আজঃ সোমবার ২০ মে ২০24
শিরোনাম

শেখ ফজিলাতুন নেছা, আমার মা

প্রকাশিত:রবিবার ০৮ আগস্ট ২০২১ | হালনাগাদ:রবিবার ০৮ আগস্ট ২০২১ | অনলাইন সংস্করণ
দর্পণ নিউজ ডেস্ক

Image

আগস্ট মাস। এই আগস্ট মাসে আমার মায়ের যেমন জন্ম হয়েছে; আবার কামাল, আমার ভাই, আমার থেকে মাত্র দুই বছরের ছোট, ওরও জন্ম এই আগস্ট মাসে।

৫ আগস্ট ওর জন্ম। নিয়তির কি নিষ্ঠুর পরিহাস যে, এই মাসেই ১৫ আগস্ট ঘাতকের নির্মম বুলেটের আঘাতে জীবন দিতে হয়েছে আমার মাকে। আমার আব্বা, আমাদের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সঙ্গে ১৫ আগস্ট যারা শাহাদাতবরণ করেছেন, আমার মা বেগম ফজিলাতুন নেছা মুজিব, কামাল, জামাল, রাসেল, কামাল-জামালের নব পরিণীতা বধূ, সুলতানা, রোজী, আমার একমাত্র চাচা শেখ আবু নাসের, আমার ফুফা আব্দুর রব সেরনিয়াবাত, তাঁর ১৩ বছরের মেয়ে বেবী, ১০ বছরের আওরাফ, ৪ বছরের নাতি সুকান্ত, সুকান্তের মা এখানেই আছে। আমার বাবার সামরিক সচিব কর্নেল জামিল, যে ছুটে এসেছিল বাঁচানোর জন্য। এই ১৫ আগস্টে একই সঙ্গে হত্যা করা হয়েছিল শেখ ফজলুল হক মণি, তার অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী আরজু মণি। এভাবে পরিবারের এবং কর্তব্যরত পুলিশ অফিসারসহ প্রায় ১৮ জন সদস্যকে।

এই হত্যাকাণ্ড ঘটেছিল কেন? একটাই কারণ, জাতির পিতা দেশ স্বাধীন করেছেন। মহান মুক্তিযুদ্ধে তাঁর ডাকে সাড়া দিয়ে লাখো মানুষ অস্ত্র তুলে নিয়ে সেই যুদ্ধ করেছে। মহান মুক্তিযুদ্ধে যারা শাহাদাতবরণ করেছেন আমি তাদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাই। পৃথিবীর ইতিহাসে কত নাম না জানা ঘটনা থাকে। আমার মায়ের স্মৃতির কথা মনে পড়ে। মনে পড়ে যে আজকে আমরা স্বাধীনতা অর্জন করেছি। স্বাধীন জাতি। কিন্তু এই স্বাধীনতার জন্য আমার বাবা যেমন সংগ্রাম করেছেন, আর তাঁর পাশে থেকে আমার মা, আমার দাদা-দাদি সব সময় সহযোগিতা করেছেন। আমার মার জন্মের পরেই তাঁর পিতা মারা যান। তাঁর মাত্র তিন বছর বয়স তখন। আমার নানা খুব সৌখিন ছিলেন। তিনি যশোরে চাকরি করতেন এবং সব সময় বলেছেন আমার দুই মেয়েকে বিএ পাস করাব। সেই যুগে টুঙ্গিপাড়ার মতো অজপাড়াগাঁয়ে ঢাকা থেকে যেতে লাগত ২২ থেকে ২৪ ঘণ্টা। সেই জায়গায় বসে এই চিন্তা করা। এটা অনেক বড় মনের পরিচয়। তখনকার দিনে মেয়েদের স্কুলে যাওয়া নিষিদ্ধ ছিল।

মিশনারি স্কুলে কিছু প্রাথমিক শিক্ষা তিনি গ্রহণ করেন। কিন্তু তারপর আর বেশি দিন স্কুলে যেতে পারেননি, স্কুলে যাওয়া নিষিদ্ধ ছিল বলে। আর ওই এলাকায় স্কুলও ছিল না। একটাই স্কুল ছিল, জিটি স্কুল। অর্থাৎ গিমাডাঙ্গা টুঙ্গিপাড়া স্কুল। যেটা আমাদের পূর্বপুরুষদেরই করা। আমাদের বাড়ি থেকে প্রায় এক মাইলের ওপর, প্রায় দেড় কিলোমিটারের কাছাকাছি। দূরে, কাঁচা মাটির রাস্তা। একমাত্র কাঁচা মাটির রাস্তা দিয়ে যাও অথবা নৌকায় যাও, মেয়েদের যাওয়া একদম নিষিদ্ধ। বাড়িতে পড়াশোনার জন্য পণ্ডিত রাখা হতো। মাস্টার ছিল আরবি পড়ার জন্য। কিন্তু আমার মার পড়শোনার প্রতি অদম্য একটা আগ্রহ ছিল। মায়ের যখন তিন বছর বয়স তখন তার বাবা মারা গেলেন। আপনারা জানেন যে, সে সময় বাবার সামনে ছেলে মারা গেলে মুসলিম আইনে ছেলের ছেলে-মেয়েরা কোনো সম্পত্তি পেত না। আমার মায়ের দাদা তখন সিদ্ধান্ত নিয়ে তার দুই নাতনিকে তার নিজেরই আপন চাচাতো ভাইয়ের ছেলেদের সঙ্গে বিয়ে দিয়ে যান এবং সব সম্পত্তি দুই নাতনির নামে লিখে দিয়ে আমার দাদাকে মোতাওয়াল্লি করে দিয়ে যান। এর কিছু দিন পর আমার নানীও মারা যান। সেই থেকে আমার মা মানুষ হয়েছেন আমার দাদির কাছে। পাশাপাশি বাড়ি, একই বাড়ি, একই উঠোন। কাজেই আমার দাদি নিয়ে আসেন আমার মাকে। আর আমার খালা দাদার কাছেই থেকে যান।

ছোট বয়সে বিয়ে হয়ে যায়, শ্বশুর-শাশুড়ি, দেবর-ননদের সঙ্গেই তিনি বেড়ে ওঠেন ছোটবেলা থেকেই। উনার ছোটবেলার অনেক গল্প আমরা শুনতাম। আমার দাদা-দাদির কাছে, ফুফুদের কাছে। বাবা রাজনীতি করছেন, সেই কলকাতা শহরে পড়াশোনা করতেন তখন থেকেই। এবং মানবতার জন্য তাঁর যে কাজ এবং কাজ করার যে আকাক্সক্ষা, যার জন্য জীবনে অনেক ঝুঁকি তিনি নিয়েছেন। সেই ৪৭-এর রায়টের সময় মানুষকে সাহায্য করা। যখন দুর্ভিক্ষ হয় তখন মানুষকে সাহায্য করা; সব সময় স্কুল জীবন থেকেই তিনি এভাবে মানুষের সেবা করে গেছেন। আমরা দাদা-দাদির কাছেই থাকতাম। যখন পাকিস্তান হলো আব্বা যখন ঢাকা ইউনিভার্সিটিতে ভর্তি হলেন। সে সময় চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীদের জন্য আন্দোলন করলেন। ভাষা আন্দোলন করতে গিয়ে গ্রেফতার হলেন। প্রথম ভাষা আন্দোলন ৪৮ সালে। ১১ মার্চ ধর্মঘট ডাকা হলো, সেই ধর্মঘট ডাকার সঙ্গে সঙ্গে তিনি গ্রেফতার হলেন।

এরপর ৫৯ সালে ভুখা মিছিল করলেন, তখনও গ্রেফতার। বলতে গেলে ৪৭ সাল থেকে ৪৯ সালের মধ্যে ৩-৪ বার তিনি গ্রেফতার হন। এরপর ৪৯ সালের অক্টোবরে যখন গ্রেফতার করে আর কিন্তু তাঁকে ছাড়েনি। সেই ৫২ সাল পর্যন্ত তিনি বন্দী ছিলেন এবং বন্দীখানায় থেকে ভাষা আন্দোলনের সব রকম কর্মকা- চালাতেন। গোপনে হাসপাতালে বসে ছাত্রলীগের নেতাদের সঙ্গে, আওয়ামী লীগের নেতাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ হতো।

মা শুধু খবরই শুনতেন-, যে এই অবস্থা। কাজেই স্বামীকে তিনি খুব কম সময়ই কাছে পেতেন। আমি যদি আমাদের জীবনটার দিকে ফিরে তাকাই এবং আমার বাবার জীবনটা যদি দেখি, কখনো একটানা দুটি বছর আমরা কিন্তু বাবাকে কাছে পাইনি। কাজেই স্ত্রী হিসেবে আমার মা ঠিক এভাবে বঞ্চিত ছিলেন। কিন্তু কখনো, কোনো দিন কোনো অনুযোগ-অভিযোগ তিনি করতেন না। তিনি সব সময় বিশ্বাস করতেন যে, তার স্বামী দেশের জন্য কাজ করছেন, মানুষের জন্য কাজ করছেন, যে কাজ করছেন তা মানুষের কল্যাণের জন্য করছেন। মায়ের দাদা যে সম্পত্তি দিয়ে গেছেন, তা প্রচুর জমিজমা। জমিদার ছিলেন। সব সম্পত্তি মায়ের নামে। এর থেকে যে টাকা আসত আমার দাদা সব সময় সে টাকা আমার মায়ের হাতে দিয়ে দিতেন। একটি টাকাও মা নিজের জন্য খরচ করতেন না, সব জমিয়ে রাখতেন। কারণ জানতেন যে, আমার বাবা রাজনীতি করেন, তাঁর টাকার অনেক দরকার, আমার দাদা-দাদি সব সময় দিতেন। দাদা সব সময় ছেলেকে দিতেন, তার পরেও মা তার ওই অংশটুকু, বলতে গেলে নিজেকে বঞ্চিত করে টাকাটা বাবার হাতে সব সময়ই তুলে দিতেন। এভাবেই তিনি সহযোগিতা শুরু করেন। তখন কতইবা বয়স? পরবর্তীতে যখন ৫৪ সালে যুক্তফ্রন্ট নির্বাচন হয়। সে নির্বাচনে নির্বাচনী প্রচারণা থেকে শুরু করে নির্বাচনী কাজে সবাই সম্পৃক্ত। আমার মাও সে সময় কাজ করেছেন। নির্বাচনে জয়ী হওয়ার পরে আব্বা আমাকে নিয়ে আসেন, আব্বার ইচ্ছা ছিল আমাদেরকে ভালোভাবে স্কুলে পড়াবেন। এর পরে উনি মন্ত্রিসভার সদস্য হলেন। আবার মন্ত্রিসভা ভেঙে গেল, আমার এখনো মনে আছে, তখন আমরা খুব ছোট, কামাল-জামাল কেবল হামাগুড়ি দেয়। তখন মিন্টুরোডের তিন নম্বর বাসায় আমরা। একদিন সকাল বেলা উঠে দেখি মা খাটের ওপর বসে আছেন চুপচাপ, মুখটা গম্ভীর। আমি তো খুবই ছোট, কিছুই জানি না। রাতে বাসায় পুলিশ এসেছে, বাবাকে গ্রেফতার করে নিয়ে গেছে।

মা বসা খাটের উপরে, চোখে দুই ফোটা অশ্রু। আমি জিজ্ঞেস করলাম বাবা কই? বললেন তোমার বাবাকে অ্যারেস্ট করে নিয়ে গেছে। চোখের সামনে থেকে এই প্রথম গ্রেফতার, ১৪ দিনের নোটিস দিয়ে আমাদের বাড়ি থেকে বের করে দিল। কোথায় যাবেন? কেবল ঢাকায় এসেছেন, খুব কম মানুষকে মা চিনতেন। মন্ত্রী থাকা অবস্থায় ওই বাসায় মানুষে মানুষে গমগম করত, কিন্তু ওইদিন সব ফাঁকা। আমার আব্বার ফুফাতো ভাই, আমার এক নানা তারা এলেন, বাড়ি খোঁজার চেষ্টা। নাজিরাবাজার একটা বাড়ি পাওয়া গেল, সে বাসায় আমাদের নিয়ে উঠলেন। এভাবেই একটার পর একটা ঘাত-প্রতিঘাত এসেছে। কিন্তু একটা জিনিস আমি বলব যে, আমার মাকে আমি কখনো ভেঙে পড়তে দেখিনি। যত কষ্টই হোক আমার বাবাকে কখনো বলেননি যে তুমি রাজনীতি ছেড়ে দাও বা চলে আসো বা সংসার কর বা সংসারের খরচ দাও। কখনো না।

সংসারটা কিভাবে চলবে সম্পূর্ণভাবে তিনি নিজে করতেন। কোনো দিন জীবনে কোনো প্রয়োজনে আমার বাবাকে বিরক্ত করেননি। মেয়েদের অনেক আকাঙ্ক্ষা থাকে স্বামীর কাছ থেকে পাওয়ার। শাড়ি, গয়না, বাড়ি, গাড়ি কত কিছু।

এত কষ্ট তিনি করেছেন জীবনে কিন্তু মুখ ফুটে কিছু বলেননি, চাননি। ৫৪ সালের পরেও বারবার কিন্তু গ্রেফতার হতে হয়েছে। তারপর ৫৫ সালে তিনি আবার মন্ত্রী হন, তিনি ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলিতে নির্বাচন করে জয়ী হন, মন্ত্রিসভায় যোগ দেন। আমরা ১৫ নম্বর আবদুল গণি রোডে এসে উঠি। 

আমরা বাংলাদেশের ইতিহাস দেখলে দেখব সবাই মন্ত্রিত্বের জন্য দল ত্যাগ করে, আর আমি দেখেছি আমার বাবাকে যে তিনি সংগঠন শক্তিশালী করার জন্য নিজের মন্ত্রিত্ব ছেড়ে দিলেন। ছেড়ে দিয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব নিলেন।

কোনো সাধারণ নারী যদি হতো তাহলে সঙ্গে সঙ্গে অভিযোগ করত যে, স্বামী মন্ত্রিত্ব ছেড়ে দিচ্ছে। এই যে আমার বাড়ি গাড়ি এগুলো সব হারাবে, এটা কখনো হয়তো মেনে নিত না। এ নিয়ে ঝগড়াঝাটি হতো, অনুযোগ হতো; কিন্তু আমার মাকে দেখি নাই, এ ব্যাপারে একটা কথাও তিনি বলেছেন। বরং আব্বা যে পদক্ষেপ নিতেন সেটাকেই সমর্থন করতেন।

সব কিছু গুছিয়ে নিয়ে তিনি চলে গেলেন ছোট্ট জায়গায়। এরপর আব্বাকে টি-বোর্ডের চেয়ারম্যান করলেন সোহরাওয়ার্দী সাহেব। তখন সেগুনবাগিচায় একটা বাসায় থাকতে দেওয়া হলো। এরপরই এলো মার্শাল ল। আইয়ুব খান যেদিন মার্শাল ল ডিক্লেয়ার করলেন আব্বা করাচিতে ছিলেন। তাড়াতাড়ি চলে এলেন, ওই দিন রাতে ফিরে এলেন। তারপরই ১১ তারিখ দিবাগত রাতে অর্থাৎ ১২ তারিখে আব্বাকে গ্রেফতার করা হলো। আমার দাদি আমাদের সঙ্গে ছিলেন। গ্রেফতার করার সঙ্গে সঙ্গে বাড়িতে যে নগদ টাকা ছিল আমাদের গাড়ি ছিল সব সিজ করে নিয়ে যাওয়া হলো।

অত্যন্ত ধৈর্যের সঙ্গে আমার মাকে দেখেছি সে অবস্থা সামাল দিতে। মাত্র ছয় দিনের নোটিস দিয়ে আমাদের বাড়ি থেকে বের করে দিল। মালপত্র নিয়ে রাস্তার ওপর আমরা ছোট ছোট ভাইবোন। তখন রেহানা খুবই ছোট। একজন একটা বাসা দিল। দুই কামরার বাসাতে আমরা গিয়ে উঠলাম। দিন-রাত বাড়ি খোঁজা আর আব্বার বিরুদ্ধে তখন একটার পর একটা মামলা দিচ্ছে, এই মামলা-মোকদ্দমা চালানো, কোর্টে যাওয়া এবং বাড়ি খোঁজা সব কাজ আমার মা অত্যন্ত ধৈর্যের সঙ্গে করতেন।

আওয়ামী লীগের এবং আব্বার বন্ধুবান্ধব ছিল। আমার দাদা সব সময় চাল, ডাল, টাকা-পয়সা পাঠাতেন। হয়তো সে কষ্টটা অতটা ছিল না, আর যদি কখনো কষ্ট পেতেন মুখ ফুটে সেটা বলতেন না।

এরপর সেগুনবাগিচায় দোতলা একটা বাসায় আমরা উঠলাম। আওয়ামী লীগের কোনো নেতা-কর্মীর অসুখ-বিসুখ হলে তাকে সাহায্য করা, যারা বন্দী তাদের পরিবারগুলো দেখা, কার বাড়িতে বাজার হচ্ছে না সে খোঁজ খবর নেওয়া এবং এগুলো করতে গিয়ে মা কখনো কখনো গহনা বিক্রি করেছেন। আমার মা কখনো কিছু না বলতেন না।

আমাদের বাসায় ফ্রিজ ছিল, আব্বা আমেরিকা যখন গিয়েছেন ফ্রিজ নিয়ে এসেছেন। সেই ফ্রিজটা বিক্রি করে দিলেন। আমাদের বললেন, ঠাণ্ডা পানি খেলে সর্দি কাশি হয়, গলা ব্যথা হয়, ঠাণ্ডা পানি খাওয়া ঠিক না। কাজেই এটা বিক্রি করে দিই। কিন্তু এটা কখনো বলেননি যে আমার টাকার অভাব। সংসার চালাতে হচ্ছে, আওয়ামী লীগের নেতাদের সাহায্য করতে হচ্ছে। কে অসুস্থ তাকে টাকা দিতে হচ্ছে। কখনো অভাব কথাটা মায়ের কাছ থেকে শুনিনি। এমনও দিন গেছে বাজার করতে পারেননি। আমাদের কিন্তু কোনো দিন বলেননি আমার টাকা নাই, বাজার করতে পারলাম না। চাল-ডাল দিয়ে খিচুড়ি রান্না করেছেন, আচার দিয়ে বলেছেন প্রতিদিন ভাত ভালো লাগে নাকি? আজকে আমরা গরিব খিচুড়ি খাব। এটা খেতে খুব মজা। আমাদের সেভাবে তিনি খাবার দিয়েছেন। একজন মানুষ তার চরিত্র দৃঢ় থাকলে যে কোনো অবস্থা মোকাবিলা করার মতো ক্ষমতা ধারণ করতে পারে। অভাব-অনটনের কথা, হা-হুতাশ কখনো আমার মার মুখে শুনিনি। আমি তাঁর বড় মেয়ে। আমার সঙ্গে আমার মায়ের বয়সের তফাৎ খুব বেশি ছিল না। তার মা নাই, বাবা নাই কেউ নাই। বড় মেয়ে হিসেবে আমিই ছিলাম মা, আমিই বাবা, আমিই বন্ধু। কাজেই ঘটনাগুলো আমি যতটা জানতাম আর কেউ জানত না। আমি বুঝতে পারতাম। ভাইবোন ছোট ছোট তারা বুঝতে পারত না। প্রতিটি পদে পদে তিনি সংগঠনকে, আওয়ামী লীগকে শক্তিশালী করেছেন। তবে প্রকাশ্যে আসতেন না। তিনি ঠাট্টা করে বলতেন আমি আইয়ুব খানকে ধন্যবাদ দেই, কেন?

আব্বা ৫৮ সালে অ্যারেস্ট হন, ৫৯ সালের ডিসেম্বর মাসে হেবিয়াস কর্পাস করে মুক্তি পান। সোহরাওয়ার্দী সাহেব নিজে এসে মামলা পরিচালনা করেন। তখন তিনি জামিনে মুক্তি পান। কিন্তু ইমবার্গো থাকে যে, উনি ঢাকার বাইরে যেতে পারবেন না। রাজনীতি করতে পারবেন না। সব রাজনীতি বন্ধ। ওই অবস্থায় আব্বা ইন্স্যুরেন্সে চাকরি নেন। তখন সত্যি কথা বলতে কি হাতে টাকা-পয়সা, ভালো বেতন, গাড়ি-টাড়ি সব আছে। একটু ভালোভাবে থাকার সুযোগ মার হলো। তিনি ঠাট্টা করে বলতেন আমার জীবনের সবচেয়ে সুন্দর সময় আইয়ুব খান এনে দিয়েছিল। উনি চাকরি করছেন আমি স্থিরভাবে জীবনটা চালাতে পারছি। ওই সময় ধানমন্ডিতে দুইটা কামরা তিনি করেন।

এরপর ওই ৬১ সালের অক্টোবরে আমরা ধানমন্ডি চলে আসি। এ বাড়িটা তৈরি করার সময় লেবার খরচ বাঁচানোর জন্য আমার মা নিজের হাতে ওয়ালে পানি দিতেন, ইট বিছাতেন। আমাদেরকে নিয়ে কাজ করতেন।

বাড়িতে সবকিছুই ছিল। আব্বা তখন ভালো বেতন পাচ্ছেন। তারপরেও জীবনের চলার পথে সীমাবদ্ধতা থাকা বা সীমিতভাবে চলা, সবকিছুতে সংযতভাবে চলা- এই জিনিসটা কিন্তু সব সময় মা আমাদের শিখিয়েছেন।

এরপরে তো দিনের পর দিন পরিস্থিতি উত্তাল হলো। ৬২ সালে আবার আব্বা গ্রেফতার হলেন, ৬৪ সালে আবার গ্রেফতার হলেন, আমি যদি হিসাব করি কখনো আমি দেখিনি দুটো বছর তিনি একনাগাড়ে কারাগারের বাইরে ছিলেন। জেলখানায় থাকলে সেখানে যাওয়া, আব্বার কি লাগবে সেটা দেখা, তার কাপড়-চোপড়, খাওয়া-দাওয়া, মামলা- মোকদ্দমা চালানো সবই কিন্তু মা করে গেছেন। পাশাপাশি সংগঠনের সঙ্গে সব সময় যোগাযোগ তাঁর ছিল। বিশেষ করে ছাত্রলীগ তো তিনি নিজের হাতেই গড়ে তোলেন। ছাত্রলীগের পরামর্শ, যা কিছু দরকার তিনি দেখতেন।

৬৪ সালে একটা রায়ট হয়েছিল। আব্বা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সেই সময় হিন্দু পরিবারগুলোকে বাসায় নিয়ে আসতেন, সেখান থেকে বিভিন্ন জায়গায় তাদের শেল্টারের ব্যবস্থা করতেন। ভলেন্টিয়ার করে দিয়েছিলেন রায়ট থামানোর জন্য। জীবনে যত ঝুঁকিপূর্ণ কাজ, আমার বাবা করেছেন। আদমজীতে বাঙালি বিহারী রায়ট হলো, সেখানে তিনি ছুটে গেছেন। প্রতিটি সময় এই যে কাজগুলো করেছেন আমার মা কিন্তু ছায়ার মতো তাঁকে সাহায্য করে গেছেন, কখনো এ নিয়ে অনুযোগ করেননি। এই যে একটার পর একটা পরিবার নিয়ে আসতেন, তাদের জন্য রান্নাবান্না করা, খাওয়ানো, সব দায়িত্ব পালন করতেন। সব নিজেই করতেন।

এরপর দিলেন ৬ দফা। ৬ দফা দেওয়ার পর তিনি যে সারা বাংলাদেশ ঘুরেছেন, যেখানে বক্তৃতা দিয়েছেন, সেখানে মামলা হয়েছে, গ্রেফতার হয়েছেন। আবার মুক্তি পেয়েছেন, আবার আরেক জেলায় গেছেন, এভাবে চলতে চলতে ৬৬ সালের ৮ মে বঙ্গবন্ধুকে গ্রেফতার করল।

তারপর তো আর মুক্তি পাননি, এই কারাগার থেকে বন্দী করে ক্যান্টনমেন্টে নিয়ে গেল। ৫ মাস আমরা জানতেও পারিনি তিনি কোথায় আছেন? বেঁচে আছেন কিনা? সে সময় আন্দোলন গড়ে তোলা, ৭ জুনের হরতাল পালন। আমার মাকে দেখেছি, তিনি আমাদেরকে নিয়ে ছোট ফুফুর বাসায় যেতেন, কেননা সেখানে ফ্ল্যাট ছিল। ওখানে গিয়ে নিজে পায়ের স্যান্ডেল বদলাতেন, কাপড় বদলাতেন, বোরকা পরতেন, একটা স্কুটারে করে, আমার মামা ছিলেন ঢাকায় পড়ত তাকে নিয়ে ছাত্রনেতাদের সঙ্গে বৈঠক করতেন, আন্দোলন চালাবেন কীভাবে তার পরামর্শ নিজে দিতেন।

তিনি ফিরে এসে আবার আমাদের নিয়ে বাসায় ফিরতেন। কারণ গোয়েন্দা সংস্থার লোকজন সব সময় নজরদারিতে রাখত। কাজেই গোয়েন্দাদের নজরদারি থেকে বাঁচতে তিনি এভাবেই কাজ করতেন। ছাত্রদের আন্দোলনকে কিভাবে গতিশীল করা যায়, আওয়ামী লীগের নেতাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করা এবং এ হরতালটা যেন সফল হয়, আন্দোলন বাড়ে, সফল হয়- তার জন্য তিনি কাজ করতেন। কিন্তু কখনো পত্রিকায় ছবি ওঠা, বিবৃতি এসবে তিনি ছিলেন না। একটা সময় এলো ৬ দফা, না ৮ দফা? পশ্চিম পাকিস্তান থেকে নেতারা চলে এলেন। আমাদেরও অনেক বড় বড় নেতা চলে এলেন। কারণ আওয়ামী লীগ এমন একটা দল যে, আওয়ামী লীগের কর্মীরা সব সময় ঠিক থাকেন কিন্তু নেতারা একটু বেতালা হয়ে যান মাঝে মাঝে, এটা আমার ছোটবেলা থেকেই দেখা। এই সময়ও দেখলাম ৬ দফা, না ৮ দফা? বড় বড় নেতারা এলেন করাচি থেকে। তখন শাহবাগ হোটেল আজকে যেটা বঙ্গবন্ধু মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়। আমার মা মাঝে মাঝে আমাকে পাঠাতেন যে, যা একটু, নেতারা আসছেন, তাদের স্ত্রীরা আসছেন, তাদের খোঁজ খবর নিয়ে আয়, আর সঙ্গে কে কে আছে দেখে আয়। মানে একটু গোয়েন্দাগিরি করে আসা আর কি! তো আমি রাসেলকে নিয়ে চলে যেতাম, মার কাছে এসে যা যা ব্রিফ দেওয়ার দিতাম। তাছাড়া মার একটা ভালো নেটওয়ার্ক ছিল ঢাকা শহরে। 

মহানগর আওয়ামী লীগের গাজী গোলাম মোস্তফার নেতৃত্বে কখন কী হচ্ছে সমস্ত খবর আমার মার কাছে চলে আসত। তখন তিনি এভাবে সবার সঙ্গে যোগাযোগ রাখতেন। মফঃস্বল থেকেও নেতারা আসতেন, তাদের সঙ্গেও যোগাযোগ রাখতেন। রাজনৈতিকভাবে তিনি যে কত সচেতন ছিলেন সেটা আমার দেখার সৌভাগ্য হয়েছে। কাজেই সেই সময় ৬ দফা থেকে এক চুল এদিক-ওদিক যাবেন না এটাই ছিল তাঁর সিদ্ধান্ত। এটা আব্বাকে বলে দিয়েছিলেন। কিন্তু আমাদের নেতারা সব উঠে পড়ে লাগলেন ৮ দফা খুবই ভালো। ৮ দফা মানতে হবে, আমার নিজেরও অভিজ্ঞতা আছে। আমি তখন কলেজে পড়ি, তারপর আমি ইউনিভার্সিটিতে চলে গেলাম, সে সময় আমাদের নামীদামী নেতারা ছিলেন, কেউ কেউ বলতেন তুমি মা কিছু বোঝ না। আমি বলতাম কিছু বোঝার দরকার নেই, আব্বা বলেছেন ৬ দফা। ৬ দফাই দরকার এর বাইরে নয়। আমার মাকে বোঝাতেন, আপনি ভাবী বুঝতে পারছেন না। তিনি বলতেন আমি তো ভাই বেশি লেখাপড়া জানি না, খালি এই টুকুই বুঝি ৬ দফাই হচ্ছে বাংলার মানুষের মুক্তির সনদ। এটা উনি বলে গেছেন, এটাই আমি মানি এর বাইরে আমি কিছু জানি না। এভাবে তারা বোঝাতে চেষ্টা করেছেন, আমাদের বাসায় ওয়ার্কিং কমিটির তিন দিনের মিটিং। রান্নাবান্না, তখন তো এত ডেকোরেশন ছিল না- অত টাকা-পয়সা পার্টির ছিল না। আমার মা নিজের হাতেই রান্না করে খাওয়াতেন, আমরা নিজেরাই চা বানানো, পান বানানো- এগুলো করতাম। তখন আবার পরীক্ষার পড়াশোনা। পরীক্ষার পড়া পড়ব না বক্তৃতা শুনব। একটু পড়তে গিয়ে আবার দৌড়ে আসতাম কি হচ্ছে কি হচ্ছে? চিন্তা যে ৮ দফার দিকে নিয়ে যাবে কিনা? কিন্তু সেখানেও দেখেছি আমার মায়ের সেই দৃঢ়তা, মিটিংয়ে রেজুলেশন হলো যে ৬ দফা ছাড়া হবে না।

নেতারা বিরক্ত হলেন, রাগ করলেন। অনেক কিছু ঘটনা আমার দেখা আছে। আব্বার কাছে দেখা করতে যখন কারাগারে যেতেন, তখন সব বলতেন। আমার মায়ের স্মরণশক্তি ছিল অসাধারণ, আমরা মাঝে মাঝে বলতাম তুমি তো টেপরেকর্ডার। মা একবার যা শুনতেন তা ভুলতেন না। আমাদের কতগুলো কায়দা শিখিয়েছিলেন যে জেলখানায় গিয়ে কী করতে হবে। একটু হৈচৈ করা, ওই ফাঁকে বাইরের সব রিপোর্ট আব্বার কাছে দেওয়া এবং আব্বার নির্দেশটা নিয়ে আসা, তারপর সেটা ছাত্রদের জানানো। স্লোগান থেকে শুরু করে সবকিছুই বলতে গেলে কারাগার থেকেই নির্দেশ দিয়ে দিতেন, সেভাবেই কিন্তু মা ছাত্রলীগকে কাজে লাগাতেন। ৬৮ সালের ১৮ জানুয়ারি ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে ওনাকে নিয়ে গেল ক্যান্টনমেন্টে। আমরা কোনো খবর পেলাম না। তখন মায়ের যে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা এবং আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা যখন দেয় তখন কিন্তু আমার মাকেও ইন্টারগেশন করেছে, যে কি জানে এই ষড়যন্ত্র স¤পর্কে। উনি খুব ভালোভাবে উত্তর দিয়েছিলেন।

স্বাধীনতা আমাদের দরকার। আমার মনে আছে, ভুট্টোকে যখন আইয়ুব খান তাড়িয়ে দিল মন্ত্রিত্ব থেকে, ভুট্টো তখনকার দিনের ইস্ট পাকিস্তানে এসেই ছুটে গেল ৩২ নম্বর বাড়িতে মায়ের সঙ্গে দেখা করতে।

আমাদের বসার ঘরটার নিচে যে ঘরটা আছে ওখানে আগের দিনে এ রকম হতো যে ড্রয়িং রুম, এরপর ডাইনিং রুম, মাঝখানে একটা কাপড়ের পর্দা। মা যখন পশ্চিম পাকিস্তানের নেতারা আসতেন পর্দাটা টেনে ভিতরে বসে কথা বলতেন, বলতেন আমি পর্দা করি। আমাদের বলতেন ওদের সঙ্গে থাকব না, দেখা করব কেন? আমার আব্বা যে মিনিস্টার ছিলেন, এমপি ছিলেন, এমএলএ ছিলেন, করাচিতে যেতেন। আমার মা কিন্তু জীবনে একদিনও করাচিতে যাননি, কোনো দিন যেতেও চাননি। উনি জানতেন, উনিই বেশি আগে জানতেন যে, এদেশ স্বাধীন হবে। এই যে স্বাধীনতার চেতনায় নিজেকে উদ্বুদ্ধ করা, এটা মায়ের ভিতরে তীব্র ছিল। একটা বিশ্বাস ছিল। আগরতলা মামলার সময় আব্বার সঙ্গে প্রথম আমাদের দেখা জুলাই মাসে। যখন কেস শুরু হলো, জানুয়ারির পর জুলাই মাসে প্রথম দেখা হয়, তার আগ পর্যন্ত আমরা জানতেও পারিনি। ওই জায়গাটা আমরা মিউজিয়াম করে রেখেছি। ক্যান্টনমেন্টে যে মেসে আব্বাকে রেখেছিল এবং যেখানে মামলা হয়েছিল সেখানেও মিউজিয়াম করে রাখা হয়েছে।

এরপরে আমাদের নেতারা আবারও উঠেপড়ে লাগলেন। আইয়ুব খান গোলটেবিল বৈঠক ডাকল, সেখানে যেতে হবে, না গেলে সর্বনাশ হবে। মা খবর পেলেন। আমাকে পাঠালেন, বললেন আমার সঙ্গে কথা না বলে কোনো সিদ্ধান্ত যেন উনি না দেন। আমাদের বড় বড় নেতারা সবাই ছিলেন, তারা নিয়ে যাবেন। আমার আব্বা জানতেন, আমার উপস্থিতি দেখেই বুঝে যেতেন যে মা কিছু বলে পাঠিয়েছেন। মা খালি বলে দিয়েছিলেন আব্বা কখনো প্যারোলে যাবে না যদি মুক্তি দেন তখন যাবে। সে বার্তাটাই আমি পৌঁছে দিয়ে এসেছিলাম, আর তার জন্য আমাদের নেতারা বাসায় এসে বকাঝকা- তুমি কেমন মেয়ে, তুমি চাওনা তোমার বাবা বের হোক জেল থেকে? মাকে বলতেন আপনি তো বিধবা হবেন। মা শুধু বলেছিলেন, আমি তো একা না, এখানে তো ৩৪ জন আসামি আছে, তাদের স্ত্রীরা যে বিধবা হবে এটা আপনারা চিন্তা করেন না? আমার একার কথা চিন্তা করলে চলবে? আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলায় ৩৫ জনের মধ্যে ৩৪ জনই তো বিবাহিত। মামলা না তুললে উনি যাবেন না। তাঁর যে দূরদর্শিতা রাজনীতিতে সেটাই কিন্তু আমাদের স্বাধীনতার পথ খুলে দিয়েছে। কারণ সেদিন যদি প্যারোলে যেতেন তাহলে কোনো দিনই আর বাংলাদেশ স্বাধীন হতো না, এটা হলো বাস্তবতা। এরপর অসহযোগ আন্দোলনসহ প্রতিটি ক্ষেত্রে আমি দেখেছি মায়ের দৃঢ় ভূমিকা। ৭ মার্চের ভাষণের কথা বারবারই আমি বলি। বড় বড় বুদ্ধিজীবীরা লিখে দিয়েছেন এটা বলতে হবে, ওটা বলতে হবে। কেউ কেউ বলছেন এটাই বলতে হবে, না বললে সর্বনাশ হয়ে যাবে। এ রকম বস্তাকে বস্তা কাগজ আর পরামর্শ। গুরুত্বপূর্ণ কিছুতে যেতে হলে আমার মা কিন্তু আব্বাকে বলতেন কিছুক্ষণ তুমি নিজের ঘরে থাক। তাঁকে ঘরে নিয়ে তিনি একটা কথা বললেন যে, তোমার মনে যে কথা আসবে, তুমি সে কথা বলবা। কারণ লাখো মানুষ সারা বাংলাদেশ থেকে ছুটে এসেছে- হাতে বাঁশের লাঠি, নৌকার বৈঠা নিয়ে। আর এদিকে পাকিস্তানি শাসকরাও অস্ত্র-টস্ত্র নিয়ে বসে আছে এই বলে যে, বঙ্গবন্ধু কি নির্দেশ দেন। তারপর মানুষগুলোকে আর ঘরে ফিরতে দেবে না। নিঃশেষ করে দেবে। স্বাধীনতার স্বাদ বুঝিয়ে দেবে, এটাই ছিল পাকিস্তানের সিদ্ধান্ত। আর সেখানে আমাদের কোনো কোনো নেতা বলে দিলেন যে, এখানেই বলে দিতে হবে যে, আজ থেকে বাংলাদেশ স্বাধীন। কেউ বলে, এটা বলতে হবে, ওটা বলতে হবে।

মা বাবাকে বললেন যে, সারা জীবন তুমি সংগ্রাম করেছ, তুমি জেল-জুলুম খেটেছ। দেশের মানুষকে নিয়ে যে স্বপ্ন কিভাবে স্বাধীনতা এনে দেবেন সে কথাই তিনি ওই ভাষণে বলে এলেন। যে ভাষণ আজকে সারা বিশ্বের শ্রেষ্ঠ ভাষণ। আড়াই হাজার বছরের ইতিহাসে যত ভাষণ আছে, যে ভাষণ মানুষকে উজ্জ্বীবিত করেছে সে ভাষণের শ্রেষ্ঠ একশটি ভাষণের মধ্যে এ ভাষণ স্থান পেয়েছে। যে ভাষণ এদেশের মানুষকে প্রেরণা দিয়েছিল এবং এরপর ২৬ মার্চের স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়ে যখন তিনি এলেন, ফোনে বলেছিলেন খসড়াটা ইপিআরের ওয়্যারলেসের মাধ্যমে চলে যাবে। ব্যবস্থাটা সবই করা ছিল, সবই উনি করে গিয়েছিলেন।

জানতেন যে, যে কোনো সময় তাকে গ্রেফতার বা হত্যা করতে পারে। মা সব সময় জড়িত আমার বাবার সঙ্গে, কোনো দিন ভয়ভীতি দেখিনি। যে মুহূর্তে তিনি স্বাধীনতার ঘোষণা দিলেন তারপরই সেনাবাহিনী এসে বাড়ি আক্রমণ করল, ওনাকে গ্রেফতার করে নিয়ে গেল, পরের দিন এসে আবার বাড়ি আক্রমণ করল, আমার মা পাশের বাসায় আশ্রয় নিলেন। তারপর এ বাসা ও বাসা করে মগবাজারের একটা বাসা থেকে অ্যারেস্ট করে নিয়ে যাওয়া হলো। ১৮ নম্বর রোডের একতলা বাসায় রাখা হলো। খোলা বাড়ি। কিছু নাই, পর্দা নাই। রোদের মধ্যে আমাদের পড়ে থাকতে হয়েছে, দিনের পর দিন। মাকে কিন্তু কখনো ভেঙে পড়তে দেখিনি। সব সময় একটা আত্মবিশ্বাস ছিল, সাহস ছিল সে সাহসটাই দেখেছি। এরপর যেদিন পাকিস্তান হানাদার বাহিনী ১৬ ডিসেম্বর সারেন্ডার করে, আমরা কিন্তু সেদিন মুক্তি পাইনি, আমরা পেয়েছি এক দিন পরে ১৭ ডিসেম্বর। এখানে একটা ছবি দেখিয়েছে, মা দাঁড়িয়ে আছে মাঠের ওপর। মানুষের সঙ্গে হাত দেখাচ্ছেন, ওটা কিন্তু বাংকার। পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী এ বাড়িতে মাটির নিচে বাংকার করেছিল, কাজেই ওই বাংকারের ওপর দাঁড়িয়ে যখন ইন্ডিয়ান আর্মি এসে পাকিস্তান আর্মিকে স্যারেন্ডার করে নিয়ে গেল হাজার হাজার মানুষ ওখানে চলে এলো, মা হাত নেড়ে দেখাচ্ছেন।

স্যারেন্ডার করার সময় গেটে যে সেন্ট্রি ছিল, আমরা ভিতরে বন্দী, আমরা তো বের হতে পারছি না, জানালা দিয়ে মা হুকুম দিচ্ছেন। ওই সিপাহিটার নামও জানতেন, বলছেন যে হাতিয়ার ডালদো। ওই যে হাতিয়ার ডালদো এ কথা শুনে বেচারা ভ্যাবাচেকা খেয়ে জ্বি, মা জ্বি বলে অস্ত্রটা নিয়ে বাংকারে চলে গেল। কাজেই ওনার যে সাহসটা, তা ওই সময়েও ছিল। ওই দিন রাতেও আমাদের মেরে ফেলার চেষ্টা হয়েছে, যেভাবে হোক আমরা বেঁচে গেছি।

আমার মার তাৎক্ষণিক সিদ্ধান্ত আমরা দেখেছি। স্বাধীনতার পর তিনি কিন্তু প্রধানমন্ত্রীর বৌ হিসেবে বিলাসী জীবনযাপনে ফিরে যাননি, ওই ধানমন্ডির বাড়িতে থেকেছেন। বলেছেন না, আমার ছেলেমেয়ে বেশি বিলাসিতায় থাকলে ওদের নজর খারাপ হয়ে যাবে, অভ্যাস খারাপ হয়ে যাবে।

উনার জীবনে যেভাবে চলার ঠিক সেভাবেই উনি চলেছেন, স্বাধীনতার পর যেসব মেয়ে নির্যাতিত ছিল, নির্যাতিত মেয়েদের সাহায্য করা, তাদেরকে হাসপাতালে দেখতে যাওয়া। বোর্ডের মাধ্যমে তাদের পুনর্বাসনের তখন ব্যবস্থা হয়। ওই মেয়েদের যখন বিয়ে দিতো, মা নিজেও তখন উপস্থিত থেকেছেন। নিজের গহনা দিয়ে দিয়েছেন, আমি আমারও গহনা অনেক দিয়ে দিয়েছিলাম। বলতাম, তুমি যাকে যা দরকার তা দিবা।

তিনি প্রচারবিমুখ ছিলেন, আমাকে একদিন বললেন, মাত্র ১৪ বছরের বাচ্চা মেয়ে তাকে যেভাবে অত্যাচার করেছে, তা দেখে তার খুব মন খারাপ হয়েছে। এভাবে নির্যাতিতদের পাশে দাঁড়ান, যে এসে যা চেয়েছে হাত খুলে তা দিয়ে দিয়েছেন; দ্বিধা-দ্বন্দ্ব ছিল না। দেশের কথাই সব সময় চিন্তা করেছেন।

আমি অনেক স্মৃতির কথা বললাম এ কারণে যে আমি মারা গেলে অনেকেই হয়তো অনেক কিছু জানবে না। কাজেই এই জিনিসগুলো জানাও মানুষের দরকার। একজন যখন একটা কাজ করে তার পেছনে যে প্রেরণা, শক্তি, সাহস লাগে, মা সব সময় সে প্রেরণা দিয়েছেন, কখনো পিছে টেনে ধরেননি। যে আমার কী হবে, কী পাব? নিজের জীবনে তিনি কিছুই চাননি, আমি বলতে পারব না যে, কোনো দিন তিনি কিছু চেয়েছেন।

কিন্তু দেশটা স্বাধীন করা, দেশের মানুষের কল্যাণ কিভাবে হবে সে চিন্তাই তিনি সব সময় করেছেন। স্বাধীনতার পর অনেক সময় আব্বার সঙ্গে আলোচনা করেছেন, তখন একটা যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ কি ভয়াবহ পরিস্থিতি! তখন সেই অবস্থায়ও তিনি খোঁজ খবর রাখতেন। তথ্যগুলো আব্বাকে জানাতেন।

জীবনের শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত পাশে ছিলেন, যখন ঘাতকরা আমার বাবাকে হত্যা করল তিনি তো বাঁচার আকুতি করেননি। তিনি বলেছেন, ওনাকে যখন মেরে ফেলেছ, আমাকেও মেরে ফেল। এভাবে নিজের জীবনটা উনি দিয়ে গেছেন। সবাইকে নিয়ে চলে গেলেন। আমরা দুই বোন থেকে গেলাম, বিদেশে চলে গিয়েছিলাম মাত্র ১৫ দিন আগে। মাঝে মাঝে মনে হয় এভাবে বেঁচে থাকা যে কী কষ্টের, যারা আপনজন হারায়, শুধু তারাই বোঝে।

আমি সবার কাছে দোয়া চাই। আমার মায়ের যে অবদান রয়েছে দেশের স্বাধীনতার জন্য এবং দেশকে যে গভীরভাবে ভালোবাসতেন এদেশের মানুষ আব্বার সঙ্গে একই স্বপ্নই দেখতেন যে, এ দেশের মানুষ সুন্দর জীবন পাবে, ভালোভাবে বাঁচবে। গরিব থাকবে না। আব্বা যে এটা করতে পারবেন, এ বিশ্বাসটা সব সময় তার মাঝে ছিল। কিন্তু ঘাতকের দল তো তা দিল না।

কাজেই সে অসমাপ্ত কাজটুকু আমাকে করতে হবে, আমি সেটাই বিশ্বাস করি। এর বাইরে আর কোনো চাওয়া-পাওয়া নেই। তবে আমার মায়ের সারা জীবন দুঃখের জীবন, আর সেই সঙ্গে মহান আত্মত্যাগ তিনি করে গেছেন। আমি তার জন্য সবার কাছে দোয়া চাই। ১৫ আগস্ট যারা শাহাদাতবরণ করেছেন সবার জন্য দোয়া চাই। আল্লাহ রাব্বুল আলামিন যেন তাকে বেহেস্ত নসিব করেন।


আরও খবর



সিগারেট বাকি না দেয়ায় ব্যবসায়ীকে কুপিয়ে হত্যার অভিযোগ

প্রকাশিত:মঙ্গলবার ৩০ এপ্রিল ২০২৪ | হালনাগাদ:মঙ্গলবার ৩০ এপ্রিল ২০২৪ | অনলাইন সংস্করণ
সাকিব আহম্মেদ, মুন্সিগঞ্জ

Image

মুন্সিগঞ্জ সদরের মিরকাদিমে কাগজীপাড়া এলাকায় গভীর রাতে চিপস-সিগারেট বাকি না দেওয়ায় মোশারফ হোসেন (৫৫) নামের এক মুদি দোকানিকে ধারালো ছুরি দিয়ে এলোপাথাড়ি কুপিয়ে হত্যার অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় কাউন্সিলরের ছোট ভাই মো. রুবেলের (৩৫) বিরুদ্ধে। এ ঘটনার অভিযুক্ত রুবেলকে রাতেই অভিযান চালিয়ে আটক করেছে পুলিশ।

প্রত্যক্ষদর্শী ও পুলিশ জানায়, বাড়ির পাশে দোকান থাকায় সে প্রতিদিন রাতে দোকানেই ঘুমাতেন। সোমবার দিবাগত রাত দেড়টার দিকে মিরকাদিম পৌরসভার ৭নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মো. সোহেলের ছোট ভাই রুবেল তাকে ডাক দিয়ে চিপস-সিগারেট বাকি চায়।

সে বাকি দেবে না বলে অস্বীকৃতি জানালে তাদের মধ্যে কথা কাটাকাটি হয়। কথা কাটাকাটির একপর্যায়ে মোশারফকে দোকান থেকে টেনে বের করে ধারালো ছুরি দিয়ে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে গুরুতর জখম করে।

পরে স্থানীয়রা মোশারফকে গুরুতর আহত অবস্থায় ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধার করে মুন্সিগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে গেলে জরুরি বিভাগের কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

এ বিষয়ে মুন্সিগঞ্জ সদর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার থান্ডার খায়রুল হাসান জানান, চিপস সিগারেট বাকি না দেয়াকে কেন্দ্র করে মোশারফকে কুপিয়ে হত্যা করে মিরকাদিম পৌরসভার ৭নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর বিএনপি নেতা সোহেল মিয়ার ছোট ভাই রুবেল মিয়া (৩৫)।

তিনি জানান, এ ঘটনায় তাকে রাতেই অভিযান চালিয়ে আটক করেছে পুলিশ। তার কাছ থেকে রক্তমাখা একটি ছুরি উদ্ধার করা হয়েছে। এ ঘটনায় মামলা দায়েরর প্রস্তুতি চলছে বলে জানান তিনি।


আরও খবর



ইউক্রেনে গোপনে দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র পাঠিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র

প্রকাশিত:বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪ | হালনাগাদ:বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪ | অনলাইন সংস্করণ
আন্তর্জাতিক ডেস্ক

Image

যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে গোপনে পাওয়া দূরপাল্লার ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র রুশ বাহিনীর বিরুদ্ধে ব্যবহার করতে শুরু করেছে ইউক্রেন। মার্কিন কর্মকর্তারা এই তথ্য জানিয়েছেন বলে ব্রিটিশ গণমাধ্যম বিবিসির এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।

গত মার্চে ইউক্রেনের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন এ সংক্রান্ত ৩০০ মিলিয়ন ডলারের সহায়তা প্যাকেজ অনুমোদন করেছিলেন। এ মাসে অস্ত্রের চালান দেশটিতে পৌঁছে।

মার্কিন গণমাধ্যমের প্রতিবেদন অনুসারে, এসব অস্ত্র ব্যবহার করে অধিকৃত ক্রিমিয়ায় রুশ লক্ষ্যবস্তুতে কমপক্ষে একটি হামলা চালিয়েছে ইউক্রেন।

সম্প্রতি ইউক্রেনের জন্য ৬১ বিলিয়ন ডলারের আরও একটি সহায়তা প্যাকেজ প্রস্তাবের অনুমোদন দিয়েছেন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। এর আগে যুক্তরাষ্ট্র ইউক্রেনে মধ্যমপাল্লার আর্মি ট্যাকটিকেল মিসাইল সিস্টেম (এটিএসিএমএস) পাঠিয়েছিল। ওই সময় তারা আরও শক্তিশালী অস্ত্রসম্ভার পাঠাতে অনিচ্ছুক বলে জানিয়েছিল। তবে তা সত্ত্বেও গত ফেব্রুয়ারিতে প্রেসিডেন্ট বাইডেন ৩০০ কিলোমিটার দূরত্বের লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানতে সক্ষম এমন দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থা ইউক্রেনে পাঠাতে সবুজ সংকেত দিয়েছিলেন।

এ প্রসঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র বেদান্ত প্যাটেল বলেন, আমি নিশ্চিত করে বলতে পারি, প্রেসিডেন্টের সরাসরি নির্দেশনায় ইউক্রেনে দূরপাল্লার এটিএসিএমএস পাঠানো হয়েছে।  তিনি বলেন, ইউক্রেনের অনুরোধে কৌশলগত নিরাপত্তার কারণে বিষয়টি নিয়ে কোনো ঘোষণা দেওয়া হয়নি।

ঠিক কতগুলো অস্ত্র ইতোমধ্যে ইউক্রেনে পাঠানো হয়েছে তা অবশ্য জানা যায়নি। বিষয়টি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জ্যাক সুলিভান জানান, ওয়াশিংটন ইউক্রেনে আরও অস্ত্র পাঠানোর পরিকল্পনা করছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক যুক্তরাষ্ট্রের একজন কর্মকর্তার উদ্ধৃতি দিয়ে বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, দূরপাল্লার এই ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে অধিকৃত ক্রিমিয়ায় একটি রুশ বিমানঘাঁটিতে হামলা চালানো হয়েছিল। আর নতুর সরবরাহ করা ক্ষেপণাস্ত্রের সাহায্যে গত মঙ্গলবার অধিকৃত বন্দর নগরী বেরদিয়ানস্কে রুশ সৈন্যদের বিরুদ্ধে হামলা চালানো হয়।

সাম্প্রতিক মাসগুলোতে গোলাবারুদ কমে যাওয়ায় এবং রুশ সৈন্যরা ধীরে ধীরে সামনে এগিয়ে আসায় কিয়েভ পশ্চিমা দেশগুলোর প্রতি আরও বেশি করে অস্ত্রশস্ত্র পাঠানোর আহ্বান জানিয়ে আসছে।

২০২২ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসন শুরু হওয়ার পর যুদ্ধে উভয়পক্ষের ১০ হাজারেরও বেশি লোক নিহত হয়েছে, যাদের অধিকাংশ সেনাসদস্য। এ ছাড়া লাখ লাখ মানুষ তাদের বাড়িঘর ছেড়ে পালিয়েছে।


আরও খবর



আরও ৬১ নেতাকে শোকজ বিএনপির

প্রকাশিত:বৃহস্পতিবার ০২ মে 2০২4 | হালনাগাদ:বৃহস্পতিবার ০২ মে 2০২4 | অনলাইন সংস্করণ
নিজস্ব প্রতিবেদক

Image

দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে আসন্ন উপজেলা পরিষদের দ্বিতীয় ধাপের ভোটে অংশ নেওয়া ৬১ নেতাকে কারণ দর্শানোর নোটিশ (শোকজ) করেছে বিএনপি। বৃহস্পতিবার বিকাল পর্যন্ত নয়াপল্টনের কেন্দ্রীয় দপ্তর থেকে পাঠানো শোকজের চিঠিতে তাদের ৪৮ ঘণ্টার সময় দিয়ে জবাব দিতে বলা হয়েছে।

শোকজের জবাব সন্তোষজনক না হলে বা কেউ জবাব না দিলে তাদের দলের প্রাথমিক সদস্যসহ সব পদ থেকে বহিষ্কার করা হবে। চেয়ারম্যান ও ভাইস-চেয়ারম্যান পদে ভোটের মাঠে রয়েছেন এসব শোকজ পাওয়া নেতা।  এর আগে প্রথম দফার ভোটে যাওয়া ৮০ নেতাকে বহিষ্কার করে দলটি।

বিএনপির কেন্দ্রীয় দপ্তর সূত্রে জানা গেছে, দ্বিতীয় ধাপে শোকজ করা ৬১ নেতার মধ্যে চেয়ারম্যান পদে ২৫ জন, ভাইস চেয়ারম্যান (পুরুষ) পদে ২০ জন এবং ভাইস চেয়ারম্যান (মহিলা) পদে ১৬ জন রয়েছেন। এছাড়া এ ধাপের ভোটে মনোনয়নপত্র জমা দিয়ে প্রত্যাহার করে নিয়েছেন ১২ জন। এরমধ্যে চেয়ারম্যান পদে ৮ জন, ভাইস চেয়ারম্যান (পুরুষ ও মহিলা) পদে ৪ জন।  জানা গেছে, দ্বিতীয় ধাপের ভোটে ঢাকা বিভাগে সবচেয়ে কমসংখ্যক নেতা ভোটে অংশ নিয়েছেন।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিএনপির স্থায়ী কমিটির একজন সদস্য বলেন, শোকজ করার কারণ হলো তাদেরকে আরেকটি সুযোগ দিতে চায় দল। এর মধ্যেও যদি কেউ ভোটে না যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে না।

বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী আহমেদের সই করা শোকজ চিঠিতে বলা হয়, গত ১৫ এপ্রিল বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সভায় আসন্ন উপজেলা পরিষদ নির্বাচন বর্জন করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। বিএনপির নেতা হিসাবে আপনি দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে আগামী ২১ মে অনুষ্ঠেয় দ্বিতীয় ধাপের উপজেলা নির্বাচনে প্রার্থিতা প্রত্যাহার করেননি। নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা সম্পূর্ণরূপে দলীয় শৃঙ্খলা পরিপন্থি ও দলের প্রতি চরম বিশ্বাসঘাতকতা। সুতরাং দলের সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে নির্বাচনে অংশগ্রহণের জন্য আপনার বিরুদ্ধে কেন দলের গঠনতন্ত্র মোতাবেক সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে না, তা ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে যথাযথ কারণ দর্শিয়ে একটি লিখিত জবাব দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বরাবরে নয়াপল্টনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে জমা দেওয়ার জন্য আপনাকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।


আরও খবর



মমেক হাসপাতালে কুকুরের সঙ্গে রোগীদের বসবাস

প্রকাশিত:সোমবার ২৯ এপ্রিল ২০২৪ | হালনাগাদ:সোমবার ২৯ এপ্রিল ২০২৪ | অনলাইন সংস্করণ
ময়মনসিংহ প্রতিনিধি

Image

ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে (মমেক) তিনগুণের বেশি রোগী ভর্তি হওয়ায় ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে রোগী ও তাঁদের স্বজনদের। এক হাজার শয্যা বিশিষ্ট ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে বৃহত্তর ময়মনসিংহের ছয় জেলা ছাড়াও বিভিন্ন জায়গার রোগীরা চিকিৎসা সেবা নিতে আসেন।

জানা গেছে, হাসপাতালটিতে গড়ে প্রতিদিন ৩০০০-৩২০০ রোগী ভর্তি হয়ে থাকেন। এতে শয্যা সংকটের কারণে মেঝে ও বারান্দায় শুয়ে সেবা নিতে হচ্ছে অনেককে। চিকিৎসা সেবার মান নিয়েও রয়েছে জনমনে নানা প্রশ্ন। এতে করে সরকারি হাসপাতালের সেবা নিতে আগ্রহ হারাচ্ছেন অনেকেই। জরুরি সেবা ছাড়া বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিকগুলোতেই যেন স্বস্তি রোগীদের।

এদিকে, ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বারান্দা এবং শয্যাগুলোতে অবাধেই ঘোরাফেরা করছে কুকুর। সিঁড়ির কোনায় কোনায় জমে আছে ময়লার স্তূপ। হাসপাতাল ভবনের ভেতরে কুকুরের অবাধ বিচরণের কারণে রোগী এবং স্বজনদের মাঝে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের এমন উদাসীন ভূমিকায় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রোগীরা রয়েছেন চরম স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে।

চিকিৎসা নিতে আসা রোগীর স্বজনরা জানান, সরকার যখন পুরো দেশবাসীকে সচেতন এবং পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকতে নানামুখী কর্মসূচি নিচ্ছে সেই মুহূর্তে হাসপাতালের ভেতরে কুকুরের অবাধ আনাগোনা কাম্য নয়। কারণ কুকুর জলাতঙ্ক রোগ বহন করে। সেই কুকুরগুলো হাসপাতালের মেঝেতে শুয়ে রয়েছে। হাসপাতালটি কতটুকু স্বাস্থ্যসম্মত তা দেখেই বোঝা যাচ্ছে।

এ ব্যাপারে বাংলাদেশ টেক্স লইয়ার্স এসোসিয়েশন কেন্দ্রীয় কমিটির ভাইস চেয়ারম্যান ও বিশিষ্ট রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব এডভোকেট সাদিক হোসেন বলেন- এই যদি হাসপাতালে অবস্থা হয় কুকুর এবং মানুষ কি একসাথে বসবাস করতে পারে। এটাতো একটা ভয়াবহ পরিস্থিতি। এটা নিয়ে মন্তব্য করার কোন ভাষা নেই।

এ বিষয়ে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে উপ-পরিচালক ডা: জাকিরুল ইসলামকে গতকাল রবিবার রাত ফোন দিলে তাকে পাওয়া যায়নি।


আরও খবর



শিল্পী সমিতির সদস্যপদ ফিরে পেলেন জায়েদ, শঙ্কায় নিপুণ

প্রকাশিত:রবিবার ১৯ মে ২০২৪ | হালনাগাদ:রবিবার ১৯ মে ২০২৪ | অনলাইন সংস্করণ
বিনোদন ডেস্ক

Image

গত বছর ফেব্রুয়ারিতে এক ঘোষণার মাধ্যমে সাবেক সাধারণ সম্পাদক জায়েদ খানের সদস্যপদ বাতিল করে বাংলাদেশ চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতি। এরপর আর সেভাবে সমিতিতে দেখা যায়নি জায়েদকে। গত ১৯ এপ্রিলে মিশা সওদাগর ও ডিপজল পরিষদের জেতার পর শোনা যাচ্ছিল সমিতিতে সদস্যপদ ফিরে পাচ্ছেন জায়েদ। অবশেষে সেটাই হয়েছে।

জায়েদ খানের সদস্যপদ ফিরিয়ে দিয়েছে সমিতির বর্তমান কমিটি। গেল বৃহস্পতিবার সাংবাদিক সম্মেলনে কমিটির সহ-সভাপতি ডি এ তায়েব জানান, জায়েদ খান সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে যে বক্তব্য দিয়েছিল তার যথাযথ কারণ ব্যাখ্যা দিয়েছে। তা খতিয়ে দেখার পর সদস্যপদ ফিরিয়ে দেওয়া হয়। এক প্রজ্ঞাপনেও বিষয়টি জানিয়েছে শিল্পী সমিতি।

বিষয়টি নিশ্চিত করে মিশা সওদাগর বলেন, সর্বসম্মতিক্রমেই জায়েদ খানের পদটি ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছে। সমিতির নতুন মুখপাত্র করা হয়েছে অভিনেতা রুবেল ও ডি এ তায়েবকে। এ কারণে বিষয়টি প্রথমে জানিয়েছেন তায়েব।

এর আগে ২০২৩ সালে জানানো হয়েছিল, কোনো রূপ সাংগঠনিক দুর্বলতা না পেয়ে জায়েদ খান ব্যক্তিগত আক্রোশ ধারাবাহিকভাবে চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতিসহ সাধারণ সম্পাদক নিপুণের নামে মিথ্যা, মনগড়া, কুরুচিপূর্ণ বক্তব্য দিয়ে চলেছেন। এ কারণে সদস্যপদ বাতিল করা হয়েছে।

এদিকে, বাংলাদেশ চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির ২০২৪-২৬ মেয়াদি নির্বাচনের ফলাফল বাতিল চেয়ে নতুন নির্বাচন দাবি করে রিট করেছেন পরাজিত সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী নিপুণ আক্তার। নিপুণের এমন সিদ্ধান্তকে দ্বৈতনীতি বলে অ্যাখ্যা দিয়ে সম্প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন চিত্রনায়ক জায়েদ খান।

এক ভিডিও সাক্ষাৎকারে জায়েদ খান বলেন, তখন নতুন কমিটিকে ফুলের মালা পরিয়ে দিয়ে তিনি বলেছিলেন, নির্বাচন সুষ্ঠু হয়েছে। অথচ এত দিন পরে উনার মনে হলো, নির্বাচন সুষ্ঠু হয়নি। এটা দ্বৈতনীতি! আলোচনায় থাকা অথবা কারও প্ররোচনায় এমন কাজ করেছেন তিনি।

জায়েদ এটাকে নোংরা মানসিকতা উল্লেখ করে বলেন, শিল্পীরা এত জঘন্য হতে পারে না। তার কারণে শিল্পীদের বদনাম হচ্ছে। আশা করি, শিল্পীরা সবাই মিলে উনাকে প্রতিহত করবে।

এদিকে বৃহস্পতিবার সমিতির কার্যকরী সভাশেষে ডিএ তায়েব বলেন, নিপুণের সদস্যপদ বাতিল হতে পারে। গণমাধ্যমে সংগঠনের সাধারণ সম্পাদককে নিয়ে বাজে মন্তব্য করেছেন তিনি। তার সদস্যপদ কেন বাতিল করা হবে না, সেটি জানতে চেয়ে চিঠি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বর্তমান কমিটি।


আরও খবর