উদ্বোধনের পর প্রথমদিনে অনলাইনের মাধ্যমে সর্বজনীন পেনশনে নাম অন্তর্ভুক্ত করেছেন এক হাজার ৬৬৬ জন। আর এ থেকে পেনশন ফান্ডে জমা হওয়া অর্থের পরিমাণ ৮৭ লাখ টাকার বেশি। এ ছাড়া নিবন্ধনের জন্য ওয়েবসাইট ভিজিট করেছেন ১১ হাজারের বেশি গ্রাহক।
সাপ্তাহিক ছুটির দিন শুক্রবারও সারাদেশ থেকে বিপুলসংখ্যক মানুষ সর্বজনীন পেনশনে নাম নিবন্ধন করেছেন। অনেকে টাকা দিয়ে চূড়ান্তভাবে সর্বজনীন পেনশনে অন্তর্ভুক্ত হয়ে গেছেন। অর্থবিভাগ বলছে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উদ্বোধনের পর থেকে ব্যাপক সাড়া পাওয়া যাচ্ছে। ঘণ্টায় ঘণ্টায় নাম নিবন্ধন করে গ্রাহকরা পেনশন ফান্ডে টাকা জমা দিচ্ছেন।
‘ইউপেনশন’ নামে ওয়েবসাইটের মাধ্যমে বৃহস্পতিবার থেকে যে কেউ পেনশন কর্মসূচিতে অন্তর্ভুক্ত হতে পারছেন। পেনশন কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করতে হলে নিবন্ধনের কাজটি করতে হবে পেনশন কর্তৃপক্ষের ওয়েবসাইটে (www.upension.gov.bd) গিয়ে। পেনশন স্কিমগুলো সম্পর্কে প্রাথমিক তথ্য সেখানে দেওয়া আছে। অনলাইনে নির্ধারিত ফরম পূরণ করে আবেদন করলে আবেদনকারীর অনুকূলে একটি ইউনিক আইডি নম্বর দেওয়া হচ্ছে। তবে যারা অনলাইনের মাধ্যমে টাকা জমা দিচ্ছেন কেবল তারাই আপাতত ইউনিক আইডি নম্বর পাচ্ছেন। গ্রাহকদের সুবিধার্থে অনলাইন সিস্টেমটি আরও আপগ্রেড করার চিন্তাভাবনা করা হচ্ছে। অনেকে ওয়েবসাইটে ঢুকে বিড়ম্বনার মুখোমুখি হচ্ছেন বলে জানা গেছে।
এ কারণে ওয়েবসাইট আরও অত্যাধুনিক করা হতে পারে। পুরো বিষয়টির দিকে নজর রাখছে অর্থবিভাগ। এ প্রসঙ্গে অর্থবিভাগের অতিরিক্ত সচিব মো. গোলাম মোস্তফা বলেন, প্রথমদিনেই ব্যাপক সাড়া পাওয়া গেছে। কয়েক ঘণ্টার মধ্যে ১ হাজার ৬৬৬ জন গ্রাহক নাম নিবন্ধন করে ৮৭ লাখ টাকার বেশি জমা দিয়েছেন। শুক্রবার পর্যন্ত এ ফান্ডের টাকার পরিমাণ কোটি টাকা ছাড়িয়ে গেছে। বোঝা যাচ্ছে, পেনশন স্কিমে সাধারণ গ্রাহকরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশগ্রহণ করছেন।
তিনি বলেন, টার্গেট গ্রুপকে পেনশনে অন্তর্ভুক্ত করতে সরকারিভাবে আরও বেশকিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে। শুধু তাই নয়, মানুষ ঘরে বসে যাতে পেনশন কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করতে পারেন সেলক্ষ্যে অনলাইন সিস্টেমটি প্রয়োজনে অত্যাধুনিক করা হবে। এখন পর্যন্ত সেরকম কোনো অভিযোগ পাওয়া যায়নি। তবে পুরো বিষয়টির দিকে নজর রাখা হচ্ছে। নাম নিবন্ধন করে দেশের সাধারণ মানুষ পেনশন কর্মসূচিতে অন্তর্ভুক্ত হবেন। পেনশন কর্মসূচিতে যুক্ত হয়ে যে কারো লাভবান হওয়ার সুযোগ রয়েছে। সরকার নিজে এর গ্যারান্টার হচ্ছেন। এ ছাড়া পুরো বিষয়টি সরকারিভাবে পরিচালনা ও নিয়ন্ত্রণ করা হবে। এ কারণে এটা নিয়ে কারো দ্বিধা বা সংকোচ থাকার কথা নয়।
তিনি আরও বলেন, আমরা যে ইউনিক নাম্বার দেব প্রত্যেক পেনশনারকে, তারা কিন্তু ওই নাম্বার দিয়ে সবসময় চেক করতে পারবেন তার অ্যাকাউন্টে কত টাকা আছে। পেনশনারগণ আজীবন অর্থাৎ মৃত্যুর আগ পর্যন্ত পেনশন সুবিধা ভোগ করতে পারবেন। জানা গেছে, আপাতত শুধু সোনালী ব্যাংকে সর্বজনীন পেনশন স্কিমের হিসাব খোলা হয়েছে। কেউ চাইলে সরাসরি সোনালী ব্যাংকে গিয়েও নিবন্ধন করতে পারবেন ও চাঁদা দিতে পারবেন। তবে শীঘ্রই দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কম্পিউটার সার্ভিসের দোকানগুলোতেও পেনশন আবেদনের নিবন্ধন ফরম পূরণ সংক্রান্ত কার্যক্রম শুরু করা হবে। এ ছাড়া মোবাইল ফোনের মাধ্যমে পেনশন স্কিমে নাম নিবন্ধন করতে পারবেন একজন গ্রাহক।
লাভজনক অবকাঠামোখাতে পেনশন ফান্ডের টাকা বিনিয়োগ হবে॥ অর্থ মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, পেনশন তহবিলের সঠিক ব্যবহার ও বিনিয়োগে খুব শীঘ্রই ‘পেনশন ফান্ড ম্যানেজমেন্ট অথরিটি’ গঠন করা হবে। এই অথরিটি দেশের লাভজনক বড় বড় অবকাঠামোতে পেনশন তহবিলের টাকা বিনিয়োগ করবেন। এতে করে পেনশনাররা লাভবান হওয়ার পাশাপাশি দেশের অবকাঠামো খাতে বিনিয়োগে বিপুল পরিমাণ অর্থ পাওয়া যাবে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অর্থ মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা জনকণ্ঠকে জানান, দেশের বৃহত্তম অবকাঠামো পদ্মা সেতু নিজস্ব অর্থায়নে করা হয়েছে। ইতোমধ্যে পদ্মা সেতু থেকে রেভিনিউ বা রাজস্ব পাচ্ছে সরকার। ঠিক এ ধরনের লাভজনক বড় বড় প্রকল্পে পেনশন তহবিলের টাকা ব্যবহার করা হবে। যেখান থেকে মুনাফা পাওয়া যাবে। সর্বজনীন পেনশন ফান্ডে অর্থায়ন করতে সম্পৃক্ত হবে ব্যাংক ও বিমা খাতও।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন বর্তমান সরকারের পক্ষ থেকে এটি একটি যুগান্তকারী ও ঐতিহাসিক পদক্ষেপ দেশের মানুষের জন্য। সমাজের বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের কথা বিবেচনায় নিয়ে সর্বজনীন পেনশন কর্মসূচি চালু করা হয়েছে। আপাতত চার শ্রেণির জনগোষ্ঠীর জন্য চার ধরনের পেনশন কর্মসূচি চালু করা হয়েছে। এসব স্কিমে যুক্ত হয়ে বেসরকারি খাতের কর্মচারী বা প্রবাসীরা তাদের মোট চাঁদার চেয়ে সর্বনিম্ন ২ দশমিক ৩০ গুণ থেকে সর্বোচ্চ ১২ দশমিক ৩১ গুণ অর্থ পেনশন হিসেবে পাবেন।
সর্বজনীন পেনশন স্কিমের গ্রাহকদের প্রিমিয়াম ট্রেজারি বিল, আর্থিকভাবে শক্তিশালী বাণিজ্যিক ব্যাংক ও লাভজনক অবকাঠামোয় বিনিয়োগের পরিকল্পনা করছে ন্যাশনাল পেনশন অথরিটি (এনপিএ)। এ ছাড়া পেনশন ফান্ডের টাকা ট্রেজারি বিল ও বন্ডে বিনিয়োগের কথা ভাবছে এনপিএ। এই ২ খাতে সুদের হার প্রায় ৮ থেকে ৮ দশমিক ৫ শতাংশ। যেহেতু বাংলাদেশ ব্যাংক সব ঋণের ওপর থেকে সীমা তুলে নিয়েছে, তাই সুনাম থাকা ব্যাংকগুলোর ফিক্সড ডিপোজিটে বিনিয়োগ করলে ভালো রিটার্ন পাওয়া যাবে। পাশাপাশি লাভজনক প্রকল্পগুলোয় বিনিয়োগ করা হলে সেখান থেকে ভালো পরিমাণে মুনাফা আসতে পারে বলে মনে করছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। পেনশন ব্যবস্থাটি যাতে সারাদেশের মানুষের মধ্যে ব্যাপক সাড়া ফেলে সেলক্ষ্যে ডিজিটাইল ক্যাম্পেন করা হবে।
ভবিষ্যতে সরকারি চাকরিজীবীদের অংশগ্রহণের সুযোগ থাকবে॥ ভবিষ্যতে সরকারি কর্মকর্র্তা ও কর্মচারীরা সর্বজনীন পেনশন কর্মসূচিতে আসতে পারবেন। অর্থ মন্ত্রণালয় বিজ্ঞপ্তি দিয়ে বলেছে, সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত ও রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠানের কর্মচারীদেরও সুবিধামতো সময়ে সর্বজনীন পেনশনের আওতায় আনা হবে। এ বিষয়ে সরকার সুবিধামতো সময়ে সিদ্ধান্ত নিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করবে। অর্থ বিভাগের সূত্রগুলো জানায়, যে দুটি স্কিম পরে চালু করা হবে, তার মধ্যে রয়েছে শ্রমিক শ্রেণির জন্য একটি, শিক্ষার্থীদের জন্য অন্যটি। চাঁদাদাতা তার পেনশন আইডি দিয়ে ইউনিভার্সাল পেনশন সিস্টেমে প্রবেশ করে সহজেই বছর শেষে মুনাফাসহ জমা হওয়া টাকার পরিমাণ সম্পর্কিত তথ্য জানতে পারবেন। চাঁদাদাতার বয়স ৬০ বছর হওয়ার পর তার ব্যাংক হিসাবে অথবা মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিসের মাধ্যমে মাসিক পেনশন দেওয়া হবে।