আজঃ শুক্রবার ৩১ মে ২০২৪
শিরোনাম

মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগ স্থাপনের গুরুত্ব, কার্যক্রম এবং প্রয়োজনীয়তা

প্রকাশিত:মঙ্গলবার ৩১ জানুয়ারী ২০২৩ | হালনাগাদ:মঙ্গলবার ৩১ জানুয়ারী ২০২৩ | অনলাইন সংস্করণ
অধ্যাপক ডা. মো. শারফুদ্দিন আহমেদ

Image

মানোবিতিহাসে চিকিৎসা পেশার সাথে ফরেনসিক মেডিসিনের সর্ম্পক প্রাচীনতম, যা লিখিত কোড অব হামমুরাবি বা হিপোক্রেটিস প্রতিজ্ঞাই প্রমান করে। প্রাগৈতিহাসিক কাল থেকেই চিকিৎসা পেশা এবং আইন পারস্পরিক সর্ম্পকিত। যে বন্ধনগুলি প্রাগৈতিহাসিক কাল থেকে তাদের একত্র করেছিল তাহলো ধর্ম, কুসংস্কার এবং যাদুবিদ্যা। প্রাচীনসভ্যতা,আদিম আইনী কোড, ধর্মীয় ডকট্রাইন্স,সামাজিক বিধি এবং চিকিৎসা বিষয়বস্তু সহ আইনগুলি প্রায়শই তাদের নথিপত্রের মধ্যে পাওয়া যায়। ধর্মীয় আদালত এবং ক্যানন আইন স¤র্পকিত অনেক রীতিনীতি শুধু ধর্মীয় বিষয়ই নয় বরং চিকিৎসাতে ও ছিল। উদাহরণস্বরুপ পুরুষত্বহীনতা, বিবাহবিচ্ছেদ,প্রেগনেন্সী,গর্ভপাত,গর্ভধারণের সময়কাল এবং যৌন ডেভিয়েশন। লিখিত রের্কডগুলোর মধ্যে প্রাচীনতম হামমুরাবি কোড সর্ম্পকিত আইনি অর্ন্তভুক্তি ছিলো চিকিৎসা পরিসেবা প্রদান এবং শাস্তির বিধান সর্ম্পকীয়(২২০০ক্রিঃপ)। ফরেনসিক মেডিসিন চিকিৎসা পেশার সেই আইনি বিষয়াবলী এবং রীতিনীতি (নৈতিকতা) শিক্ষা প্রদান এবং অনুশীলন করে।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) দেশের একমাত্র শীর্ষস্থানীয় স্নাতকোত্তর মেডিকেল ইনস্টিটিউট। এটি ১৯৬৫ সালের ডিসেম্বরে ইনস্টিটিউট অব স্নাতকোত্তর মেডিকেল রিসার্চ (আইপিজিএমআর) এর ঐতিহ্য বহন করে। বর্তমান মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার  ঐকান্তিক পৃষ্ঠপোষকতায় ৩০.০৪.১৯৯৮ইং সালে উচ্চ চিকিৎসা ও গবেষণার সুযোগ বাড়ানোর জন্য আইপিজিএমআরকে একটি মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে রুপান্তর করে। বিভিন্ন বেশিষ্ট্যে উচ্চমানের স্নাতকোত্তর শিক্ষা প্রদান এবং চিকিৎসা সেবা প্রদানের জন্য ইতিমধ্যে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ঈর্ষনীয় খ্যাতি অর্জিত হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের বিদেশী এবং অন্যান্য পেশাদার সংস্থার সাথে সুদৃঢ় যোগাযোগ রয়েছে।

বিশ্ববিদ্যালয়টি দ্রুত প্রসারিত হচ্ছে এবং বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়টিতে পরিসেবা,শিক্ষাদান এবং গবেষণার জন্য আধুনিক প্রযুক্তিতে সজ্জিত অনেক বিভাগ রয়েছে। শিক্ষার পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয় চিকিৎসার বিভিন্ন শাখায় গবেষণা কার্যক্রম অনুশীলনে গুরত্বপূর্ন ভূমিকা পালন করে আসছে। প্রতিষ্ঠার পর থেকে বিশ্ববিদ্যালয় টারশিয়ারী স্তরের স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্র হিসেবে সাধারণ এবং বিশেষায়িত ক্লিনিক্যাল পরিসেবা সরবরাহ করে আসছে। বিশ^মানের সর্বাধুনিক চিকিৎসা সেবা প্রদানের লক্ষ্যে ইতিমধ্যে সুপার স্পেশালাইজড হাসপাতাল চালু হয়েছে। কিন্তু দুঃখের সাথে বলতে হয়, যে বিগত পঞ্চান্ন বৎসরে ও ফরেনসিক মেডিসিনের মতো একটি গুরুত্বপূর্ণ বিভাগ চালু করা হয়নি, যার জন্য বাংলাদেশের মেডিক্যাল শিক্ষায়, কর্মে এবং দক্ষতায় ফরেনসিক মেডিসিন পরিসেবা খাদের কিনারায় পৌছিয়াছে।

সাড়ে চারশত বৎসর পূর্বে ফ্রাঞ্চ প্রথম ফরেনসিক মেডিসিনকে স্বাস্থ্যশিক্ষা কার্যক্রমে একাডেমিক ডিসিপ্লিন হিসেবে অর্ন্তভুক্ত করে। ১৭৯৪ সালে প্রথম লিগাল মেডিসিনের প্রফেশনাল চেয়ার স্থাপনের ব্যবস্থা করেন। বিগত তিনশত বৎসর পূর্বে জার্মানি প্রথম লিগাল মেডিসিনের প্রফেশনাল চেয়ার স্থাপনের ব্যবস্থা করেন। দুইশত বিশ বৎসর পূর্বে গ্রেটব্রিটেনে (১৮০৩) প্রথম ফরেনসিক মেডিসিনের প্রফেশনাল চেয়ার এডিনর্বাগ বিশ্ববিদ্যালয়ে স্থাপন করেন। বিগত ২০০ বৎসর পূর্বে যুক্তরাষ্টের হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে (১৮১৩ সনে) প্রথম ফরেনসিক মেডিসিনের প্রফেশনাল চেয়ার স্থাপন করা হয়। পরবর্তী ৭০ বৎসর এর মধ্যে প্রত্যেক মেডিকেল স্কুলে ফরেনসিক মেডিসিনের চেয়ার স্থাপন করা হয়। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় ২০২১ইং সালে বাংলাদেশে প্রথম লিগ্যাল মেডিসিনের প্রফেশনাল চেয়ার স্থাপনের ব্যবস্থা করেন।

সম্প্রীতি (৩০.০৯.২০১৯) বিএসএমএমইউ,৭৫ তম সিন্ডিকেট সভায় ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগ প্রতিষ্ঠার প্রেক্ষাপটে এবং বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের অনুমোদন সাপেক্ষে ০১.০৭.২০২১ইং তারিখে বিএসএমএমইউ ফরেনসিক মেডিসিনের প্রথম চেয়ার স্থাপন করে। বিএসএমএমইউর ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগ মেডিকোলিগাল শিক্ষা এবং গবেষণা কার্যক্রম পরিচালনা, চিকিৎসা পেশার নৈতিক জ্ঞান, মেডিকোলিগাল পরিসেবা প্রদানে নেতৃত্ব, এবং শ্রেষ্ঠত্বের কেন্দ্রীয় সত্তা হিসাবে বাংলাদেশের ফরেনসিক মেডিসিনের সেরা অনুশীলন, গবেষণা সহায়তায় নিয়োজিত করবেন। ফরেনসিক মেডিসিনের গুরুত্ব এবং পরিসেবা সর্ম্পকে নিম্নেবর্ণিত কিছু আলোচনার মাধ্যমে এই বিশ্ববিদ্যালয়ে উক্ত বিষয়ের বিভাগ থাকাটা যে কত জরুরী ছিল সেটা ধারণা আসবে।

ফরেনসিক মেডিসিন, চিকিৎসা বিজ্ঞানের সর্বাধিক অগ্রগামী, চ্যালেঞ্জিং এবং আকর্ষণীয় শাখা, তবে বাংলাদেশে এই বিশ্বয়ানের যুগে ও এটি শিক্ষা ও গবেষণার ক্ষেত্রে পিছিয়ে আছে। ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার জন্য এবং সমাজে শান্তি বজায় রাখার জন্য ফরেনসিক মেডিসিন বিশ্ব জুড়ে গুরুতপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে। বিশ্বব্যাপী বেশিরভাগ দেশ, অপরাধ তদন্ত ও বিচার পরিচালনার সহায়তায়, মেডিকো-লিগাল কাজ সম্পাদনে আধুনিক অগ্রগতি ও প্রযুক্তি ব্যবহারের জন্য ফরেনসিক বিজ্ঞানের দক্ষতাকে উন্নতির কৌশল হিসাবে গ্রহণ করেছে। ডাক্তারেরা ফরেনসিক মেডিসিনের মাধ্যমে চিকিৎসা পেশার নৈতিকতা এবং আইনি বিষয়গুলোর শিক্ষা,দীক্ষা এবং বিশ্লেষনের জ্ঞান অর্জন করে। যার মাধ্যমে ডাক্তারেরা যেমন নীতিবান আদর্শ চিকিৎসা সেবার দৃষ্টান্ত স্থাপন করে,অবহেলা পরিহার করে, বৈধ পরিসেবা এবং আইন মোতাবেক চিকিৎসা প্রদান করার যোগ্যতা অর্জন করে। অন্যপক্ষে, প্রতিনিয়ত এই জ্ঞানের অভাবে ডাক্তারী পেশায় দূর্নাম, রোগীদের সাথে দূর্ব্যবহার, বিভিন্ন আইনি জটিলতার মোকাবেলা করতে হচ্ছে, ডাক্তার রুগীর সর্ম্পক নষ্ট হচ্ছে সামাজিক দূরত্ব এবং আস্থার অভাব দেখা যাচ্ছে।

চিকিৎসা ক্ষেত্রে নৈতিকতা এবং আইনি বিষয়গুলো: চিকিৎসা পেশা পরিচালনার সাথে অনেকগুলো আইন বিষয়ক বা সামাজিক বা নৈতিক দ্বন্দ্ব যা সাজারী চিকিৎসা, মেডিকেল পরীক্ষা বা ইন্টারভেনশনাল ডায়াগনষ্টিক বা চিকিৎসা ক্ষেত্রে উদ্ভব হয়। অহরহ ইনভেসিভ ডায়াগনষ্টিক পদ্ধতি ইন্টারভেনশনাল রেডিওলজি, এনজিওগ্রাম, ক্রিটিক্যাল কেয়ার, অঙ্গ প্রতিস্থাপন, ইনফর্মড কনসেন্ট, দুঃসংবাদ প্রকাশে এবং রেসাসসিটেশন পদ্ধতি ইত্যাদির মতো নতুন  চিকিৎসা পদ্ধতিতে প্রচুর নৈতিক ও মেডিকো-লিগাল নিত্যনতুন সমস্যা উদ্ভব হয়। মাঝে মাঝে চিকিৎসা প্রতিষ্ঠান এবং অন্যান্য স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রগুলি ক্রমবর্ধমান আইনী ও নৈতিক দ্বন্দের সাথে জড়িত হচ্ছে। প্রত্যেক চিকিৎসকদের স্বাস্থ্যসেবার প্রথমদিন থেকেই মেডিকো-লিগাল সমস্যা মোকাবেলা করতে হয়।

সম্প্রতি স্টেকহোল্ডাররা চিকিৎসকদের নীতিগত আচরণ, আইনী প্রত্যাশা, যোগাযোগ ও আচরণের পাশাপাশি প্রতিটি অনুশাসন চিকিৎসা পাঠ্যক্রমে সমাজ প্রত্যাশানুযায়ী এবং প্রাসঙ্গিক বিষয়ে অপর্যাপ্ততা সম্বোধনে তাদের গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। ফরেনসিক মেডিসিন, চিকিৎসা এবং মেডিকো-লিগাল অনুশীলনের সাথে সম্পর্কিত সমস্ত নৈতিক ও আইনী দিকগুলির শিক্ষা, প্রশিক্ষণ এবং অনুশীলনের সাথে জড়িত। এছাড়া ফরেনসিক মেডিসিন সবধরনের মেডিকো-লিগাল কাজ পরিচালনা করে।  

মানবধিকার সুরক্ষায় ফরেনসিক মেডিসিনের ভূমিকা: সমাজে অপরাধ এবং অপরাধী সনাক্তকরণে, অপরাধ তদন্তে এবং বিচার প্রার্থীর সুবিচার প্রাপ্তিতে, মানবাধিকার প্রতিষ্ঠায় এবং সংরক্ষণে, ডাক্তারি পেশায় আইন-কানুন এবং নৈতিকতা অনুশীলনে, ফরেনসিক মেডিসিন গুরত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে।

প্রাকটিশনার হিসাবে ভূমিকা: ফৌজদারী কার্যবিধি ১৯৭৩,ধারা ৫৩ অনুসারে প্রমাণ সংরক্ষণ,আহত বা অসুস্থতার ডকুমেন্টেশন এবং তার চিকিৎসা নির্ধারনের জন্য হেফাজতে নেওয়া ব্যাক্তির বাধ্যতামূলক মেডিকেল পরীক্ষা নির্ধারন করে। এছাড়া  মহিলাদের শারিরীক পরীক্ষা কেবলমাত্র একজন মহিলা নিবন্ধিত চিকিৎসক দ্বারা বা এর তত্ত্বাবধানে করা উচিৎ। প্রায়শই এই জাতীয় চিকিৎসা এবং পরীক্ষার জন্য ফরেনসিক বিশেষজ্ঞ দ্বারা মূল্যায়ন প্রয়োজন হয়।

অঙ্গদানের ভূমিকা: বাংলাদেশে অঙ্গদান (মৃতদেহের বা ব্রেন ডেথ) এবং মানব অঙ্গগুলির প্রতিস্থাপন হিউম্যান অর্গানস ট্রান্সপ্ল্যান্টেশন আইন ১৯৯৯ইং (২০১৩ইং সালে সংশোধিত) দ্বারা পরিচালিত হয়। এক্ষেত্রে ফরেনসিক মেডিসিন বিশেষজ্ঞ সর্ম্পক, আইনী সংস্থাগুলি, অর্গান ব্যাংক এবং ট্রান্সপ্ল্যান্ট সার্জনদের মধ্যে সমন্বয় সাধন করে অঙ্গদানের (মৃতদেহের বা ব্রেন ডেথ) সহায়তায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। যাই হোক মানব অঙ্গগুলির ন্যায়সঙ্গত এবং যৌক্তিক বরাদ্ধে গুরুত্বপূর্ণ মানবাধিকার সর্ম্পকিত বিষয়গুলি যথাযথভাবে মোকাবেলা করা দরকার। এক্ষেত্রে ফরেনসিক মেডিসিনের ভূমিকা অপরিসীম।   

মেডিকেল শিক্ষার ভূমিকা: বাংলাদেশে স্নাতক এবং স্নাতকোত্তর ফরেনসিক মেডিসিন কোর্সের পাঠ্যক্রমটিতে মানবাধিকার সর্ম্পকিত বিষয়সহ, চিকিৎসা পেশার রীতিনীতি আইন কানুন এবং মেডিকো-লিগাল কাজ অর্ন্তভুক্ত রয়েছে। ফরেনসিক মেডিসিনে যে বিষয়গুলো শেখানো হয়েছে তার মধ্যে রয়েছে চিকিৎসা প্রাকটিসের আইনি এবং নৈতিকদিক, মেডিকো-লিগাল কাজ, গ্রাহক সুরক্ষা আইন, মানব পরীক্ষা আইন, রোগীদের অধিকার, রোগীদের প্রতি চিকিৎসকের কর্তব্য, নির্যাতন, মানবাধিকার কমিশনের ঘোষনা, ঘোষিত রীতিনীতি, মানবাধিকার সর্ম্পকিত চিকিৎসা নীতি ও আইন অর্ন্তভুক্ত, ফরেনসিক টক্সিকোলজি, প্রাকৃতিক দূর্যোগ ব্যবস্থাপনা, মৃত্যু, ক্রিমিনাল গর্ভপাত, শিশু হত্যা ও অনাহার। সুতরাং ফরেনসিক মেডিসিন মানবাধিকার সুরক্ষায়প্রত্যেক সদস্যকে সৈনিক হিসেবে প্রস্তুত করে থাকে।

গ্রাহক অধিকার সংরক্ষণের ভুমিকা : সমস্ত গ্রাহকরা সুরক্ষার অধিকার,অবহিত হবার, পছন্দ করার, শোনার, সমাধানের, ভোক্তা শিক্ষার এবং আশ^স্ত হবার অধিকারের অধিকারী। মেডিসিন অনুশীলনে নিরাময়ের পাশাপাশি নৈতিকতা, মেডিকো-লিগাল বা আইনী দিক সর্ম্পকিত বিষয় জড়িত, যেমন চিকিৎসক-রোগীর সর্ম্পক, ডাক্তার-ডাক্তার সর্ম্পক, চিকিৎসক-রাষ্ট্রের সর্ম্পকে ডাক্তারদের কর্তব্য, রোগীদের প্রতি বাধ্যবাধকতার পাশাপাশি ডাক্তারদের আচরণ, চিকিৎসা অবহেলা, অপব্যবহারসহ চিকিৎসার অনুশীলনের আইনী দিক ইত্যাদি। এছাড়া মেডিকেল কাউন্সিল দ্বারা নির্ধারিত আচরণ বিধি, নিবন্ধিত মেডিকেল প্রাকটিশনারদের ক্রিয়াকলাপ পরিচালনা এবং নিয়ন্ত্রন করে এবং জনগনকে প্রতারক ও হাতুড়ে ডাক্তারের হাত থেকে সুরক্ষা করে। উপরোক্ত বিষয়াবলী সর্ম্পকে আগামীদিনের চিকিৎসকদের শিক্ষা এবং প্রশিক্ষণের মাধ্যমে দক্ষতা অর্জনে ভুমিকা পালন করে থাকে ফরেনসিক মেডিসিন। উপরোন্ত বিচার ব্যবস্থাপনা এবং অপরাধ তদন্ত ছাড়া পারিবারিক সহিংসতা প্রতিরোধে, মানসিক রোগীদের মানবাধিকার রক্ষায়, শিশু এবং বয়স্কদের অধিকার সুরক্ষায়, লিঙ্গ ভিত্তিক বৈষম্যতা, যৌন হয়রানি বন্ধে, মানব পাচার, সামাজিক দন্দ¦, রাজনৈতিক দন্দ¦, জাতিগত দন্দ¦ নিরসনে এবং প্রাকৃতিক দূর্যোগ ব্যবস্থাপনায় ফরেনসিক মেডিসিন বিশেষ ভুমিকা পালন করে।

ময়নাতদন্ত বা পোষ্টমর্টেম বা অটোপসি কার্যক্রম পরিচালনা: ময়নাতদন্ত বা পোষ্টমর্টেম বা অটোপসি মানে মৃতদেহ পরীক্ষা করা। যার মাধ্যমে জানা যায় কোন ব্যাক্তির মৃত্যুর রহস্য বা জীবিত থাকা অবস্থায় তার সাথে ঘটে যাওয়া নানা অপরাধের ধরণ। ময়নাতদন্ত চিকিৎসা বিজ্ঞানের দীর্ঘ সাধনা ও গবেষনার ফল। ময়না তদন্ত বা পোষ্টমর্টেম বা অটোপসি এমন একটি শল্য চিকিৎসা পদ্ধতি যা মৃত্যুর কারণ, ধরণ এবং প্রকৃতি নির্ধারনের জন্য অথবা গবেষণা বা চিকিৎসা শিক্ষামূলক উদ্দেশ্য কোন রোগ বা আঘাতের মূল্যায়ন করার জন্য একটি বৈজ্ঞানিক এবং নির্ভূল ব্যবচ্ছেদ এর মাধ্যমে মৃতদেহ পরীক্ষা নিরীক্ষা করা। ময়নাতদন্ত এমন ডাক্তার দ্বারা পরিচালিত হয় যারা মৃত্যুর প্রকৃতি ও কারণগুলি বোঝার ক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞ, দেহের তরল বা টিস্যু পরীক্ষা করে রোগ নির্নয়ে বিশেষ প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত এবং কিভাবে কখন কেউ মারা গেছে সে সর্ম্পকে প্রয়োজনীয় তথ্য সরবরাহ করতে সক্ষম।

ময়নাতদন্তের মূল লক্ষ্য হলো প্রাথমিকভাবে মৃত্যুর প্রকৃতকারণ, মৃত্যুর ধরণ, মৃত্যুকাল, মৃত্যু সংশ্লিষ্ট তথ্য প্রমানাদি  সংগ্রহ ও সংরক্ষণ, বিষক্রিয়ায় মুত্যু হলে বিষের ধরণ, রোগের ব্যাপ্তি চিহ্নিতকরণ বা বৈশিষ্ট নির্ধারণ, অথবা কোন ব্যাক্তি মৃত্যুর পূর্বে স্বাস্থ্যের অবস্থা এবং প্রদত্ত নির্দিষ্ট চিকিৎসা বা শল্য চিকিৎসা কার্যকর বা উপযুক্ত ছিলো কিনা নির্ধারণ করাসহ প্রয়োজনীয় প্যাথোলজিক্যাল, কেমিক্যাল, রেডিওরজিক্যাল, সেরোলজিক্যাল প্রভৃতিসহ সব জৈবাঙ্গ পরীক্ষা করার মাধ্যমে মানুষের মৃত্যু রহস্য উদঘাটন করা। আকস্মিক মৃত্যুর ক্ষেত্রে, যেখানে কোন চিকিৎসক মৃত্যুর প্রত্যয়নপত্র লিখতে সক্ষম হন না বা যখন মনে করা হয় যে মৃত্যুটি কোন অস্বাভাবিক কারণে সংঘটিত, সেই সব ক্ষেত্রে ময়নাতদন্ত প্রায়শই করা হয়। সর্বোপরি চিকিৎসা বিজ্ঞানের বর্তমান উন্নতির মূলে ময়নাতদন্তই মূখ্য ভূমিকা পালন করে আসছে।

ক্লিনিক্যাল অটোপসি : ময়নাতদন্তের মাধ্যমে মৃত্যুর কারণ নির্ধারণ হয় আইনী উদেশ্যে এবং শিক্ষা বা গবেষণার জন্য। একটি সন্দেহপ্রবণ বা অস্বাভাবিক মৃত্যুর ক্ষেত্রে ময়নাতদন্ত আইনী কর্তৃপক্ষের অধীনে করা হয় এবং সেক্ষেত্রে মৃত ব্যাক্তির স্বজনদের সম্মতির প্রয়োজন হয়না। অন্যদিকে স্বজনদের অনুমতি প্রাপ্তি সাপেক্ষে গবেষণার উদ্দেশ্যে মৃত্যুর মেডিকেল কারণ অনুসন্ধানের জন্য ক্লিনিক্যাল বা একাডেমিক ময়নাতদন্ত সম্পন্ন করা হয়। ইতালিয়ান ডাক্তারদের ময়নাতদন্তের মাধ্যমে প্রথম পৃথিবীর সবাই জানলো, কোভিড-১৯ মহামারিতে থ্রম্বোলিজমে মৃত্যুর কথা। চিকিৎসা বিজ্ঞানের আজকের পর্যন্ত এর অবদান এবং উন্নতির পিছনে সবচেয়ে গুরত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করেছে ক্লিনিক্যাল অটোপসি। রোগ নির্ণয়, নির্ণয়কৃত রোগের স্বীকৃতি/ নতুন প্যাথলজির অন্বেষণ মৃতদেহের ক্লিনিক্যাল অটোপসির নিশ্চয়তার মাধ্যমে চিকিৎসা বিজ্ঞানীরা জানতে পেরেছেন। আধুনিক উন্নতর প্রযুক্তি এবং চিকিৎসা বিজ্ঞানে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার অর্ন্তভক্তি রোগ নির্ণয় সহজতর করেছে, তবুও ক্লিনিক্যাল অটোপসির অবদান এখন পর্যন্ত কোন মহল অস্বীকার করতে পারছেনা।

ক্লিনিক্যাল এবং মেডিকোলিগাল সার্ভিস: ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগ মেডিকো-লিগাল পরিসেবা সম্পন্ন করে, জনসাধারণ পেয়ে থাকে, প্রয়োজনীয় পরিসেবাগুলি যেমন ময়নাতদন্ত সহ অন্যান্য মেডিকো-লিগাল কাজ, বিষ নির্নয় ও চিকিৎসা, ডিএনএ-র প্রোফাইল দ্বারা পারিবারিক সম্পর্কের নির্ধারণ (পিতৃত্ব মাতৃত্ব নির্ধারণ, ভাই বোনসহ পারিবারিক সম্পর্ক নির্ধারণ) এবং পরিচিতি নির্ধারণ করা সম্ভব হবে। এছাড়া ও মৃত্যুর নিরীক্ষণ এবং স্বাস্থ্যসেবা বিতরণ এবং গবেষণার ক্ষেত্রে আরো উন্নততর কৌশল গ্রহণের জন্য মৃত্যুর কারণগুলির র্ভাচুয়াল ময়নাতদন্তের মাধ্যমে চিকিৎসা বিজ্ঞানের অন্যান্য শাখা সমৃদ্ধ হবে। অবশেষে বিভাগটি মেডিকো-লিগাল দিক তদারকির জন্য দেশের একটি সুপার স্পেশালাইজড মেডিকো-লিগাল শাখা হিসেবে মেডিকো-লিগাল পরিসেবা ও শিক্ষার ব্যবস্থা করবে।

ক্রিমিনোলজি এবং আধুনিক প্রযুক্তি বিজ্ঞানের অগ্রগতির সাথে সাথে ফরেনসিক মেডিসিন চিকিৎসা বিজ্ঞানের দ্রুত বিকাশকারী গুরত্বপূর্ন শাখায় পরিণত হয়েছে। বাংলাদেশের বাইরের দেশগুলি এটি উপলদ্ধি করে এই অনুশাসনে তাদের মানবসম্পদ বিকাশের দিকে ফরেনসিক মেডিসিনের শিক্ষণ এবং প্রশিক্ষণের উন্নতির সাথে পরিমানগত এবং গুনগত পরিবর্তন এনেছে। বাংলাদেশে বেসরকারি এবং পাবলিক উভয় মেডিকেল কলেজের ফরেনসিক মেডিসিনে যথাযথ যোগ্যতাসম্পন্ন পেশাদার বিশেষজ্ঞের পাশাপাশি শিক্ষকদের গুরতর ঘাটতি রয়েছে। ফরেনসিক মেডিসিন চিকিৎসা বিজ্ঞান এবং মেডিকো-লিগাল সমস্যার সাথে সর্ম্পকিত নৈতিক ও আইনী দিকগুলির শিক্ষাদান, শেখার এবং অনুশীলনের সাথে জড়িত। মেডিকো-লিগাল দিক বিবেচনা করে ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগ মেডিকেল কারিকুলাম পরিকল্পনা করার উপযুক্ত সংস্থা হবে এবং মেডিকো-লিগাল সমস্যাগুলির সমাধানের জন্য সর্বোচ্চ সংস্থার প্রতিনিধিত্ব করবে। একটি সুপ্রীম মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হিসাবে দেশের জন্য বিএসএমএমইউর অন্যতম জাতীয় প্রতিশ্রুতি হিসাবে প্রয়োজনীয় এবং দক্ষ মেডিকো-লিগাল পরিসেবাগুলি সরবরাহ করবে। এছাড়া  মৃত্যুর নিরীক্ষণ এবং স্বাস্থ্যসেবা বিতরণ গবেষণার ক্ষেত্রে আরো কৌশল গ্রহনের জন্য রোগীর মৃত্যুর কারণগুলি নির্ণয়ে, র্ভাচুয়াল মৃত্যুর ময়নাতদন্তের মাধ্যমে অন্যান্য শাখা সমৃদ্ধি হবে। 

ফরেনসিক মেডিসিন চিকিৎসা ক্ষেত্রে মেডিকেল এবং মেডিকো-লিগাল  কাজের অনুশীলনের রীতিনীতি ও আইন-কানুন বিষয়ে একাডেমিক কার্যক্রম পরিচালনার সাথে মেডিকো-লিগাল কার্যক্রম পরিচালনা করে এবং গবেষণায় ভূমিকা রাখবে। আগামীদিনে চিকিৎসা পেশায় আইনী দিক (আইন-কানুন) চিকিৎসা পেশার রীতিনীতির মেডিকেল ইথিক্স এবং মেডিকো-লিগাল কার্যক্রমে শিক্ষা গবেষণা নেতৃত্বের মাধ্যমে বাংলাদেশের বিচার ব্যবস্থা এবং অপরাধ দমনে মূখ্য ভূমিকা রাখবে। বাংলাদেশে স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে দীর্ঘদিনের অবহেলিত ফরেনসিক মেডিসিনকে আধুনিকায়ন করতে হলে বিশ্বমানের উন্নত প্রযুক্তি সংযুক্ত করা একান্ত প্রয়োজন। সুতরাং এ বিষয়ে উন্নত গবেষণা এবং কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়নে অবিলম্বে ফরেনসিক ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠার প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করার জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সুদৃষ্টি কামনা করছি।

লেখক: ভাইস-চ্যান্সেলর, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়


আরও খবর



রেমালে উত্তাল সাগর, গোসল করছেন পর্যটকেরা

প্রকাশিত:সোমবার ২৭ মে ২০২৪ | হালনাগাদ:সোমবার ২৭ মে ২০২৪ | অনলাইন সংস্করণ
জেলা প্রতিনিধি

Image

বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় রেমালের কারণে উত্তাল সাগর। জোয়ারের পানির উচ্চতা স্বাভাবিকের চেয়ে বৃদ্ধি পেয়ে কূলে আঘাত হানছে। সোমবার (২৭ মে) সকাল পর্যন্ত কক্সবাজার শহরে ভারী বৃষ্টিপাত হচ্ছে।

এমন বৈরী পরিবেশের মধ্যেও পর্যটকেরা ঝুঁকি নিয়ে উত্তাল সমুদ্রে গোসল করতে নামছেন। ট্যুরিস্ট পুলিশ, লাইফগার্ড কর্মীরা নানাভাবে চেষ্টা করেও পর্যটকদের সমুদ্র থেকে তুলে আনতে পারছে না বলে জানা গেছে।

লাবনী পয়েন্টে গিয়ে সরেজমিনে দেখা যায়, সুগন্ধা পয়েন্টে ৪০-৫০ জন পর্যটক উত্তাল সাগরে গোসল করছেন। তাদের সাগরে নামতে বাধা দিয়েও লাভ হয়নি।

জিয়াসমিন নামের এক পর্যটক বলেন, বন্ধুদের সঙ্গে ঘুরতে এসেছি। তারা গোসল করছে তাই আমিও নামলাম।

সি সেফ লাইফগার্ডের কর্মকর্তা জয়নাল আবদিন ভুট্টু বলেন, এই মুহূর্তে সাগর খুবই উত্তাল। বাতাসের গতি বেড়েছে ও ভারী বৃষ্টিপাত হচ্ছে। এ সময় সাগরে রিপ কারেন্ট সৃষ্টি হয়। তাই গোসল করা বিপদজনক। আমরা বিষয়টি ম্যাজিস্ট্রেট স্যারকে জানিয়েছি।

কক্সবাজার পর্যটক সেলের ম্যাজিস্ট্রেট মাসুদ রানা বলেন, যারা গোসল করছিল তাদের সাগর থেকে উঠানো হয়েছে। এরপর যারা মানবে না তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

নিউজ ট্যাগ: ঘূর্ণিঝড় রেমাল

আরও খবর



যারা দুর্নীতি করেছে তাদের সবার তথ্য প্রধানমন্ত্রীর কাছে আছে: ওবায়দুল কাদের

প্রকাশিত:শুক্রবার ৩১ মে ২০২৪ | হালনাগাদ:শুক্রবার ৩১ মে ২০২৪ | অনলাইন সংস্করণ
নিজস্ব প্রতিবেদক

Image

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, যারা দুর্নীতি করেছে তাদের সবার তথ্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে আছে। দুর্নীতিবাজরা বিচারের আওতায় আসছে। শুক্রবার (৩১ মে) বেলা সাড়ে ১১টায় ধানমন্ডিতে ব্রিফিংয়ে তিনি এই কথা বলেন।

ওবায়দুল কাদের বলেন, দুর্নীতির বিরুদ্ধে সরকার নির্বিকার নয়। প্রধানমন্ত্রীর কাছে সব খবর আছে। প্রধানমন্ত্রী অফিসের কিছু লোককেও শাস্তি দিয়েছেন। খালেদা জিয়ার আমলে তারা কি কাউকে শাস্তি দিয়েছিল? তখন প্রধানমন্ত্রীর অফিস ছিল দুর্নীতি আখড়া।

এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক বিএম মোজাম্মেল হক, মির্জা আজম, আফজাল হোসেন, দপ্তর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়া, ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ বিষয়ক সম্পাদক আমিনুল ইসলাম, শিক্ষা ও মানবসম্পদ বিষয়ক সম্পাদক শামসুন্নাহার চাপা, উপ দপ্তর সম্পাদক সায়েম খান, কার্যনির্বাহী সদস্য সাহাবুদ্দিন ফরাজী, আনিসুল ইসলাম প্রমুখ।

নিউজ ট্যাগ: ওবায়দুল কাদের

আরও খবর



চিকিৎসার জন্য ভারতে গিয়ে নিখোঁজ এমপি আনোয়ারুল আজিম

প্রকাশিত:রবিবার ১৯ মে ২০২৪ | হালনাগাদ:রবিবার ১৯ মে ২০২৪ | অনলাইন সংস্করণ
ঝিনাইদহ প্রতিনিধি

Image

চিকিৎসার জন্য ভারতে গিয়ে নিখোঁজ হয়েছেন ঝিনাইদহ-৪ আসনের আওয়ামী লীগের দলীয় সংসদ সদস্য (এমপি) আনোয়ারুল আজিম আনার। গত কয়েক দিন ধরে তার সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়ে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায় পড়েছেন পরিবারের সদস্যরা।

আনোয়ারুল আজিম আনারের সন্ধানে গত শনিবার ভারতে গেছেন তার ভাতিজা সাইমনসহ আরও তিনজন। কিন্তু আজ রবিবার পর্যন্ত তারা কোনো খোঁজ পাননি। তাকে খুঁজে বের করতে ভারতীয় কর্তৃপক্ষ কাজ করছে।

এ বিষয়ে এমপির ব্যক্তিগত সহকারী আবদুর রউফ বলেন, গত ১২ মে ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ থেকে চুয়াডাঙ্গার দর্শনা বর্ডার হয়ে চিকিৎসার জন্য ভারত যান আনার। তিনি পশ্চিমবঙ্গের নিউ টাউন এলাকায় বন্ধু গোপালের বাসায় ওঠেন। ১৩ মে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে হোয়াটসঅ্যাপে কথা হয় সংসদ সদস্যের। পরের দিন ১৪ মে একবার কথা হওয়ার পর তার মোবাইল ফোন ও হোয়াটসঅ্যাপে আর যোগাযোগ করতে পারেনি পরিবারের সদস্য ও রাজনৈতিক নেতারা।

আবদুর রউফ আরও বলেন, আনোয়ারুল আজিম আনার নিখোঁজ থাকার বিষয়টি পরিবারের সদস্যরা প্রধানমন্ত্রীকে অবগত করেছেন। নিখোঁজের বিষয়টি নিয়ে ইতোমধ্যেই বিভিন্ন গোয়েন্দা বিভাগ খোঁজ নিতে শুরু করেছেন।

এ বিষয়ে ঝিনাইদহ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাবেক এমপি শফিকুল ইসলাম অপু বলেন, আমরা এই বিষয়টা জানতে পারিনি। তবে ঘটনা সত্য হলে তা খুবই উদ্বেগ ও দুঃখজনক বিষয়। বিষয়টি দল ও সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি জানানো হবে।

জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাইদুল করিম মিণ্টু বলেন, বিষয়টি আনারের পরিবার আজকেই আমাকে জানিয়েছে। আমি দলীয় সকল স্থানে জানিয়েছি।

কালীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ আবু আজিফ বলেন, এমপি নিখোঁজ থাকার খবর লোকমুখে শুনেছি। তবে এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত কেউ অভিযোগ করেনি।

এ বিষয়ে ভারতের কলকাতাস্থ বাংলাদেশ ডেপুটি হাইকমিশনের ফার্স্ট সেক্রেটারি রমজান সেন বলেন, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে জানার পর বিষয়টি ভারতীয় কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। তারাও খোঁজ করেছে। এ বিষয়ে পরে বিস্তারিত জানানো হয়।


আরও খবর



চেয়ারম্যান প্রার্থীর টাকা না নেওয়ায় পোলিং অফিসারকে মারধর

প্রকাশিত:সোমবার ২০ মে ২০24 | হালনাগাদ:সোমবার ২০ মে ২০24 | অনলাইন সংস্করণ
শাওন মিয়া (জাজিরা) শরীয়তপুর

Image

৬ষ্ঠ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান প্রার্থীর টাকা নিতে অস্বীকৃতি প্রকাশ করায় এক পোলিং অফিসারকে মারধর করার অভিযোগ উঠেছে শরীয়তপুরের জাজিরা উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের মোটরসাইকেল প্রতীকের চেয়ারম্যান প্রার্থী মোহাম্মদ ইদ্রিস ফরাজির সমর্থকদের বিরুদ্ধে।

রোববার (১৯ মে) রাতে শরীয়তপুরের জাজিরা উপজেলার বিকে নগর বাজারে এ ঘটনা ঘটে।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, আগামীকাল ২১ মে ৬ষ্ঠ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের দ্বিতীয় ধাপে অনুষ্ঠিত হবে জাজিরা উপজেলা পরিষদ নির্বাচন। নির্বাচনে ২৫ নং বিকে নগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক মীর আবু সাইদ পোলিং অফিসার হিসেবে দায়িত্ব পেয়েছেন। পোলিং অফিসার হিসেবে নির্বাচনী প্রশিক্ষণ নিয়ে রোববার রাতে মীর আবু সাইদ বাড়ির পার্শ্ববর্তী বিকে নগর বাজারে গিয়েছিলেন। রাত আনুমানিক ১০ টার দিকে। পরে অজ্ঞাত এক যুবককে দিয়ে মীর আবু সাইদকে বাজারের এক পাশে ডেকে নিয়ে যায় বিকে নগর ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান সাইদুর রহমান সরদার, আব্দুল আলী সরদার ও মজিবুর বানিয়া। এ সময় সাইদুর রহমান সরদারসহ অন্যান্যরা মীর ইমরান আলীকে নির্বাচনের দিন মোটরসাইকেল প্রতীকের চেয়ারম্যান প্রার্থী মোহাম্মদ ইদ্রিস ফরাজির পক্ষে কাজ করার জন্য অনুরোধ করেন। বিনিময়ে তাকে মোটা অঙ্কের টাকাসহ অন্যান্য সুযোগ সুবিধা প্রদান করা হবে বলে জানানো হয়। সরকারি কাজে নিয়োজিত একজন ব্যক্তি হিসেবে মীর আবু সাইদ এমন প্রস্তাবে রাজি হননি। এরপর সাইদুর রহমান সরদার, আব্দুল আলী সরদারসহ অন্যান্যরা মীর আবু সাইদকে মারধর করেন। খবর পেয়ে মীর আবু সাইদের স্বজন ও স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠিয়েছে। হাসপাতাল থেকে প্রাথমিক চিকিৎসার পরে বর্তমানে তিনি নিজ বাড়িতে অবস্থান করছেন মীর আবু সাইদ। এ ঘটনায় জাজিরা উপজেলার শিক্ষকসহ অন্যান্যদের মধ্যে ক্ষোভ বিরাজ করছে।

পোলিং অফিসার ও শিক্ষক মীর আবু সাইদ বলেন, আসছে ২১ তারিখের উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে পোলিং অফিসার হিসেবে দায়িত্ব আমাকে দেওয়া হয়েছে। প্রশিক্ষণ শেষে আমি বাড়িতে অবস্থান করছিলাম। এসময় ব্যক্তিগত কাজে বাজারে গেলে একজন লোক আমাকে ডেকে নিয়ে যায় সাবেক চেয়ারম্যান সাইদুর রহমানসহ অন্যান্যদের কাছে। তারা আমাকে টাকার বিনিময়ে মোটরসাইকেল প্রতীকের পক্ষে কাজ করার জন্য প্রস্তাব দিলে আমি অস্বীকৃতি জানাই। এরপর তারা আমাকে মারধর করেছে। বিষয়টি নিয়ে আমি চিন্তিত হয়ে পড়েছি। বিষয়টি নিয়ে আমি আমার সিনিয়র শিক্ষকদের সঙ্গে আলোচনা করে রিটার্নিং কর্মকর্তাসহ সংশ্লিষ্টদের নিকট অভিযোগ দেব।

অভিযুক্ত মোটরসাইকেল প্রতীকের সমর্থক ও বিকে নগর ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান সাইদুর রহমান সরদার বলেন, আপনি কোথা থেকে বিষয়টি জেনেছেন, তা আমি জানিনা। মীর আবু সাইদ এমন কোনো বংশের ছেলে নয় যে, তাকে ম্যানেজ করতে পারলে একশ ভোট পাওয়া যাবে। তার সঙ্গে আমাদের কারও এমন কোনো ঘটনা ঘটেনি৷ বিষয়টি সম্পূর্ণ মিথ্যা ও ভিত্তিহীন।

বিষয়টি নিয়ে জানার জন্য মোটরসাইকেল প্রতীকের চেয়ারম্যান প্রার্থী মোহাম্মদ ইদ্রিস ফরাজির সাথে তার মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করার চেষ্টা করলে তিনি ফোন ধরেননি।

জাজিরা উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষক সমাজের মহিলা বিষয়ক সম্পাদক আফরোজা আক্তার সুমি বলেন, আমরা সরকারি চাকুরি করি। সরকারের দেওয়া দায়িত্ব পালন করাই আমাদের কাজ। নির্বাচন একটি রাজনৈতিক ইস্যু। কারও পক্ষ নিয়ে কাউকে রাজনৈতিক ভাবে সুযোগ সুবিধা প্রদান করা সম্পূর্ণ অনৈতিক ও আইনগত ভাবে অন্যায়। আমাদের শিক্ষক মীর আবু সাইদ এমন একটি প্রস্তাবে সম্মতি না দেওয়ায় তাকে মারধর করা হয়েছে। যা সম্পূর্ণ ভাবে অন্যায়। বিষয়টি নিয়ে আমরা উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কাছে অভিযোগ দায়ের করব।

বিষয়টি নিয়ে জাজিরা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা সাদিয়া ইসলাম লুনা বলেন, বিষয়টি নিয়ে এখনো কেউ অভিযোগ দেয়নি। যদি লিখিত অভিযোগ পাই, তাহলে আইনগতভাবে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।


আরও খবর



কলকাতায় নেওয়া হচ্ছে এমপি আনারের মেয়ে-ভাইকে

প্রকাশিত:বুধবার ২৯ মে ২০২৪ | হালনাগাদ:বুধবার ২৯ মে ২০২৪ | অনলাইন সংস্করণ
নিজস্ব প্রতিবেদক

Image

ঝিনাইদহ-৪ আসনের সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজিম আনারের দেহাংশ নিশ্চিত করতে তার মেয়ে মুমতারিন ফেরদৌস ডরিন ও তার ভাইকে কলকাতার ডাকা হয়েছে। কলকাতার নিউটাউনের সঞ্জিভা গার্ডেনের সেই ফ্ল্যাটের টয়লেটের সেপটিক ট্যাংক থেকে প্রায় চার কেজি মাংস উদ্ধার হয়েছে। এবারে এই খন্ডিত মাংসগুলো এমপি আনারের দেহাংশ কি না তা নিশ্চিত করতে তার মেয়ে ডরিনকে কলকাতায় ডাকা হয়েছে। সঙ্গে যাচ্ছেন এমপি আনারের ভাই।

মঙ্গলবার (২৮ মে) রাতে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিবি) গোয়েন্দা শাখার প্রধান হারুন অর রশিদ এমনটা জানান। বর্তমানে তার নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশের তিন সদস্যের একটি গোয়েন্দা দল কলকাতায় অবস্থান করছে।

ডিবি প্রধান বলেন, এমপি আনারের পরিবারের কাউকে কলকাতায় নিয়ে আসা ছাড়া দ্রুততম সময়ে লাশ শনাক্তকরণ সম্ভব নয়। তাই তার মেয়ে ডরিনকে ইতোমধ্যে বিষয়টি জানানো হয়েছে। আশা করছি, দু-একদিনের মধ্যে ডরিন এবং এমপির ভাই কলকাতায় আসতে পারেন।

তিনি বলেন, উদ্ধার হওয়া ওই মাংসগুলো এমপি আনারের কিনা তা দেখতে ফরেনসিক ল্যাবে নেওয়া হবে। মাংসের টুকরোগুলো সংরক্ষণ করে রাখা হয়েছে। পরবর্তী পদক্ষেপ হিসেবে সেটা ফরেনসিক ল্যাবে পাঠানো হবে এবং ডিএনএ পরীক্ষা করা হবে। এরপরই নিশ্চিত হওয়া যাবে এটি এমপি আনারের লাশ কি না।

হারুন আর রশিদ বলেন, ঘাতকের কাছ থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী আমরা কলকাতার বিভিন্ন জায়গায় যাচ্ছি। এমনকি ধৃতের বয়ান অনুযায়ি খালেও মাংসের টুকরো উদ্ধার অভিযান চলবে বলেও জানান তিনি।

ডিবি প্রধান আরও বলেন, একটা মামলা করতে গেলে পারিপার্শ্বিক সাক্ষ্য যেমন দরকার তেমন শরীরের পুরো অংশ না হলেও খণ্ডিত কিছু অংশ প্রয়োজন হয়। সেজন্য আমাদের অনুরোধে সিআইডি সেপটিক ট্যাংকে তল্লাশি চালিয়ে কিছু মাংস উদ্ধার করেছে। মাংসের সঙ্গে চুল উদ্ধার হয়েছে।

গত ১২ মে চিকিৎসার জন্য ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ থেকে চুয়াডাঙ্গার দর্শনার গেদে সীমান্ত দিয়ে ভারতে যান এমপি আনোয়ারুল আজিম আনার। তিনি পশ্চিমবঙ্গে বরাহনগর থানার মণ্ডলপাড়া লেনে গোপাল বিশ্বাস নামে এক বন্ধুর বাড়িতে ওঠেন। পরদিন ডাক্তার দেখানোর কথা বলে বাড়ি থেকে বের হন। এরপরই নিখোঁজ হন তিনি।


আরও খবর