বাল্যবিবাহ বন্ধের অযুহাতে গভীর রাতে একটি পরিবারের সদস্যদের উপর হামলা ও তিনজনকে তার অফিস কক্ষে একদিন আটকে রেখে ৭০,০০০/- (সত্তর হাজার) টাকা ঘুষ আদায়ের অভিযোগ পাওয়া গেছে ঝালকাঠির কাঁঠালিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ মিজানুর রহমানের বিরুদ্ধে।
গত রোববার (৮ এপ্রিল) বিকালে জেলা প্রশাসকের কাছে এ ঘটনার বিচার চেয়ে অভিযোগ করেছেন পরিবারটি। এদিকে এ ঘটনা জানানি হলে ব্যাপক সমালোচনার সৃষ্টি হয়ে। স্থানীয়দের মধ্যে উপজেলা নির্বহী অফিসারকে নিয়ে আতঙ্ক কাজ করছে।
অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, গত ২৫ এপ্রিল মঙ্গলবার মধ্যে রাতে উপজেলার মরিচবুনিয়া গ্রামের আলতাব হোসেনের বাড়িতে এ ঘটনা ঘটে। ঐদিন আলতাফ হাওলাদারের ঘরে উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ মিজানুর রহমান ৮/১০ জন কর্মচারী নিয়ে রাত ২টার সময় হামলা চালায়। এ সময় তার কর্মচারীদের লাঠির এলোপাথারীর পিটুনিতে ঐ পরিবারের নারী-পুরুষ ও অতিথিসহ ৫/৬ জন আহত হয়। এর মধ্যে হুমায়ুন হাওলাদার মারাত্মক ভাবে আহত হয়েছেন। পরিবারটি ইউএন’র কাছে হামলার কারণ জানতে চাইলে আলতাব হোসেনের ছেলে হুমায়ুন হাওলাদার, সৌদি প্রবাসী মামুন হাওলাদার ও অতিথি দুলাল হাওলাদারকে আটক করে উপজেলা নির্বাহী অফিসার তার অফিসে নিয়ে আসেন। আটককৃত প্রবাসী মামুন হাওলাদার কর্মস্থল সৌদি আরবে যাবার ২৭ এপ্রিল ২০২৩ তারিখ রাতে বিমানে টিকিট কাটা থাকায় পরিবারটি হতাশাগ্রস্থ হয়ে পড়েন। আটকৃতদের ছেড়ে দেয়ার জন্য আলতাব হোসেনের পুত্রবধু তানিয়া আক্তার ইউএনও মিজানুর রহমান ও তার সহকারী প্রশাসনিক কর্মকর্তা মোঃ নাঈমুর রহমানের সাথে যোগাযোগ করলে তারা ১ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা ঘুষ দাবি করেন। পরিবারটির কাছে এত টাকা না থাকায় পরের দিন ২৬ এপ্রিল বিকালে ৭০ হাজার টাকা নিয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসের সহকারী প্রশাসনিক কর্মকর্তা মোঃ নাঈমুর রহমানের অফিস কক্ষে যায়। নাঈম মুঠোফোনে নির্বাহী অফিসারের সাথে কথা বলে টাকা রেখে আটকৃতদের ছেড়ে দেন।
আরও পড়ুন >> তীব্র তাপদাহে তৃষ্ণা জুড়ায় তালের শাঁস
এ খবর বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে ইউএনও’র লোকজন পরিবারটিকে বিভিন্ন ভাবে ভয়ভীতি দেখাতে শুরু করেন এবং আলতাবের ছেলে মাহমুদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের ছবি তুলে নিয়ে আসেন। এ ছাড়া প্রবাসী মামুনসহ আটকৃতদের ইউএনও অফিসে দেখা করে কাগজে স্বাক্ষর দেয়ার জন্য চাপ সৃষ্টি করে আসছেন। বর্তমানে ক্ষতিগ্রস্থ পরিবারটি আতংকে জীবন অতিবাহিত করছেন।
ভূক্তভোগী পরিবারের সদস্য সেলিনা বেগম জানান, আমি টিএনও সাহেবের কাছে কাকুতি মিনতী করে বলি আমাদের এখানে কোনো বিবাহের প্রস্তাব চলে নায়। আপনি প্রমান পাইলে ব্যবস্থানেন। ইউএনও কোনো কথা শোনে নায়। আমাদের উপর তার লোকজন হামলা চালায়। পরে আমার দুই ছেলেসহ একজন আত্বিয়কে আটক করে নিয়ে যায়। পরে আমার মেঝ ছেলে তার অফিসে গেলে ইউএনও (মিজানুর) বলে তোমার ভাইকে ছাড়বো যদি দেড় লক্ষ টাকা দেও, আর না দেও তাইলে চালান দেবো। আমার ছেলে মামুনের ২৭ এপ্রিল সৌদি যাবার ফ্লাইট। তাই কোনো উপায় না পেয়ে ধার দেনা করে ৭০ হাজার টাকা দিয়ে ছাড়াইছি।
হুমায়েনের বাবা আলতাব হোসেনের কাছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে কান্না জড়িতকন্ঠে বলেন, আমার ছেলেদের অনেক মারধর করছে। এখানে কাজি পায় নায়, বর পায় নায়। তারপরও ইউএনও হামলা চালায়। এরপর আমার ছেলেরে ধরে নিয়ে যায়। আমার ঘরের দিকে তাকাইয়া ইউএনও অফিসের নাঈম বলে বিদেশিডারে ধর ওরে ধরলে বিদেশি কামাই বন্ধ হবে আনে। আমি এর বিচার চাই।
প্রতিবেশী নুর মোহাম্মদ সিকদার বলেন, এই বাড়িতে এধরনের কোনো ঘটনা ঘটে নায়। এই পরিবারটিকে হয়রানী করায় আমরা গ্রামবাসীরা অসন্তুষ্ট। আমরা এর সুষ্ট বিচারের দাবি করছি।
স্থানীয় মসজিদের ইমাম নুরুল ইসলাম মুন্সী বলেন, এমন খবর শুনি নায়। বিবাহ হইলে তো আমাকে জানইতো। এটা সম্পূর্ন মিথ্য বানোয়াট।
এ বিষয়ে ইউএনও মোঃ মিজানুর রহমানের সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, সারাদেশে বাল্য বিবাহ বন্ধে নিয়মিত অভিযান পরিচালিত হচ্ছে। মরিচবুনিয়া গ্রামের ঘটনাটিও এই কার্যক্রমের অংশ। ঘটনাস্থান থেকে তিনজনকে আটক করা হলেও পরদিন তাদের মুচলেকা নিয়ে ছেড়ে দেওয়া হয়। দেড় লক্ষ টাকা ঘুষ চাওয়া ও সত্তর হাজার টাকা ঘুষ নেবার বিষয়টি তিনি মিথ্যা ও বানোয়াট বলে দাবি করে তিনি আরো জানান, আমার সহযোগী নাঈমের বিরুদ্ধে পরিবারটির কাছে অর্থ লেনদেনের কোন প্রমাণ থাকলে তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।