বাংলাদেশ ক্রিকেট
বোর্ডের (বিসিবি) সামনে রোববার (৮ সেপ্টেম্বর) দুপুরে হাজির হয়েছিলেন দেশের ৬৪ জেলার
ক্রিকেটাররা। তাদের মূল লক্ষ্য ছিল বোর্ডের নতুন নেতৃত্বের কাছে তাদের ১৭ দফা দাবি
পেশ করা। এসব দাবি মূলত তারা জেলা ক্রিকেটের উন্নয়ন ও ক্রিকেটারদের সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধির
জন্য করছেন।
সম্প্রতি বিসিবির
সভাপতি হিসেবে সাবেক ক্রিকেটার ফারুক আহমেদ এবং পরিচালক হিসেবে নাজমুল আবেদীন ফাহিম
দায়িত্ব নেওয়ার পর ক্রিকেটারসহ ক্রিকেট সংশ্লিষ্ট অনেকেই তাদের দাবি তুলে ধরেছেন।
মিরপুরের হোম
অব ক্রিকেটে একাডেমি ভবনের সামনে ৬৪ জেলার এই ক্রিকেটাররা ব্যানার নিয়ে অবস্থান নেন।
তাদের মূল দাবিগুলোর মধ্যে ছিল- জেলা পর্যায়ে ক্রিকেটারদের ম্যাচ ফি বৃদ্ধি, ঢাকার
প্রথম শ্রেণির লিগে টেস্ট, ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টি তিন সংস্করণেই টুর্নামেন্ট আয়োজন করা
এবং প্রত্যেক জেলার ক্রিকেটারদের জন্য আধুনিক অনুশীলনের সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করা।
পাঠকের সুবিধার জন্য তাদের মূল দাবির কয়েকটি দেওয়া হলো।
১. জেলা পর্যায়ে
ক্রিকেট লিগের জন্য স্থায়ী বাজেট বরাদ্দ করতে হবে এবং খেলা চালিয়ে যাওয়ার জন্য ক্রিকেটারদের
আর্থিক সহায়তা দিতে হবে। এতে করে ক্রিকেটারদের আর্থিক সমস্যা কমবে এবং তাদের পারফরম্যান্সের
মান বৃদ্ধি পাবে।
২. ঢাকা প্রিমিয়ার
লিগে (ডিপিএল) প্রথম শ্রেণির, ওয়ানডে এবং টি-টোয়েন্টি—তিন সংস্করণের টুর্নামেন্ট আয়োজন করতে হবে। এর মাধ্যমে খেলোয়াড়দের
সব ফরম্যাটে খেলার সুযোগ তৈরি করা হবে এবং তাদের পারফরম্যান্স উন্নত হবে।
৩. প্রতিটি
বিভাগে টেস্ট, ওয়ানডে, টি-টোয়েন্টি খেলার সুযোগ তৈরি করতে হবে এবং ঢাকার বাইরেও প্রথম
শ্রেণির ক্রিকেট খেলার আয়োজন নিশ্চিত করতে হবে। এতে করে দেশের অন্যান্য জেলার ক্রিকেটারদের
সুযোগ বৃদ্ধি পাবে।
৪. প্রতিটি
জেলায় ক্রিকেটারদের অনুশীলনের জন্য পর্যাপ্ত অবকাঠামো ও সুযোগ-সুবিধার ব্যবস্থা করতে
হবে। বিশেষ করে মাঠ, নেট প্র্যাকটিস এবং কোচিং সুবিধা বৃদ্ধি করা জরুরি।
৫. কোয়াব স্বাধীনভাবে
পরিচালিত হতে হবে, যেন এটি খেলোয়াড়দের সঠিকভাবে প্রতিনিধিত্ব করতে পারে এবং তাদের
স্বার্থ রক্ষা করতে পারে।
৬. ঢাকার প্রথম
বিভাগ, দ্বিতীয় বিভাগ এবং তৃতীয় বিভাগের ক্রিকেট লিগে টেস্ট, ওয়ানডে এবং টি-টোয়েন্টি
তিন সংস্করণেই খেলার ব্যবস্থা করতে হবে।
৭. জাতীয় ক্রিকেটারদের
জন্য টিভি সম্প্রচার এবং ডিজিটাল মিডিয়ায় আরও ম্যাচ প্রচার করতে হবে, যাতে দর্শকদের
মধ্যে ক্রিকেটের জনপ্রিয়তা বৃদ্ধি পায়।
৮. ঢাকার দ্বিতীয়
বিভাগ এবং তৃতীয় বিভাগে নিয়মিত টি-টোয়েন্টি টুর্নামেন্ট আয়োজন করতে হবে, যা তরুণ
ক্রিকেটারদের জন্য একটি প্ল্যাটফর্ম হিসেবে কাজ করবে।
৯. সব জেলায়
ক্রিকেট একাডেমি তৈরি করতে হবে এবং সেখানকার ক্রিকেটারদের উন্নত প্রশিক্ষণ ও কোচিং
দেওয়া হবে, যাতে তাদের দক্ষতা আরও উন্নত হয়।
১০. জেলা পর্যায়ের
ক্রিকেটারদের জন্য উন্নত ম্যাচ ফি নিশ্চিত করতে হবে এবং এই ফি পর্যায়ক্রমে বৃদ্ধি
করতে হবে, যেন তারা আর্থিকভাবে সমৃদ্ধ হতে পারে।
১১. প্রত্যেক
বিভাগে স্থায়ীভাবে অনুশীলনের সুবিধা বাড়াতে হবে এবং সেই সঙ্গে কোচদের সংখ্যা বাড়াতে
হবে। এতে তরুণ ক্রিকেটাররা পেশাদার স্তরে পৌঁছাতে পারবে।
১২. ঢাকায় ক্রিকেট
একাডেমির পাশাপাশি জেলাতেও অনুশীলন ও কোচিং সুবিধা উন্নত করতে হবে।
১৩. বাংলাদেশ
ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) আয়োজনে বিভিন্ন স্থানে আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্ট আয়োজন করতে
হবে এবং বাংলাদেশের স্থানীয় খেলোয়াড়দের সেসব টুর্নামেন্টে খেলার সুযোগ দিতে হবে।
১৪. জেলাভিত্তিক
এবং বিভাগভিত্তিক টুর্নামেন্টে পুরস্কারের ব্যবস্থা করতে হবে, যা তরুণ ক্রিকেটারদের
মনোবল বাড়াবে এবং তাদের মধ্যে প্রতিযোগিতা সৃষ্টি করবে।
১৫. বিসিবির
রেজিস্ট্রেশন সিস্টেমের মাধ্যমে সব ক্রিকেটারদের সম্পূর্ণ তথ্য সংগ্রহ করতে হবে, যাতে
তাদের দক্ষতা ও কার্যক্রম মূল্যায়ন করা যায়।
১৬. বিপিএল
এবং অন্যান্য ফ্র্যাঞ্চাইজি টুর্নামেন্টে স্থানীয় ক্রিকেটারদের আরও অন্তর্ভুক্ত করতে
হবে এবং তাদের জন্য নতুন সুযোগ সৃষ্টি করতে হবে।
১৭. সব ক্রিকেট
অ্যাসোসিয়েশনের আওতায় স্থানীয় ক্রিকেট উন্নয়নের জন্য বিশেষ প্রোগ্রাম চালু করতে
হবে, যাতে দেশের ক্রিকেট অবকাঠামো আরও উন্নত হয়।
পরে গণমাধ্যমের
সঙ্গে আলাপকালে ক্রিকেটাররা জানান তাদের দাবি মেনে নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছে বিসিবি, ‘অনেক দিন ধরেই অনিয়ম হয়ে আসছে।
যদি বিসিবি আশাবাদ ব্যক্ত করে, তাহলে আমরা আশা করছি দ্রুতই এ সমস্যার সমাধান হবে।’
ক্রিকেটারদের
সংগঠন কোয়াব পুনর্গঠনের দাবি জানান তারা, ‘আমরা চাই কোয়াবকে নতুন করে পুনর্গঠন করা হোক। এই কোয়াব আসলে ক্রিকেটারদের
অনেক কিছুই জানে না। আমাদের সঙ্গে কখনো কথাও বলেনি। আমরা যখন আমাদের সমস্যাগুলো কোয়াবকে
জানিয়ে এসেছি, তারা কোনো উদ্যোগ নিত না। আমরা ৬৪ জেলার যারা এসেছি, সবার একই দাবি,
কোয়াব পুনর্গঠন করা হোক।’
বিসিবির নতুন
পরিচালক নাজমুল আবেদীন ফাহিম, যিনি নিজেও একজন বরেণ্য কোচ ও ক্রিকেট সংগঠক, ক্রিকেটারদের
ফুলেল শুভেচ্ছা গ্রহণ করে তাদের দাবি মনোযোগ সহকারে শোনেন এবং প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ার
আশ্বাস দেন।
ফাহিমের আশ্বাসে
৬৪ জেলার ক্রিকেটাররা আশাবাদী যে, তাদের দাবি পূরণ হলে দেশের ক্রিকেটের সামগ্রিক উন্নয়ন
ঘটবে এবং জেলা পর্যায়ে ক্রিকেটারদের যথাযথ মর্যাদা ও সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত হবে।