু একনজর দেখার জন্য ছুটে আসা জনতার কণ্ঠে সেদিন ধ্বনিত হচ্ছিল, জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু; ঝড়-বৃষ্টি আঁধার রাতে আমরা আছি তোমার সাথে; শেখ হাসিনার আগমন, শুভেচ্ছা স্বাগতম

দিশেহারা বাঙালির দীর্ঘ অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে ছয় বছরের নির্বাসন শেষে স্বদেশের মাটিতে পা রাখলেন শেখ হাসিনা। এদিন বিকেল সাড়ে ৪টায় ইন্ডিয়ান এয়ারলাইন্সের বিমানে ভারতের রাজধানী নয়াদিল্লি থেকে কলকাতা হয়ে ঢাকার কুর্মিটোলা বিমানবন্দরে এসে পৌঁছান। দেশের মানুষের ভালোাবাসায় আপ্লুত বঙ্গবন্ধু কন্যা সেদিন জনতার উদ্দেশে বলেছিলেন, সব হারিয়ে আমি আপনাদের মাঝে এসেছি, বঙ্গবন্ধুর নির্দেশিত পথে তাঁর আদর্শ বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে জাতির পিতার হত্যার প্রতিশোধ গ্রহণে আমি জীবন উৎসর্গ করতে চাই।

সেদিন তিনি আরও বলেছিলেন, আমার আর হারানোর কিছুই নেই। পিতা-মাতা, ভাই রাসেল সবাইকে হারিয়ে আমি আপনাদের কাছে এসেছি, আমি আপনাদের মাঝেই তাদের ফিরে পেতে চাই। তিনি সেদিন এও বলেছিলেন, আমি আওয়ামী লীগের নেত্রী হওয়ার জন্য আসিনি। আমি আপনাদের বোন হিসেবে, মেয়ে হিসেবে, বঙ্গবন্ধুর আদর্শে বিশ্বাসী কর্মী হিসেবে আপনাদের পাশে থাকতে চাই।

১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট ইতিহাসের নৃশংসতম হত্যাকাণ্ডের মাধ্যমে বঙ্গবন্ধুকে পরিবারের অধিকাংশ সদস্যসহ হত্যা করা হয়। বঙ্গবন্ধুর জ্যেষ্ঠ কন্যা শেখ হাসিনা তখন ছোট বোন শেখ রেহানা ও দুই সন্তানসহ স্বামীর কর্মস্থল পশ্চিম জার্মানিতে অবস্থান করছিলেন বিধায় তাঁরা প্রাণে বেঁচে যান। পশ্চিম জার্মানি থেকে সেই সময় ভারত সরকারের কাছে রাজনৈতিক আশ্রয় প্রার্থনা করেন শেখ হাসিনার স্বামী বিশিষ্ট পরমাণু বিজ্ঞানী এম এ ওয়াজেদ মিয়া।

২৫ আগস্ট সকালে এয়ার ইন্ডিয়ার ফ্লাইটযোগে দিল্লি পৌঁছান শেখ হাসিনা, শেখ রেহানা, ওয়াজেদ মিয়া এবং তাদের দুই সন্তান। বিমানবন্দর থেকে তাদের নিয়ে যাওয়া হয় দিল্লির ডিফেন্স কলোনির একটি বাসায়। সেখানে কারও সঙ্গে যোগাযোগ এবং পরিচয় না দেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছিল তাদের। শুরু হয় তাঁদের কঠিন নির্বাসিত জীবন।

পরে ১৯৮১ সালের ১৪, ১৫ ও ১৬ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত আওয়ামী লীগের জাতীয় সম্মেলনে শেখ হাসিনার অনুপস্থিতিতেই তাকে আওয়ামী লীগের সভাপতি নির্বাচিত করা হয়। দেশে গণতন্ত্র ও প্রগতিশীল রাজনীতি ফিরিয়ে আনা এবং মানুষের হৃত অধিকার প্রতিষ্ঠার শপথ নিয়ে দুই শিশুসন্তান সজীব ওয়াজেদ জয় এবং সায়মা ওয়াজেদ পুতুলকে ছোট বোন শেখ রেহানার কাছে রেখে দেশে ফেরেন বঙ্গবন্ধুর উত্তরাধিকার শেখ হাসিনা।

অথচ ভাগ্যের কী নির্মম পরিহাস! যার পিতা স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি ও দেশের প্রতিষ্ঠাতা রাষ্ট্রপতি, তাঁর স্বদেশে ফেরা ছিল কণ্টকাকীর্ণ। তবু জীবনের ঝুঁকি নিয়েই তিনি সেদিন দেশে ফিরেছিলেন মাটির টানে আর মানুষের মায়ায়। সে সময় ক্ষমতাসীন জিয়াউর রহমান ও তার দোসররা জাতির পিতার কন্যাকে দেশে ফিরতে বাধা দেওয়ার সব ধরনের চেষ্টাই করেছিল। এমনকি তাঁর দেশে ফেরা ঠেকাতে শেখ হাসিনার আগমন প্রতিরোধ কমিটি গঠন হয়েছে, কুরুচিপূর্ণ লিফলেট-পোস্টার বিতরণ করা হয়েছে। এতে অবশ্য বঙ্গবন্ধু কন্যার মনোবল এতটুকু টলানো যায়নি।

সাহসী সংকল্প আর জনগণের ভালোবাসায় সিক্ত বঙ্গবন্ধু কন্যা দেশে ফিরতে এতটুকু পিছপা হননি। তবে দেশে ফিরে এক বৃহৎ শূন্যতায় নিজেকে আবিষ্কার করলেন বঙ্গবন্ধু কন্যা। তাঁর ঘর নেই, ঘরের আপনজনও কেউ নেই। দেশে ফেরার আবেগসিক্ত প্রতিক্রিয়া বঙ্গবন্ধু কন্যা নিজের লেখা গ্রন্থে বর্ণনা করেছেন ঠিক এভাবে, আমার দুর্ভাগ্য, সব হারিয়ে আমি বাংলাদেশে ফিরেছিলাম। লক্ষ মানুষের স্নেহ-আশীর্বাদে আমি সিক্ত হই প্রতিনিয়ত। কিন্তু যাদের রেখে গিয়েছিলাম দেশ ছাড়ার সময়, আমার সেই অতি পরিচিত মুখগুলি আর দেখতে পাই না। হারানোর এক অসহ্য বেদনার ভার নিয়ে আমাকে দেশে ফিরতে হয়েছিল (ড. আবদুল মতিন চৌধুরী: আমার স্মৃতিতে ভাস্বর যে নাম, বাংলাদেশে স্বৈরতন্ত্রের জন্ম, পৃ: ৭৪)।

দেশে ফেরার পর জাতির পিতার কন্যার থাকার জায়গাটুকুও দেওয়া হয়নি। ধানমন্ডি ৩২ নম্বর সড়কের ৬৭৭ নম্বর বাড়িটি ছিল জিয়াউর রহমান সরকারের দখলে। ১৭ মে সন্ধ্যায় মানিক মিয়া অ্যাভিনিউয়ের জনসভা শেষে সে বাড়িতে থাকা দূরের কথা, শ্রদ্ধা নিবেদন ও মিলাদ পড়ার জন্য পর্যন্ত তাঁকে যেতে দেওয়া হয়নি। পরের দিনগুলো তাঁর কেটেছিল অনেকটা দুঃস্বপ্নের মতো। আজ এখানে তো কাল ওখানে। তবু দমে যাননি বঙ্গবন্ধু কন্যা। ১৯৮৩ সালের ২৪ মার্চ সামরিক শাসন জারির দুদিন পর স্বাধীনতা দিবসে একমাত্র শেখ হাসিনাই সাভার স্মৃতিসৌধে গিয়ে বলেছিলেন, আমি সামরিক শাসন মানি না, মানবো না। বাংলাদেশে সংসদীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত করবোই করবো

রাজনীতির হাতেখড়ি যার খুব ছোটবেলা থেকে, ছাত্ররাজনীতিতে যার বর্ণাঢ্য বিচরণ আর ধমনিতে যার বঙ্গবন্ধুর রক্ত, তিনি দেশে ফিরে রাজনীতির মূলধারা পুনঃপ্রতিষ্ঠায় মনোযোগী হলেন। লড়াই শুরু করলেন জনগণের ভাগ্য পরিবর্তনে। ১৯৯০ সাল পর্যন্ত টানা ৯ বছর রাজপথে স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনের নেতৃত্ব দিয়েছেন তিনি। নেতৃত্বের কোন্দল আর ষড়যন্ত্রে বিভাজিত দলের নেতাকর্মীদের ঐক্যবদ্ধ করার চ্যালেঞ্জেও তিনি সফল হয়েছেন। তাঁর নেতৃত্বেই ১৯৯১ সালের জাতীয় নির্বাচনে অংশ নেয় বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ।

পঞ্চম জাতীয় সংসদের বিরোধী দলের নেতা নির্বাচিত হন জননেত্রী শেখ হাসিনা। এসময় তিনি রাষ্ট্রপতিশাসিত সরকার ব্যবস্থা পরিবর্তন করে সংসদীয় গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। পরে ১৯৯৬ সালে অনুষ্ঠিত সপ্তম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তাঁর নেতৃত্বে বিপুল ভোটে জয় লাভ করে সরকার গঠন করে আওয়ামী লীগ। ২১ বছর পর পথ হারানো বাংলাদেশ আবার সঠিক পথে চলতে শুরু করে। প্রশাসন ও অন্য স্তরে তখন স্বাধীনতাবিরোধী ও আওয়ামী বিরোধীদের উপস্থিতি সুস্পষ্ট। এমন জঞ্জাল নিয়েই সরকারের দায়িত্ব নিতে হয় তাঁকে।

দক্ষ নেতৃত্ব ও রাজনৈতিক দূরদর্শিতায় তখন তিনি সব সামলে নেন। প্রধানমন্ত্রী হয়েই দীর্ঘদিন ধরে অমীমাংসিত গঙ্গা-পদ্মা নদীর পানি বণ্টনে ৩০ বছর মেয়াদি চুক্তি করেন। ১৯৯৭ সালে পার্বত্য শান্তি চুক্তি সম্পাদনের মাধ্যমে কয়েক দশকের চলমান চরম সংকট নিরসন করে পাবর্ত্য চট্টগ্রামে শান্তি প্রতিষ্ঠায় ঐতিহাসিক পদক্ষেপ নেন। তাঁর দূরদর্শী নেতৃত্বে ২০০৮, ২০১৪ এবং সর্বশেষ ২০১৮ সালের নির্বাচনে জয়লাভ করে সরকার গঠন করে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ।

সরকারের টানা তিন মেয়াদে বাংলাদেশকে শেখ হাসিনা বিশ্বের বুকে উন্নয়নের রোল মডেলে পরিণত করেছেন। তাঁর রাষ্ট্র পরিচালনার মুন্সিয়ানায় সামাজিক, অর্থনৈতিক, মানব উন্নয়নসহ প্রায় সব সূচকে পাকিস্তানকে অতিক্রমসহ অনেক সূচকে বিশ্বের অনেক দেশকে আমরা ছাড়িয়ে গেছি। মাথাপিছু আয়, রপ্তানি আয়, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে বাংলাদেশ পাকিস্তানের চেয়ে এগিয়ে। এটিই অভিজ্ঞ রাজনীতিক ও দূরদর্শী রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনার অনবদ্য সাফল্য। তাঁর মতো নেতৃত্ব পেয়েছি বলেই সব প্রতিকূলতা জয় করে আজ আমরা উন্নয়নশীল বিশ্বে পদার্পণ করছি।

উন্নত-সমৃদ্ধ স্মার্ট বাংলাদেশে বিনির্মাণের পথে দ্রুতলয়ে এগিয়ে যাচ্ছি। এ দেশের মানুষ আজ সংবিধানে বর্ণিত মৌলিক চাহিদা পূরণ করতে পারছেন। গৃহহীন ও আশ্রয়হীন মানুষ বিনামূল্যে ঘর পাচ্ছেন। মানুষের অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা ও চিকিৎসার নিশ্চয়তা বিধান করা সম্ভব হচ্ছে। বাংলাদেশ এখন বিশ্বের ৩৫তম বৃহৎ অর্থনীতির দেশ। বিশ্বের দ্রুত বর্ধনশীল দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম, যার মাথাপিছু জিডিপি আঞ্চলিক প্রতিবেশীর চেয়ে অনেক বেশি।

১৯৭১ সালে স্বাধীনতার পর থেকে বাংলাদেশের অর্থনীতি ৯ বিলিয়ন থেকে ৪৫০ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত হয়েছে, গড় আয়ু ৪৭ বছর থেকে বেড়েছে ৭৩ বছরে এবং সাক্ষরতার হার বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৭৫ শতাংশের বেশি। খাদ্য উৎপাদন, দারিদ্র্য হ্রাস, উন্নত স্বাস্থ্য, শিক্ষা, নারীর ক্ষমতায়ন, দুর্যোগ প্রশমনসহ আর্থ-সামাজিক খাতে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি লাভ করেছে বাংলাদেশ। এ সবকিছু সম্ভব হয়েছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনা ও পৃষ্ঠপোষকতায়।

স্বদেশে প্রত্যাবর্তনের পর একের পর এক চ্যালেঞ্জ জয় করে বীরদর্পে এগিয়ে গেছেন বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা। অন্তত ১৯ বার মৃত্যুর মুখোমুখি হয়েও দমে যাননি তিনি। সব বাধা-বিপত্তি আর দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্র পেছনে ফেলে শেখ হাসিনা অন্ধকার থেকে আলোর পথে অপ্রতিরোধ্য অগ্রযাত্রায় দেশকে শামিল করেছেন। যিনি বঙ্গবন্ধুর আদর্শের ধারক, লক্ষ্য যার মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় সমৃদ্ধ বাংলাদেশ বিনির্মাণ, তার গতি রোধ করার সাধ্য কারও নেই।

শেখ হাসিনা শত প্রতিকূলতার মুখোমুখি হয়েও অবিচল থেকেছেন, হযেছেন বিজয়ী। এটি বিশ্বের বিস্ময়। বঙ্গবন্ধুর খুনিদের বিচার, যুদ্ধাপরাধীদের বিচারসহ আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করতে গিয়ে জীবনের ঝুঁকিসহ দেশীয় ও আন্তর্জাতিক প্রতিকূল পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে হয়েছে তাঁকে। সংকট মোকাবিলায় শেখ হাসিনা গোটা বিশ্বে অনন্য নজির স্থাপন করেছে। শেখ হাসিনা আজ বিশ্ব পরিমণ্ডলে দুর্গতদের কণ্ঠস্বর, তিনি প্রাচ্যের নতুন তারকা, তিনি মানবতার জননী, তিনি বিশ্বের অন্যতম সৎ ও পরিশ্রমী প্রধানমন্ত্রী, তিনি বিশ্ব নেতৃত্বের কাছে অনুপ্রেরণাদায়ী, অনুসরণীয়। একই সাথে বাংলাদেশে এবং বিশ্ব পরিমণ্ডলে তিনি অনিবার্য।

জাতির পিতাকে নির্মমভাবে হত্যার পর শেখ হাসিনা স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের মাধ্যমে বাংলাদেশকে পুনর্জন্ম দিয়েছেন। তিনি ফিরে এসে বাঙালি জাতির মুক্তির স্বপ্ন যেমন দেখেছেন, তেমনি বাঙালিকে মুক্তির স্বপ্ন দেখা শিখিয়েছেন। তাঁর আন্দোলন-সংগ্রামের দীর্ঘ ধারাবাহিকতায় স্বৈরতন্ত্রের অবসান শেষে বাংলাদেশে সংসদীয় গণতন্ত্রের পুনঃপ্রবর্তন হয়েছে।

তিনি এসেছিলেন বলেই মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বাংলাদেশ পুনরায় প্রতিষ্ঠা হয়েছে; স্বাধীনতাবিরোধী ও যুদ্ধাপরাধীদের দর্প চূর্ণ হয়েছে। তাঁর মতো অকুতোভয় রাজনীতিক ও মানবিক রাষ্ট্রনায়ক বিশ্বে বিরল। নীতি ও আদর্শে বঙ্গবন্ধুর মতোই দৃঢ় ও সাহসী রাজনীতিক শেখ হাসিনা দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন এবং সব শ্রেণি-পেশার মানুষের কল্যাণে অসামান্য অবদান রেখে চলেছেন।

উন্নত, আধুনিক, সমৃদ্ধ ও অসাম্প্রদায়িক রাষ্ট্র গঠনে বঙ্গবন্ধু কন্যা দৃঢ়চিত্তে এগিয়ে যাচ্ছেন। দীর্ঘ প্রায় ৪২ বছর দলের প্রধান এবং ২০ বছর দেশের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করা বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা স্বদেশে না ফিরলে বাঙালি ও বাংলাদেশের ইতিহাস অন্যভাবে লেখা হতো। একজন শেখ হাসিনার স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের গল্প তাই এভাবেই লেখা যায়, অতঃপর তিনি এলেন/তিনি এলেন পিতার পথে পথ মিলিয়ে/আলোর পথ খুঁজে দিতে/তিনি এলেন/রুদ্ধ শেকল ভেঙে, গলিয়ে/জাতিকে আপন করে পেতে।

লেখক: শ ম রেজাউল করিম এমপি

মন্ত্রী , মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় ।


আরও খবর



জয়পুরহাটে আবু সালাম হত্যা মামলায় তিনজনের মৃত্যুদণ্ড

প্রকাশিত:মঙ্গলবার ০৭ মে ২০২৪ | হালনাগাদ:মঙ্গলবার ০৭ মে ২০২৪ | অনলাইন সংস্করণ
সুজন কুমার মন্ডল, জয়পুরহাট

Image

জয়পুরহাটে ভ্যানচালক হত্যা মামলায় তিনজনকে ফাঁসির আদেশ দিয়েছে। মঙ্গলবার (৭ মে ) দুপুরে অতিরিক্ত দায়রা জজ ১ম আদালতের বিচারক নুরুল ইসলাম এ রায় দেন। রায় শুনে আসামী পক্ষ অজ্ঞান হয়ে পড়লে জয়পুরহাট জেলা আধুনিক হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে আসামিদের কারাগারে প্রেরণ করা হয়েছে৷

মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্তরা হলেন, জেলার কালাই উপজেলার আওড়া গ্রামের জাহাঙ্গীরের ছেলে হারুন অর রশিদ, মোসলেমের ছেলে মোস্তাক ও জসিমের ছেলে হাফিজার। এদের মধ্যে হারুন অর রশিদ পলাতক রয়েছেন।

আদালত সূত্রে জানা গেছে, জয়পুরহাট সদর উপজেলার দুর্গাদহ এলাকার ভ্যানচালক আবু সালামকে আসামীরা শ্বাসরোধে হত্যা করে কালাই পৌরসভার আওড়া এলাকার একটি পারিবার পুরাতন কবরে লাশ লুকিয়ে রেখে ভ্যান ছিনতাই করে নিয়ে যায়। ২০০৫ সালের ১৩ জানুয়ারি দুপুরে স্থানীয়রা ওই কবরে জীবজন্তু খাওয়া অবস্থায় তার লাশের পা দেখতে পান। পরে পুলিশকে খবর দিলে পুলিশ গিয়ে মরদেহ উদ্ধার করে মর্গে পাঠায়। এ ঘটনায় কালাই থানার তৎকালীন পরিদর্শক মির্জা মোঃ শাহাজাহান আলী বাদী হয়ে একটি মামলা দায়ের করেন। এ মামলার দীর্ঘ শুনানি শেষে বিজ্ঞ আদালত আজ এ রায় দেন।


আরও খবর



বজ্রপাতে তিন জেলায় ৬ জনের মৃত্যু

প্রকাশিত:বৃহস্পতিবার ০২ মে 2০২4 | হালনাগাদ:বৃহস্পতিবার ০২ মে 2০২4 | অনলাইন সংস্করণ
চট্টগ্রাম প্রতিনিধি

Image

দেশের তিন জেলায় বজ্রপাতে নারীসহ ৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে কক্সবাজারে দুই, রাঙামাটিতে তিন এবং খাগড়াছড়িতে একজনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। বৃহস্পতিবার (২ মে) ভোর থেকে দুপুর পর্যন্ত এসব ঘটনা ঘটে।

কক্সবাজার: কক্সবাজারের পেকুয়া উপজেলার দুই ইউনিয়নে বৃষ্টি থেকে লবণ রক্ষা করতে গিয়ে বজ্রপাতে দুই চাষির মৃত্যু হয়েছে।

নিহতরা হলেন- উপজেলার মগনামা ইউনিয়নের কোদাইল্লাদিয়া এলাকার জমির হোসেনের ছেলে মো. দিদার হোসেন (২৫) এবং রাজাখালী ইউনিয়নের ছড়িপাড়ার জামাল উদ্দিনের ছেলে আরাফাতুর রহমান (১৩)।

স্থানীয়দের বরাতে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. সাইফুল ইসলাম জয় বলেন, ভোর থেকে পেকুয়ায় থেমে থেমে বজ্রপাতসহ গুড়ি গুড়ি বৃষ্টিপাত শুরু হয়। এ সময় বৃষ্টি থেকে রক্ষা করতে মাঠে থাকা লবণ পলিথিনে ঢেকে রাখতে যান দিদার হোসেনসহ পরিবারের আরও ২-৩ জন। এক পর্যায়ে বজ্রপাতে ঘটনাস্থলেই মারা যান দিদার।

তিনি বলেন, প্রায় একই সময়ে রাজাখালী ইউনিয়নের ছড়িপাড়ায় পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে নিয়ে বৃষ্টি থেকে লবণ রক্ষা করতে গিয়ে করতে গিয়েছিল কিশোর আরাফাতুর রহমান। তিনিও একইভাবে বজ্রপাতে প্রাণ হারিয়েছেন। মৃতদের লাশ স্বজনরা বাড়ি নিয়ে গেছে বলেও জানান পেকুয়ার ইউএনও।

রাঙামাটি: রাঙামাটির সদর ও বাঘাইছড়ি উপজেলায় বজ্রপাতে তিনজনের মৃত্যু হয়েছে; এ সময় আরো অন্তত সাতজন আহত হয়েছেন।

নিহতরা হলেন- শহরের সিলেটি পাড়ার বাসিন্দা মো. নজির (৫০) এবং বাঘাইছড়ি উপজেলার রূপাকারী ইউনিয়নের মুসলিম ব্লক এলাকার বাসিন্দা বাহারজান বেগম (৫৫) এবং সাজেকের লংথিয়ান পাড়ার তনিবালা ত্রিপুরা (৩৭)।

রূপকারী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জ্যাসমিন চাকমা বলেন, ইউনিয়নের ৭নম্বর ওয়ার্ডের মুসলিম ব্লক এলাকার লাল মিয়ার স্ত্রী বাহারজান বেগম গরু আনতে গিয়ে বজ্রপাতে মারা যান।

বাঘাইছড়ি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শিরীন আক্তার বলেন, অনেক দিন পর আজ সকালে বজ্রপাতসহ বৃষ্টি হয়। এতে রূপাকারী ইউনিয়নে বাহারজান নামে একজন এবং সাজেকে তনিবালা ত্রিপুরা নামের আরেক নারী নিহত হয়।

উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে নিহতদের পরিবারকে ১০ হাজার টাকা করে আর্থিক সহায়তা দেওয়া হয়েছে বলে জানান ইউএনও।

তিনি বলেন, এ ছাড়া সকাল সাড়ে ৯টার দিকে উপজেলার একটি চায়ের দোকানে বসে আড্ডা দেয়ার সময় বজ্রপাতে সাতজন আহত হয়েছেন।

রাঙামাটি জেনারেল হাসপাতালের চিকিৎসক শওকত আকবর বলেন, সকালে শহরের সিলেটি পাড়া থেকে নজিরকে হাসপাতালে আনা হয়। তিনি বজ্রপাতে নিহত হয়েছেন।

খাগড়াছড়ি: খাগড়াছড়ির মাটিরাঙ্গা উপজেলায় বৃষ্টির মধ্যে আম কুড়াতে গিয়ে বজ্রপাতে এক কিশোরের মৃত্যু হয়েছে। নিহত ইয়াছিন আরাফাত উপজেলার বড়নাল ইউনিয়নের ৯নম্বর ওয়ার্ডের ইব্রাহিম পাড়ার বাসিন্দা ইউসুফ মিয়ার ছেলে।

স্বজনদের বরাতে বড়নাল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ ইলিয়াস হোসেন বলেন, বৃষ্টির সময় উঠানের পাশেই আম কুড়াতে যায় দুই ভাই। এ সময় আকস্মিক বজ্রপাতে ছোট ভাই প্রাণে বেঁচে গেলেও বড় ভাই ইয়াছিন আরাফাত ঘটনাস্থলেই মারা যায়।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ডেজী চক্রবর্তী বলেন, নিহতের পরিবারকে আর্থিক সহায়তা দেওয়া হবে।

নিউজ ট্যাগ: বজ্রপাতে মৃত্যু

আরও খবর



সুন্দরবনের আগুন নিয়ন্ত্রণে, ধোঁয়া দেখলেই পানি স্প্রে

প্রকাশিত:সোমবার ০৬ মে ২০২৪ | হালনাগাদ:সোমবার ০৬ মে ২০২৪ | অনলাইন সংস্করণ
বাগেরহাট প্রতিনিধি

Image

পূর্ব সুন্দরবনের চাঁদপাই রেঞ্জের আমুরবুনিয়া এলাকায় লাগা আগুন নেভানোর কাজ দ্বিতীয় দিনের মতো শুরু হয়েছে। সকাল ৭টা থেকে আগুন নেভানোর কাজ করছেন বনবিভাগ, নৌবাহিনী ও ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা। আগুন নেভানোর কাজে সহায়তা করছেন স্থানীয় বাসিন্দারাও। এখন শুধুমাত্র কোথা থেকে সামান্য ধোঁয়া বের হলে ওই স্থানটি দেখা হচ্ছে।

সোমবার (৬ মে) সকাল ৮টায় বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন সুন্দরবন পূর্ব বনবিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা কাজী মো. নুরুল করিম।

এদিকে সুন্দরবন পূর্ব বনবিভাগের চাঁদপাই রেঞ্জ সহকারী বনসংরক্ষক রানা দেব জানান, গত রাত ১টা পর্যন্ত বনবিভাগ এককভাবে আগুন নেভাতে পাম্প মেশিন দিয়ে পানি স্প্রে করেছে। এর ফলে এখন আর কোথাও তেমন একটা আগুন দেখা যাচ্ছে না। যেখানে ধোঁয়া দেখা যাচ্ছে সেখানেই পানি দেওয়া হচ্ছে। নিয়ন্ত্রিত আগুন পুরোপুরি নেভাতে সোমবার সকাল ৭টা থেকে বনবিভাগের সহায়তায় কাজ শুরু করেছেন নৌবাহিনী ও ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা। আগামী আরও দুইদিন পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে রেখে পানি ছিটানো হবে। তবে আপাতত আর ভয়ের কোনো কারণ নেই। কারণ, আগুন যাতে আর ছড়াতে না পারে সেজন্য রোববার ফায়ার লাইন কেটে সেখানে পানি দিয়ে রাখা হয়েছে। আর আগুনের অস্তিত্ব তেমন একটা নেই, শুধু কিছু কিছু জায়গায় ধোঁয়া রয়েছে।

রোববার (৫ মে) বিকেলে প্রধান বনসংরক্ষক আমির হোসেন চৌধুরী ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে সন্ধ্যায় বন কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ২০ সদস্যের সমন্বয়ে পৃথক ২টি টিম করে দেন। আর তারই পরামর্শে রাতে আগুন নেভাতে পানি স্প্রে করে বনবিভাগ। কারণ, রাতে আগুন ভালো দেখা যায়, তাই আগুন দেখে দেখে পানি দেওয়ায় রাতেই আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে।

উল্লেখ্য, শনিবার (৪ মে) দুপুরে সুন্দরবনের আমরবুনিয়ার লতিফের ছিলা এলাকায় আকস্মিক এ আগুন লাগে।

নিউজ ট্যাগ: সুন্দরবনে আগুন

আরও খবর



সারাদেশে আন্তর্জাতিক শব্দসচেতনতা দিবস পালিত

প্রকাশিত:বুধবার ২৪ এপ্রিল 20২৪ | হালনাগাদ:বুধবার ২৪ এপ্রিল 20২৪ | অনলাইন সংস্করণ
দর্পণ নিউজ ডেস্ক

Image

দেশের ৬৪ জেলায় শব্দ দূষণবিরোধী অভিযানের মধ্য দিয়ে পালিত হলো আন্তর্জাতিক শব্দসচেতনতা দিবস। দিবসটি উদযাপনের অংশ হিসেবে পরিবেশ অধিদফতর জেলা প্রশাসনের সহযোগিতায় সারা দেশে একযোগে শব্দদূষণ নিয়ন্ত্রণে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করেছে।

প্রতি বছরের মতো এবারও এপ্রিল মাসের শেষ বুধবার (২৪ এপ্রিল) আন্তর্জাতিক শব্দ সচেতনতা দিবস পালন করা হয়েছে। আসুন সবাই শব্দদূষণ হ্রাসে সচেষ্ট হই এই প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে এবার দিবসটিতে নানা কর্মসূচি হাতে নিয়েছে পরিবেশ অধিদফতর।

দিবসটি উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভায় বক্তারা শব্দদূষণ নিয়ন্ত্রণে আইনের কঠোর প্রয়োগের পাশাপাশি নাগরিকদেও দায়িত্বশীলতা ও সচেতনতার উপর গুরুত্বারোপ করেন।

এছাড়াও দিবসটি উপলক্ষে দেশের প্রথম সারির বাংলা ও ইংরেজী জাতীয় দৈনিকে দিবসের গুরুত্ব তুলে ধরে সচেতনতামূলক রঙিন গণবিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়েছে। রাজধানী ঢাকা শহরের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানে জনসচেতনতামূলক ব্যানার ও ফেস্টুন টানানো হয়েছে। সরকারি সকল ওয়েবসাইটে পপ-আপ প্রদর্শন করা হয়েছে ও বিটিআরসির সহযোগিতায় সকল সেল ফোনে সচেতনতামূলক বার্তা প্রেরণ করা হয়েছে।


আরও খবর



জলবায়ু পরিবর্তনের মূল আঘাত যাচ্ছে এশিয়ার ওপর দিয়ে: জাতিসংঘ

প্রকাশিত:বুধবার ২৪ এপ্রিল 20২৪ | হালনাগাদ:বুধবার ২৪ এপ্রিল 20২৪ | অনলাইন সংস্করণ
আন্তর্জাতিক ডেস্ক

Image

জলবায়ু পরিবর্তনজনিত বিভিন্ন দুর্যোগের কারণে ২০২৩ সালে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এশিয়া মহাদেশভুক্ত দেশগুলো। জাতিসংঘের বৈশ্বিক আবহাওয়া ও জলবায়ু নিরাপত্তা বিষয়ক সংস্থা ওয়ার্ল্ড মেটেরোলজিক্যাল অর্গানাইজেশনের (ডব্লিউএমও) এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে এ তথ্য।

ডব্লিউএমও’র মতে, অন্যান্য মহাদেশের চেয়ে এশিয়ায় বৈশ্বিক উষ্ণায়নের প্রভাব পড়েছে বেশি। এ কারণে এই মহাদেশের তাপমাত্রাও বাড়ছে। ১৯৯১ সালের তুলনায় ২০২৩ সালে এশিয়ার গড় তাপমাত্রা বেড়েছে ১ দশমিক ৮৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এমনকি ২০২০ সালের তুলনায় গত বছর এশিয়ার গড় তাপমাত্রা ছিল দশমিক ৯১ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেশি।

গড় তাপমাত্রা বৃদ্ধি এবং সাম্প্রতিক বছরগুলোতে টানা ও দীর্ঘ তাপপ্রবাহে এক দিকে এশিয়ার পার্বত্য অঞ্চলের হিমবাহগুলো গলে যাচ্ছে, অন্য দিকে জলাশয়গুলো শুকিয়ে যাচ্ছে— যা অদূর ভবিষ্যতে এই অঞ্চলের পানির নিরাপত্তা ক্ষেত্রে ব্যাপক সংকট সৃষ্টি করবে বলে উল্লেখ করা হয়েছে ডব্লিউএমও’র প্রতিবেদনে।

মঙ্গলবার প্রতিবেদন প্রকাশের পর এক বিবৃতিতে ডব্লিউএমওর শীর্ষ নির্বাহী কেলেস্টে সাউলো বলেন, এশিয়ার অধিকাংশ দেশের ইতিহাসে ২০২৩ সাল ছিল উষ্ণতম বছর। বিশ্বে খরা, তাপপ্রবাহ, ঝড়, বন্যার মতো যত বিপর্যয় ঘটেছে, সেসবের অধিকাংশই ঘটেছে এশিয়ার বিভিন্ন দেশে। জলবায়ু পরিবর্তনের গভীর প্রভাব ইতোমধ্যে জনজীবন ও পরিবেশের পাশাপাশি বিভিন্ন দেশের সমাজ ব্যবস্থা, অর্থনীতিতেও পরিলক্ষিত হচ্ছে। যদি তাপমাত্রা বৃদ্ধি, হিমবাহ গলে যাওয়া এবং সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি অব্যাহত থাকে, তাহলে অদূর ভবিষ্যতে এই প্রভাব আরও ব্যাপক হবে।’

ডব্লিউেএমও’র তথ্য অনুয়ায়ী, তাপমাত্রা বাড়ছে সাইবেরিয়া থেকে মধ্য এশিয়া, পূর্ব চীন থেকে জাপান পর্যন্ত। জাপানের ইতিহাসে উষ্ণতম বছর ছিল ২০২৩ সাল। একই সঙ্গে এ সময় প্রশান্ত মহাসাগরের উত্তর পশ্চিমাঞ্চল অর্থাৎ এশীয় অংশের তাপমাত্রা ছিল সর্বোচ্চ।

গড় তাপমাত্রা বৃদ্ধির জেরে এশিয়ার হিমালয় পবর্তমালা এবং এই পর্বতমালার হিন্দুকুশ ও তিব্বত রেঞ্জের ২২ টি হিমবাহের মধ্যে অন্তত ২০টির বরফের মজুত ২০২৩ সালে ব্যাপকভাবে হ্রাস পেয়েছে।

তাপমাত্রা বৃদ্ধির পাশাপাশি জলসৃষ্ট দুর্যোগও মোকাবিলা করতে হচ্ছে এশিয়াকে। ২০২৩ সালে এশিয়ায় বড় আকারের ঝড়, বন্যা ও তুমুল বর্ষণের ঘটনা ঘটেছে অন্তত ৭৯টি। এতে প্রাণ হারিয়েছেন ২ হাজারেরও বেশি মানুষ এবং সরাসরি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন অন্তত ৯০ লাখ।

জলবায়ু পরিবর্তন ও প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলায় এশিয়ার দেশগুলোর আবহাওয়া কর্মীদের যথাযথ প্রশিক্ষণ এবং গ্রীন হাউস গ্যাসের নির্গমণ হ্রাসে জোর দেওয়া হয়েছে ডব্লিউএমওর প্রতিবেদনে।

এ প্রসঙ্গে বলা হয়েছে, আবহাওয়া কর্মীদের প্রশিক্ষণ ও দক্ষতা জলবায়ু পরিবর্তনজনিত ক্ষয়ক্ষতি কমাতে খানিকটা হলেও সহায়তা করবে। তবে গ্রিনহাউস গ্যাসের নির্গমণ কমানোর কোনো বিকল্প নেই। এই মুহূর্তে গ্রিন হাউস গ্যাসের নির্গমণ হ্রাস কেবল একটি বিকল্প নয়, বরং জরুরি কর্তব্য।’


আরও খবর