চলছে সড়ক উন্নয়নের কাজ। উন্নয়নের পাশাপাশি সড়কের গাছ কেটে হরিলুটের রমরমা ফন্দি এটেছিলেন চেয়ারম্যান ও তার লোকজন। এমন সময় হঠাৎ ঘটনাস্থলে হাজির সদর উপজেলা ইউএনও। সমস্ত গাছ জব্দ করে ইউনিয়ন পরিষদ নেয়ার নির্দেশ ও সাময়িকভাবে সড়কের কাজ বন্ধ ঘোষণা করলেন। ঘটনাটি ঘটেছে ঠাকুরগাঁওয়ের বড়গাঁও ইউনিয়নের ভুল্লি-ফাড়াবাড়ির সড়কে।
শনিবার (১৬ মার্চ) বিকালে অবৈধভাবে সরকারি গাছ কাটার খবর পেয়ে সরজমিনে গিয়ে ইউএনও বেলায়েত হোসেন কথা বলেন গাছ কাটা শ্রমিক ও স্থানীয়দের সঙ্গে। তারা জানান, বড়গাঁও ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ফয়জুর রহমানোর নির্দেশে গাছগুলো কর্তন করা হচ্ছে। এ সময় শ্রমিকরা জানান, প্রায় দুই শতাধিক গাছ কেটে ফেলা হয়েছে। গাছ কাটার মজুরি চেয়ারম্যান দেবেন বলেও জানান শ্রমিকরা।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, সড়কের পাশে সরকারি জমিতে চুক্তিভিত্তিক গাছ রোপনের পর তা ৩০ বছর ধরে পরিচর্যা করে আসছেন স্থানীয় কয়েকজন উপকারভোগী নারী। ভুল্লি বড়গাঁও থেকে ফারাবাড়ি প্রায় ৮ কিলোমিটার এ সড়কে ১৯৯২ সালে গাছ লাগানো প্রকল্পের আওতায় প্রথম পক্ষ ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলা পরিষদ, দ্বিতীয় পক্ষ অরগানাইজেশন ফর রুরাল ডেভলপমেন্ট (ওআরডি) ও তৃতীয় পক্ষ বনলতা মহিলা উন্নয়ন দলের স্থানীয় ১০ জন নারীর সঙ্গে চুক্তি নামা হয়। এ চুক্তিনামায় প্রত্যেক নারী ১৫০ গাছ রোপন করলে মোট ১৫০০ গাছ রোপন করা হয়। যা ২০২৬ সাল পর্যন্ত কার্যকরের মেয়াদ রয়েছে। এ সময়ের পর গাছগুলো সরকারি নিয়ম অনুযায়ী কেটে মুনাফার একটি অংশ পাবেন সেসব নারীরা।
কিন্তু এরইমধ্যে সড়ক প্রসস্থকরণ কাজ শুরু করে এলজিইডি। তবে সরকারি কোন নিয়ম নীতির তোয়াক্কা না করে সড়কের প্রায় দুই শতাধিক গাছ কেটে ফেলা হয়েছে বলে উপকারভোগী নারীদের অভিযোগ।
তাদের অভিযোগ, আমাদের কাউকে কিছু না জানিয়ে গাছগুলো কাটা হয়েছে। আমরা ইউএনওকে মুঠোফোনে জানালে তিনি গাছগুলো জব্দ করেন। কিন্তু এরই মাঝে কিছু গাছ হরিলুট হয়ে গেছে বলে জানান নারীরা।
বড়গাঁও ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান ফয়জুর রহমানের দাবি, গত শুক্রবার ঠিকাদার রাস্তার বক্সকাটিং করার সময় ভেকু মেশিন ব্যবহার করার ফলে গাছগুলো উপড়ে গেছে। গাছ যাতে লুট না হয় সেই জন্য ইউনিয়ন পরিষদে নেয়া হয়েছে।
তবে ঠিকাদারের দাবি, গাছ উপড়ে ফেলার মতো কোন নির্দেশনা ভেকু চালকের প্রতি তার ছিলো না। তিনি বলেন, যেখানে গাছ কাটা হয়েছে সেখানে এর আগে কয়েক কিলোমিটার রাস্তা বক্স কাটিং করা হয়েছে। কয়েকদিন ধরে বক্সকাটিংয়ের কাজ চলছে। কোন গাছ কাটা বা উপড়ে ফেলা হয়নি।
সড়ক উন্নয়নের ক্ষেত্রে সরকারি গাছ কাটার ক্ষেত্রে কি নিয়ম আছে জানতে চাইলে সদর উপজেলার ইঞ্জিনিয়ার আব্দুল কাদের কোন তথ্য জানাতে পারেননি।
তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই কার্যালয়ের এক কর্মকর্তা জানান, সড়ক উন্নয়নের ক্ষেত্রে সরকারি গাছ কাটার প্রয়োজন হলে উপজেলা ইঞ্জিনিয়ার ইউএনওকে চিঠি দেবেন। পরবর্তীতে ইউএনও বন বিভাগকে চিঠি দিয়ে সেসব গাছ চিহ্নিতকরণ ও দাম নির্ধারন করতে বলবেন এবং নিলামে গাছ বিক্রি করবেন।
ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা বেলায়েত হোসেন বলেন, গাছ কার নির্দেশে কাটা হয়েছে বা উপড়ে ফেলা হয়েছে এগুলো তদন্তের বিষয়। তবে এতগুলো গাছ কাটার ঘটনায় যা হয়েছে তা অনৈতিক। আপাতত সড়কের বক্স কাটিং-এর কাজ বন্ধ রাখতে বলা হয়েছে। এ ঘটনায় মামলা হবে, তদন্ত হবে এবং দোষীরা আইনের আওতায় আসবে বলে জানান এ কর্মকর্তা।